পৃথিবীকে পরকালের উপর স্থান দেয়ার ক্ষতি (ভাবানুবাদ)
লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ১০ এপ্রিল, ২০১৪, ০৬:৩৯:৩৯ সন্ধ্যা
(ভাবানুবাদ: "পৃথিবীকে পরকালের উপর স্থান দেয়ার ক্ষতি" - সেকশনটি ড. আলী মুহাম্মদ আস-সালাবী এর The Noble Life Of The Prophet বই এর দ্বিতীয় ভলিউম থেকে নেয়া)
==্
কোরআন শরীফের অনেক আয়াত এবং মহানবী (স) এর অনেক হাদিস এই 'পৃথিবীর' বাস্তবতাকে পরিস্কারভাবে বর্ণনা করেছে - ব্যখ্যা করেছে এই পৃথিবীর গুরুত্ব আল্লাহ তায়ালার কাছে কতটুকু, মানুষের এই পৃথিবীর মোহের প্রতি আসক্তি এবং এই মোহের পেছনে দৌড়ানোর খারাপ পরিনতি সম্পর্কে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
" মানুষের জন্য নারী, সন্তান, সোনারুপার স্তূপ, সেরা ঘোড়া, গবাদী পশু ও কৃষি ক্ষেতের প্রতি আসক্তিকে বড়ই সুসজ্জিত ও সুশোভিত করা হয়েছে৷ কিন্তু এগুলো দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনের সামগ্রী মাত্র৷ প্রকৃতপক্ষে উত্তম আবাস তো রয়েছে আল্লাহর কাছে৷ " (ইমরান: ১৪)
এবং আল্লাহতায়ালা আরও বলেন:
"... এ দুনিয়ার জীবন যেন তোমাদের প্রতারিত না করে এবং প্রতারক যেন তোমাকে আল্লাহর ব্যাপারে প্রতারিত করতে সক্ষম না হয়৷" (লুকমান: ৩৩)
মহানবী (স) অনেক হাদিসে মুসলমানদের সতর্ক করেছেন এই পৃথিবীর মোহে যেন তারা প্রতারিত না হয়। যেমন, আবু সায়িদ আল-খুদরী (রা) বর্ণিত এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স) বলেন, "নিশ্চয়ই এই পৃথিবীর মোহ সুমিস্ট, সবুজ এবং সতেজ। অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা তোমাদের পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বংশ পরম্পরায়, যাতে দেখতে পারেন তোমরা কি রকম আচরণ কর। অতএব এই পৃথিবীর মোহ থেকে দুরে থাক, দুরে থাক মহিলাদের ছলনা থেকে। নিশ্চয়ই বনি ইস্রায়ল দের প্রথম পরীক্ষা শুরু হয়েছিল মহিলাদের থেকেই।" (মুসলিম: ২৭৪২)
অবশ্যই এই পৃথিবীর প্রতি আসক্তির খারাপ পরিনতি আর ওহুদের যুদ্ধে মুসলমানদের পরিণতির এক যোগসুত্রে গাথা। ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, "যখন আল্লাহ তায়ালা মুশরিকদের ওহুদ যুদ্ধের প্রথম প্রহরে পরাস্ত করে দিলেন, তীরন্দাজ যোদ্ধারা বললেন, 'চল, সহযোদ্ধাদের এবং রাসুলুল্লাহ (স) এর সাথে গিয়ে মিলিত হই এবং দ্রুত গনিমতের সম্পত্তি সংগ্রহ করি যাতে অন্যান্যরা বেশি সম্পত্তি অর্জন না করতে পারে। অন্যথায় তারা ই কেবল সম্পদ অর্জন করতে পারবে, আমরা নই।' কেউ কেউ বললেন, "আমরা অবশ্যই আমাদের অবস্থান ত্যগ করব না যদি না রাসুলুল্লাহ অনুমতি দেন"। (তাফসীরে আত-তাবারী: ৩/৪৭৪)
তখন আল্লাহ তায়ালা এই আয়াতটি নাজিল করেন:
"... তোমাদের কিছু লোক ছিল দুনিয়ার প্রত্যাশী আর কিছু লোকের কাম্য ছিল আখেরাত, তখনই আল্লাহ কাফরদের মোকাবিলায় তোমাদেরকে পিছিয়ে দিলেন, তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য৷। .." (ইমরান: ১৫২)
আত-তাবারী (রহ) বলেন, "তোমাদের কিছু লোক ছিল দুনিয়ার প্রত্যাশী" - এটি দিয়ে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ (গনিমতের মাল) কে বুঝান হয়েছে।
ইবনে মাসউদ (রা) বলেন, "আমি সাহাবীদের মাঝে একজনকে ও ব্যতিক্রম দেখিনি যিনি পৃথিবীর ব্যপারে আকাঙ্খী ছিলেন না ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষন না উপরোক্ত আয়াতটি আমাদের ব্যপারে নাজিল হয় ওহুদের যুদ্ধের সময়ে"।
ওহুদের যুদ্ধে যেসকল ঘটনা ঘটে তাতে মুসলমানদের জন্য সকল সময় ও অঞ্চলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন যে শিক্ষা নিহিত রয়েছে তা হল: এই পৃথিবীর জন্য ভালবাসা সন্তর্পনে বিশ্বাসীদের অন্তরে গ্রথিত হয়ে যায় তাদের বুঝার অগোচরেই। ফলশ্রুতিতে, তারা এই পৃথিবীর প্রতি ভালবাসায় অন্ধ হয়ে যায় - ভুলে যায় পরকালের অনন্ত সুখ-উপকরণের কথা। এটিই সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক - যা সকল কালে ও অঞ্চলে নিরবিচ্ছিন্নভাবে স্মরণ করা এবং এ বিষয়ে সর্বদা সতর্ক থাকা ঈমানদারদের জন্য একান্তই কর্তব্য। এজন্যই রাসুলুল্লাহ (স) উপরোক্ত হাদিসে বলেছেন: "পৃথিবীর মোহ/লালসা থেকে সতর্ক হও"।
গুনাহের কাজ করার একটি বুদ্ধিবৃত্তিক কারন - যেমনটি ওহুদের ময়দানে তীরন্দাজ মুজাহিদ দের ক্ষেত্রে ঘটেছিল - যার দরুন তারা তাদের অবস্থান থেকে বিচ্যুত হয়েছিলেন তা হল শত্রুর সম্পত্তি সংগ্রহের আকাঙ্খা।
আমাদের জন্য অবশ্য এ কারন বহুধা-বিস্তৃত - অগণিত! কিন্তু আমাদের অবশ্যই মনে রাখা উচিত, আমরা আমাদের ভুলের যে ওজর ই পেশ করি না কেন, আসল যে কারনটি আমাদের আল্লাহর নিষেধ না মানতে উদ্বুদ্ধ করে তা হল: এই পৃথিবীর প্রতি ভালবাসা এবং এর লালসা। এই পৃথিবীকে পরকালের উপর প্রাধান্য দেয়ার যে ধ্রুব ভয়াবহতা তা থেকে বাচার জন্য বিশ্বাসীদের নিরবিচ্ছিন্নভাবে আত্মসমালোচনা করা প্রয়োজন - তার কাজের সত্যিকার উদ্দেশ্য কি ছিল তার পর্যালোচনা করা প্রয়োজন প্রতি নিয়ত। যখন একজন ঈমানদার নিজের ব্যপারে সত হবেন কেবল তখন ই আল্লাহ তায়ালার আদেশ-নিষেধ পালনের বিরুদ্ধে পৃথিবীর লালসাকেই খুঁজে পাবেন। পক্ষান্তরে, যখন একজন ঈমানদার নিজের ব্যপারে সত থাকবেন না, তখন শয়তানের মেধাবী সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ না মানার ব্যপারে বিভিন্নরকম যুক্তি, কারন আর উপায়-উপকরণ পেশ করতে পারবেন পৃথিবীর প্রতি লালসা পূরণার্থে - ধর্ম এবং বিশ্বাসকে বিসর্জন করার মাধ্যমে!
বিষয়: বিবিধ
১০৫৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন