মিথ্যাবাদী, স্বৈরাচারীর সহযোগী ও পরকালে করুন পরিনতি : সংক্ষিপ্ত চিত্র
লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৪:১০:১৯ রাত
যেকোনো আস্তিক বুঝে/না বুঝে 'পাপ' কাজ কেন করে? কারণ পরকালের ভয়াবহতার প্রকৃত তথ্য তার অজানা! যখন পৃথিবীর এক মৃত নবজাতকের চুল ধুসর হয়ে যাবে সেদিনের ভয়াবহতায় - তখন আমাদের কি হবে?
বুখারীর এক হাদিসে 'মিথ্যাবাদী'র আজাব বর্ণিত হয়েছে - এমন এক মিথ্যাবাদী যে সারাদিন মানুষের নামে 'অপবাদ ছড়ায়! 'হুক' দিয়ে তার মুখ, চোখ, গাল অনবরত ছিন্নভিন্ন করা হবে - একদিক চিড়ার পর অন্য ক্ষত দিক পুন: আগের অবস্থায় আসবে -- এবং আযাব চলতেই থাকবে।
পৃথিবীর যেকোনো স্বৈরাচার হাশরের ময়দানে অতি ক্ষুদ্র পিপিলিকাকৃতিতে উঠবে এবং ওহুদ পাহাড়-সম উদ্ভ্রান্ত মানুষের পদলেহনে তাদের করুন অবস্থা অনুমেয়! বিচারের পর আল্লাহ 'মিথ্যাবাদী শাসকের' দিকে তাকাবেন ই না - অর্থাত সরাসরি জাহান্নামের অগ্নি-গহ্বর হবে তাদের অনন্ত ঠিকানা! স্বৈরাচারের সহযোগীদের সহ জাহান্নাম পরিপূর্ণ হয়ে যাবে!
জাহান্নামের সব চেয়ে কম শাস্তির নমুনা হলো: একটি অগ্নি-জুতা তাকে পরানো হবে (আরেক বর্ণনায় টাখনু পর্যন্ত আগুনের পুকুরে ডুবিয়ে রাখা হবে) এবং উত্তাপে তার মগজ টগবগ করে ফুটবে। সে ভাববে তাকে সবচেয়ে বেশি আজাব দেয়া হচ্ছে। অথচ সে হলো সবচেয়ে কম শাস্তির জাহান্নামী!
তাবারীর এক বর্ণনায়, জাহান্নামের আযাব ক্রম-বর্ধমান হবে! একই পরিমানের সাস্তি সবসময়ের জন্য হবে না - না পাছে জাহান্নামী তা সয়ে যেতে পারে! দিনের পর দিন সেই আজাবের নমুনা আর মাত্রা ভয়ঙ্কর হতে থাকবে! চিন্তা করুন - অনন্ত কাল পর্যন্ত সেই কষ্টের মাত্র বাড়তেই থাকবে!
আজ বাংলাদেশে ইসলামের সাথে ধর্মহীনতার সংঘর্ষ! অনেকে না বুঝে ধর্মহীন স্বৈরাচারের সহযোগী হচ্ছেন। না বুঝে মজলুমকে ঘৃনা করছেন - জালেমকে সাহায্য করছেন! বনি ইসরাইলের একজন মহিলা একটি বিড়ালকে না খাইয়ে রেখে হত্যার জন্য জাহান্নামী হয়েছিল - তো চিন্তা করুন যারা ইসলামের অনুসারীদের - আল্লাহর পথের কর্মীদের তথা 'লা ইলাহা ইল্লা আল্লাহ' বাস্তবায়নে প্রচেষ্টাকারীদের জেলে পুড়ে অত্যাচার করে - গুলি করে হত্যা করে - শরীর থেতলে দেয় - তাদের কি পরিনতি হবে সেই অনন্ত জীবনে?
মহানবী (দ) বলেছেন - মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই! সমগ্র মুমিন এক দেহ স্বরূপ! দেহের এক অংশ ব্যথিত হলে যেমন সমগ্র দেহ দুর্বল/ব্যথিত হয় তেমনি বিশ্বের যেকোনো প্রান্তরে বা যেকোনো ইসলামী দলের মুসলমানেরা অত্যাচারিত হলে মুসলমানদের অন্তর 'ব্যথিত' হওয়া উচিত - প্রতিবাদী হওয়া কর্তব্য! যদি এমন কোনো কিছু অনুভব না করেন তবে আপনি আদৌ মুসলমান আছেন কিনা আত্মসমালোচনা করুন!
বুখারীর একটি বর্ণনা দিয়ে শেষ করি! মহানবী (দ) বলেছেন সবচেয়ে কাঙ্গাল (দরিদ্র) সেই ব্যক্তি যে পরকালে অনেক নামাজ, রোজা, যাকাত ইত্যাদির সওয়াব নিয়ে উঠবে - কিন্তু মানুষের প্রতি তার আচরণ ছিল খারাপ - মানুষের নামে মিথ্যা অপবাদ দিত, গালি গালাজ করত - গীবত করত, কারও সম্পদ অন্যায়ভাবে আত্মসাত করত, কারো অধিকার অন্যায়ভাবে হরণ করত - সেই লোক দ্বারা নিগৃহিত ব্যক্তিদের আল্লাহ কিসের বিনিময়ে প্রতিদান দিবেন? অত্যাচারী ব্যক্তির অর্জিত সওযাব তাদের দেয়া ছাড়া? যদি সওযাব না থাকে তবে মজলুমের গুনাহ তার উপর চাপানো হবে এবং নি:স্ব অবস্থায় সে জাহান্নামে যাবে!! মানুষের প্রতি খারাপ উক্তি, মিথ্যাচার, মিথ্যা অপবাদ, নির্যাতন, সম্পদ-হরণ, শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার ইত্যাদি এতই মারাত্মক অপরাধ!
----পরিসিস্ট ----
স্বৈরাচারী শাসক ও সহযোগীদের পরিনতি : মহানবী (দ) এর কথায় (হাদিস-সমুহ )
-- 'আমার উম্মতের উপর স্বৈরাচারী কঠোর শাসক আসবে - (দেশের লোকদের মধ্যে) যারাই সেই স্বৈরাচারের মিথ্যাচারকে সমর্থন করবে এবং অত্যাচারে সাহায্য করবে - তারাই আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয় - কিন্তু যারা তাদের (স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে) সাক্ষ্য দিবে এবং তাদেরকে সাহায্য থেকে বিরত থাকবে তারাই আমার (উম্মতের) অন্তর্ভুক্ত। (আবি আসিম থেকে বর্ণিত 'আল-আওসাত' থেকে)
-- অত্যাচারী স্বৈরাচারী শাসক বিচারের দিনে সবচেয়ে ভয়াবহতম আজাব ভোগ করবে। (আত তাবারানী)
-- 'হে আল্লাহ (নবিজী (দ) দোআ করতেন), আমার উম্মতের উপর কোনো শাসক যদি কঠোর হয়, তুমি ও তার প্রতি কঠোর হয়ে যাও' (মুসলিম)
-- যে আমাদের প্রতারিত করে সে আমাদের (উম্মতের) অংশ নয়।(মুসলিম)
-- 'অত্যাচার' বিচার দিবসে ঘোর তমসাচ্ছন্ন অন্ধকার হয়ে থাকবে। (বুখারী ও মুসলিম)
-- যেকোনো শাসক তার অনুসারীদের উপর অবিচার করলে জাহান্নামী হবে। (বুখারী)
-- কোনো শাসক যদি তার লোকদেরকে ভাল নিয়ত আর নিষ্ঠার সাথে না দেখাশুনা করে তবে সে (শাসক) জান্নাতের সৌরভ পর্যন্ত পাবে না। (মুসলিম)
-- প্রত্যেক শাসক (গভর্নর) কে বিচার দিবসে জাহান্নামের কাছে আনা হবে। পিছন দিক থেকে একজন ফেরেস্তা তার মাথা ধরে রাখবে। সেই ফেরেস্তা মাথা তুলে আল্লাহর দিকে তাকাবে এবং এদেশের অপেক্ষায় থাকবে। আদেশের পরে সেই শাসক (যদি অত্যাচারী হয়), তবে জাহান্নামের অতর গহ্বরে পৌছবে চল্লিশ (দিন বা বছর - নির্দিস্ট উল্লেখ নেই) পরে। (আহমাদ)
-- তিন ধরনের লোকের দিকে আল্লাহ বিচারের দিবসে তাকাবেন না - তাদের একজন হলো মিথ্যাবাদী শাসক। (মুসলিম)
বিষয়: বিবিধ
২৪৬৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন