নাস্তিকতা (২): সৃষ্টির চার রকমের সম্ভাবনা
লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ২৮ অক্টোবর, ২০১৪, ০৩:৪৯:২৩ রাত
১.১) আল্লাহতায়ালা বলেনঃ
কোন সৃষ্টিকর্তা ছাড়া এরা কি নিজেরাই সৃষ্টি হয়েছে ? না কি এরা নিজেরাই নিজেদের সৃষ্টিকর্তা? না কি পৃথিবী ও আসমানকে এরাই সৃষ্টি করেছে ? প্রকৃত ব্যাপার হলো, তারা বিশ্বাস পোষণ করে না। (আত-তূর : ৩৫-৩৬)
১.১.১) সাধারনভাবে কোন জিনিষ যা অস্তিত্বশীল তার ক্ষেত্রে নিচের যেকোন একটি বিষয় প্রযোজ্য।
(ক) শূন্য (nothing) থেকে এরা সৃষ্ট
(খ) এরা নিজেরাই নিজেদের সৃষ্টিকর্তা (self created)
(গ) এরা সৃস্ট অন্য কোন এনটিটি (entity) দ্বারা যা মূলত (তাদেরই মত) সৃস্ট
(ঘ) এরা সৃস্ট এমন এনটিটি দিয়ে যা সৃস্ট নয়।
১.১.২) যদি ও (আত-তূর : ৩৫-৩৬) মানুষের ক্ষেত্রে সম্বোধিত হয়েছে - তবুও তা যেকোন সৃষ্টির ক্ষেত্রে ই সমভাবে প্রযোজ্য।
এ আয়াত থেকে চারটি বিষয় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উল্লেখ করা যায়:
(ক) কোন সৃষ্টিকর্তা ছাড়া এরা কি নিজেরাই সৃষ্টি হয়েছে ? (শূন্য (nothing) থেকে এরা সৃষ্ট)
(খ) না কি এরা নিজেরাই নিজেদের সৃষ্টিকর্তা? (self created)
(গ) না কি পৃথিবী ও আসমানকে এরাই সৃষ্টি করেছে ? যদি মানুষ পাহাড় পর্বত তৈরী করতে পারত তবে একই লজিকে বলা যায় যে, পরোক্ষভাবে মানুষও সৃস্ট হয়েছে অন্য কোন এনটিটি (entity) দ্বারা যা মূলত (তাদেরই মত) সৃস্টিবিশেষ।
(ঘ) প্রকৃত ব্যাপার হলো, তারা বিশ্বাস পোষণ করে না। অর্থাৎ পরোক্ষভাবে এরা সৃস্ট এমন এনটিটি দিয়ে যা সৃস্ট নয়।
অতএব, এ আয়াতে উপরের (১,১,১) সেকশনে বর্ণিত সৃষ্টি- সম্পর্কিত চার ধরনের যুক্তি ই উঠে এসেছে।
১.২) ইবনে তাইমিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি
"আল্লাহ তায়ালা বলেছেন তিনি আসমান ও জমিন একটি নির্দিস্ট সময়ের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন পদার্থ (matters) থেকে। কোরআন উল্লেখ করেনি যে, সবকিছু শূন্য (nothing) থেকে সৃষ্টি। তার পরিবর্তে কোরআন বলেছে যে, তিনি (আল্লাহ) সৃষ্টি করেছেন সৃস্ট বস্তু যা পূর্বে ছিলনা। যেমন, আল্লাহ বলেন: 'আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছিলাম এবং এর পূর্বে তোমরা ছিলেন না (nothing)' (১৯:৯)। এছাড়াও তিনি বলেন: 'তিনি মানুষকে সৃস্ট করেছেন শুক্রের একটি ফোটা থেকে'"।
ইবনে তাইমিয়ার মতে (৫২ঃ৩৫) আয়াত থেকে দুইটি দৃষ্টিভঙ্গি পরিলক্ষিত হয়: 'তারা কি কোন কিছুর সাহায্য ছাড়া তৈরী? নাকি তারা নিজেই নিজেদের তৈরী করেছে?' (কুরআন: ৫২:৩৫) – (ক) 'তারা কোন সৃষ্টিকর্তা ছাড়া তৈরী , (খ) না অস্তিত্বহীন অবস্থা থেকে তৈরী হয়েছে?'
[সূত্র: ১) জন হুভার, Creation of the World, journal of Islamic Studies ১৫:৩ (২০০৪), প:৩২৩-৪ ২) Perpetual Creativity in the perfection of God, Ibn Taymiah's Hadith Commentary on God's ]
১.৩) হাদিস অনুযায়ী শুরুতে স্রস্টা ভিন্ন আর কিছু ছিল না (অর্থাৎ স্রস্টাই ছিলেন - শূন্য ছিল না):
বুখারী থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (স) বলেন: 'সবচেয়ে প্রথমে আল্লাহ ছাড়া আর কিছু ছিল না। অতপর তিনি সিংহাসন (thorn) সৃষ্টি করেন। তার সিংহাসন পানির ওপর ছিল. তিনি সব কিছু (তাকদীর) বই তে লিখেন এবং আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেন'।
১.৪) বিশ্ব ব্রম্ম্যান্ড এর অস্তিত্বঃ
১.৪.১) আমরা কিভাবে বুঝব যে বিশ্ব ব্রম্ম্যান্ড সৃষ্টি হয়েছিল?
যেসব তত্ত্ব এ প্রসঙ্গে রয়েছে সেগুলোর কয়েকটি হল:
(ক) বিগ-ব্যঙ সূত্র
(খ) নির্ভরতার সূত্র (নাস্তিকতা (১) অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে)
(গ) থার্মো-ডাইনামিক্স এর ২য় সূত্র
(ঘ) আল-গাজালির কক্ষপথের যুক্তি
পরবর্তী অধ্যায়ে উপরোক্ত বিষয়াবলী আলোচিত হবে।
১.৪.২) এস্ট্র-ফিসিকাল প্রমান: নবেল পুরস্কার প্রাপ্ত আর্ন-পেনজিয়াস বলেন: "জ্যোতির্বিদ্যা (astronomy) আমাদের এমন একটি বিশেষ ঘটনার বিশ্লেষনের দিকে ধাবিত করে: “একটি বিশ্ব যা শূন্য (nothing) থেকে তৈরী”। এবং অত্যন্ত সুক্ষ ও দক্ষ পরিমাপের মাঝে এমন একটি পরিবেশ-পরিস্থিতি তৈরী করেছিল যা জীবনের অস্তিত্ব ধারন করতে সক্ষম হয়। একটি প্রায় অবাস্তব ও প্রায় অসম্ভব দুর্ঘটনার (accident) তত্ব ব্যতিরেকে, আধুনিক বিজ্ঞানের পর্যবেক্ষন এই সিদ্ধান্তে পৌছেছে যে, এই বিশ্ব ব্রম্ম্যান্ডের সৃষ্টি একটি অন্তর্নিহিত অতিপ্রাকৃত পরিকল্পনা (plan) অনুযায়ী সংঘটিত হয়েছে"।
[ সূত্র: ব্রাডলি, ওয়াল্টার এল, "Designed or designoid? In Mere Creation: Science, Faith & Intelligent Design, Inter-Vasity Press, 1998, pp 40 ]
১.৪.৩) একটি মহাজাগতিক সূচনা:
"বলা হয়ে থাকে যে, একটি 'যুক্তি' একজন যৌক্তিক (reasonable) মানুষকে সন্তুস্ট করতে পারে। পক্ষান্তরে 'প্রমান' একজন 'অযৌক্তিক' মানুষকেও সন্তুস্ট করতে পারে। এখন প্রমানের উপস্থিতিতে জোতির্বিদগন অতীতের অন্তহীন বিশ্বের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিতে পারেন না। এর কোন মুক্তি নেই - তাদের অবশ্যই একটি মহাজাগতিক সূচনার (start) সমস্যাকে মুখোমুখি করতে হবে।"
[Alex Vilenkin, Many worlds in one: The search for other universe, Hill and Wand, 2006, pp 176]
২) প্রথম মতামতঃ শূন্য থেকে সৃষ্টি হওয়ার উদ্ভট যুক্তি:
২.১)
পি.জে. জোয়াট তার About Time (Amsterdam and Oxford: North Holland Publishing Co, 1976, pp 240) গ্রন্থে উল্লেখ করেন: "যদি এমন কোন সমস্যা থেকেই থাকে যা যা আমরা বুঝতে অক্ষম তা হল: "কোন কিছু শূন্য থেকে তৈরী হওয়া"।
ইবনে তাইমিয়া "কোন কিছু না (শূন্য) থেকে তৈরী" আয়াতাংশ বলতে বুঝিয়েছেন, আল্লাহ কোন জিনিস তৈরী করেছেন যা পূর্বে কিছু ছিলনা।
'শূন্য' (nothing) এর সাধারণ সংগা হল: কোন কিছুর অনুপস্থিতি। এক্ষেত্রে বিশ্ব ব্রম্মান্ডের অনুপস্থিতিকে বুঝানো হচ্ছে। যা আল্লাহতায়ালা সৃষ্টি করেছেন।
২.২) আল-খাত্তাবী র উক্তি:
"অথবা তারা কি কোন সৃষ্টি কর্তা ছাড়াই তৈরী হয়েছে? এটা অসম্ভব কারন সৃষ্টি তার স্রষ্টার সাথে গভীরভাবে একই যোগসূত্রে বাধা। একজন স্রষ্টা থাকতেই হবে| তারা যদি স্রষ্টাকে অস্বীকার করে তবে তারা কি নিজেই নিজদের সৃষ্টি করেছে?" (আল-বায়হাকী, আল-আসমা ওয়াল সিফ্ফাত)
২.৩ ) কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়াম কি শূন্য (nothing) এর সমার্থক?:
শুরুতে কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়াম ছিল বলে একটি যুক্তি অনেকে দেয়।
তাত্বিকভাবে কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়াম হল পরিবর্তিত (fluctuating) শক্তি-বিন্যাসের সমুদ্রের ন্যয়। অর্থাত যা মূলত বিভিন্ন মাত্রার শক্তির আধার বিশেষ। অতএব, কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়াম কিছু একটার উপস্থিতি বুঝায়। অবশ্যই শূন্য বুঝায় না!
ক্রিস্টোফার রায় তার Time, Space and Philisophy, Routledge 1991, p 205 গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন: "একারনে একেবারে সত্যিকারের শূন্য মাধ্যমে পদার্থ-মাধ্যম (matter fields) থাকতে পারে। যদিও পদার্থ-মাধ্যম শূণ্য-অবস্থায় কিভাবে অবস্থিতি পায় তা আশ্চর্যজনক এবং অবশ্যই বাস্তবে বুঝতে অক্ষম কারন তারা সত্যিকারের উপাদান নয়!" যেকোন ফিসিকাল ভ্যাকুয়ামকে অসম্পূর্ণভাবে শূন্য চিন্তা করা অবশ্যই একটি ভূল!
২.৪ ) প্রফেসর ক্রাউসের 'শূন্য' ধারনা:
"A Universe from Nothing" গ্রন্থের লেখক ক্রাউস মনে করতেন, শূন্য অবস্থা হল আপেক্ষিক-কোয়ান্টাম-ফিল্ড-তত্বীয় একটি বিষয় যাখানে কোন ফিজিকাল বস্তু নাই।
কিন্তু প্রফেসর ডেভিড আলবার্ট এর মতে, “তার (ক্রাউস এর) এ ধারনা ভুল কারন আপেক্ষিক-কোয়ান্টাম-ফিল্ড-তত্বীয় শূন্য অবস্থা - যা মূলত কোন একটি জিরাফ অথবা ফ্রিজ, অথবা সৌর জগত থেকে ভিন্ন কিছু নয় - মৌলিক ফিজিকাল বস্তুনিচয়ের একটি নির্দিস্ট বিন্যাসের মাধ্যমেই তৈরী!”
[ David Albert, Professor of Philosophy, Columbia University and Author of Quantum Mechanics and Experience. http://www.nytimes.com/2012/03/25/books/review/a-universe-from-nothing-by-lawrence-m-kraus.html?_r=0 লিঙ্কে David Albert উপরোক্ত মতামত দিয়েছেন।]
২.৪.১) ক্রাউসের শূন্য-বিষয়ক ভাষা তাত্বিক জটিলতা: ক্রাউস 'শূন্য' বলতে মূলত 'কিছু' (something) বুঝিয়েছেন! এটা সে নিজেই স্বীকার করেছেন যে, তার 'শূন্য' ধারনা মূলত কোন কিছুর উপস্থিতি! প্রমানস্বরূপ: http://www.youtube.com/watch?feature=player_detailpage&v=0NoqplPyBfQ#t=920s. ভিডিওতে ক্রাউস বলেছেন যে, 'শূন্য'(নাথিং) এবং 'কিছু' (সামথিং) দুটোই ফিসিকাল পরিমাপ!
এর সমালোচনা: এর অর্থ দাড়ায়: কেউ বলল: গত রাতে দারুন একটি ডিনার করলাম এবং সেটা ছিল নাথিং (শূন্য)! অথবা, 'লবন এবং মরিচের সমন্বয়ে কিছুই মজাদার হয়না (শূন্য)!
২.৫ ) অতএব, বিজ্ঞান 'শূন্য'কে বাখ্যা করতে অক্ষম:
উপরের আলোচনা থেকে বুঝা গেল যে, বিজ্ঞান শূন্যকে বাখ্যা করতে অক্ষম। কারন বিজ্ঞান শুধুমাত্র সেখানেই কার্যকর অর্থাত সেই সীমিত পরিমন্ডলেই কেবল সক্ষম যেখানে পর্যবেক্ষন ও উপাত্ত বিদ্যমান। এজন্য বিজ্ঞানের দার্শনিক (ফিলোসফার অফ সায়েন্স) 'এলিয়ট সবার' বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতাকে নির্ণয় করেছেন এবং তার প্রবন্ধ 'এম্পিরিসিসম' (empiricism), ২০১০, প: ১৩৭-৮ এ উল্লেখ করেছেন:
"যেকোন একটি মুহুর্তে বিজ্ঞানীরা তাদের সাথে যে উপাত্ত আছে তাতেই কেবল সীমাবদ্ধ থাকেন ... এ সীমাবদ্ধতা এমন যে, বিজ্ঞান কোন সমস্যাকে কেবল তখন ই বুঝতে পারে যখন পর্যবেক্ষন করে তাকে সমাধান করা সম্ভব হয়"।
৩) দ্বিতীয় মতামতঃ সে নিজেই নিজকে সৃষ্টি করেছে? :
এ তত্বের বিরুদ্ধে সহজে প্রশ্ন করা যায়: কেউ কি একই সময়ে উপস্থিত ও অনুপস্থিত থাকতে পারে?
একজন মা কি একই সময়ে নিজকে জন্ম দিতে পারে?
৩.১) একটি ভুল ধারনা:
“সে নিজেই নিজকে সৃষ্টি করেছে” এ যুক্তি-ধারীরা অনেক সময় অযৌন প্রজননের উদাহরণ দিয়ে থাকেন! তারা বলে থাকেন: একটি কোষ আগে থেকেই ছিল। যেখান থেকে অযৌন প্রজননে কোষ সংখ্যায় বেড়ে থাকে। অতএব একইভাবে তারা ধরে নেয় বিশ্ব ব্রম্ম্যান্ড ও প্রথম থেকেই ছিল! সেখান থেকে সব প্রতিরূপ সৃষ্টি হয়েছে।
(৩.১.১) এর বিপক্ষে যুক্তি: অযৌন প্রজননের জন্য প্রয়োজন বাহির থেকে শক্তি প্রদান। যার ফলে প্রজনন ঘটতে পারে। অর্থাৎ বাহিরের কোন শক্তি-প্রদানের কর্ম-পরিকল্পনা ছাড়া অযৌন প্রজনন অসম্ভব। অতএব, তাদের যুক্তিটি পুরোপুরি ভুল।
(৩.১.২) আল-খাত্তাবি বলেন: এটা একেবারে ভ্রান্ত ধারনা যে, যদি কোন কিছু অস্তিত্বহীন থাকে, কিভাবে সে শক্তিপ্রাপ্ত হবে এবং কোন কিছু তৈরী করতে সক্ষম হবে? কিভাবে সে আদৌ কিছু করতে পারবে? যদি এ দুটি যুক্তি যদি ভুল হয়ে থাকে তবে এটা সুপ্রমাণিত যে, একজন স্রষ্টা অবশ্যই থাকবেন| অতএব, তাদের তাকেই বিশ্বাস করা উচিত।"
[ আল-বায়হাকী, আল-আসমা ওয়াস-সিফাত]
৪) তৃতীয় মতামতঃ এমন কিছু/কারো দ্বারা তৈরী হওয়া যা/যে নিজেই সৃষ্ট (created)?:
যেকোন সৃষ্টি (ধরি 'ক') যদি আরেক সৃষ্টি (ধরি 'খ') দ্বারা তৈরী হয়, তবে সে সৃষ্টি ('খ') অবশ্যই আরেক সৃষ্টি (ধরি 'গ') দ্বারা তৈরী হবে। 'গ' সৃষ্টি আবার আরেক সৃস্টি (ধরি 'ঘ') দ্বারা তৈরী হবে। এটা মূলত 'অসীম নির্ভরতার ধারনাই প্রদান করে - যা পূর্বের অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে। ধরুন: একজন স্নাইপার শত্রুকে হত্যা করবে। অনুমতির জন্য সে অরেকজনের উপর নির্ভর করছে (বা নির্ভরশীল)। যে অনুমতি দিবে সে আবার নিজেই অনুমতির জন্য তৃতীয় আরেকজনের উপর নির্ভরশীল। তৃতীয় জন অনুমতির জন্য চতুর্থ কারো উপর নির্ভরশীল। এভাবে যদি অসীম সংখ্যক নির্ভরতার রূপরেখা থাকে তবে প্রথম ব্যক্তি কি আদৌ গুলি ছুড়তে সক্ষম হবে?
আরেকটি উদাহরন দেয়া যায় সারি সারি ডোমিনোসের। ছবিতে লক্ষ্য করুন। কোন একটি নির্দিস্ট অবস্থানকে পর্যবেক্ষন করুন। হয়ত সে অবস্থানের সামনের ডোমিনো পড়ে গেছে। পেছনের টিও পড়ে গেছে এর আগে। এই সারি সারি ডোমিনোদের কোন শুরু কি ছিল? আর এটা কি চিরকাল চলতেই থাকবে?
৫) চতুর্থ মতামতঃ সৃস্ট এমন কাউকে দ্বারা যে কারো দ্বারা স্রস্ট নয়:
এর সবচেয়ে বড় বাখ্যা হল:
আল্লাহ তায়ালা বলেন: তাঁর কোন সন্তান নেই এবং তিনি কারোর সন্তান নন৷ (১১২:৩)
৫.১) তিনি অনন্ত, চিরস্থায়ী:
"হে আল্লাহ! আপনি ই প্রথম। আপনার পূর্বে কোন শূন্যতা নেই। আপনি ই শেষ। আপনার পর কোন শূন্যতা নেই।" (মুসলিম)
[বাখ্যা: শূন্য কে কোন কিছু দিয়ে গুনন করা হোক উত্তর শূন্য ই হয়। অতএব,শুরুতে শূন্য ছিলনা। আল্লাহ ই ছিলেন। ]
ইবন আবি আল ইজ তার Commentary on the Creed al-Tahawi গ্রন্থে বলেন: " তিনি (আল্লাহ) অসীম কোন শুরু ছাড়া, অনন্তকাল ধরে স্থায়ী। কে নিজকে অবশ্যই অসীম সময় স্বনির্ভর থাকবেন আল্লাহ ছাড়া, এই অসীম নির্ভরতার রূপরেখার অবাস্তব্তাকে (সেকশন ৪ এ বর্ণিত) এড়ানোর জন্য?"
৫.২) ইমাম গাজালির যুক্তি: "স্রষ্টার বিষয়টিকে বলা যায় কারণের কারন স্বরূপ। এখন কারনের কারন সিকুয়েন্স (ধারা) অসীম সময় পর্যন্ত চলবে (সেকশন ৪ এ বর্ণিত) যা অবাস্তব এবং এতে কোন ঘটনারই শেষ হবে না!
[Lenn E Goodman, Ghazali's Argument from Creation (1): International Journal of Middle East Studies, Vol 2, No. 1, 1971, pp 67-85]
৫.৩) কিছু/কেউ সব সময়ই উপস্থিত ছিল!: দার্শনিক আব্রাহাম ভার্ঘিস প্রফেসর 'এন্থনি ফ্লেব' তার 'There is a God' বইতে (২০০৭, প: ১৬৫) উল্লেখ করেন: "আস্তিক ও নাস্তিক উভয়েই একটি বিষয়ে একমত যে, শুরুতে যদি কোন কিছু থেকেই থাকত, তবে তার পূর্বে ও কিছু অবস্যই থাকত (অর্থাত শূন্য নয়)। কিভাবে অনন্তকাল ধরে কোন কিছু থাকবে? এর উত্তর কখন ই পাওয়া যাবেনা। অতএব ওই প্রথম কোন কিছুকে 'স্রষ্টা' বা 'বিশ্ব-ব্রম্ম্যান্ড' যেটাই ধরা হোক না কেন, সেই কেউ/ কিছু অবশ্যই ছিল অনন্তকাল ধরে"।
৫.৪ ) যেহেতু আমরা একজন অসৃষ্ট (যিনি কারও দ্বারা সৃস্ট নন) এবং অনন্তকালের স্রষ্টাকে প্রমান করেছি - তার কিছু বৈশিস্ট ইসলাম থেকে উল্লেখ করা যায়:
৫.৪.১) তিনি ব্রহ্মাণ্ডের অতীত বা কোন তুলনার বাইরে:
"বিশ্বজাহানের কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়" (৪২:১১)
৫.৪.২) স্বতন্ত্র ও বিচ্ছিন্ন:
ইবনে তাইমিয়ার মতে স্রষ্ট বস্তুর বৈশিস্ট হল: স্রষ্টা থেকে স্রষ্ট বস্তু অবস্যই স্বতন্ত্র ও বিচ্ছিন্ন হবে।
[Perpetual Creativity in the Perfection of God: Ibn Taymiyya's Hadith Commentary on God's Creation of this World, Jon Hoover, Journal of Islamic Studies, 15:3 (2004). pp 296]
আল্লাহ বলেনঃ “এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই৷” (১১২ঃ৪)
৫.৪.৩) সকল জ্ঞানের অধিকারী:
"এসব কিছুই সেই জবরদস্ত ক্ষমতা ও জ্ঞানের অধিকারীর নির্ধারিত পরিমাপ" (৬:৯৬)
৫.৪.৪) সর্ব শক্তিশালী:
"নিঃসন্দেহে তিনি সবকিছুর ওপর শক্তিশালী" (২:২০)
৫.৪.৫) ইচ্ছা:
" আল্লাহ যাকে চান সত্য সঠিক পথ দেখিয়ে দেন ৷" (২: ২১৩)
৫.৪.৬) একক:
"বল তিনি আল্লাহ, একক৷ " (১১২:১)
৫,৪,৬,১) একের অধিক স্রষ্টা না হওয়ার যুক্তি:
উদাহরন: একটি বস্তুর উপর দুইজন স্রষ্টা দ্বারা ধরি দুই ধরনের ইচ্ছা (will) কার্যকর হচ্ছে। কি কি ঘটনা ঘটতে পারে?
(ক) দুইজনের ইচ্ছা একে অপরকে বাতিল করবে: কিন্তু এটা অসম্ভব কারন কমপক্ষে একটি 'ইচ্ছা' থাকতেই হবে যেহেতু সৃস্ট বস্তু-নিচয় রয়েছে (অথবা বস্তু সৃষ্টি হয়েছে কোন এক 'ইচ্ছা-পোষনের' জন্যই )।
(খ) কমপক্ষে একটি ইচ্ছাশক্তি অন্য সকল ইচ্ছা-শক্তির উপর শক্তিশালী: যা পরোক্ষভাবে বুঝায় যে, একটি ইচ্ছাশক্তি ই কার্যকরী। যা অন্য সকল ইচ্ছাশক্তির তুলনায় শক্তিশালী। বা অন্যান্য ইচ্ছাশক্তিকে সব সময় দমিয়ে দিচ্ছে।
(গ) উভয় ইচ্ছা-শক্তি ই একসূত্রে বাধা: এটাও বুঝায় যে, কেবল একটি ইচ্ছা-শক্তি ই কার্যকর। কারন সব সময়েই যদি একের অধিক ইচ্ছাশক্তি সুসম্মত হয়, তবে একটিমাত্র ইচ্ছাশক্তি ই কার্যকর থাকবে সবসময়।
অতএব, যাই ই ঘটুক না কেন, লজিকালি একটি ইচ্ছাশক্তি ই কার্যকর থাকছে। অতএব, কেবল একজন স্রষ্টাই আছেন।
৫,৪,৬,২) এ ক্ষেত্রে আমরা একটি উপপাদ্য উল্লেখ করতে পারি: "যদি কোন পার্থক্য না থাকে, তবে তারা একই এনটিটি (entity)"।
প্রমান:
(ক) দুটি গাছ আকার, আকৃতি, রং, বয়স ইত্যাদিতে ভিন্ন হয়। যদি তাদের সকল প্রকার দৈহিক পরিমাপ এক হয়, তবুও কমপক্ষে একটি পরিমাপ ভিন্ন হবে তাদের দুটি গাছ হিসেবে উল্লেখ করার জন্য; যেমন: তাদের অবস্থান (placement বা position) ভিন্ন।
(খ) যমজ সন্তানের ক্ষেত্রে বলা যায়: দুইজন যমজ হলেও কমপক্ষে তাদের একটি বিষয় আলাদা হবে। কমপক্ষে তাদের অবস্থান (placement বা position) ভিন্ন হবে কারন তারা একই সময় একই জায়গায় অবস্থান করেনা।
বিষয়: বিবিধ
২৩৫৮ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন