সত্য ঘটনা অবলম্বনে (৩২) ঃ 'তাকে যতনে রেখো'
লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ০৪ মে, ২০১৪, ০৩:৪৯:৫৫ দুপুর
-এক-
বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত ‘১৯৭১: বাংলাদেশ এবং পূর্ব ও উত্তর পূর্ব ভারত: স্মৃতিসভা ভবিষ্যত্’— শীর্ষক সেমিনারে একদল সমবেত!
মুন্তাসির মামুন ও রয়েছেন।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক উন্নয়নে দ্রুত ট্রানজিট চালু করা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন ভারতীয় হাইকমিশনার পংকজ শরণ। এদিকে ভারতের পক্ষে আরও একধাপ এগিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী বলেছেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। এখন নতুন করে ট্রানজিট চালু করা দরকার।
সবাই বাহবা দিচ্ছেন।
অনেক আগে কাশিম্পুরের নীলকুঠীতে একই রকম দরবার বসেছিল। এতটা উন্মুক্ত না হলেও তখন ও দেশবিক্রির বন্দোবস্ত পাকাপোক্ত করনে আলোচনা হয়েছিল। সিরাজুদ্দউলা কে উজবুক করে উপরে পাঠাতে সব আয়োজন পাকা করেছিল। দাসত্বের মালা বরন করতে জামাই সেজেছিল বেকুব বিশ্বাসঘাতকের দল।
দুই সময়েই একদল আন্দোলনরত দেশপ্রেমিক ছাড়া বাকী দেশবাসী গো-তুল্য যাবরই কাটছিল।
-দুই-
প্রচণ্ড মাথাব্যথা আমার। সেই সাথে আরেক অবাক কাণ্ড ঘটাতে আমার মেজাজ প্রচণ্ড খারাপ।
'ভাইজান মন খারাপ?'
'না। আপনার চা আমার মন ভাল করে দেবে।'
'আবীর ভাই, ভারতের পা-চাটা অবৈধ সরকারের কাণ্ড দেখেছেন?'
অমলের চায়ের দোকানে বসে আমি।
অমলের কোন কথাই কানে ঢুকছে না।
শক্ত চোখে রাস্তার পাশে একটি কাকের ঠোকর দিয়ে ময়লা খাওয়া দেখছি।
আওয়ামী সরকারের নির্দেশে পুলিশ সিনেমা স্টাইলে কাণ্ডটা ঘটাল।
দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন সাতক্ষীরার শিবিরের ভাইগুলো। পুলিশ কুত্তারা এই অবস্থাতেই তাঁদেরকে ঘিরে ফেলে চোখ বেঁধে গুলি শুরু করে। আমিনুর রহমান ভাইয়ের কলিজায় গুলি লাগে। ফলে চিরনিদ্রায় চলে যান।
সাতজন শবরের সদস্য ছিলেন যারা অনেক আগেই আল্লাহর কাছে তাদের জান ও মাল উৎসর্গের শপথ করেছিল কান্না জড়িত আবেগে। জান্নাত প্রাপ্তির আশায়।
পুলিশ সবার পায়ে গুলি করে চোখ বাধা অবস্থায়। কয়েকজনের হাতে গুলি করে।
এদের পঙ্গু করে কি মজা পেল পশুরা?
ইংরেজ শাসকরাও কি একই কাজ করেছিল?
পাকিস্তানী শাসকেরা ও কি এমন কাজ করেছিল?
ঘরে ঢুকে মানুষের পায়ে গুলি করেছিল?
পঙ্গু করেছিল?
মানুষ হত্যা করেছিল?
লাশ গুম করেছিল?
লাশের গায়ে ইটপাথর বেধে নদীতে ফেলেছিল?
কারা এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিল? সবাই জানে।
১. ওসি এনামুল হক
২. ডিবির উপপরিদর্শক আবদুল হান্নান
৩. কনস্টেবল আঃ রহমান
৪. কনস্টেবল নূরুল ইসলাম
৫. কনস্টেবল জাহাঙ্গীর হোসেন
৬. কনস্টেবল জিল্লুর রহমান
এগুলারে কি করা উচিত? এগুলাত আদেশ পালন করেছে কেবল। আওয়ামী ঘাতক দের জাহান্নামে পাঠানোর মত সাহসী মানুষ কি ১৬ কোটির মাঝে অবশিষ্ট নাই? সব ই কি 'সাগরের ফেনা'?
এখনও যারা আওয়ামী সাপোর্ট করে তাদের জেনেটিক কোডে সমস্যা অথবা এদের উপর 'সুবিধা' অবতীর্ণ হচ্ছে ভারত মাতা থেকে। তাই এদের 'পাগলা কুকুরের' ন্যায় ব্যবস্থা নেয়া উচিত। অথবা বিশ্বাসঘাতকতার পুরস্কার হিসেবে জাহান্নামে পাঠানো উচিত।
- তিন -
প্রচণ্ড গরমে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জাগানিয়া মানুষের মিছিল শেষে সমাবেশে মহসিন বলছে,
" এরা কি ভীতু? এরা বলল: বিচারকেরা যদি সাইদীর অন্যায় রায় দিয়ে তাঁকে শেষ করে দিতে চান তাহলে একটি জীবনের সাথে সাথে শেষ হয়ে যাবে অসংখ্য জীবন।
সেলুকাস!
এদের বলা উচিত:
হত্যাকারী বিচারকের উপর প্রতিশোধ নেয়া কেন অবৈধ হবে?
ওই পাঁচ বিচারকের কি জানের মায়া নাই?
'র' থেকে কি জানের গ্যরান্টি পেয়েছে এরা?
কতদিনের গ্যরান্টি?"
তরুণটির চোখে মুখে এক শক্ত আভা।
খুনি আসাদুজ্জামান নূরের মৃত্যুপুরী খ্যাত নীলফামারীতে সাহসী এই মিছিল এত শক্তি পায় কিভাবে?
নিরস্ত্র মানুষরা কি দারুণ আবেগেই না নয়া অস্ত্রসজ্জিত সরকারী হায়না বাহিনীর রক্তচক্ষুর সামনেই দাঁড়িয়ে পড়ল!
কি আশ্চর্য ব্যাপার।
সমাবেশের একদম পেছনে দাঁড়ানো পরিশ্রান্ত বৃদ্ধ আহমেদ সাহেব বেশ খুশি হলেন। ভাবলেন, 'আমরা যা পারিনি, শিবিরের এই ছেলেগুলো তা পারবে। এরাই দেশ চালাবে একসময়। এই দেশপ্রেমিকরাই দেশকে উদ্ধার করতে পারবে। দেশের মানুষকে বাঁচাতে পারবে।
আচ্ছা তখন ই কি ভারত এদেশকে আক্রমণ করবে?
একেবারে সরাসরি আক্রমণ।
আর সবাই চুপচাপ থাকবে?
আন্তর্জাতিক মহল চোখ বন্ধ রাখবে?
কারন ইসলামের নামধারী লোকেরা শাসনে এসেছে যে!
মুসলমানদের জন্য ত মানবাধিকার প্রযোজ্য নয়!
মুসলমানদের জন্য ত ন্যায় বিচার প্রাপ্য নয়। ইতিহাস তাই ই বলে'।
আমার ত তাই ই মনে হয়।
অবৈধ হাসিনা সরকার ত সেই ব্যাক গ্রাউন্ড ই তৈরি করছে বর্তমানে।
-চার-
"আল্লাহ তাদের সাথে যুদ্ধ ঘোষনা করেছেন যারা তার প্রিয় বান্দাহদের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করে" (হাদিসে কুদসী)
মহাশক্তিধর আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি অচিন্তনীয় এবং সর্বগ্রাসী।
লজ্জা, দুর্বলতা আর অপমানের রঙে রাঙিয়ে শাহবাগী স্বৈরাচারী দানবকুল মঞ্চ-বিদায় নিচ্ছে। না-বুঝে তালিয়া বাজানো আম-জনতা মঞ্চের নাচিয়েদের থুথু মেরেছে সেই কোন কালে! আর বেহায়া সরকার সম্পর্কে নাই ই বললাম!
-পাঁচ-
সাতক্ষিরার ছায়াশীতল এক গ্রাম।
ছেলের কবরের পাশে বৃদ্ধ পিতা-মাতা বসে আছেন।
পুলিশের গুলিতে নিহত ছাত্রশিবির সাতক্ষীরা শহর শাখার সেক্রেটারী আমিনুর রহমানের কবর।
আচ্ছা ওই পিতামাতা কি ভাবছেন?
চিরকাল কি দুঃখ ই না পেয়েছে তাদের দরিদ্র পরিবার।
বড়ছেলে আমিনুর আগলে রেখেছিল বৃদ্ধ বাবা মা কে তার সর্বশক্তি দিয়ে।
আজন্ম সুবিধা-বঞ্ছিত এই ছেলে আর কত বেশি ই বা করতে পারবে?
বৃদ্ধ বাবা মা কি ভাবছেন?
ছেলের কবরের পাশে বসে তারা কি ভাবছেন?
বিড়বিড় করে কি বলছেন?
"আব্বু, ঘুমাও।
আরামে ঘুমাও।
কতকাল আরামে ঘুমাও না।
আমার মাথায় আদর করে আমারে ঘুম পারিয়েছ কতদিন।
হে দয়াময় আল্লাহ।
তোমার কাছে কিচ্ছু চাই না একটি জিনিষ ছাড়া।
আমার আব্বুকে আদর করে ঘুম পাড়িও।
তাকে যতনে রেখো হে দয়ালু|"
বিষয়: বিবিধ
১১৭১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন