".. এবং লোকদের সাথে উত্তমরূপে কথা বলবে"
লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৭:৪৬:৩৭ সন্ধ্যা
আল্লাহতায়ালা বলেন:
"স্মরণ করো যখন ইসরাঈল সন্তানদের থেকে আমরা এই মর্মে পাকাপোক্ত অংগীকার নিয়েছিলাম যে , আল্লাহ ছাড়া আর কারোর ইবাদাত করবে না, মা-বাবা , রক্ত-সম্পর্কীয় আত্মীয়-পরিজন, ইয়াতিম ও মিসকিনদের সাথে ভালো ব্যবহার করবে, লোকদের সাথে উত্তমরূপে কথা বলবে , নামায কায়েম করবে ও যাকাত দেবে৷। .. " (বাকারা: ৮৩)
সকল প্রকার পুন্য, ভদ্রতা, সত-উপদেশ বা নসিহত এই এক কথার (লোকদের সাথে উত্তমরূপে কথা বলবে) মাঝে ই বিদ্যমান। মুসলমানদের এ গুনটি সবসময় চর্চা করা একান্ত প্রয়োজন। এটি আরও ব্যপক অর্থে গ্রহণ করলে ও ক্ষতি নেই। তাফসীরকারকগন তাই ই করেছেন। কোরআন শরীফের কয়েক জায়গায় সামান্য ভিন্ন শব্দযোগে একই নসিহত এসেছে।
এতিমদের অভিভাবকদের প্রতি আল্লাহতায়ালা বলেছেন:
"আর তোমরা যে ধন –সম্পদেকে আল্লাহ তোমাদের জীবন ধারণের মাধ্যমে পরিণত করেছেন, তা নির্বোধদের হাতে তুলে দিয়ো না ৷ তবে তাদের খাওয়া পরার ব্যবস্থা করো এবং কথা বল উত্তমরূপে ন্যয়ভাবে" ৷ (নিসা: ৫)
একই সুরার অন্যত্র বলেছেন:
"ধন-সম্পত্তি ভাগ-বাঁটোয়ারার সময় আত্মীয় –স্বজন, এতিম ও মিসকিনরা এলে তাদেরকেও ঐ সম্পদ থেকে কিছু দিয়ে দাও এবং তাদের সাথে কথা বলো উত্তমরূপে ন্যয়ভাবে৷ লোকদের একথা মনে করে ভয় করা উচিত, যদি তারা অসহায় সন্তান পিছনে ছেড়ে রেখে যেতো, তাহলে মরার সময় নিজেদের সন্তানদের ব্যাপারে তাদের কতই না আশংকা হতো! কাজেই তাদের আল্লাহকে ভয় করা ও ন্যায়সংগত কথা বলা উচিত" ৷ (নিসা: ৮-৯)
সুরা বাকারার শেষের দিকে আল্লাহতায়ালা বলেছেন:
"যারা নিজেদের ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে এবং ব্যয় করার পর নিজেদের অনুগ্রহের কথা বলে বেড়ায় না আর কাউকে কষ্টও দেয় না , তাদের প্রতিদান রয়েছে তাদের রবের কাছে এবং তাদের কোন দুঃখ মর্মবেদনা ও ভয় নেই ৷ একটি মিষ্টি কথা এবং কোন অপ্রীতিকর ব্যাপারে সামান্য উদারতা ও ক্ষমা প্রদর্শন এমনি দানের চেয়ে ভালো, যার পেছনে আসে দুঃখ ও মর্মজ্বালা"৷। ... (বাকারা: ২৬২-৩)
আবার, সুরা ইসরাতে এসেছে:
"যদি তাদের থেকে (অর্থাৎ অভাবী, আত্মীয়-স্বজন, মিসকীন ও মুসাফির) তোমাকে মুখ ফিরিয়ে নিতে হয় এজন্য যে, এখনো তুমি প্রত্যাশিত রহমতের সন্ধান করে ফিরছো, তাহলে তাদেরকে নরম জবাব দাও"। (ইসরা: ২৮)
উপরের সবগুলো আয়াত অনুযায়ী, যে উপদেশ "কুলু লিন নাসি হুসনা" (লোকদের সাথে উত্তমরূপে (kindly) কথা বল) এসেছে তা একই ধরনের যা উপরোক্ত আয়াতগুলোতে বলা হয়েছে এতিম, অভাবী, আর মুসাফিরদের ব্যপারে। এটি সম্ভব হয়েছে যে বাক্যাংশ গুলোর সমন্বয়ে তা হল "কুলু লাহুম কাওলান মারুফা" (কথা বল উত্তমরূপে ন্যয়ভাবে), "ওয়া কুলু কাওলান সাদিদা" (তাদেরকে যথোপযুক্ত জবাব দাও), "কাওলান মারুফুন ওয়া মাগফিরাতুন" (উত্তম ন্যয় সংগত কথা - দোষত্রুটি গোপন রেখে) ।
মাতা-পিতা, রক্ত-সম্পর্কীয় নিকটাত্মীয়, এতিম এবং অভাবী দের সাথে অবশ্যই দয়ার সাথে এবং তাদের অধিকারের কথা চিন্তা রেখেই আচরন করতে হবে। একই সাথে 'অত্যন্ত ভদ্রচিতভাবে' তাদের সাথে কথা বলতে হবে। এমনকি অভাবীদের সাথে কথা বলার সময় যদি বিরক্তিভাব প্রকাশ পাওয়ার উপক্রম হয়, সে অবশ্যই নিজকে নিয়ন্ত্রন করবে। তাদের (সাহায্য প্রার্থীর) ভুলত্রুটি এবং দুর্বলতা ক্ষমা করে দেবেন। এর কারন কি? এর কারন সুস্পস্ট: এই উল্লিখিত ক্ষমার মূল্যবোধ ব্যতিরেকে কেউ ই তাদের সাথে উত্তমভাবে আচরন করতে পারবে না এবং তাদের অধিকারও সংরক্ষণ করতে পারবেনা। অনেক সময়, অভাবীর দুর্বলতা আর অসহায়ত্বের দরুন কেউ কেউ তার মর্যাদা এবং আত্ম সন্মানবোধকে আঘাত করতে পারে। একই সাথে অভাবীর প্রতি যদি আগে থেকে ই ঘৃণাবোধ থেকে থাকে, তবে অভাবীর প্রতি কথার ধরন ও আচরণ আরও ভয়ঙ্কর হতে পারে! কখনও অভাবী ব্যক্তির আচরণ ও খারাপ হতে পারে - যার ফলশ্রুতিতে কেউ কেউ তাদের (অভাবীর) প্রতি কটুক্তি করে বসতে পারে। পবিত্র কোরআন এর যেকোন পরিস্থিতিতেই ভদ্রচিত ও উত্তমরূপে কত বলার নির্দেশ দিয়েছে। বলা হয়েছে একটি মিষ্টি কথা এবং কোন অপ্রীতিকর ব্যাপারে সামান্য উদারতা ও ক্ষমা প্রদর্শন এমনি দানের চেয়ে ভালো, যার পেছনে আসে দুঃখ ও মর্মজ্বালা। আর এ সব কিছু ই একটি কথাতে ই চলে আসে: "... লোকদের সাথে উত্তমরূপে (kindly) কথা বলবে"।
সূত্র/অনুবাদ: Pondering Over The Quraan, Vol 1, Amin Ahsan Islahi, প: ২৭৩-৪
বিষয়: বিবিধ
১৩২২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এখন আমরা ভাষা ব্যবহারে কেমন জানি অসহিষ্ঞু হয়ে গিয়েছি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন