“… যে আল্লাহর ঘরে তাঁর নাম স্মরণ করা থেকে মানুষকে বাধা দেয় এবং সেগুলো ধ্বংস করার প্রচেষ্টা চালায়”
লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১১:৩৭:১৫ সকাল
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “আর তার চাইতে বড় যালেম আর কে হবে যে আল্লাহর ঘরে তাঁর নাম স্মরণ করা থেকে মানুষকে বাধা দেয় এবং সেগুলো ধ্বংস করার প্রচেষ্টা চালায় ? এই ধরনের লোকেরা এসব ইবাদাতগৃহে প্রবেশের যোগ্যতা রাখে না আর যদি কখনো প্রবেশ করে , তাহলে ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় প্রবেশ করতে পারে ৷ তাদের জন্য রয়েছে এ দুনিয়ায় লাঞ্ছনা এবং আখেরাতে বিরাট শাস্তি ৷” (বাকারাঃ ১১৪)
এ আয়াতটি বুঝার জন্য এর পূর্বের (১১৩ নম্বর) আয়াতটি লক্ষ্য করার মত। ১১৩ নং আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন:
"ইহুদিরা বলে, খৃস্টানদের কাছে কিছুই নেই ৷ খৃস্টানরা বলে ইহুদিদের কাছে কিছুই নেই ৷ অথচ তারা উভয়ই কিতাব পড়ে ৷ আর যাদের কাছে কিতাবের জ্ঞান নেই তারাও এ ধরনের কথা বলে থাকে ৷ এরা যে মত বিরোধে লিপ্ত হয়েছে কিয়ামতের দিন আল্লাহ এর চূড়ান্ত মীমাংসা করে দেবেন ৷"
অতএব, বিধর্মীদের পারস্পরিক কোন্দল (একারণে যে জান্নাত কেবল তারাই পাবে) যা অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি ঘৃনা ছড়ানো, মারামারি, খুনাখুনিতে লিপ্ত হওয়া, অন্যের উপাসনালয়কে ধংস করার মত গহ্রিত অপরাধে লিপ্ত রেখেছে। ইতিহাস প্রমাণ যে ইহুদী আর খ্রিস্টানদের মাঝে ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সঙ্ঘটিত হয়েছিল উপাসনালয়ের ভেতরে আর বাইরে তাদের উপাসনায় বাধা দেবার দরুন। এটা ইতিহাসসিদ্ধ সত্য যে, খ্রিস্টানরা মানুষদের আল্লাহর ঘরে জিয়ারতে বাধা দিয়েছিল। আব্রাহা মক্কা দখলে অগ্রসর হয়েছিল এ বাসনায় যে কাবা শরীফকে সে ধ্বংস করবে। এজন্য আব্রাহা এবং তার সৈন্য সামন্ত এ দুনিয়াতেই আল্লাহর ভয়ঙ্কর শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছিল!
উপরের রেফারেন্স এটাই পরোক্ষভাবে দেখায় যে, যারাই মুসলমানদের বিরুদ্ধে দাড়ায়, তারাই পারস্পরিক কোন্দলে জড়িয়ে পড়ে। বিধর্মীদের জান্নাত আর মুক্তিপ্রাপ্তির নিশ্চয়তার দাবী তাদের অতীতের ঘটনাবলী যেমন আল্লাহর ঘরে উপাসনা করতে বাধা দেয়ার মত নিকৃষ্ট কার্যাবলীর সাথে পুরোপুরি বিরোধপূর্ণ! একই সাথে কুরআন সকল ধর্মের উপাসনালয়ের সত্যিকার অবস্থান ও মর্যাদাকে সমুন্নত করেছে।
কুরআন বলেছে যে, যারা নিজদের তথাকথিত বুজুর্গ দাবী করে আর স্রস্টার কাছে বিশেষ মর্যাদা সম্পন্ন বলে মনে করে তারাই খুবই খারাপ প্রকারের অন্যায় ও অবিচার করেছে আল্লাহ ও তার বান্দাহদের প্রতি (উপাসনালয়ের পবিত্রতা হানি আর লোকদের উপাসানলয়ে আসতে বাধা দেয়ার মাধ্যমে। ক্ষেত্রবিশেষে উপাসনালয় ধ্বংস করতে ও এরা পিছপা হয়নি)। কোন ব্যক্তি বা দলের কখনও আল্লাহর ঘরে ঢুকে তার পবিত্রতা হানির সাহস করা অনুচিত।
বরঞ্চ আল্লাহর ঘরে মানুষ প্রবেশ করবে আশা এবং ভীতি সহকারে। যারাই এ কাজ করবে না, তারা অবশ্য অবশ্যই এ দুনিয়ায় লাঞ্ছনার শিকার হবে আর পরকালের ভয়ঙ্কর শাস্তি তো অপেক্ষমাণ থাকবেই।
উপাসনালয়ের পবিত্রতার মূলনীতির সূত্র ধরে এটা অনস্বীকার্য যে, মুসলমানদের সাথে খ্রিস্টান বা ইহুদীদের যুদ্ধের সময়েও ইসলাম পুরোপুরিভাবে নিষেধ করেছে যে, চার্চ আর সেনাগগ যেন কোন অবস্থাতেই ধ্বংস বা অপবিত্র না করা হয়।
এ পয়েন্টটি মুসলমানদের জন্যও গভীরভাবে অনুধাবনের বিষয় যে, যে সকল মুসলিম অন্যদেরকে মসজিদে প্রবেশে বাধা দেয় শুধুমাত্র এ কারনে যে, তারা অন্য মাজহাব বা ফিকহের অনুসারী অথবা অন্য রকম আকীদা বা চিন্তাধারা অনুসরণ করেন। প্রথম দল অনেক সময় অন্য চিন্তাধারা, মাজহাব বা আকীদার অনুসারী মুসলমানদের মসজিদেরও পবিত্রতা হানি এবং ধ্বংস করার মত উদ্ধত গহ্রিত আচরণ করতে পিছপা হয়না!
সূত্র/অনুবাদ: Pondering Over The Quraan, Vol 1, Amin Ahsan Islahi, পঃ ৩১৫
বিষয়: বিবিধ
১০৫৬ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন