'একটি' হাদিসের আলোকে নিরাপত্তা কর্মী - পুলিশ, র্যব, ইত্যাদির অত্যাচার : রাসুলুল্লাহ (দ) এর শিক্ষা

লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১২:০০:৩৪ দুপুর



নিরাপত্তা কর্মী বেড়ে যাওয়া শেষ জামানার একটি চিহ্ন। তাবরানী থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসুল (দ) বলেছেন, "এমন একটি সময় আসবে যখন এমন নিরাপত্তা কর্মী (সিকিউরিটি ফোর্সেস, পুলিশ, র্যব, গোয়েন্দা, আর্মি, ইত্যাদি) থাকবে যারা সকালে আল্লাহর অভিসম্পাতে দিন শুরু করবে এবং রাতে যখন বাড়ি ফিরবে তাদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত থাকবে। তাদের থেকে সাবধান, তাদের সহযোগী হয়োনা।"

এই হাদিসটি এমন নিরাপত্তা কর্মীদের প্রসঙ্গে বলে যারা মানুষের ব্যপারে গোয়েন্দাগিরি করে, আল্লাহর উপাসনা করতে বাধা দেয়। যারা মসজিদে যায় বা মানুষের কাছে ইসলামের কথা বলে তাদের সম্পর্কে গোয়েন্দাগিরি করে। পরন্তু তাদের সম্পর্কে এখানে বলা হচ্ছে যারা মানুষকে অত্যাচার করে। রাসুল (দ) আমাদের তথা সাধারণ মানুষদের উদ্দেশে বলেছেন "তাদের সহযোগিতা করোনা (ঈমানদারদের সম্পর্কে তথ্য দিয়ে বা ক্ষতিসাধন করে)।

রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেন "শেষ জামানায় আমার উম্মতের মাঝে কিছু লোক (নিরাপত্তা কর্মী) থাকবে যাদের সাথে 'চাবুক' (বা অস্ত্র) থাকবে যেন গরুর লেজ। তারা আল্লাহর ক্রোধের মাঝে জীবনযাপন করবে।" (মাজমা আল জাওআইদ ৫/২৩৭)। রাসুল (দ) আরও বলেছেন, "তোমরা (উম্মাহ) এমন শাসকের অধীনে থাকবে যারা মেজিয়ান (অগ্নি-উপাসক) দের থেকেও খারাপ ধরনের।" (মাজমা আল জাওআইদ ৫/২৩৪)

কোনো কোনো খলিফার জামানায় এমন ঘটনা (অভিশপ্ত নিরাপত্তা কর্মীর গোয়েন্দাগিরি ঈমানদারদের বিরুদ্ধে) ঘটেছিল। যা ছিল মানুষদের অত্যাচারের শামিল এবং উম্মতের জন্য বিরাট পরীক্ষাস্বরূপ। আমাদের চার ইমামের (আহমদ, মালিক, হানিফা এবং শাফি (র)) এ ধরনের পরীক্ষা দিয়ে গিয়েছিলেন। জালিম শাসকের নিরাপত্তা কর্মীদের অত্যাচারে ইমাম মালিকের বাহু শরীর চুত হয়েছিল। ইমাম আহমদকে ভয়ঙ্কর অত্যাচার করেছিল শাসকের নিরাপত্তা কর্মীরাই। ইমাম শাফি (র) প্রায় জেলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিলেন। ইবনে তাইমিয়াকে জেলে অত্যাচার করা হয়েছিল এবং জেলেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।

বাংলাদেশে কালেমার পতাকা রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক জীবনে বুলন্দ করার নিয়তে ইসলামী দলসমূহকে একই পথ পারি দিতে হচ্ছে -- অপবাদের মিথ্যা বোঝা মাথায় নিয়ে পরম ধৈর্যের প্রমান দেখাচ্ছেন দেশের সবচেয়ে আদর্শ আর নীতিবান মুসলিমরা -- যারা এই লোকদের সাথে মিশেছেন -- তাদের বক্তব্য শুনেছেন বা বই পড়েছেন -- সর্বপরি নিজের চোখে তাদের কার্যকলাপ দেখেছেন -- আর স্বাধীনতা-উত্তর ৪২ বছর ধরে ইসলাম-বর্জিত শাসকদের কার্যকলাপ দেখেছেন (নিজের চোখে দেখেছেন -- কারো মুখে শুনে না!) তারা এই দুই ধরনের মানুষদের তথা (১) ইসলাম প্রতিষ্টার জন্য প্রানান্ত চেস্টাকারী দল এবং (২) ইসলাম-বিরোধী দল কে পার্থক্য করতে পারবেন -- শুধু প্রয়োজন নিরপেক্ষ মনে ইতিহাস কে স্বরণ করে পর্যালোচনা করা । নিরাপত্তাকর্মীরা 'সেইফ-হাউসের' নাম তাদের উপর অন্যায় অত্যাচার করছে - শারীরিক ও মানসিকভাবে তীব্র নির্যাতন করছে।

শুধু তাই নয় ইসলামের কথা বলার জন্য ঈমানদারদের গ্রেফতার করে জেলখানা ভরে ফেলা হচ্ছে -- অত্যাচার করে অন্ধ করে দেয়া হচ্ছে -- পঙ্গু করা হচ্ছে -- মেয়েদের জেলখানায় বন্দী করা হচ্ছে -- পুলিশ বিষাক্ত গ্রেনেড ব্যবহার করছে জামায়াত তথা ইসলামী দলএর লোকদের হত্যা করতে -- রিমান্ডে নিয়ে তীব্র অত্যাচার করা হচ্ছে - হাত থেতলে দেয়া হচ্ছে - ইলেকট্রিক শক দেয়া হচ্ছে - কাপড় ছাড়া ঠান্ডার মাঝে রাখা হচ্ছে নেতা-কর্মীদের-- সব ই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ইসলামী অন্দোলনের জন্য নিবেদিত ঈমানদারদের উপর মুনাফিক আর কাফেরদের অত্যাচার -- মানবাধিকারহীন, গণতন্ত্র,নায়-বিচার অবরুদ্ধ শোষণ মাত্র!

সব অত্যাচার করছে পাপিষ্ট স্বৈরাচারী শাসকের নির্দেশে নিরাপত্তা কর্মী - পুলিশ, র্যব, তথাকথিত সাদা পোশাকের গোয়েন্দা বাহিনী|

অন্যদিকে রাসুল(দ) এরশাদ করেছেন, আল্লাহ বলেন 'আমি ওই লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি যারা আমার ওলি (বন্ধু) দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে' (হাদিসে কুদসী)। আর

আর আল্লাহর যুদ্ধ কিন্তু ভয়াবহ - পৃথিবীতেই আল্লাহ অবশ্যই তার প্রতিপক্ষের জীবনের যেকোনো দিক 'তছনছ' করে দিবেন ।

নিরাপত্তাকর্মীদের প্রতি আকুল আবেদন উপরোল্লিখিত হাদিসটি খেয়াল করুন। আল্লাহর অভিশাপের মাঝে ডুব দিয়েন না! আল্লাহর অভিশাপ আপনাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সহ সকল দিক 'বিকলাঙ্গ' ও ধ্বংস করে দিবে। প্রথিবীতে আপনি নিকৃস্ট অবস্থানে চলে যাবেন সামান্য 'প্রমোশন' বা 'অর্থের' আশায়! আল্লাহ তার ওয়াদা অনুযায়ী আপনাকে দুনিয়াতেই ছাড়বে না -- আর আখেরাতের অনন্ত আজাব তো বাকি থাকবেই।

আখেরাতের ভয়াবহ আজাবের চিত্র সংক্ষেপে দেখুন: http://www.bdtomorrow.net/blog/blogdetail/detail/1964/manzur/4354#.USlhiKXqm6M

বনি ইসরাইলের একজন মহিলা একটি বিড়ালকে না খাইয়ে রেখে হত্যার জন্য জাহান্নামী হয়েছিল - তো চিন্তা করুন যারা ইসলামের অনুসারীদের - আল্লাহর পথের কর্মীদের তথা 'লা ইলাহা ইল্লা আল্লাহ' বাস্তবায়নে প্রচেষ্টাকারীদের জেলে পুড়ে অত্যাচার করে - গুলি করে হত্যা করে - শরীর থেতলে দেয় - তাদের কি পরিনতি হবে সেই অনন্ত জীবনে? আজ বাংলাদেশে ইসলামের সাথে ধর্মহীনতার সংঘর্ষ! অনেকে না বুঝে ধর্মহীন স্বৈরাচারের সহযোগী হচ্ছেন। না বুঝে মজলুমকে ঘৃনা করছেন - জালেমকে সাহায্য করছেন!

তাবারীর এক বর্ণনায়, জাহান্নামের আযাব ক্রম-বর্ধমান হবে! একই পরিমানের সাস্তি সবসময়ের জন্য হবে না - না পাছে জাহান্নামী তা সয়ে যেতে পারে! দিনের পর দিন সেই আজাবের নমুনা আর মাত্রা ভয়ঙ্কর হতে থাকবে! চিন্তা করুন - অনন্ত কাল পর্যন্ত সেই কষ্টের মাত্র বাড়তেই থাকবে! পৃথিবীর যেকোনো স্বৈরাচার হাশরের ময়দানে অতি ক্ষুদ্র পিপিলিকাকৃতিতে উঠবে এবং ওহুদ পাহাড়-সম উদ্ভ্রান্ত মানুষের পদলেহনে তাদের করুন অবস্থা অনুমেয়! বিচারের পর আল্লাহ 'মিথ্যাবাদী শাসকের' দিকে তাকাবেন ই না - অর্থাত সরাসরি জাহান্নামের অগ্নি-গহ্বর হবে তাদের অনন্ত ঠিকানা! স্বৈরাচারের সহযোগীদের সহ জাহান্নাম পরিপূর্ণ হয়ে যাবে!

অতএব, নিরাপত্তা কর্মী - পুলিশ, র্যব, তথাকথিত সাদা পোশাকের গোয়েন্দা বাহিনী - দয়া করে আল্লাহকে ভয় করুন - এবং সেদিনকে ভয় করুন যেদিন আপনার হাত, পা, চোখ, মুখ আপনার বিরুদ্ধে স্বাক্ষী দিবে ঈমানদারদের অত্যাচার করার জন্য - সেদিন কাউকেও সাহায্যকারী পাবেন না! আল্লাহ আমাদের একথাগুলো বুঝার এবং মানার তৌফিক দান করুন। আমিন!

বিষয়: বিবিধ

১৩২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File