নাস্তিকতা (৩): এক নৈসর্গিক নিখুত ব্যবস্থাপনা

লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ০৩ নভেম্বর, ২০১৪, ০৬:৫৮:১৮ সন্ধ্যা

আমরা দেখাবো যে, বিগত কয়েক দশকের পদার্থবিজ্ঞানের আবিস্কার কিভাবে একজন কসমিক অতিপ্রাকৃত সৃষ্টিকর্তার স্বপক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করে|

প্রথমে আমরা প্রচলিত থিওরি তুলে ধরব এবং পদার্থবিজ্ঞানের কিছু মৌলিক বিষয় আলোচনার মাধ্যমে ঐ থিওরিগুলোর স্বপক্ষে এবং বিপক্ষে যুক্তিগুলো তুলে ধরা হবে। লজিক অনুযায়ী ই আস্তিকতা এবং নাস্তিকতার ভিত্তিমূলের পার্থক্য সহজে দেখানো সম্ভব হবে।

০) বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি বিষয়ক প্রচলিত থিওরিসমূহঃ চার রকমের থিওরি এক্ষেত্রে প্রচলিত।



১) কোরআনের যুক্তি:

১.১) "তুমি রহমানের সৃষ্টকর্মে কোন প্রকার অসংগতি দেখতে পাবে না৷ আবার চোখ ফিরিয়ে দেখ, কোন ক্রটি দেখতে পাচ্ছ কি? তুমি বারবার দৃষ্টি ফিরিয়ে দেখ, তোমার দৃষ্টি ক্লান্ত ও ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসবে৷" (মূলকঃ ৩-৪)"

১,২) তিনি তোমাদের কল্যাণের জন্য রাত ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্রকে বশীভূত করে রেখেছেন এবং সমস্ত তারকাও তাঁরই হুকুমে বশীভূত রয়েছে৷ যারা বুদ্ধিবৃত্তিকে কাজে লাগায় তাদের জন্য রয়েছে এর মধ্যে প্রচুর নিদর্শন৷" (১৬:১২)

১.৩) সূর্য ও চন্দ্র একটি হিসেবের অনুসরণ করছে। এবং তারকারাজি ও গাছপালা সব সিজদাবনত ৷ আসমানকে তিনিই সুউচ্চ করেছেন এবং দাড়িপাল্লা কায়েম করেছেন৷ (৫৫: ৫-৭)

২) বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড:

এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের স্থায়ী বা ধ্রুব (constant) এবং ফিজিকাল সূত্র বিদ্যমান যা জীবনধারনের উপযোগী নিখুত পরিমাপে আবিস্ট। একে 'নিখুত পরিমাপ প্রণয়ন' বা 'ফাইন টিউনিং' (fine tuning) বলে।

২.১) সূত্র বা নিয়মের ফাইন টিউনিং (fine tuning) বা 'নিখুত পরিমাপ প্রণয়ন':

ফাইন টিউনিং বলতে বুঝায় এ বিশ্ব-ব্রম্মান্ড এক সঠিক পরিমানের সূত্র-সমূহের সমন্বয়ে গঠিত যার প্রতিটি সূত্র সঠিক পরিমাপের ধ্রুবকের উপস্থিতিতে সমন্বিত যার দরুন বিশ্ব-ব্রম্মান্ড স্থিতাবস্থায় থাকে এবং জীবন ধারন সম্ভবপর হয়। কয়েকটি উদাহরন দেয়া হল:

২.১.১) মধ্যাকর্ষণের উপস্থিতি:

এক্ষেত্রে মূল কথা হল: কোন মধ্যাকর্ষণের উপস্থিতি ছাড়া জীবন ধারন অসম্ভব ব্যপার।

যদি কোন মধ্যাকর্ষণ শক্তি না থাকে, তবে কোন কোন গ্রহ, নক্ষত্র তৈরী সম্ভব নয়. অতএব, প্রানের সঞ্চারও সম্ভব নয়।

"মাধ্যাকর্ষন একটি দীর্ঘ পরিসীমার (long range) আকর্ষন শক্তি যা বস্তুনিচয়ের মধ্যে কার্যকর থাকে। এ শক্তি বৃদ্ধি পায় তাদের ভরের (mass) সমানুপাতে এবং এ শক্তি হ্রাস পায় তাদের দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতে। ... যদি কোন মাধ্যাকর্ষন শক্তি না থাকে, তবে কোন নক্ষত্র থাকবে না, কারণ এ শক্তি তারকারাজির পদার্থসমূহকে এক সাথে ধরে রাখে। ... এর অর্থ কোন গ্রহ ও থাকবে না।"

(Robin Collins. The Teleological Argument, in The Blackwell Companion to Natural Theology. Ed. William Lane Craig and J. P. Moreland. Wiley-Blackwell. 2009, pp. 211-212)

২.১.২) ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক ফোর্সের উপস্থিতি:

ইলেক্ট্রোমোটিভ শক্তি এমন একটি বিশেষ শক্তি যা বিশ্ব ব্রম্মান্ডের প্রতিটি বস্তুকে প্রভাবিত করে তার অসীম পরিসীমার দরুণ (মাধ্যাকর্ষণের ন্যায়)। এর আকর্ষন ও বিকর্ষণের উভয়বিধ ক্ষমতা আছে। যেহেতু কঠিন ও তরল পদার্থ চার্জের একটি সুনির্দিস্ট সরঞ্জামের ভিত্তিতে গঠিত, এরাও ইলেক্ট্রোমোটিভ শক্তি দিয়ে প্রভাবিত হয়। এ শক্তি পদার্থের বৈশিস্ট যেমন, কাঠিন্য, আকার, আকৃতি প্রদান করে। তিন ধরনের ফিল্ড থেকে ইলেক্ট্রোমোটিভ শক্তি উত্পন্ন হয়: ইলেক্ট্রো-স্টাটিক ফিল্ড, ম্যাগনেটস্টাটিক ফিল্ড এবং ইলেক্ট্রোস্টাটিক ফিল্ড।

মূলকথা হল: কোন ইলেক্ট্রোমোটিভ শক্তি ছাড়া কোন পরমাণু (যা পদার্থের মৌলিক উপাদান) গঠিত হতে পারবে না। অতএব জীবনও থাকা সম্ভব হবে না।

একইভাবে, কোন ইলেক্ট্রোমোটিভ শক্তি ছাড়া কোন রাসায়নিক বন্ড বা যৌগ গঠিত হতে পারবে না। অতএব জীবনও থাকা সম্ভব হবে না।

২.১.২.১ "ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিসম ছাড়া কোন পরমাণু গঠিত হতে পারেনা। কারণ, তা ছাড়া কেউ পরমাণুর কক্ষপথে ঘুর্নায়মান ইলেকট্রন সমূহকে ধরে রাখতে পারবে না। পরন্তু এ শক্তি ছাড়া নক্ষত্র থেকে গ্রহে জীবন ধারনের নিমিত্তে শক্তি পরিবহনের আর কোন উপায় নেই।"

[Robin Collins. The Teleological Argument, in The Blackwell Companion to Natural Theology. Ed. William Lane Craig and J. P. Moreland. Wiley-Blackwell. 2009, pp. 212.]

২.১.২.২ "ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিসম এমনই একক শক্তি সম্পন্ন যা নিম্নের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন কার্য সম্পন্ন করে: (ক) বিলিয়ন বছর ধরে নক্ষত্রকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে জ্বলতে সাহায্য করে, (খ) নক্ষত্রে কার্বন-সিনথেসিসে সাহায্য করে, (গ) এ শক্তি নিশ্চিত করে যে, 'লেপ্টন' কখন ই 'কোয়ার্ক' এ রুপান্তরিত হবেনা, কারন তা ছাড়া পরমানু ই গঠিত হত না। (ঘ) এ শক্তি প্রোটনের দ্রুত ক্ষয়কে রোধ করে অথবা পরস্পরকে তীব্রভাবে বিকর্ষণে বাধা দেয় - এমনতর পদ্ধতি ছাড়া রাসায়নিক কার্যপ্রনালীই সম্ভবপর হত না!

জন লেস্লি বলেন, "এটা আসলেই এক আশ্চর্জ ব্যপার যে, কিভাবে একটি মাত্র শক্তি (ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিসম) এতগুলো কাজ একাই সম্পন্ন করে যেখানে প্রতিটি কাজ সম্পন্নের জন্য বিভিন্ন মাত্রার শক্তি প্রয়োজন হয়?"

[John Leslie. Infinite Minds. Oxford. 2001, p.205.]

২.১.৩) শক্তিশালী নিউক্লিয়ার ফোর্সের উপস্থিতি:

নিউক্লিয়াসকে কে ধরে রাখে? প্রোটন হল পজিটিভ চার্জযুক্ত এবং এরা পরস্পরকে বিকর্ষন করবে। তাই এদেরকে শক্তিশালী নিউক্লিয়ার শক্তি ধরে রাখে।

শক্তিশালী নিউক্লিয়ার শক্তি ভিন্ন কোন পরমানু থাকবে না - ফলে কোন জীবন ও থাকা সম্ভব না!



২.১.৪) শক্তির তুলনা দৈর্ঘের স্কেলে: মাধাকর্ষণ শক্তির ধ্রুবক এক ইঞ্চিকে ১ ট্রিলিয়ন ভাগ করে তার একভাগের সমান হলে শক্তিশালী নিউক্লিয়ার শক্তি হবে ১৫ বিলিয়ন আলোক-বর্ষ বড়।

২.২) বিশ্ব ব্রম্ম্যান্ড একটি ব্ল্যাক হোলে (কৃষ্ণ বিহবরে) পরিনত হত!:

"পরমাণুকে একটি নির্দিস্ট আকৃতিতে রাখতে, নিউক্লিয়ার শক্তি খুবই অল্প দুরত্বে কার্যকর থাকবে। এর অর্থ, এ শক্তি খুব দ্রুত হারে পরিবর্তিত হবে দুরত্ব পরিবর্তনের সাথে। তা না হলে, এটি মাধ্যাকর্ষণ শক্তির মত ই কাজ করত এবং সকল প্রোটন এবং নিউট্রনকে একীভূত করে ফেলত ।

মূলত: এদের যে বর্তমান শক্তি আছে (একটি নিউক্লিয়াসের অভ্যন্তরে মাধ্যাকর্ষন শক্তির তুলনায় ১০^৪০ গুন শক্তিশালী), তার যথাযথ নিয়ন্ত্রণ না হলে বিশ্ব ব্রম্ম্যান্ড শুধুমাত্র একটি দৈত্যাকৃতির ব্ল্যাক হোলে পরিনত হত।"

[Robin Collins. The Teleological Argument, in The Blackwell Companion to Natural Theology. Ed. William Lane Craig and J. P. Moreland. Wiley-Blackwell. 2009, p. 212.]

২.৩) বিশ্ব ব্রম্মান্ডের ফাইন টিউনিং বা নিখুত পরিমাপের মাধ্যমে সাম্যাবস্থা:

২.৩.১) একটি ফিজিকাল ধ্রুবক: মৌলিক কোন ফিজিকাল ভ্যারিয়েবল বা পরিমাপের একটি নির্দিস্ট মানে (value) যাকে পদার্থবিজ্ঞানের সুত্রে প্রবেশ করালে বিশ্ব ব্রম্মান্ডের মৌলিক গঠন বুঝা যায়।

২.৩.২) কোন একটি ফিজিকাল ধ্রুবক "সামান্য পরিমান" (যা পরে নির্ণয় করা হবে) যদি পরিবর্তিত হয়, তবে আর বিশ্ব ব্রম্মান্ডে প্রানের অস্তিত্ব থাকবে না।

উদাহরন: মধ্যাকর্ষণ ধ্রুবক (G) নিউটনের মাধ্যাকর্ষন শক্তির সুত্রে মাধ্যাকর্ষণের পরিমাপ কে নির্ধারন করে এভাবে:

F = G M N / d ^২

যেখানে F হল M এবং N ভরের (বস্তু) মধ্যকার শক্তি, এরা 'd' দুরত্বে অবস্থিত। G বাড়ালে বা কমালে শক্তি ও পরিবর্তিত হবে। G এর প্রকৃত মান হল: ৬.৬৭X১০^-১১ N m ^২/kg^২

"মধ্যাকর্ষ শক্তি যদি ১০^৩৪ ভাগের ১ ভাগ পরিমান ও বৃদ্ধি পায়,তবে: প্রতিটি এককোষী প্রাণী ধ্বংস হয়ে যাবে। কেবল ১০০ ফিট ব্যসের গ্রহ জীবন ধারনের উপযোগী হবে। ঐসব গ্রহ যদিও কোন ইকো-সিস্টেম ধারন করবে না আমাদের মত বুদ্ধিবৃত্তিক (intelligence) কোন প্রানীকে সাপোর্ট দেয়ার মত।"

[Robin Collins. The Teleological Argument, in The Blackwell Companion to Natural Theology. Ed. William Lane Craig and J. P. Moreland. Wiley-Blackwell. 2009, p. 214.]

২.৩.৩) সংকীর্ণ পরিসরের (range) প্রাকৃতিক ধ্রুবকের সমন্বয়:

অতএব, জীবন ধরনের উপযোগী পরিবেশ তৈরীর জন্য মাধ্যাকর্ষন শক্তির পরিমাপ অবশ্যই খুব সংকীর্ণ পরিসরের মাঝে (এর যতরকম পরিমাপ তত্বীয় ভাবে সম্ভব তার তুলনায় খুব সংকীর্ণ পরিসর) থাকতেই হবে।

ড: ডেনিস স্কিয়ামা (কেমব্রিজ বিশ্ব-বিদ্যালয়ের অবজারভেটরির প্রাক্তন পরিচালক) বলেন, "যদি প্রকৃতির সূত্রের সামান্য পরিবর্তন করা হয় অথবা প্রাকৃতিক ধ্রুবকের মানকে সামান্য পরিবর্তন করা হয়, তবে বুদ্ধিবৃত্তিক প্রানের সঞ্চারণ একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়বে।"

[From the BBC special, The Anthropic Principle.]

২.৪) কসমিক ডিজাইন / গ্র্যান্ড ডিজাইন: উপরের আলোচনা থেকে প্রমাণিত হয়: বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড একটি নিখুত পরিকল্পনার সৃস্ট ও পরিচালিত ভিন্ন আর কিছু কি হতে পারে? একে কসমিক ডিজাইন / গ্র্যান্ড ডিজাইন বলা কি অত্যুক্তি হবে?

এখন আমার দেখব, নাস্তিকতা এখানে কি কি বিকল্প যুক্তি প্রস্তাব করে!

২.৫) স্রষ্টাকে বাদ দিয়ে নাস্তিকদের যেসকল যুক্তি রয়েছে:

(ক) দৈব-দুর্ঘটনার সম্ভাবনা (chance)

(খ) প্রয়োজনীয় (necessity)

(গ) বহু-বিশ্ব-ব্রম্ম্যান্ড (multiverse)

২.৫.১) দৈব-দুর্ঘটনার সম্ভাবনা (chance): কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে আমরা চিন্তা করি!



এই ময়ুরের পালকটি কি এক্সিডেন্ট এর মাধ্যমে তৈরী হয়ে গেল?



এই পেইন্টিংটি কি দৈব দুর্ঘটনায় রান্ডম (random) রং ছিটানোর মাধ্যমে তৈরী হয়ে গেল?

যারা এ (দৈব দুর্ঘটনা) বলে তারা কি একথা বলে যে, এক রাতের মাঝে একটি হাতি তার ড্রাইভ ওয়ে তে অবির্ভূত হল আচমকা? অথবা একটি জাম্বো-জেট তাদের বাগানে অবতরন করল যখন তারা সকালে ঘুম থেকে উঠল?

এভাবে অনেক কিছুই বলা যায়!

২.৫.১.১) একটি উদাহরণ: গাণিতিকভাবে, জীবের একটি উপকারী প্রোটিন অণু সম্ভাবনার সূত্র অনুযায়ী দুর্ঘটনার মাধ্যমে (randomly) গঠিত হওয়ার সম্ভাবনা কত?



একটি উপকারী প্রোটিন অণু গঠনের জন্য তিনটি শর্ত থাকবে

(১) সকল অ্যামাইনো এসিড একটি প্রোটিন চেইনে থাকবে সঠিক প্রকারের এবং সঠিক সিকোয়েন্স অনুসারে।

(২) সকল অ্যামাইনো এসিড একটি প্রোটিন চেইনে থাকবে যারা সবাই লেফট-হ্যান্ডএড হবে (প্রকৃতিতে রাইট এবং লেফট হ্যান্ডএড দুই ধরনের অ্যামাইনো এসিড থাকে)|

(৩) সকল অ্যামাইনো এসিড পেপটাইড নামক বন্ধনের মাধ্যমে যুক্ত থাকবে।

এখন একটি প্রোটিন অণু গঠনের জন্য গড়ে ৫০০ অ্যামাইনো এসিড প্রয়োজন।

[১] ২০ ধরনের অ্যামাইনো এসিড প্রকৃতিতে আছে। তার মধ্যে সঠিকভাবে একটি রান্ডম্লি বাছাইয়ের সম্ভাবনা = ১/২০

অতএব, সকল অর্থাৎ ৫০০ অ্যামাইনো এসিড সঠিকভাবে রান্ডম্লি বাছাইয়ের সম্ভাবনা = ১/২০ ^ ৫০০ = ১/ ১০^৬৫০

[২] লেফট হ্যান্ডএড অ্যামাইনো এসিড সঠিকভাবে রান্ডম্লি বাছাইয়ের সম্ভাবনা = ১/২

অতএব, সকল অর্থাৎ ৫০০ অ্যামাইনো এসিড সঠিকভাবে রান্ডম্লি বাছাইয়ের সম্ভাবনা = ১/ ২^ ৫০০ = ১/১০^১৫০

[৩] ১ জোড়া অ্যামাইনো এসিড সঠিকভাবে রান্ডম্লি পেপটাইড বন্ধনে গঠিত হওয়ার সম্ভাবনা = ১/২

অতএব, সকল অর্থাৎ ২৫০ জোড়া অ্যামাইনো এসিড (অর্থাৎ ৫০০ টি ) সঠিকভাবে রান্ডম্লি পেপটাইড বন্ধনে গঠিত হওয়ার সম্ভাবনা = ১/২^৪৯৯ = ১/ ১০^১৫০

অতএব, ১ টি প্রোটিন অণু সম্ভাবনা সূত্র অনুযায়ী হটাত করেই গঠনের সম্ভাবনা = ১/১০^৬৫০ X ১/১০^১৫০ X ১/১০^১৫০ = ১/ ১০^৯৫০

স্ট্যাটিস্টিক্যালি ১/১০^৫০ সম্ভাবনার ঘটনাকে শূন্য সম্ভাবনার ধরা হয়। তবে এক্ষেত্রে অটোম্যাটিক প্রোটিন অণু গঠনের সম্ভাবনাকে কি বলা যাবে?

(লক্ষণীয়, এই হিসেবটিতে ধরে নেয়া হয়েছে সকল অ্যামাইনো এসিড কাছে ছিল, পরিবেশের অবস্থা - তাপমাত্রা, অন্যান্য প্রভাবক উপস্থিত ছিল। তারপর ও কত নগণ্য সে সম্ভাবনা! )

[সূত্র: Harun Yahya, The Evolution Deceit, pp 143]

২.৫.১.২) তারপর ও একটি সম্ভাবনা থাকতে পারে!! :

কেউ কেউ (যারা কেবলমাত্র স্রষ্টা (GOD) কে অস্বিকার করবে কোন যুক্তি ছাড়াই), বলে যে, তারপর ও আমরা এ কথা অস্বিকার করতে পারি না যে, এই নিখুত পরিমাপের বিশ্ব ব্রম্ম্যান্ড এক্সট্রা-অর্ডিনারি ভাগ্যবান সুযোগে বা সম্ভাবনায় হটাত করেই (তাদের মতে ই যার সম্ভাবনা অকল্পনীয় ভাবে কম!) সৃষ্টি হয়ে গেল!

এক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি: বিশ্ব ব্রম্মান্ডের ফাইন টিউনিং বা নিখুত পরিমাপ পর্যাপ্ত প্রমান দেয় এক নিখুত পরিকল্পনাকারী স্রষ্টার স্বপক্ষে - তবু ও তারা ওই হাইপোথিসিস দেয় 'তবু ও একটি সম্ভাবনা থাকে বিশ্ব ব্রম্ম্যান্ড নিজে নিজেই হটাত করেই চমকপ্রদভাবে সৃষ্টি হয়ে যাওয়ার'! এবং সেই অতি অতি নগন্য সম্ভাবনার বিষয়কেই চিরসত্য ধরে স্রষ্টাকে অস্বিকার করে। এরা অবশ্য অনান্য সকল ক্ষেত্রে বা বাস্তব প্রাত্যহিক জীবনে অধিক সম্ভাবনার বিষয়কেই গ্রহণ করে আর অল্প সম্ভাবনার বিষয়কেই পরিত্যগ করে (যেমন: মাঘ মাসের অতিরিক্ত শীতের সকালে সে গরম কাপড় পরিধান করে বাইরে যায় - সে এ অমূলক সম্ভাবনা ভুলেও করে না যে, হটাত করে ভয়ঙ্কর গরম পড়বে! কি বিপরীত আচরণ এদের দুই ক্ষেত্রে! )

২.৫, ১,৩ ) সম্ভাবনার সূত্র (Likelihood Principle):

যখন তথ্য-উপাত্ত (data) কোন একটি বিশেষ হাইপোথিসিসের স্বপক্ষে অধিক পরিমানে থাকে আরেক হাইপোথিসিসের থেকে, তখন যার স্বপক্ষে তথ্য-উপাত্ত বেশি তাইই ওই হাইপোথিসিস অধিক সত্য হওয়ার স্বপক্ষে প্রমান হিসেবে কাজ করে।

২.৫,১,৩,১ ) উদাহরন: পিতৃ-প্রমানের স্বপক্ষে (paternity test) যদি দেখা যায়, কোন একটি শিশুর জেনেটিক কোড 'ক' নামক লোকের জেনেটিক কোডের সাথে ৯০% মিলে কিন্তু 'খ' নামক লোকের সাথে মাত্র ১০% মিলে, তবে সম্ভাবনার সূত্র (Likelihood Principle) অনুযায়ী বলব: ওই সন্তানটি 'ক' নামক লোকের। এক্ষেত্রে 'ক' এর DNA সিকোয়েন্সের ফলাফল তার পিতা হওয়ার প্রমানের স্বপক্ষে তথ্য-উপাত্ত (data) স্বরূপ।

২.৫,১,৩,২ ) সম্ভাবনার সূত্র (Likelihood Principle) অনুযায়ী বিশ্ব ব্রম্মান্ডের ফাইন টিউনিং (নিখুত পরিমাপ প্রণয়ন) কে নাস্তিকতার 'দুর্ঘটনার সম্ভাবনা (chance)' এর হাইপোথিসিস অথবা আস্তিকতার 'বিশ্ব ব্রম্মান্ডের নিখুত ডিসাইন' হাইপোথিসিসের তথা স্রষ্টার সত্যতার হাইপোথিসিসের সাথে মিলিয়ে পর্যবেক্ষন:

> বিশ্ব ব্রম্মান্ডের ফাইন টিউনিং (নিখুত পরিমাপ প্রণয়ন) হল তথ্য উপাত্ত অনুযায়ী অনেক বেশি সত্য (more likely) "ডিসাইন হাইপোথিসিসের" স্বপক্ষে।

> কিন্তু বিশ্ব ব্রম্মান্ডের ফাইন টিউনিং (নিখুত পরিমাপ প্রণয়ন) তথ্য উপাত্ত অনুযায়ী প্রায় অসম্ভাব্য (unlikely) ""দুর্ঘটনার সম্ভাবনা (chance) হাইপোথিসিসের" স্বপক্ষে।

> পরন্তু বিশ্ব ব্রম্মান্ডের ফাইন টিউনিং সত্য বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী।

উপরের তিনটি বক্তব্যকে একসাথে সাজালে, আমরা দেখি Likelihood Principle অনুযায়ী নাস্তিকতা একটি পুরোপুরি ভুল ধারনা!

২।৫।২) প্রয়োজনীয় (necessity) সূত্রঃ

(ক) এ সূত্র অনুযায়ী মহাজাগতিক ধুব্রক বা অবস্থার প্রয়োজনীয় পরিমাপ প্রকৃতির সূত্রের উপর নির্ভরশীল নয়।

(খ) এ সূত্র অনুযায়ী আমাদেরকে বিশ্বাস করতে হবে যে, জীবন ধারণের অনুপযোগী একটি বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড তৈরি হওয়া অসম্ভব। কিন্তু কোন ধ্রুবক যদি পরিবর্তিত হয়, তবে জীবনের অস্তিত্ব আর থাকবে না।

দেখুন বৈপরীত্যঃ উপরের (খ) অনুযায়ী তারা ধরে নিচ্ছে জীবন ধারণের অনুপযোগী একটি বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড তৈরি হওয়া অসম্ভব সর্বপ্রথমে। অথচ কোন ধ্রুবক যদি পরিবর্তিত হয়, তবে জীবনের অস্তিত্ব আর থাকবে না তথা জীবন ধারণের অনুপযোগী একটি বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড তৈরি হওয়া সম্ভব!

পল ডেভিসে এ সূত্রের ব্যাপারে বলেন, "আমার মনে হয় ফিজিক্যাল বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড এখন যেমন আছে তেমন হওয়া তার জন্য একান্ত অপরিহার্য নয়। অন্য রকমের ও হতে পারত।"

[Paul Davies. The Mind of God. Simon & Schuster. 1992, p. 169.]

২।৫।৩ ) বহু-বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডঃ

বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের ফাইন টিউনিং (নিখুঁত পরিমাপ প্রণয়ন) কে সত্য ধরে অধুনা নাস্তিকরা এ নব-যুক্তি সামনে এনেছেন অনুমানের ভিত্তিতে। বিভিন্ন পরিমাপের বিভিন্ন মহাজাগতিক ধ্রুবকের বিন্যাস আর সমাবেশের মাধ্যমে গঠিত প্রায় অসীম সংখ্যক বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড রয়েছে। তার একটি বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে আমরা অবস্থিত!

তাদের মতে, যদি তাই ই হয় তবে ফাইন টিউনিং অসম্ভব নয়!

অবশ্য এ বহু-বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড সূত্রের বিভিন্ন ভার্সন আছে সামান্য পরিবর্তনের মাধ্যমে!

২।৫।৩।১) বহু-বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড কিছুই ব্যাখ্যা করে না! ঃ

প্রফেসর সুইনবার্ন বলেন "এটা এক পাগলের প্রলাপ যে, ট্রিলিয়ন সংখ্যক বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড (মোটামুটি ভাবে যুক্ত) থিওরি সামনে আনা হয়েছে একটি নিখুঁত ডিসাইনের বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডকে বুঝার জন্য। অথচ একটি প্রভুর ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত একটি বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের থিওরি একই কাজ করে থাকে!"

[Cited in There is a God. HarperOne. 2007, p.119.]

প্রফেসর অ্যান্থনি ফ্লিউ বলেন " এটা একটা ফ্যাক্ট যে, লজিকালি বহু বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড তাদের নিজস্ব প্রাকৃতিক সূত্র নিয়ে অবস্থিত - এমন হাইপথিসিস কোন প্রমাণ উপাত্ত দেখায় না। এখন পর্যন্ত শূন্য সংখ্যক প্রমাণ বা ডাটা উপাত্ত নিয়ে এই হাইপথিসিস দাঁড়িয়ে রয়েছে! এটি মূলত একটি অনুমান বা ধারনা ভিন্ন কিছু নয়।"

[Anthony Flew. There is a God. HarperOne. 2007, p.119.]

২,৫,৩,২) বহু-বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভার্সনঃ

বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড কিছু ফিজিক্যাল প্রসেস বা সূত্রের মাধ্যমে গঠিত। অ্যালেক্সান্ডার ভিলেকিন বলেন, "অতএব এটা বলা যায় যে, বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির পূর্বে প্রকৃতির সূত্র সমূহ বিদ্যমান ছিল।"

[See http://www.youtube.com/watch?feature=player_detailpage&v=ZHEp855NS6c#t=2379]

২,৫,৩,২,১ ) এর বিরুদ্ধে যুক্তি ঃ

এরা বলে থাকে যে, 'পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র বা কিছু প্রসেস' বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির জন্য আগে থেকেই বিদ্যমান ছিল। এর ফলে কয়েকটি প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই মনে জাগেঃ

(ক) এ তত্ত্ব অনুযায়ী "পদার্থবিজ্ঞানের কিছু প্রসেস" এর প্রতি বেশি বিশ্বাস (ঈমান বা faith) আনা প্রয়োজন স্রস্টার প্রতি ঈমানের বা বিশ্বাসের থেকে!

(খ) "পদার্থবিজ্ঞানের কিছু প্রসেস বা সূত্র" কোথা থেকে শুরু হল?

(গ) "পদার্থবিজ্ঞানের ওই সকল কিছু প্রসেস বা সূত্র" অবশ্যই ভাল ও নিখুতভাবে তৈরী হতে হবে (well designed) একটি জীবন-সাপোর্ট নেয়ার ক্ষমতা সম্পন্ন বিশ্ব ব্রম্ম্যান্ড উপহার দেয়ার জন্য!

২,৫,৩,২,২ ) বহু-বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড আদৌ বৈজ্ঞানিক কোন হাইপোথিসিস হওয়ার যোগ্যতা রাখে কিনা?:

সিডনি ইন্সটিটিউট অব অ্যাস্ট্রোনমি এর রিসার্চ ফেলো লুক এ বার্নস বলেন: "বিজ্ঞানের ইতিহাস আমাদের নিরবচ্ছিন্নভাবে শিখিয়েছে যে, পরীক্ষাগারের ডাটা বা তথ্য উপাত্ত কোন ঐচ্ছিক বিষয় নয়। বহু-বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড হাইপোথিসিস এমনি একটি বিষয় যা সকল সময় অপরীক্ষিত ই থাকবে। সবচেয়ে অপটিমিস্টিক চিত্র এমন হতে পারে যে: একটি ফিজিকাল থিওরি যা ভালভাবে প্রমাণিত - তা অনুমান করতে পারবে বিশ্ব-ব্রম্ম্যান্ড সৃষ্টি-সূচনার অবস্থাকে বা পদ্ধতিকে! এরপরও প্রশ্ন থাকবে যা পর্যবেক্ষনের বাইরে যে: সেই প্রয়োজনীয় সৃষ্টি-সূচনার প্রাথমিক অবস্থা ওই সৃষ্টির জন্য মেটা-স্পেসে আদৌ বিরাজমান ছিল কিনা? পরন্তু, এটা চির সত্য যে, যে পদ্ধতিতে একটি বিশ্ব ব্রম্ম্যান্ড সৃষ্টি হয় তা নিশ্চিতভাবেই পর্যবেক্ষন করা সম্ভব না!"

[Read here http://arxiv.org/PS_cache/arxiv/pdf/1112/1112.4647v1.pdf]

২.৫.৪) অতএব, লজিক কি বলে?

(ক) বিশ্ব ব্রম্মান্ডের ফাইন টিউনিং হতে পারে অপরিহার্য বিষয় (necessity), দুর্ঘটনা, বহু-বিশ্ব-ব্রম্ম্যান্ড কিংবা নিখুত পরিকল্পনা না ব্যবস্থাপনায়।

(খ) কিন্তু যুক্তি দ্বারা দেখলাম যে, বিশ্ব ব্রম্মান্ডের ফাইন টিউনিং (নিখুত ডিসাইন) কখন ই অপরিহার্য বিষয় (necessity), দুর্ঘটনা বা বহু-বিশ্ব-ব্রম্ম্যান্ড দিয়ে বিশ্লেষন করা বিভিন্ন মূলনীতি (বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত, পরীক্ষাগারের ডাটা, likelihood principle, ইত্যাদি) দিয়ে অসম্ভব হয়ে পড়ে!

(গ) অতএব, বিশ্ব ব্রম্মান্ডের ফাইন টিউনিং একটি নিখুত পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার ই ফলশ্রুতি।

** ** **

আল্লাহতায়ালা বলেন, "তুমি রহমানের সৃষ্টকর্মে কোন প্রকার অসংগতি দেখতে পাবে না৷ আবার চোখ ফিরিয়ে দেখ, কোন ক্রটি দেখতে পাচ্ছ কি? তুমি বারবার দৃষ্টি ফিরিয়ে দেখ, তোমার দৃষ্টি ক্লান্ত ও ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসবে৷" (মূলকঃ ৩-৪)

বিষয়: বিবিধ

১৬৫১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File