উড়ওয়ার গল্প (২)

লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ২১ মে, ২০১৪, ০৬:৫০:৪৩ সন্ধ্যা

(এক)

মক্কা বিজয়ের পর ফিরে আসার সময় যখন রাসুলুল্লাহ (স) তায়েফ ছেড়ে যান, উড়ওয়া বিন মাসুদ তার দুর্গ থেকে বেরিয়ে আসেন এবং মহানবী (স) এর সন্ধানে যান। মহানবী (স) যখন প্রায় মদীনা পৌঁছেন, তখন উড়ওয়া বিন মাসুদ তার (স) সাথে দেখা করার সুযোগ পান। তখন উড়ওয়া বিন মাসুদ ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেন। এরপর তিনি তায়েফে তার লোকদের নিকট ফিরে আসেন।

তায়েফে ফিরে এসেই উড়ওয়া বিন মাসুদ (রা) যে কাজটি করেন তা হল লোকদের ইসলামের দিকে আহবান করা। তায়েফের লোকেরা পুরাতন মূর্তি-পুজারক উড়য়া বিন মাসুদ কে যে পরিমাণ ভালবাসত, ঠিক সে পরিমাণ ঘৃণা করা শুরু করে নও -মুসলিম উড়ওয়া বিন মাসুদ (রা) কে। তারা তাদের চরম ঘৃণা প্রমাণ করে তার (রা) দিকে তীর ছুঁড়ে। কমপক্ষে একটি তীর তাকে (রা) মারাত্মকভাবে আহত করে।

আহত উড়ওয়া বিন মাসুদ (রা) মারা যাওয়ার পূর্বে তার পরিজনদের অসিয়ত করেন তাদের কবরস্থানে দাফন না করার জন্য। বরঞ্চ তায়েফে মুসলিমদের অভিযানে যে সকল মুজাহিদ রা শহীদ হন, তাদের সাথে দাফন করার নির্দেশ দিয়ে যান।

(দুই)

তাবুক অভিযানের পর থাকিফ থেকে একদল ইসলাম ধর্মে প্রশিক্ষিত হতে মদিনায় আসেন। তারা থাকিফ ফিরে যাওয়ার পরই রাসুলুল্লাহ (স) খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ (রা) এর নেতৃত্বে একদল মুজাহিদ পাঠান থাকিফ এর লোকদের প্রধান উপাস্য ‘আর-রাব্বাহ’ এর মূর্তি ধ্বংস করার জন্য। ওই দলের একজন ছিলেন উড়ওয়া বিন মাসুদ (রা) এর ভাতিজা - আল-মুগীরা ইবনে শবাহ (রা)। উদ্দেশ্য ছিল মূর্তিটি ধ্বংস করা।

আল-মুগীরা ইবনে শবাহ (রা) ঠাট্টা-রসিকতায় (উত্তম ধরনের) পটু ছিলেন। তিনি (রা) তার সঙ্গীদের বল্লেন, “আল্লাহর শপথ, আমি থাকিফের লোকদের সাথে রসিকতা করব (যেহেতু তারা ‘আর-রাব্বাহ’ এর ব্যাপারে অন্ধভক্ত)”।

তিনি (রা) তার ক্ষুদ্র কুঠারবিশেষ দিয়ে ‘আর-রাব্বাহ’ মূর্তিকে আঘাতের অভিনয় করেন আর এর পর পরই মাটিতে পড়ে যাওয়ার অভিনয় করলেন (যেন তিনি আহত হয়েছেন)। লোকেরা জমায়েত হল এবং বলল, “আল্লাহ আল-মুগীরা কে সরিয়ে দিক। আর-রাব্বাহ তাকে (আল-মুগীরা (রা)কে ) মেরে ফেলেছে!” মূলত সবাই সমস্বরে উল্লাস করল এই ভেবে যে তাদের দেবতা ‘আর-রাব্বাহ’ আল-মুগীরা (রা)কে মেরে ফেলেছে!

লোকেরা তখন খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ (রা) এর দলকে উদ্দেশ্য করে বলল, “কেউ যদি এর পর আর-রাব্বাহ এর দিকে অগ্রসর হতে চায় (তাকে ধ্বংস করতে) তবে আগাক (সাহস থাকলে)। আল্লাহর শপথ, কেউ তা করতে পারবে না।”

ঠিক সে মুহূর্তেই আল-মুগীরা ইবনে শবাহ (রা) লাফ দিয়ে মাটি থেকে (শোয়া অবস্থা থেকে) উঠে যান। সবাই দেখল যে, তার আসলে কিছুই হয়নি। তিনি (স) তাদের বলেন, “আল্লাহ তোমাদের লজ্জায় আচ্ছন্ন করুক! এটা (আর-রাব্বাহ) কিছুই নয় কেবলমাত্র পাথর ছাড়া! অতএব, নিরাপত্তা গ্রহণ কর, আল্লাহর তরফ থেকে ভালোত্ব গ্রহণ কর এবং কেবল তারই উপাসনা কর।”

এরপরই আল-মুগীরা ইবনে শবাহ (রা) এবং দলবল আর-রাব্বাহ মূর্তি ধ্বংস করেন এবং তা মাটির সাথে মিশিয়ে দেন।

মূর্তি ধ্বংস করার সময় এক প্রধান পূজারী মুসলিম দলকে বলে, “ তোমরা দেখবে, আর-রাব্বাহ এর ভিত্তি (base) রাগান্বিত হবে এবং ভূমি ধ্বসের মাধ্যমে তোমাদের মাটির সাথে মিশিয়ে দিবে।” এই বোকামি ধরনের কথা শুনে আল-মুগীরা ইবনে শবাহ (রা)

খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ (রা) কে অনুরোধ করেন, আর ও মাটির গভীর পর্যন্ত গিয়ে মূর্তিটি সম্পূর্ণ উপড়ে ফেলার জন্য যাতে তার সামান্যও অবশিষ্ট না থাকে! থাকিফ গোত্রের সকলেই মারাত্মক মনোবেদনায় পড়েন এই পুরো দৃশ্যে! অবশ্য এ ঘটনা তাদের (মিথ্যা-প্রভুর প্রতি) অন্ধ-ভক্তির চেতনাকেও নাড়া দেয় প্রবলভাবে!

সূত্র

The Noble Life of the Prophet, Dr Ali Muhammad As-Sallaabee, Vol-3

বিষয়: বিবিধ

১২৮২ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

224280
২১ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০৫
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ
224283
২১ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১৯
সালাম আজাদী লিখেছেন : নাম টা একটু সুন্দর করে লিখলে ভালো হতো না? তার নাম ছিলো 'উরওয়া' আরবীতে عروة সবচেয়ে ভালো হয় ট্রান্সলিটারেশানের আগে আরবী নাম টা মিলিয়ে নেয়া। গোত্রের নাম ছিলো সাক্বীফ, আরবীতে ثقيف ইংলিশে th এর কাছাকাছি বলে একে অনেকে থাকীফ বলেন, তাকিফ না। অনেক ধন্যবাদ সুন্দর আর্টিকেলের জন্য।
২১ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩০
171529
ড: মনজুর আশরাফ লিখেছেন : ধন্যবাদ ভাল correction এর জন্য।
২১ মে ২০১৪ রাত ০৯:২৬
171567
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : আমার আব্বুকে বললাম ওনি বললেন উরওয়া। আপনাকে ধন্যবাদ সুন্দর কমেন্টের জন্য।
224289
২১ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৪
ভিশু লিখেছেন : খুব ভালো লাগ্লো...Happy Good Luck
224293
২১ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪২
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : ভালো লাগলো।
224299
২১ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৭
হারিয়ে যাবো তোমার মাঝে লিখেছেন : অনেক সুন্দর হয়েছে ..ভালো লাগলো সাহাবীদের ইতিহাস জেনে।
224334
২১ মে ২০১৪ রাত ০৮:৪৬
পুস্পিতা লিখেছেন : ধন্যবাদ।
224354
২১ মে ২০১৪ রাত ০৯:৩২
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : অনেক সুন্দর একটি পোস্ট। হযরত উরওয়া ইবনে মাসুদ (রাঃ) ঘটনাটা মনকে একটু বিসন্ন করে দিল। ধন্যবাদ অনেক অনেক
224355
২১ মে ২০১৪ রাত ০৯:৩৪
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : অনেক সুন্দর একটি পোস্ট। হযরত উরওয়া ইবনে মাসুদ (রাঃ) ঘটনাটা মনকে একটু বিসন্ন করে দিল। ধন্যবাদ অনেক অনেক
224413
২১ মে ২০১৪ রাত ১১:১৩
সন্ধাতারা লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ
১০
224423
২১ মে ২০১৪ রাত ১১:৩৫
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ইংরেজীতে থাকিফ গোত্র কিন্তু আরবী উচ্চারণ ছাকিফ বা সাকিফ। ...মুগীরা ইবনে শূবা আঘাত করেই হাটু ভেঙ্গে বসে পড়েন...এবং এমন আচরণ করতে থাকেন যাতে কাফিররা ভাবে তার উপর লানত পড়েছে....

দারুন লাগল ঘটনাদুটি পড়ে। জাজাকাল্লাহ খায়রান। আরও লিখুন

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File