পৃথিবী (৩)
লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ২১ আগস্ট, ২০১৪, ০৭:২১:০৫ সন্ধ্যা
শফিক ড্রাইভ করছে।
তার প্রিয় মা আজ তার সাথে। বিদেশে বেড়াতে এসেছে। তার নাতি-নাতনিদের দেখতে।
শফিকের আজ বড় ই আনন্দের দিন। সে কি এরকম সুখের দিনের প্রত্যাশায় ছিল বহু দিন? বহু বছর?
পরম করুনাময় তার মাকে শারীরিক আর মানসিক দুই দিক থেকে ই শক্তি-সামর্থ দিলেন; তাদের এক সাথে ঘুড়ার সুযোগ করে দিলেন - এর জন্য শফিক কি বলবে? স্রষ্টাকে ধন্যবাদ কিভাবে দিবে? তার মনে হচ্ছে সে নির্বাক! তার মন ও ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। সে অভিবাক্তি-বিহীন।
পেছনে প্রিয়তমা স্ত্রী আর সন্তানেরা।
মা বললেন, 'কি সুন্দর দিন! কি সুন্দর দেশ! গুছানো। বাংলাদেশ ও সুন্দর ছিল। কিন্তু চল্লিশ বছর ধরে একদল নরপশু শাসকের বদৌলতে সুন্দর বাংলাদেশ আজ এক কল্পনা-বিলাস।'
শফিকের মনে হচ্ছে মা কি সুন্দর করে ই বলছে। গুছানো কথা।
আচ্ছা আমার এত আনন্দ হচ্ছে কেন?
এইচ,এস,সি র রেসাল্টের দিন কি এমন আনন্দ ছিল না? সেদিন ও কি মা আমার সঙ্গী ছিল না?
স্ট্যান্ড করেছি শুনে শিশুর মত মার উপর দৌড়ে ঝাপিয়ে পড়েছিলাম না?
জড়িয়ে ধরেছিলাম। আমার শক্ত মনের মা র চোখে সেদিন কি পানি জমেছিল!
শফিক সিডি ছেড়ে দিল। এক নতুন শিল্পী সাইফ আদমের গান।
When the sun goes down
And there's nothing left around
Can you feel it
Can you feel it
When your knees are on the ground (prayer)
You may feel but this aloud
Are you listening
Cause I need forgiving (from Allah)
I need forgiving
Cause I need forgiving
Ohhh
Cause I need forgiving
শফিকের চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। এত আনন্দের সুযোগ যিনি তাকে দিলেন, তার কাছে ক্ষমা চাওয়ার মত কৃতগ্গতা আর আনন্দ আর কিসে থাকতে পারে? বৃষ্টি পড়ছে। কখন ও বাড়ছে। কখন ও বৃষ্টি একেবারে থেমে ই যাচ্ছে।
তার চোখের চশমায় সে অশ্রু কেউ দেখেনা।
সে গানের ভলিউম বাড়িয়ে দিল।
**
'তোমার কন্যা সন্তান, এতে তোমার এত দু:খ কেন?'
মেয়েটির করুন চাহনী; তবু ও বলল, 'না দু:খ থাকবে কেন? শেষ জীবনে কে পাশে থাকবে এই ভাবনা মনে আসে আর কি?'
তিনি বললেন, 'অন্যভূবনে মহানবী (স) এর সাথে থাকার মত সৌভাগ্য কি মনে আসেনা? যার একাধিক মেয়ে আর তাদেরকে যে প্রকৃত মুসলিম হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে তার সাথে যে রাসুলুল্লাহ (স) সেদিন থাকবেন এই সৌভাগ্যের মর্ম কি বুঝলে না?'
মেয়েটির চেহারা ই বদলে গেল!
মেয়েটি হল শফিকের বোন। এই লং ড্রাইভে তার অনেক গুলো গন্তব্যের একটি হল তার বোনের বাসায় থামা। দুই দিন থাকা।
সে ভাইয়ের জন্য রান্না চড়িয়েছে। মনের লিস্ট তৈরি করা। টক, ঝাল, মিষ্টি, কি নেই সেখানে? মনের মাধুরী মিশিয়ে বৈচিত্রময় রান্না হচ্ছে মা আর ভাইয়ের জন্য।
আর ওই মহিলা হলেন তার ই প্রতিবেশী। তারা একসাথে ই ইসলামিক প্রোগ্রাম আয়োজন করে। কমিউনিটির মাঝে। মানুষদের মাঝে এই প্রোগ্রাম আয়োজনের থেকে ভাল কাজ কি আর কিছু থাকতে আছে?
"তুমি এতো ইসলামিক প্রোগ্রামের আয়োজন কর অথচ কন্যাদের জন্য আল্লাহ তায়ালার আন্তরিকতা আর তাদের মানুষ করার মত পুরস্কারের খবর জানার পর ও তাতে আন্তরিক নও কেন? তুমি আল্লাহর জন্য কাজ করবে। আর আল্লাহ তোমার জন্য কাজ করবেন। তোমার পৃথিবীর জীবনকে তৃপ্তিময় করে তুলবেন। এই বিশ্বাস মনে দৃর করে নাও।"
মেয়েটির মনে পড়ছে বুখারী আর মুসলিমের সেই হাদিসটি:
"যে ব্যক্তি মেয়েদের উত্তমরূপে গড়ে তুলতে দায়িত্ববান হয়, তাদের প্রতি সদয় ও উদার হয়, সেই মেয়েরা ওই ব্যক্তির জাহান্নামের আগুনের শাস্তির বাধাস্বরূপ হয়ে দাড়াবে।" (মা আয়েশা (রা) এ হাদিসের কার্যকারন সম্পর্কে বলেন: একজন দরিদ্র মহিলা তার দুই মেয়েকে নিয়ে রাসুলুল্লাহ (স) এর কাছে এসেছিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ (স) উপরোক্ত উক্তি করেন।)
**
গতিশীলতার আনন্দ শফিক খুব উপভোগ করেনা ঠিক ই কিন্তু বিকেলের পড়ন্ত রোদে মা আর পরিজন সহ সবুজ বনের মধ্য দিয়ে গাড়ি চালাতে তার অসাধারন ভাল লাগছে। কফি নিয়েছে রাস্তার ধারের একটি দোকান থেকে। নামাজ ও পরেছে রাস্তার ধারেই।
ফ্রেশ মনে আবার স্টিয়ারিং ধরেছে। গান চলছে:
Look inside your heart, search into your soul
He is holding your hand and catch your fall
Mashallah I see the light
Mashallah I see my mother's smile
O o...
Allah hu akbar
Allah sees it all
Allah hu Akbar
He sees it all
He sees it all
For that I am strong, I'm so strong
.....
Give your faith to Allah and let it go
Respect all your sisters
and look out your sights
...
Allah hu akbar
Allah sees it all
Allah hu Akbar
He sees it all
He sees it all
For that I am strong, so strong.
** ** ** **
গতিশীল শফিকের গল্পের সময়েই অনেক অনেক দুরে থাকা একজন স্থিত মানুষের গল্প শুরু হচ্ছে।
সে থাকে মাটির নিচে।
তার সঙ্গী হল অস্ত্র আর এক বোতল পানি।
দুইটি খেজুর সে খেয়েছে গতকাল। এছাড়া আর কোন খাবার নেই। বাইরে বৃষ্টির মত বোমা ফেলছে ইসরাইলি নরখাদকের দল।
তার নাম মাসুদ। কাসসাম ব্রিগেডের একজন সে।
তার তিনটি মেয়ে ছিল। অসম্ভব রূপবতী জীবন-সঙ্গিনী ছিল। কেউ বেচে নেই। মা বাবাকে হারিয়েছে সেই ষাটের দশকে। ইসরাইলি দানবদের বোমায়। যুগ-যুগান্তরের দানব এই ইসরাইলি জাতি। দৈত্যের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিয়েছে সে। এটাই কি একমাত্র উপায় নয়?
**
মাটির গর্ত টি তিন ফুট বাই চার ফুট আনুমানিক। একটি পাইপে সে চলে এসেছে এই গর্তে। জায়ন সৈন্যদের এখানে আসার আগে অন্তত গোটা চল্লিশেক গর্ত পেরুতে হবে। পেচানো বহুধা-বিস্তৃত শাখা প্রশাখার মত পাইপগুলো থেকে গর্ত চলে গিয়েছে।
আর ঘন্টাখানের পর তার বেরুতে হবে। অপারেশন আছে। অক্সিজেন সিলিন্ডার তার গর্তে আছে। বোমাতে মাটি ধ্বসে পড়লে লাগবে।
**
মাসুদের সামনে তার রূপবতী স্ত্রী বসে আছে। দুই হাতে মেহেদি দেয়া। মাথায় ঘোমটা দেয়া। আজ ও একই সাজে এসেছে সে।
তিন দিন ধরে সে আসছে। তার সামনে বসে থাকার তৃপ্তি ই আলাদা।
"মেয়েরা কেমন আছে?"
'বেশ ভাল। তারা সারাদিন ছুটে বেড়ায়। এত বড় বাড়ি। সারা বাড়ি ই দেখে শেষ করতে পারিনি।'
'বুঝলাম না!'
'তাইতো বলি যে চল। না গেলে বুঝবে কিভাবে?'
আচ্ছা যাব। কিন্তু আরেকটু বসি।
মাসুদ ভেবে পাচ্ছে না একজন মানুষ এত সুন্দর কিভাবে হয়? তার স্ত্রী কি প্রতিদিন সুন্দর হচ্ছে? এত সুন্দর ঘ্রানের পারফিউম সে কোথায় পেল?
'আচ্ছা মেয়েদের কতদিন দেখি না!'
দেখবে? চল তাহলে।
মাসুদ হাত বাড়িয়ে দিল। তার অপরুপা হাত ধরবে বলে। তাদের নতুন বাড়ি দেখতে যাবে।
আর তখন ই তার ঘুম ভেঙ্গে গেল।
বিষয়: বিবিধ
১০৮৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন