নাস্তিকতা (১): নির্ভরশীলতা'র যুক্তি
লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ২৫ অক্টোবর, ২০১৪, ০৭:৩৮:৫৮ সকাল
১) নির্ভরশীলতার তত্ব:
> যা-ই আমরা পঞ্চ ইন্দ্রিয়ে অনুভব করি তা-ই নির্ভরশীল (dependant)।
> 'কার্যকারনের নির্ভরশীলতার অসীম ধারাবাহিকতা অসম্ভব। অতএব, একটি স্বাধীন/স্বনির্ভর কার্যকারন থাকতেই হবে। কেন? তাই ই আমরা আলোচনা করব।
১.১) যা-ই আমরা পঞ্চ ইন্দ্রিয়ে অনুভব করি তা-ই নির্ভরশীল (dependant):
(ক) "নির্ভরশীল" কোন কিছুর বৈশিস্ট হল: তা অপরিহার্য নয়। অর্থাৎ তা অস্তিত্ব নাও ধারণ করতে পারত অথবা এর গঠনের মৌলিক উপাদান ভিন্ন উপায়ে সজ্জিত হতে পারত। অতএব, এমন কোন কিছু থাকবে যা ওই নির্ভরশীল অবজেক্টের নির্দিস্ট গঠন-কাঠামো নির্ধারন করেছিল বা করে থাকে।
(খ) নির্ভরশীল অবজেক্ট তার বাইরের (অর্থাৎ নিজের অংশ নয় এমন) কোন কিছুর নির্ভরতার জন্যই অস্তিত্ব ধারন করে।
(গ) নির্ভরশীল অবজেক্ট তার নিজের মত (নিজ বৈশিষ্ট অনুযায়ী) অবস্থান করে কিন্তু তা স্ব-নির্ভর নয় (নিজেই নিজের উপজীব্য ১০০% সরবরাহ করেনা)।
(ঘ) নির্ভরশীল বস্তুর সীমিত দৈহিক বৈশিষ্ট বিদ্যমান -যেমন 'রং', 'আকৃতি'(shape), 'আকার'(size)।
১.২) উদাহরন: যা-ই আমরা পঞ্চ ইন্দ্রিয়ে অনুভব করি, তা-ই নির্ভরশীল - - ছবিতে দেখুন এবং চিন্তা করুন কেন তারা নির্ভরশীল?
উল্লেখ্য:
(ক) যা-ই - আমরা অনুভব করি তা অন্য বস্তুর নির্ভরতা ছাড়া বাচতে পারেনা। আমাদের অনুভুতির মাঝে বিদ্যমান এমন কিছু নেই যা স্ব-সত্তাযুক্ত (self-subsistent).
(খ) যা-ই - আমরা অনুভব করি তা এমন মৌলিক উপাদানের ভিত্তিতে গঠিত যাদের ভিন্নভাবে ও সাজানো যেত। অতএব, নির্ভরশীল বস্তু অবশ্যই নির্ধারিত বা স্থিরীকৃত (determined) একটি বিষয়।
১.৩) এ আলোচনা থেকে উপপাদ্য:
(ক) যা-ই - আমরা অনুভব করি তা-ই তার অস্তিত্বের জন্য অন্য অনুভূত (perceivable) কিছুর উপর নির্ভর করে - যা পুনরায় তৃতীয় কোন কিছুর উপর নির্ভরশীল। এভাবে 'অসীম' সংখ্যক নির্ভরতার রূপরেখা প্রতীয়মান হয়। এর ফলে কোন কিছুই ঘটবে না! কিন্তু এটি অবাস্তব, অসম্ভব! কিভাবে? একটি উদাহরণ দিয়ে বুঝি:
"একটি কলম; তার গঠনের জন্য প্লাস্টিকের উপর নির্ভরশীল। প্লাস্টিক তার অস্তিত্বের জন্য তৈলের উপর নির্ভরশীল। তৈল তার অস্তিত্বের জন্য গাছ বা প্রাণীর উপর নির্ভরশীল। এভাবে নির্ভরতার অসীম সংখ্যক রূপরেখা টানা মূলত বাস্তবিকভাবে অসম্ভব। আর যদি তাত্বিকভাবে অসীম সংখ্যক নির্ভরশীল বিষয় থেকেও থাকে তাতে মূলত কলম ই তৈরী হওয়ার কথা না! বিষয়টিকে সহজ করার জন্য শুরুতে ই যদি এক স্ব-নির্ভর (independant) এনটিটি বসানো যায় তাহলে (i) কলম তৈরীর বাস্তবতা বুঝা সহজ হয়, এবং (ii) যেকোন কার্যকারন সংঘটনের শুরু র অবস্থা ব্যখ্যা করা সহজ হয়।
অসীম নির্ভরতার সিকোয়েন্সের জন্য কোন বস্তু তৈরী বা ঘটনা সংঘটন হওয়া বা তা বুঝা অসম্ভব। এর জন্য শুরুতে ই এমন একটি স্ব-নির্ভর বিষয় থাকবে যা প্রথম ঘটনা বা প্রথম কার্যকারন (cause - effect) সম্পন্ন করবে। এ প্রথম স্ব-নির্ভর এনটিটি অবশ্যই অসীম সময় ধরে অবস্থিত হবে।
(খ) উপরের (ক) পয়েন্ট ধরে উপসংহার টানা যায় যে, যা-ই - আমরা অনুভব করি তা-ই অস্তিত্বের জন্য শেষ পর্যন্ত এমন কোন কিছুর উপর নির্ভর করবে যা অসীম সময় ধরে অস্তিত্বশীল এবং স্বনির্ভর থাকবে।
Exercise: আমি টেবিলটি তুলতে চাই। 'ভাই আমাকে সাহায্য করুন'। ভাই বললেন: 'আমার মায়ের কাছে জিজ্ঞাসা করতে হবে'। এভাবে একটি নির্ভরতার রূপরেখা নির্ণয় করা যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যদি কোন স্বনির্ভর এনটিটি (যে অনুমতি দিবে স্বাধীনভাবে বা করতে) বসানো না যায় তবে টেবিল টিই তোলা হবে না! এ উদাহরণে নির্ভরশীল বস্তুর বৈশিস্ট কি কি? অসীম নির্ভরতার রূপরেখা এখানে কি বাস্তব? কেন/কেন নয়? স্বাধীন এনটিটি র অবস্থান কোথায় - প্রথমে, না মাঝে?
১.৪) ইবন আবি আল ইজ তার Commentary on the Creed al-Tahawi গ্রন্থে বলেন: " তিনি (আল্লাহ) অসীম কোন শুরু ছাড়া, অনন্তকাল ধরে স্থায়ী। কে নিজকে অবশ্যই অসীম সময় স্বনির্ভর থাকবেন এই অসীম নির্ভরতার রূপরেখার অবাস্তব্তাকে এড়ানোর জন্য?"
সুরা ইখলাসে আল্লাহতায়ালা বলেন:
"বলো তিনি আল্লাহ, একক৷
আল্লাহ কারোর ওপর নির্ভরশীল নন এবং সবাই তাঁর ওপর নির্ভরশীল"
অন্যত্র:
" ... আল্লাহ বিশ্ববাসীর মুখাপেক্ষী নন৷" (৩:৯৭)
২) বিশ্ব-ব্রম্মান্ড স্বাধীনভাবে অস্তিত্বশীল কিনা?
অনেক নাস্তিক বলে থাকেন: বিশ্ব-ব্রম্মান্ড স্বাধীন/স্বনির্ভর। এটি অসীম সময় ধরে বিদ্যমান। উদাহরন হসেবে তারা বলেন: পদার্থ বা বস্তুগত মৌলিক উপাদান স্বনির্ভর।
বিশ্ব-ব্রম্মান্ড এমন মৌলিক উপাদানে তৈরী যা শেষ পর্যন্ত 'কোয়ার্ক' এর সমন্বয়ে গঠিত। কোয়ার্ক বিশ্ব-ব্রম্মান্ড গঠনের একটি মৌলিক এনটিটি। অনেক কোয়ার্ক সমন্বিত হয়ে 'হাড্রন' নামক যৌগ গঠন করে। সবচেয়ে স্থায়ী হাড্রনের উদাহরন হিসেবে প্রোটন ও নিউট্রনের উল্লেখ করা যায় যা অ্যাটমিক নিউক্লিয়াসের উপাদান।
যুক্তি দেয়া যায় যে: বিভিন্ন কোয়ার্কের ভিন্ন ভিন্ন মাত্রার সম্মিলন থাকতে পারে। যেহেতু কেবল একটি নির্দিস্ট পরিমাপের বিভিন্ন কোয়ার্কের অস্তিত্বই দৃশ্যমান, অন্যান্য বিন্যাস বা সমাবেশের (বিভিন্ন কোয়ার্কের বিভিন্ন মাত্রার কম্বিনেশন) উপস্থিতি আমাদের জানা নাই - অতএব বলা যায় যে, বিশ্ব-ব্রম্মান্ড একটি সুনির্দিস্ট আকার, আকৃতি সমন্বিত। ফলশ্রুতিতে বিশ্ব-ব্রম্মান্ড কে আমাদের আলোচনা অনুযায়ী নির্ভরশীল (dependant) বলা যৌক্তিক।
এখন প্রশ্ন থাকে: কোন এনটিটি বিশ্ব-ব্রম্মান্ড-এর নির্দিস্ট আকার, আকৃতি, গঠন বিন্যাস নির্ধারন করলেন? এটি বুঝায় একটি/একজন নির্ধারক প্রয়োজন।অতএব, বিশ্ব-ব্রম্মান্ড অবস্যই একটি/একজন স্বনির্ভর নির্ধারকের উপর নির্ভরশীল যা/যিনি কোয়ার্কের বিন্যাস একটি সুনির্দিস্ট উপায়ে করে/করেছেন।
Exercise: 'নির্ভরতার অসীম রূপরেখা' কে বিশ্ব-ব্রম্মান্ড সৃষ্টি তথা কোয়ার্কের নির্দির্স্ট বিন্যাস এবং সৃষ্টি বৈচিত্রের সাথে তুলনা করা যাবে? উদাহরণ বা চিত্র দিয়ে ব্যখ্যা করুন।
২.১) এক্ষেত্রে নাস্তিকতার যুক্তি:
২.১.১) "বিশ্ব-ব্রম্মান্ড এর কোন কিছুর উপর নির্ভর করতে হয় না। এটি একটি অবশ্য প্রয়োজনীয় বিষয়।"
যুক্তি: (i) আপনি একটি 'বল' দেখতে পেলেন। আপনার কি ব্যখ্যা প্রয়োজন নেই? বলের আকৃতি কেন একটি বাসের আকৃতি সম্পন্ন নয়? বলটির আকৃতি কেন বিশ্ব-ব্রম্মান্ড এর আকৃতির মত নয়? (ii) বিশ্ব-ব্রম্মান্ড একটি চির সত্য বিষয় (brute fact) প্রমান ছাড়াই ধরে নেয়া - বিজ্ঞানের প্রচলিত দৃষ্টিতেই তা সাংঘর্ষিক! এক্ষেত্রে 'বিশ্ব-ব্রম্মান্ড' শব্দের বদলে 'স্রষ্টা' শব্দ প্রতিস্থাপনেই কেবল আপনি বিজ্ঞানের সাথে সংঘর্ষ দেখতে পান !?
২.১.২) "বিজ্ঞান একদিন সব উত্তর পাবে"
যুক্তি: (i) এ যুক্তি ও বৈজ্ঞানিক নয় - বরং ভবিস্যত-বাণী।
(ii) যদি "বহু-বিশ্ব-ব্রম্মান্ড" (multiverse) ধরনের কোন যুক্তি ও (যেমন কোয়ার্কের স্বাধীন ভাবে বিভিন্ন সমাবেশের ফলে তৈরী বিভিন্ন বিশ্ব-ব্রম্মান্ড!) উপস্থাপিত হয়, তবে ও তাকে 'নির্ভরশীল' বলা যাবে। কারন কি? বিভিন্ন মৌলিক উপাদানের বিন্যাস বিভিন্ন জায়গায় করার মত নির্ধারক ছাড়া পৃথকীকৃত "বিশ্ব-ব্রম্মান্ড" গুলো কিভাবে তৈরী হল? এদের মাঝে কেবল পৃথকীকরণ (border) এর বিন্যাস ও সমাবেশ কত ধরনের হতে পারে? এভাবে বহুধাবিস্তৃত চিন্তাভাবনার কোন বাস্তবিক উদাহরণ সম্ভব কিনা? উপাত্ত-উদাহরণ ছাড়া এ বিজ্ঞানের আদৌ কোন বিষয় কিনা?
অন্য কথায় "বহু-বিশ্ব-ব্রম্মান্ড" (multiverse) কি বৈজ্ঞানিক না কি অনুমান? এর পক্ষে পঞ্চ ইন্দ্রিয়ে অনুভূত কোন প্রমান - উপাত্ত কি আছে?
২.২) আল্লাহতায়ালা বলেন:
"অতপর যখন রাত তাকে আচ্ছন্ন করলো তখন একটি নক্ষত্র দেখে সে (ইব্রাহিম (আ)) বললোঃ এ আমার রব ৷ কিন্তু যখন তা ডুবে গেলো, সে বললোঃ যারা ডুবে যায় আমি তো তাদের ভক্ত নই৷ তারপর যখন চাঁদকে আলো বিকীরণ করতে দেখলো, বললোঃ এ আমার রব৷ কিন্তু যখন তাও ডুবে গেলো তখন বললোঃ আমার রব যদি আমাকে পথ না দেখাতেন তাহলে আমি পথভ্রষ্টদের অন্তরভুক্ত হয়ে যেতাম৷ এরপর যখন সূর্যকে দীপ্তিমান দেখলো তখন বললোঃ এ আমার রব, এটি সবচেয়ে বড় ! কিন্তু তাও যখন ডুবে গেলো তখন ইবরাহীম চীৎকার করে বলে উঠলোঃ হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা! তোমরা যাদেরকে আল্লাহর সাথে শরীক করো তাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই৷ আমি তো একনিষ্ঠভাবে নিজের মুখ সেই সত্তার দিকে ফিরিয়ে নিয়েছি যিনি যমীন ও আসমান সৃষ্টি করেছেন এবং আমি কখনো মুশরিকদের অন্তরভুক্ত নই৷ " ( আনআম: ৭৬ - ৭৯)
বিষয়: বিবিধ
১৬১৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন