সত্য ঘটনা অবলম্বনে (২৯) : নরক
লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ২৬ জানুয়ারি, ২০১৪, ০২:১৭:১৮ দুপুর
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস। সকালে টেবিলে পড়ছিলাম। হটাত শুনলাম আমাদের ভবন ঘিরে ফেলেছে ছাত্রলীগের গুন্ডারা। দুরে দাড়িয়ে ক্লাইমাক্স দেখছে পুলিশ - র্যবের দল।
আগ্নেয়াস্ত্র, চাপাতি নিয়ে কি ঢুকে পড়েছে একদল? আমাদের ফ্লোরের দরজা লাগিয়ে দেয়া হল।
'হাসান, ভয় পাচ্ছ?'
কোন উত্তর এল না প্রথম বর্ষের অমায়িক ভদ্র ছেলেটির থেকে।
'ভয় পেওনা। আল্লাহ যদি চান, তো কার ও কিছু করার নেই।
কেউ কোন ক্ষতি করতে পারবেনা। আর তিনি যদি ক্ষতি চান, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পরাশক্তির কোন ই ক্ষমতা নেই রক্ষা করার। এ বিশ্বাস ই হল আল্লাহর প্রতি ঈমান। এটা ই ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের চালিকা-শক্তি।'
'তবে হাসান, তোমার পালাতে হবে।
আর কোন কথা শোনার মত সময় নেই। তুমি বাম দিকের সিড়ি দিয়ে পালাও। সিড়ি তে কাউকে উঠতে দেখলে ছাদে উঠে স্টোর রুমে লুকাও। সুওরেজ পাইপ দিয়ে নিচে নামলে কেউ দেখলে কিন্তু রিস্ক আছে!'
হাসান দৌড় দিল।
**
হটাত মনে হল আচ্ছা আমি যদি মরে যাই আমি কি শহীদ হব? আমার দিন-রাত পরম দয়ালুর কাছে শহীদ হওয়ার একান্ত আকুতি কি কবুল হবে? আমার শাহাদাতের আরদ্ধ সাধনা কি সফলতার মুখ দেখবে?
আমি দয়ালু আল্লাহর কাছে কি দাড়াব?
আমার কেমন লাগবে?
দয়ার সাগর কি আমার মত তুচ্ছ আর গুনাহগারকে শহীদের কাতারে রাখবেন?
যদি রাখেন, তবে এর চেয়ে সৌভাগ্য আর কি থাকতে পারে?
আমি তো কবরের আজাব থেকে রক্ষা পেয়ে যাব! জান্নাতে পাখি হয়ে উড়ব। সর্বোচ্চ সন্মাননা থাকবে অনন্তকালের জন্য।
জানালা দিয়ে দেখলাম নিচে একটি একে-৪৭ নিয়ে ছাত্রলীগের বিশ্ব-বিদ্যালয়ের এক নেতা। তার সাথে অচেনা মুখের কয়েক যুবক! এরা কারা? দেখতে তো ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে। এরা কি এদেশের কেউ?
আমার মনে পড়ল রাসুলুল্লাহর সেই হাদিসটি। তিনি মিম্বারে জুমার খুতবা দিচ্ছেলেন। বলছিলেন, 'আমি তোমাদের ভয় দেখাচ্ছি - জাহান্নামের আগুনের।' তার স্বর বেড়ে ই যাচ্ছিল। একজন সাহাবী বলেন, বাজারের যে কেউ তার এই সতর্ক বাণীর চিত্কার শুনতে পারবে। মহানবী শুধু একটি মাত্র কথাই বলে যাচ্ছিলেন। আবেগে তাড়িত হয়ে প্রিয় মানুষদের বাচাতে চাচ্ছিলেন। আর প্রিয় সাহাবীরা কাদছিলেন। তীব্র আবেগে। চিত্কারে। ভয়ে। এই হাদিসের রাবী বলেন, সবাই চারিদিকে কেবল হাহাকার আর কান্না ই শুনছিল।
আহারে, জাহান্নামের সতর্কবাণী আর ভয়ে উম্মতের সবচেয়ে উত্তম মানুষদের এই ছিল মনের অবস্থা।
আর আমাদের?
দেশবাসীর?
আমাদের শাসকদের?
**
মনে পড়ল এক মেসে অগ্রসর কর্মীদের নিয়ে রাতের স্টাডি সার্কেলে একবার বলেছিলাম:
আর কোন ধর্ম নেই যেখানে পরকালের চিত্র সবিস্তারে বর্ণিত যতটা না ইসলামে। কোরআনের এমন কোন পাতা নেই যেখানে পরকালের চিত্র তুলে ধরা হয়নি। মনে পড়ল আরেকটি হাদিস। রাসুলুল্লাহ (স) বলছেন আমার এবং তোমাদের উপমা হল এমন যেন একজন মানুষ রাতের মরুভূমিতে একটি আগুনের পাশে দাড়িয়ে আছেন। কিট পতঙ্গ, পোকামাকড় সেই আগুনের আকর্ষণে তাতে ঝাপিয়ে পড়ছে। ওই লোকটি তার সর্বত প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন পোকামাকড় দের ওই আগুন থেকে বাচাতে। মহানবী (স) বলেন, আমরা আগুনে ঝাপ দিচ্ছি আর তিনি সর্বত চেষ্টা করছেন আমাদের আগুন থেকে সরিয়ে দিতে। তারপর ও আমাদের কেউ কেউ ওই আগুনে ঝাপিয়ে পড়ছি।'
জিব্রাইল (আ) এটা বুঝতেন না কিভাবে কিছু লোক জান্নাতকে ত্যগ করে জাহান্নামের প্রত্যাশী হতে পারে? জিব্রাইল (আ) বলেন, "আমি আশ্চর্যান্বিত। কিভাবে কোন মানুষ নিরাপদে ঘুমাতে পারে যেখানে ভয়ঙ্কর জাহান্নাম তাদের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে? অন্যদিকে কেউ নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারে যখন সে জানে যে জান্নাত অপেক্ষমান রয়েছে?"
**
কলোনির এক মসজিদে মাগরেবের নামাজ শেষে শিবিরের এক সাধারন সভায় বক্তব্য রাখছিলাম:
আল্লাহ তায়ালা জান্নাতের পুরস্কার প্রাপ্তিতে প্রতিযোগিতায় নামতে আহবান করেছেন। প্রথিবীর কোন প্রপ্তিতে নয়!
কোরআন আর হাদিসে জান্নাত জাহান্নামের বিশদ বর্ণনা এসেছে। তারপর ও আমরা যত ই কল্পনায় আকতে চাই না কেন আমরা তা প্রকৃতই বুঝতে পারব না।
মনে পড়ল বুখারী ও মুসলিমের একটি হাদিস। সূর্য আর চন্দ্রকে জাহান্নামে ফেলা হবে| যেকোন প্রভু (মানুষরুপি বা জন্তুরুপি বা অন্য কোন) যাকে ই পূজা করত মানুষেরা তাদের ই জাহান্নামে ফেলা হবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
"বাঁ দিকের লোক৷ বাঁ দিকের লোকদের দুর্ভাগ্যের কথা আর কি বলা যাবে৷ তারা লু হাওয়ার হলকা, ফুটন্ত পানি। এবং কালো ধোঁয়ার ছায়ার নীচে থাকবে৷ তা না হবে ঠাণ্ডা না হবে আরামদায়ক৷ " (ওয়াকিয়া : ৪১ - ৪৪)
পানি, বাতাস আর ছায়া - এ তিনটি আমাদের আরামের উপায়। জাহান্নামীদের ও এই তিনটি জিনিস থাকবে। কিন্তু কি উপায়ে? বাতাস হবে শুষ্ক আর তীব্র উত্তপ্ত। পানি হবে তপ্ত ফুটানো। আর ছায়া হবে কালো ধোয়ার। যা তাদের ভয়ঙ্কর উত্তাপের কস্ট ই দেবে কেবল।
আল্লাহ তায়ালা আর ও বলেন,
"তুমি কি জানো ,সে দোযখ কি?
যা জীবিত ও রাখবে না আবার একেবারে মৃত করেও ছাড়বে না ৷
গায়ের চামড়া ঝলসিয়ে দেবে৷"
(মুদাসসির: ২৭ - ২৯)
মনে পড়ল রাসুলুল্লাহ (স) এর একটি হাদিস মুসলিম শরিফ বর্ণিত। মানুষকে পুড়ানোর জন্য ব্যবহৃত আগুন (প্রথিবীর আগুন) জাহান্নামের আগুনের শক্তি-ক্ষমতার ৭০ ভাগের ১ ভাগ।
**
ভাইয়া, লাঠি ছাড়া তো প্রতিরোধের আর কিছু নেই।
'হাসান, এটাই যথেস্ট ইনশাল্লাহ।
দেশের অবস্থা ভয়ঙ্কর। জামায়াত শিবির দেখলে শুধু অবরুদ্ধ ই নয়, গুলি করা হচ্ছে। পশুকে ও তো এভাবে হত্যা করা হয়না।
শাসকরা দেশের মানুষকে শাস্তি দিচ্ছে।
বিরোধী দলকে ভয়ঙ্করভাবে অত্যাচার করছে।
মনে পড়ল এরা পরকালে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে স্রষ্টার প্রতিশোধ কি ভুলে গেল?
আওয়ামী শাসক দল প্রতিদিন শাস্তি বাড়াচ্ছে!
ঠিক একই ভাবে কি জাহান্নামের শাস্তি বাড়বে না?
সবচেয়ে খারাপ যে খবর জাহান্নামীরা পাবে তা আল্লাহ্তায়ালাই সুরা নাবাতে বলে দিয়েছেন:
"এখন মজা বুঝ , আমি তোমাদের জন্য আযাব ছাড়া কোন জিনিসে আর কিছুই বাড়াবো না ৷" (আয়াত - ৩০)
প্রতিদিন জাহান্নামের শাস্তি বাড়বে। এতে তারা অভ্যস্ত হতে পারবেনা। অকল্পনীয় ব্যপার। আর অনন্তকাল ধরে এ রকম শাস্তির মাত্র বৃদ্ধির ব্যপারটি তো চিন্তা করলেই শিউরে উঠতে হয়। আমি মনে করি এ আয়াতটিই জাহান্নামকে ভয় পাওয়ার জন্য উপযুক্ত।
**
নিচের তলা থেকে ছাত্রদের আর্ত চিত্কার ভেসে আসছে। গুলির শব্দ। শিবির হলেই বা তাদের মনে হলে ই হয়ত গুলি করছে। চাপাতি দিয়ে কোপ মারছে। জিনিসপত্র লুটপাট করছে। রুম তছ নছ করছে।
আর আমার কল্পনাবিলাসী মন জাহান্নামের চিত্র একেই যাচ্ছে। শিবিরের অনেক প্রোগ্রামে লেকচার শুনেছি। পরকালের ভয়াবহতা নিয়ে লেকচার দিয়েছি। কেদেছি। এই কঠিন মুহুর্তে সেই চিত্র পুনরায় আকছি।
"আসল কথা হচ্ছে, এরা “ সে সময়টিকে” মিথ্যা বলেছে এবং যে সে সময়কে মিথ্যা বলে তার জন্য আমি জ্বলন্ত আগুন তৈরি করে রেখেছি৷
আগুন যখন দূর থেকে এদের দেখবে তখন এরা তার ক্রুদ্ধ ও উত্তেজিত চিৎকার শুনতে পাবে৷
আর যখন এরা শৃংখলিত অবস্থায় তার মধ্যে একটি সংকীর্ণ স্থানে নিক্ষিপ্ত হবে তখন নিজেদের মৃত্যুকে ডাকতে থাকবে৷ "
(ফুরকান: ১১-১৩)
মহানবী (স) বলেন, বিচারের দিন জাহান্নাম থেকে একটি আগুনের স্তম্ভ বের হবে যা দুই চোখ দিয়ে দেখবে, কান দিয়ে শুনবে এবং মুখ কথা বলবে। বলবে, 'আমি দুর্বিনীত স্বৈরাচারী শাসক, আল্লাহর সাথে অন্যকে শরিক-কারী এবং যে নিজকে পূজনীয় হিসেবে দাড় করে তাদের গ্রহণ করতে এসেছি"।
**
দরজায় করা নাড়ছে দ্রুত। হাসান ফিরে এসেছে।
'ভাইয়া, সব পথ বন্ধ। মরলে একসাথে মরব'।
হাসান বলে ই যাচ্ছে। কিন্তু আমি শুনতে পারছি না। কারন আমার মন তখন অন্য বিষয় ভাবছে! যে বিষয় নিয়ে ভাবছি সে বিষয় নিয়ে এত লেকচার দিয়েছি। নোটস থেকে পড়েছি। দেখে লেকচার দিয়েছি। কিন্তু আজ সব মনে পরে যাচ্ছে কেন? নোটস হুবহু মানস পটে অঙ্কিত হচ্ছে একের পর এক।
**
মনে হচ্ছে জাহান্নামীদের খাবার সম্পর্কে।
জাহান্নামীদের খাবার সম্পর্কে ভয়ঙ্কর বর্ণনা এসেছে।
"তাদের জন্য কাঁটাওয়ালা শুকনো ঘাস ছাড়া আর কোন খাদ্য থাকবে না৷
তা তাদেরকে পুষ্ট করবে না এবং ক্ষুধাও মেটাবে না৷" (গাশিয়া: ৬-৭)
প্রধান খাদ্য হবে একটি গাছের ফল:
‘যাককূম।
গাছ হবে গোনাগারদের খাদ্য৷
তেলের তলানির মত।
পেটের মধ্যে এমনভাবে উথলাতে থাকবে যেমন ফুটন্তপানি উথলায়৷"
(দুখান: ৪৩:৪৬)
"বলো, এ ভোজ ভালো, না যাক্কুম গাছ?
আমি এ গাছটিকে জালেমদের জন্য ফিতনায় পরিণত করে দিয়েছি৷
সেটি একটি গাছ, যা বের হয় জাহান্নামের তলদেশ থেকে৷
তার ফুলের কলিগুলো যেন শয়তানদের মুণ্ডু৷
জাহান্নামের অধিবাসীরা তা খাবে এবং তা নিয়ে পেট ভরবে৷
তারপর পান করার জন্য তারা পাবে ফুটন্ত পানি৷
আর এরপর তাদের প্রত্যাবর্তন হবে৷ এ অগ্নিময় দোজখের দিকে৷"
(আস সফফাত: ৬২-৬৮)
জাহান্নামের তলদেশ থেকে উত্থিত গাছ যা জাহান্নামের সবচেয়ে খারাপ জায়গা থেকে উত্পন্ন। তারা যত ই এ গাছের ফল খাবে তত ই ক্ষুধার্ত হয়ে পড়বে - পিপসার্ত হবে। তারা পানি পান করতে যাবে আর পাবে ফুটন্ত গরম পানি!
"তারপর হে পথভ্রষ্ট ও অস্বীকারকারীরা।
তোমাদেরকে ‘যাককূম’ বৃক্ষজাত খাদ্য খেতে হবে৷
তোমরা ঐ খাদ্য দিয়েই পেট পূর্ণ করবে
এবং তার পরই পিপাসার্ত উটের মত
ফুটন্ত পানি পান করবে৷
প্রতিদান দিবসে বাঁ দিকের লোকদের আপ্যায়নের উপকরণ৷
(ওয়াকিয়া: ৫১ - ৫৬)
কখন ও উটের এমন রোগ হয় যাতে সে অনবরত পানি পান করতে থাকে আমৃত্যু। তারা পিপাসার্ত হয়, পানি পান করতে ই থাকে, তবু পিপাসা মিটে না!
"এ হচ্ছে তাদের জন্য, কাজেই তারা স্বাদ আস্বাদন করুক ফুটন্ত পানির, পুঁজের।
ও এ ধরনের অন্যান্য তিক্ততার৷"
(সাদ: ৫৭-৫৮)
এ আয়াতে উদ্বৃত 'হামীম' হল ফুটন্ত পানি। 'ঘাস্সাক' এক অর্থে বরফ-ঠান্ডা পানি। কুরতুবী(র) এর বর্ননা অনুযায়ী 'ঘাস্সাক' ও 'গিস্লীন' (দ্বিতীয় শব্দটি ও কোরআনে এসেছে) বলতে জাহান্নামীদের মাংস-পোড়া রস বুঝায় যা নিজেরাই পান করবে!
"... সেখানে তারা পানি চাইলে এমন পানি দিয়ে তাদের আপ্যায়ন করা হবে, যা হবে তেলের তলানির মতো৷ এবং যা তাদের চেহারা দগ্ধ করে দেবে৷ কত নিকৃষ্ট পানীয় এবং কি জঘন্য আবাস ! " (কাহাফ: ২৯)
মহানবী (স) বলেন, প্রত্যেক মাদক দ্রব্য নিষিদ্ধ। যারা ই যেকোন মাদক দ্রব্য গ্রহণ করবে তাদের ই 'তিনাত-আল-খাবাল' বাধ্যতামুলক করে দিবেন। সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন, এটি কি? তিনি বললেন, জাহান্নামীদের নি:সৃত ঘর্ম"।
তিরমিজির এক হাদিসে এসেছে 'আল-মুহল' নামক পানীয় (অর্থ ফুটন্ত তৈল) মুখের কাছে আনা মাত্র উত্তাপে তাদের মুখ ঝলসে যাবে এবং গোশত খসে পড়বে। তবু ও ভয়ঙ্কর পিপাসার্ত জাহান্নামীরা সে তৈল গ্রহণ করবে।
**
ভাইয়া, জেলে পাঠালে ও তো আমাদের গুলি করবে। তো আমরা কি করব? প্রতিরোধ না তৈরী ছাড়া? আমৃত্যু?
আমি কি বলব?
আমার কল্পনাবিলাস চলছে যে..
" ... তাদের জন্য আগুনের পোশাক কাটা হয়ে গেছে,
তাদের মাথায় ফুটন্ত পানি ঢেলে দেয়া হবে, যার ফলে শুধু তাদের চামড়াই নয়, পেটের ভেতরের অংশও গলে যাবে৷
আর তাদের শাস্তি দেবার জন্য থাকবে লোহার মুগুর৷"
(হাজ্ব: ১৯-২১)
"সেদিন তোমরা অপরাধীদের দেখবে, শিকলে তাদের হাত পা বাঁধা,
আলকাতরার পোশাক পরে থাকবে এবং আগুনের শিখা তাদের চেহারা ডেলে ফেলতে থাকবে৷
এটা এ জন্য হবে যে, আল্লাহ প্রত্যেকে তার কৃতকর্মের বদলা দেবেন৷ হিসেব নিতে আল্লাহর একটুও দেরী হয় না৷"
(ইব্রাহিম: ৪৯-৫১)
বুখারীর একটি হাদিসে এসেছে, সবচেয়ে কম শাস্তি-প্রাপ্ত জাহান্নামীকে জিজ্ঞাসা করা হবে যদি তুমি পৃথিবী ভরা স্বর্ণ পেতে তার বিনিময়ে কি জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি পেতে চাইতে? সে বলবে 'অবশ্যই'। আল্লাহ বলবেন, কিন্তু আমি সামান্যই চেয়েছিলাম! চেয়েছিলাম আমার সাথে কাউকে শরিক করবে না।
আমার মনে হচ্ছে অনেকে ই আছে যারা সামান্য অর্থের বিনিময়ে মানুষ খুন করতে পারে। লুটপাট করতে পারে। কাফের হয়ে যেতে পারে। আর প্রথিবী ভরা স্বর্ন তো বাদ ই দিলাম!
নিচের তলায় একশন-রত শাসক দলের অস্ত্রধারীরা আর তাদের সরকারী নির্দেশ্দাতারা ই তো উদাহরণ।
নুমান (রা) বর্ণিত একটি হাদিসে সবচেয়ে কম-শাস্তিপ্রাপ্ত এর বর্ণনা এসেছে এরকম: তাকে একটি উত্তপ্ত জুতা পরানো হবে যার উত্তাপে তার মগজ ফুটতে থাকবে। (বুখারী:৮/৭৬/৫৬৬)
আর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর শাস্তিপ্রাপ্ত দের সম্পকে স্বয়ং আল্লাহতায়ালা বলেন,
"নিশ্চিত জেনো, মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে চলে যাবে এবং তোমরা কাউকে তাদের সাহায্যকারী হিসেবে পাবে না৷" (নিসা: ১৪৫)
মুসলিম-নামধারী মুনাফিকরা বাংলাদেশের শাসকের গদি, বিচারকের আসন, প্রশাসনের রন্ধ্র থেকে শুরু করে আমাদের আশে পাশে প্রকট দৃশ্যমান! আমরা এদের পরিনতি থেকে আল্লাহর কাছে রক্ষা চাই!
**
'ভাইয়া, পুলিশরা জেলে যে অত্যাচার করে তার থেকে মরে যাওয়া ভাল। পুলিশ তো না, সাক্ষাত দানব'।
আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম।
এই সবুজ মাড়িয়ে পুড়িয়ে এক সমতল ভূমিতে সব মানুষ একদিন দাড়াবে।
স্রষ্টার সামনে।
খুটিনাটি বিচারের পর অত্যাচারীরা জাহান্নামী হবে। তাদের কিভাবে অত্যাচার করা হবে?
শাসকেরা কিভাবে সেদিন প্রতিদান পাবে?
যে পুলিশ জেলে ভাইদের প্লাস দিয়ে একের পর এক নখ তুলে ফেলে, শরীরে ইলেকট্রিক শক দিয়ে অচেতন করে দেয়, উল্টা ঝুলিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা অত্যাচার করে, জাহান্নামে তাদের কিভাবে শাস্তি দেয়া হবে?
আমি কি তা দেখতে পারছি?
শাসকদের সেখানে কিভাবে দেখছি?
পরিচিত মুখ কিভাবে আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে?
কল্পনা কিভাবে সত্যে পরিনত হচ্ছে?
আল্লাহ বলেন,
"... আর যখন তাদের চামড়া পুড়ে গলে যাবে তখন তার জায়গায় আমি অন্য চামড়া তৈরী করে দেবো, যাতে তারা খুব ভালোভাবে আযাবের স্বাদ গ্রহণ করতে পারে৷। .." (নিসা: ৫৬)
এ আয়াতে একটি বৈজ্ঞানিক মিরাকল রয়েছে। আমরা জানি চামড়াতে সবচেয়ে বেশি ঘনত্বে নার্ভ/স্নায়ু বর্তমান। পেশী আর চর্বিতে তুলনামূলক কম। এজন্যই চামড়াতে সুচ ফোটালে বেশি ব্যথা অনুভূত হয় যতটা না পেশী দিয়ে সুচ গেলে হয়। এজন্যই জাহান্নামের উত্তাপে চামড়া খসে পড়লে আবার চামড়া গজাবে। যাতে ভয়ঙ্কর ব্যথা অনুভূত হয়!
"আগুন তাদের মুখের চামড়া জ্বালিয়ে দেবে এবং তাদের চোয়াল বাইরে বের হয়ে আসবে ৷" (হাজ্ব: ১০৪)
অর্থাত আগুন তাদের মুখমন্ডল বিকৃত করে দেবে।
"যেদিন এদেরকে উবুড় করে আগুনের মধ্যে টেনে হেচঁড়ে নিয়ে যাওয়া হবে, সেদিন এদের বলা হবে, এখন জাহান্নামের স্পর্শের স্বাদ আস্বাদন করো৷ "
(কামার: ৪৮)
".. লাঞ্ছনা তাদেরকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে৷ আল্লাহর হাত থেকে তাদেরকে বাঁচাবার কেউ থাকবে না৷ তাদের চেহারা যেন আধার রাতের কালো আবরণে আচ্ছাদিত হবে৷। .." (ইউনুস: ২৭)
তারা আগুনে সমাচ্ছন্ন থাকবে (২৯:৫৪)। কারন তারা গুনাহের কাজে পৃথিবীতে আচ্ছন্ন থাকত (২:৮১)।
এ আগুন তাদের হৃতপিন্ড পর্যন্ত পৌছবে।
"কখনো নয়, তাকে তো চূর্ণ - বিচূর্ণকারী জায়গায় ফেলে দেয়া হবে৷
আর তুমি কি জানো সেই চূর্ণ - বিচূর্ণকারী জায়গাটি কি ?
আল্লাহর আগুন, প্রচণ্ডভাবে উৎক্ষিপ্ত ,
যা হৃদয় অভ্যন্তরে পৌঁছে যাবে ৷"
(হুমাজা: ৪-৭)
কোন কোন লোকের অন্ত্রনালী, নাড়িভুড়ি বের হয়ে আসবে। এ অবস্থায় গ্রায়িনডিং (পেষণ) মিলের গাধার ন্যয় সে ছুটাছুটি করবে। লোকেরা বলবে, কি তুমি তো আমাদের সৎ কাজের আদেশ দিতে আর অসৎ কাজ থেকে দুরে থাকতে বলতে! সে বলবে, 'আমি তা বলতাম। কিন্তু নিজে তা মানতাম না'। (বুখারী: ৯/৮৮/২১৮)
জাহান্নামীদের অনুশোচনা থাকবে তীব্র! কিন্তু তা কোন উপকারে আসবে না!
**
"যখনই তারা কাতর হয়ে জাহান্নাম থেকে বের হবার চেষ্টা করবে তখনই আবার তার মধ্যে তাদেরকে ঠেলে দেয়া হবে, বলা হবে, এবার দহন জ্বালার স্বাদ নাও৷" (হাজ্ব: ২২)
"আল্লাহর নাফরমানী করেছে এমন প্রতিটি ব্যক্তির কাছে যদি সারা দুনিয়ার ধন-দৌলত থাকতো তাহলে সেই আযাব থেকে বাঁচার বিনিময়ে সে তা দিতে উদ্যত হতো৷ যখন তারা এ আযাব দেখবে তখন তারা মনে মনে পস্তাতে (অনুশোচনা) থাকবে৷।.." (ইউনুস: ৫৪)
কে তাদের বাচাবে?
তারা আল্লাহর বাণী অস্বিকার করেছিল।
মানুষের অধিকার হরণ করেছিল।
হত্যা করেছিল।
দেশের দায়িত্বশীলরা দেশকে লুটেপুটে খেয়েছিল।
প্রসাশন তাতে তীব্র সহযোগিতা করেছিল।
হায়নার মত বিরোধি মত দমনে ঝাপিয়ে পড়েছিল।
আজ সব কিছুর বদলা দেয়া হবে।
মহাপরাক্রম্শীল আল্লাহ প্রতি জিনিস লক্ষ্য রেখেছিলেন!
তিনি বলবেন:
"তাদের বলে দেয়া হবে, আজ আমিও ঠিক তেমনি তোমাদের ভুলে যাচ্ছি যেমন তোমরা এই দিনের সাক্ষাৎ ভুলে গিয়েছিলে৷ তোমাদের ঠিকানা এখন দোযখ এবং তোমাদের সাহায্যকারী কেউ নেই৷" (জাসিয়াহ: ৩৪)
"আর যখন এরা শৃংখলিত অবস্থায় তার মধ্যে একটি সংকীর্ণ স্থানে নিক্ষিপ্ত হবে তখন নিজেদের মৃত্যুকে ডাকতে থাকবে৷
(তখন তাদের বলা হবে) আজ একটি মৃত্যুকে নয় বরং বহু মৃত্যুকে ডাকো।" (ফুরকান: ১৩-১৪)
"তারা সেখানে চিৎকার করে করে বলবে হে আমাদের রব! আমাদের এখান থেকে বের করে নাও, আমরা সৎকাজ করবো, আগে যে কাজ করতাম তা থেকে আলাদা৷ (তাদেরকে জবাব দেয়া হবে এই বলে) আমি কি তোমাদের এতটুকু আয়ুস্কাল দান করিনি যে, সময়ে কেউ শিক্ষাগ্রহণ করতে চাইলে শিক্ষাগ্রহণ করতে পারতো? আর তোমাদের কাছে সতর্ককারীও এসে গিয়েছিল৷ এখন স্বাদ আস্বাদন করো, জালেমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই৷ " (ফাতির: ৩৭)
"তোমরা কি সেসব লোক নও যাদের কাছে আমার আয়াত শুনানো হলেই বলতে এটা মিথ্যা?’
তারা বলবে, ‘‘হে আমাদের রব !আমাদের দুর্ভাগ্য আমাদের ওপর ছেয়ে গিয়েছিল,আমরা সত্যিই ছিলাম বিভ্রান্ত সম্প্রদায়৷
হে পরওয়ারদিগার ! এখন আমাদের এখান থেকে বের করে দাও,আমরা যদি আবার এ ধরনের অপরাধ করি তাহলে আমরা জালেম হবো ৷
আল্লাহ জবাব দেবেন,দূর হয়ে যাও আমার সামনে থেকে,পড়ে থাকো ওরি মধ্যে এবং কথা বলো না আমার সাথে৷"
(মুমিনুন: ১০৫ - ১০৮)
**
অস্ত্রধারীরা শিবির হত্যার জন্য আমাদের ফ্লোরে চলে এসেছে। জানালা দিয়ে দেখলাম একদল হায়নার মত উন্মুক্ত চাপাতি আর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে চলে এসেছে। দরজা ভেঙ্গে রুমে ঢুকে পড়ছে। প্রথম-বর্ষের ভদ্র-শান্ত আমার রুম-মেট আল্লাহ আল্লাহ করছে। পরিবারের বড় ছেলে। পিতা সরকারী সামান্য চাকুরিজীবি। একবার এসে আমাকে অনেক অনুনয় করেছলেন -- ছেলেকে দেখে রাখতে - পড়াশুনা সংক্রান্ত সাহায্য করতে! আমি লজ্জায় পরেছিলাম - কিন্তু পিতার চোখে সন্তানের জন্য অনেক বড় স্বপ্ন দেখেছিলাম। স্বপন-পূরনে এক পরিবারের আপ্রাণ চেষ্টা দেখেছিলাম।
পৃথিবীর এ স্বপ্ন কি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে?
তবে এ ছেলে আল্লাহর কাছে শহীদ হিসেবে গন্য হলে কি এক অকল্পনীয় পাওয়া হবে না অনন্তকালের জন্য?
আমি হাসানকে সাহস দিলাম।
লাঠি হাতে শক্ত করে ধরলাম।
কালেমা পরে নিলাম।
আমরা কি করতে পারব একদল অস্ত্রধারী হায়নার সামনে?
তিনতলা থেকে নামার আর কোন উপায় নেই! জানালা দিয়ে নিচে ই নির্বিকার পুলিশ-র্যব দের দেখলাম।
হটাত মনে হল নিচে আগুন জ্বলছে। পুলিশ, রবিজিবি, র্যব শিকলবদ্ধ। আর্ত চিত্কার করছে। আমার কি মনে হচ্ছে তারা জাহান্নামের আগুনে জ্বলছে। আমার এরকম হেলুসিনেশন কেন হচ্ছে?
আমি কি দেখছি ভয়ঙ্কর সাপ, বিচ্ছু তাদের দগ্ধ করছে? যে এক খচ্চর আকারের বিচ্ছুর দহন ৪০ বছর তাদের জ্বালাবে?
আমি কি দেখছি তাদের চেহারা বিকৃত হয়ে গেছে?
উত্তাপে তাদের চোয়াল বের হয়ে এসেছে?
তৈল, পুজ পান করছে - নাড়িভুড়ি বের হয়ে এসেছে। তাকানো যাচ্ছে না! সত্যি ই তাকানো যাচ্ছে না!
**
আমাদের দরজা ধাক্কাচ্ছে হায়নারা।
খুব ভাল লাগছে হটাত করে।
হাসানের ও কান্না থেমেছে। ও একটি লাঠি শক্ত করে ধরল।
মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে। আহারে!
হাসি মুখে বললাম, 'হাসান, জান্নাতে ইনশাআল্লাহ দেখা হবে। জাহান্নামের আগুনে এক মুহূর্ত ও থাকতে চাই না| '
হাসান ও হাসিমুখে বলল, 'ইনশাআল্লাহ'।
দরজায় তীব্র ধাক্কা পড়ছে।
এই ভেঙ্গে গেল বলে।
বিষয়: বিবিধ
১৯৩৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন