সত্য ঘটনা অবলম্বনে (৩৪) : মায়া
লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ১৪ জুন, ২০১৪, ১১:২৮:২১ রাত
- এক --
মিরপুর! ইয়াসিন দেখল একদল অস্ত্রের মুখে তার পরিবারের নয় জনকে তালাবদ্ধ করল। পেট্রল ঢালল বাড়িতে। আগুন ধরিয়ে দিল।
২০১৪ এ বিহারীদের উপর অত্যাচারের এক নতুন মাত্রা। এটা চেতনা-র রাজপুত্রদের নতুন রাজনীতি না চেতনার বহিঃপ্রকাশ?
ইয়াসিন বসে পড়ল। নির্বাক হয়ে রইল।
আচ্ছা ও কি কিছু ভাবছে?
এটা কোন মাস? চেতনার মার্চ মাস নাকি ডিসেম্বর মাস?
ছাত্রলীগের ছেলেগুলো কত টাকা পেল?
অতীতে ভোটের জন্য উর্দুতে পোস্টার ছাপিয়ে স্থানীয় আওয়ামী এম্পির বর্তমানের এহেন রাজনীতিতে বাঙ্গালীপনার কি লাভ হল? নাকি অন্য কোন দুরভিসন্ধির প্লট তৈরি হল?
আগুন জ্বলছে।
শক্ত চোখে আগুনের ঝিলিক মারে।
ইয়াসিন কি ভাবছে?
প্রতিবাদ কেউ করে না।
মানুষ মরে গেছে।
ইয়াসিন তা বুঝে গেছে।
এ বাংলায় আজ কীটদের বাস।
আর ঘণ্টা-বাদে বিশ্বকাপের খেলা। দুঃখের আবেশ থাকবে ঘনটা-খানেক। এরপর খেলা দেখবে। তারপর মানুষ ছুটবে। আর ছুটবে। রোবটের মত। টাকার সন্ধানে। গরু ও ছুটবে মাঠে। খেতে। সবকিছু ভুলে যাবে। ইয়াসিন কোন বাল-ছাল?
ইয়াসিন কি ভাবছে?
ইয়াসিন কোন দেশের মানুষ?
তার জন্ম বাংলাদেশে। তবু কোন সরকার তাকে মেনে নেয় নি বাংলাদেশী বলে মন থেকে।
ভোটের আগে কেবল জানিয়েছে তার ভোটের নম্বর। ভোট প্রার্থনা করেছে তার কাছে। তাকে পূজা করেছে। আর এখন তার রক্তের দাম নাই। ‘৭১ এর চেতনা’ তার পরিবারের নয় জনকে পুড়িয়ে মেরেছে।
জয় ৭১ এর অসমাপ্ত চেতনার।
জয় রাজপরিবারের।
কেয়ামত পর্যন্ত তোমরা রক্তপান করতে থাক।
ইয়াসিন কি ভাবছে?
ইয়াসিনের দিকে তাকানো চেতনা ধারীদের একজন তাকিয়ে কি ভাবছে? তার হাতে পেট্রলের বোতল।
এক ভয়ঙ্কর কাজের পূর্ব-মুহূর্ত!
চেতনার অভিস্ফুরন ঘটল বলে!
এই শালা বিহারীর ভাবনা নিয়ে আমার কি? তুই মরবি না বাঁচবি - তাতে আমার কি? তোঁর শিশু আগুনে পুড়ে কয়লা হলে আমার কি? ৭১ এর প্রতিশোধ আমি ভুট্ট র উপর নিতে পারি নাই তোঁ কি? যুদ্ধের পর পরই আমার জাঁতির পিতা তোঁমাগো ভুট্ট র সাথে পিরিতি করছে তোঁ কি? কাউরে না কাউরে তোঁ কাফফারা দিতে হইব। তুমিই না হইলে ৭১ এর কাফফারা দিলা? অপরাধ না যাইনাই কাফফারা দিলা। ৩০ লক্ষ বাঙ্গালির আত্মা পরিত্রাণ পাইব বলে।
বিহারীদের জন্য কোন দয়ামায়া নাই!
ইয়াসিন কি জানে ‘মায়া’ কি জিনিষ?
ওর কোলের শিশু কি একটু মায়া পেতে পারত না চেতনার-ত্রিশূল-ধারীদের কাছে?
ইয়াসিন কি বুঝল? চেতনার কাছে রক্ত মূল্যহীন।
এই বুঝ কি তাকে বোবা বানিয়ে দিল?
-- দুই --
আকাশে চাদ উঠেছে। ম্যনচেষ্টার এর বড় রাস্তা পেড়িয়ে ছোট পাথুরে রাস্তায় গাড়ি চলছে। নাজিল গাড়ি চালাচ্ছে। আমরা দুই প্রকৃতিপ্রমিক রাতের জোসনার আলো উপভোগ করছি।
পিছনে আমার দুই কন্যা তার মার গলা জড়িয়ে ঘুমিয়ে।
'ভাইয়া, সুন্দর এক গান শুনবেন?' নাজিল বলল।
নাজিল এক সাক্ষাত লাইভ অডিও প্লেয়ার! আমি তবু বললাম 'ওকে'। ও নিজে না গেয়ে CD ছেড়ে দিল:
In a world full of confusion
Where we walk with pain in our hearts
O Allah guide us to heaven and show us all the right path
We pray that He’ll forgive us and tears forever fall
Looking for a happy ever after when we are gone
I can be free nobody’s holding me
I’m on the road to be
Where Allah is pleased with me.*
আচ্ছা আমি কি অনেক অতীতে চলে গিয়েছি?
'আম্মু, আমরা আজ সারাদিন ভাইয়ার কাছে গল্প শুনব।' অনেক বছর আগের আমার কাল্পনিক গল্পের ভক্তের দলের একজন আমার পাশে থাকলে আমি কি সেই সময়ে ফিরে যাই? সময়কে থামাতে পারি এভাবেই।
সেই 'আম্মু' তার বড় হওয়া সন্তানদের দেখে যেতে পারেন নাই। আহারে! যদি জানত তার জন্য অপার ভালবাসায় আচ্ছন্ন অনেকেই আজ এই জোসনার আলোয়।
** **
মায়া! কি যে জিনিষ! করুনাময় স্রষ্টা এই মায়াকে অনেক ভাগ করে মাত্র একভাগ পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছেন। সেই সামান্য আবেগ ই কত যে বেশি! ধারন করা যায়না।
_________
* গানটি হল:
(Album: Heart
Lyrics: Saif Adam, Abu Nadir & Dawud Abbas
Melody: Saif Adam
)
বিষয়: বিবিধ
১০৭৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন