চতুর সরকারের 'যুদ্ধাপরাধ' ও 'মানবতাবিরোধী' শব্দ নির্ধারণে লড়াই এবং মানুষের বুদ্ধি-ভ্রম
লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০১:০৪:২৬ দুপুর
"শেখ মুজিবুর রহমানের এর সরকার (১) তদন্তের মাধ্যমে পাক-সেনাবাহিনী ও সহযোগী অন্যান্য বাহিনীর মধ্যে থেকে ১৯৫ জন পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তাকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে তালিকাভুক্ত করেন। তাদের বিচার করার জন্য ১৯৭৩ সালের ১৯ জুলাই জাতীয় সংসদে International Crimes (Tribunals) Act পাস করা হয়। পরবর্তীতে, ১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিল নয়াদিল্লীতে বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে একটি চুক্তির মাধ্যমে ঐ যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করা হয়। শেখ সাহেব বাংলাদেশের কোন বেসামরিক ব্যক্তিকে যুদ্ধাপরাধীর তালিকায় শামিল করেননি। যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়নি, যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল এবং যারা সেনাবাহিনীর সহযোগী হয়েছিল, তাদেরকে শেখ সাহেবের সরকার ‘কলাবরেটর’ আখ্যা দিয়েছিলেন। উল্লেখ্য, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে সহযোগিতা করার উদ্দেশ্যে ১৯৭১ সালের সামরিক সরকার সরকারি আদেশের মাধ্যমে জনগণ থেকে রাজাকার, আল-বদর, আশ-শামস নামে বিভিন্ন বাহিনী গঠন করে। এসব বাহিনীকেও শেখ সাহেব এর সরকার ‘কলাবরেটর’ আখ্যা দেন।
(২) ‘কলাবরেটরদের’ বিচার করার উদ্দেশ্যে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি ‘কলাবরেটর্স অর্ডার’ নামে একটি আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। এ আইনে বিচারের জন্য লক্ষাধিক লোককে গ্রেফতারও করা হয়েছিল। এদের মধ্যে অভিযোগ আনা হয়েছিল ৩৭ হাজার ৪শ’ ৭১ জনের বিরুদ্ধে। এই অভিযুক্তদের মধ্যে ৩৪ হাজার ৬শ’ ২৩ জনের বিরুদ্ধে সাক্ষী-প্রমাণের অভাবে কোন মামলা দায়েরই সম্ভব হয়নি। মাত্র ২ হাজার ৮শ’ ৪৮ জনকে বিচারে সোপর্দ করা হয়। বিচারে ৭শ’ ৫২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয় এবং অবশিষ্ট ২ হাজার ৯৬ জন বেকসুর খালাস পেয়ে যায়। পরবর্তীতে, ১৯৭৩ সালের নবেম্বরে সরকার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করার পর গ্রেফতারকৃত ও সাজাপ্রাপ্ত সকলেই মুক্তি পায়।
(৩) অবশ্য যারা হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মত অপরাধে অপরাধী তাদেরকে ঐ আইনে বিচার করার সিদ্ধান্ত অব্যাহত রাখা হয়। কিন্তু, এরপর দু’বছর পর্যন্ত কারো বিরুদ্ধে ঐসব অভিযোগে মামলা দায়ের না হওয়ায় এ আইনটিই বিলুপ্ত করা হয়।
যাদের বিরুদ্ধে সে সময় অভিযোগ উঠেনি, কোন মামলা দায়ের হয়নি, সেই নিরপরাধীদেরকেই যুদ্ধাপরাধী সাজাবার জন্যে আজ মামলা তালাশ করা হচ্ছে। [পাদটিকা [i]- দেখুন ]"
উপরের বক্তব্য অধ্যাপক গোলাম আজমের গ্রেফতারের পূর্ব-মুহুর্তে লিখে যাওয়া [পাদটিকা [ii]- দেখুন ] । এখন সরল চিন্তা এখন সরল চিন্তা করুন!
(১) এবং (২) পয়েন্ট অনুযায়ী 'যুদ্ধপরাধ' শব্দ প্রয়োগ অর্বাচিনের কাজ। বুঝতে পারার সাথে সাথেই সরকার চতুরতার সাথে 'মানবতা-বিরোধী' শব্দে সরে আসে। তাই নয় কি?
(৩) নম্বর যুক্তি তে (মানবতা-বিরোধী শব্দ চয়নের যুক্তি) বলা যায় -- যখন সাক্ষী চারপাশে থাকে (যদি আসলেই থাকত) তখন সাক্ষী পাওয়া যায়? নাকি ৪২ বছর পর অজস্ত্র মামলা তৈরী করে, থানায় মামলা জমা দিয়ে, সাক্ষীকে প্রশিক্ষিত করে (এমনকি সুলতানা কামালের মত শিক্ষিত মানবাধিকারের কর্মীকেও!! যা অভিও ক্লিপে সুপ্রমাণিত এখন) কাউকে মানবতা-বিরোধী অপরাধে 'অভিযুক্ত করা যায়?
যুদ্ধ -পরবর্তী সরকার (মাত্র যুদ্ধ জয় শেষে অপরাধী খুজতে মরিয়া) তখন ই এই চার-রকম দোষে জামায়াতের নেতাদের অভিযুক্ত করলো না কেন? মাথা থেকে আজন্ম শুনে আসা তথ্য সরিয়ে ক্ষনিকের জন্য নিরপেক্ষ চিন্তা করুন! লক্ষাধিক লোকের মাঝেও (যারা হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের যেকোনো একটিতে অভিযুক্ত) জামায়াতের নেতৃবৃন্দের একজন ও থাকলো না তখন - আশ্চর্য !?
সাধারণ বুদ্ধিতে তো দুইটি শব্দ প্রয়োগ করাই হাস্যকর! সরকার এই হাসির নাটকটি ই রচনা করছে নির্লজ্জ ভাবে!
রেফারেন্স : http://www.priyoboi.com/2001/09/blog-post_19.html
=== পাদটিকা এবং আপনাদের কাছে গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন ===
[i] মাত্র যুদ্ধ-শেষে যখন সাক্ষী চারপাশে থাকে (যদি আসলেই থাকত) তখন সাক্ষী পাওয়া যায় বা মজলুম স্বাক্ষী থানায় কেইস করতে যায়? নাকি ৪২ বছর পর অজস্ত্র মামলা তৈরী করে, থানায় মামলা জমা দিয়ে, সাক্ষীকে প্রশিক্ষিত করে (এমনকি সুলতানা কামালের মত শিক্ষিত মানবাধিকারের কর্মীকেও!! যা অভিও ক্লিপে সুপ্রমাণিত এখন) কাউকে মানবতা-বিরোধী অপরাধে 'অভিযুক্ত করা যায়?
যুদ্ধ -পরবর্তী সরকার (মাত্র যুদ্ধ জয় শেষে অপরাধী খুজতে মরিয়া) তখন ই এই চার-রকম দোষে জামায়াতের নেতাদের অভিযুক্ত করলো না কেন? মাথা থেকে আজন্ম শুনে আসা তথ্য সরিয়ে ক্ষনিকের জন্য নিরপেক্ষ চিন্তা করুন! লক্ষাধিক লোকের মাঝেও (যারা হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের যেকোনো একটিতে অভিযুক্ত) জামায়াতের নেতৃবৃন্দের একজন ও থাকলো না তখন - আশ্চর্য !?
অনেকে এক অদ্ভুত কথা বলে থাকেন - তা হলো -- "মামলা 'হয়ত' হয়েছিল কিন্তু জিয়াউর রহমান সব 'অভিযোগের' নথিপত্র ধ্বংস করে দিয়েছিল"।
প্রথমত: সেই নথিপত্রে গোলাম আজোম, নিজামী সহ জামায়াত নেতাদের অভিযোগ আছে কিনা তা তারাই নিশ্চিত নন।
দ্বিতীয়ত: যখন আওয়ামী লিগ ক্ষমতায় তখন তাদের কেউ (বিশেষত যারা এখন বিচারের জন্য লম্ফঝম্ফ করছে) জামায়াতের তথাকথিত কালপ্রিট দের নামে অভিযোগ দায়ের করলে আর কোনো 'থানা' তা গ্রহণ করলে তা কি কোনো খবরের কাগজে আসতো না? তথাকথিত মাস্টার-প্ল্যানার দের নামে মামলা দায়ের হলো -- আর কোনো পত্রিকায় (সব ই তো সরকারী তথা বাকশালের পত্রিকা) তা এলো না -- অথচ ৩৫ বছর পর এসব অদ্ভুত অনুমান করবেন! অনুমানের ও তো মা-বাপ থাকা উচিত তাই না?
এক্ষেত্রে খন্দকার মাহবুব হোসেনের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য :
আমি ১৯৭৩ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর ছিলাম। ওই সময় দালাল আইনে বিচারের জন্য পাকিস্তান আর্মির এদেশীয় ২৮ হাজার সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। বর্তমানে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে যাদের আটক করা হয়েছে, ওই ২৮ হাজার বন্দীর মধ্যে এরা কেউ ছিলেন না। এরা যদি এতই ভয়ঙ্কর অপরাধী হতেন, তাহলে এদের একজনকেও ওই সময় গ্রেফতার তো দূরের কথা, এদের কারও বিরুদ্ধে দেশের কোনো একটি থানায় একটি জিডিও করা হলো না কেন? তিনি বলেন, যে কাদের মোল্লাকে এখন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে, তিনিই স্বাধীনতার পর ১৯৭২-৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন, আবার বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ভেতরে উদয়ন স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি যদি ‘কসাই কাদের কিংবা জল্লাদ কাদের’ হন, তাহলে আজ যারা তার ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন করছেন তারা কেন তাকে ওই সময় আটক করে পুলিশে দিলেন না? এ ধরনের অনেক প্রশ্ন আজ সাধারণ জনগণের মাঝে।"
[ii] আপনি যদি ইসলাম নিয়ে প্রকৃত অবগত হতে চান, তবে কুরআন ও হাদিস পড়তে হবে। আমি কি বললাম বা বিধর্মীরা কি বলল তাই শুধুমাত্র প্রকৃত তথ্য দিবে না - অতিরিক্ত তথ্য (সঠিক বা ভুল) দিবে কেবল। অন্যভাবে বলা যায় কুরআন ও হাদিস চর্চা ছাড়া আপনি যতই ইসলামের বই পড়েন না কেন - তা কখন ই পরিপূর্ণ ইসলামকে উপস্থাপন করবে না বরং ক্ষতিগ্রস্থই করবে।
অনুরূপভাবে আপনি যতই জামায়াতে ইসলামি নিয়ে সত্যিকার অর্থে জানতে চান তবে জামায়াতের কর্মপদ্ধতি বা তাদের নেতৃবৃন্দের লেখা বই পড়তে হবে। অতিরিক্তভাবে অন্যান্য রেফারেন্সও জামায়াত সম্পর্কে আপনার জানার পরিধি বাড়াবে। একইসাথে বুদ্ধিবৃত্তিক উপায়ে আপনার চিন্তা করতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক, আমরা এ উপায়ে সমালোচনার্থে পরিশুনা করি না। ৪২ বসর ধরে আমরা অধিকাংশ লোক একটি দলকে (জামায়াতকে ) গালিগালাজ করছি লোকেরা কি বলছে অথবা জামায়াত-বিরোধীরা বইতে কি লিখা আছে শুধুমাত্র তার উপর ভিত্তি করে - জামায়াতের সাথে না মিশেই অথবা দুইপক্ষকে (জামায়াত বা বিরোধী) নিরপেক্ষ ভাবে না জেনেই অথবা দুই পক্ষের তথ্য অবগত না হয়েই!
বিষয়: বিবিধ
২১৬১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন