সত্য ঘটনা অবলম্বনে (২৬): ভয়

লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ১২ জানুয়ারি, ২০১৪, ১২:৪৮:৩৫ দুপুর

পাকিস্তানি আর্মি পূর্ব-পাকিস্তানের মানুষের উপর সশস্ত্র ঝাপিয়ে পড়েছে। শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে পাকিস্তান নিয়ে আসা হয়েছে।

পশ্চিম পাকিস্তান। ৭১ এর কোন এক সময়। জেলার এসেছেন মুজিবুর রহমানের সাথে দেখা করতে।

জেলার: স্যার, ভুট্টো সাহেবের সাথে দেখা করতে যেতে হবে।

তাহলে কি ডেকে ই হত্যা করবেন ? তা তো করার নয়। তিনি তো খোশ গল্পই করেছিলেন। লাইব্রেরিতে যাওয়ার সুযোগ তো তিনি ই অফার করেছিলেন। আমার মাথায় ঘুরছে আমার জেলের কক্ষের পাশে গর্ত খননের হেতু কি হতে পারে?

**

শেখ মুজিবুর রহমান যখন মৃত্যুভয়ে প্রতি ক্ষণ অহেতুক গুনছে, ভুট্টোর সাথে আর্মির এক কর্নেলের এর কথা চলছিল:

ভুট্টো: সে এক চরম ভিতু। বক্তৃতায় ঠিক উল্টা। যেন একেবারে সাহসী বাঘ! এই বাঙ্গাল জাতির প্রত্যেক নেতার রক্তে সব সময় ই দোষ ছিল। সেটা হল মিথ্যা আর স্বার্থপরতা।

কর্নেল: মুজিব এক থার্ড ক্লাস ক্লাউন। মেধাহীন জাতির যথাযোগ্য নেতা। আমাকে দেখলে ই কেপে উঠে। ক্লাউনের সাথে মজা করা এক দারুন অভিগ্গতা।

দুজন ই রেড ওয়াইন গ্লাসে ভরে নিল।

হাজার মাইল দুরে তাদের ই অধিকৃত অঞ্চল 'পূর্ব বাংলায়' যুদ্ধ চলছে। মানুষ জেগে উঠেছে। অস্ত্র ধরেছে। প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। নতুন নেতা জেগে উঠেছে। আওয়ামী সব পরিচিত মুখ গা ঢাকা দিয়েছে। বক্তৃতায় যে পরিমান চিত্কার - অন্তরে এদের সে পরিমান দালালি আর বৈপরিত্য। শতভাগ নিজ আত্মসিদ্ধির বাসনায় রাজনীতিতে আসা সাক্ষাত দৈত্য। মানুষের মুখোশের আড়ালে লুকানো এক একটা দৈত্য। তা না হলে যুদ্ধ শুরু হল। আর এরা কলিকাতায় গোপন অভিসারে চলে গেল?

দুজনের রেড ওয়াইনের নেশা বেড়ে চলেছে। মুজিবুর রহমান কে আনতে জেলার কে নির্দেশ দিয়েছে। এক বাংলো ঠিক করা হয়েছে। তাকে সসম্মানে রাখার সব প্রটোকল ঠিক করা হয়েছে। এক বাঙালি বাবুর্চি ও দেয়া হয়েছে।

ভুট্টো: আমাকে একবার ও দেশের গন্ডগল নিয়ে কিছু বলে নি! শুধু জানের ভয়! তাকে জেলের পাশের মাটি কাটার রিয়েল স্টোরি বলার পরও তার সংশয় কাটেনি। স্টুপিড coward লিডার!

কর্নেল: (হাসি) ইয়াহইয়া আমাকে যথাযোগ্য তারিফ করতে বলেছেন। এটাও জানিয়েছেন যে জেলখানা ই এই ভিতু মুজিব কে অসুস্থ করে ফেলবে। ভাল কোন বাসায় রাখলে ঠিক থাকবে। ভয় কমবে। উত্তেজিত কম হবে। তৈল মর্দন করে একে কনভিন্স করা রিয়েলি সিম্পল স্টেপস।

**** **** ****

১১ ই জানুয়ারী, ২০১৪ সাল। গাইবান্ধার পলাশবাড়ি।

পুলিশ সাকিব নামের জামায়াতের একজনকে পায়ে গুলি করে । তাকে রংপুর মেডিকেলে ভর্তি করাতে গেলে সেখান ভর্তি করাতে দেয় না । পড়ে এক ডাক্তার তার বাড়িতে রাখেন । কিন্তু তার অবস্থা এতই খারাপ ছিল যে তাকে ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া লাগে। সেখান থেকে রাতে RAB এসে তাকে ধরে ।

পরের দিন সকালে তার লাশ পাওয়া যায় মহেশপুর নামের একটি জায়গায় । মৃতদেহে যা দেখা যায় তা হল: তার যে পা টা ভাল ছিল তাতে গুলি করা । তার হাতের নখ প্লাস দিয়ে তুলে ফেলা । ঠোঁটেও প্লাসের দাগ । তার বুকে গুলি করা। তার কানে গুলি করা। এখানেই শেষ রাখে নাই তার পুরুষাঙ্গও কেটে ফেলা।

লাশ জানাজা শেষে যখন কবর দিতে যাবে তখন পুলিশ এসে লাশ নিয়ে গেল ময়নাতদন্তের জন্য ।

মহসিন কাপছে। সেও জানাজাতে অংশ গ্রহণকারীদের একজন। ক্ষোভে প্রাণ বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম।

একা চলে এল পুকুর পারে। কাদছে। হাউ মাউ করে কাদছে।

**

চান্স-রাজা শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা সেখ হাসিনা ৯৫ এ চান্স-প্রধানমন্ত্রী হয়। তার জীবন-বৃত্তান্তের সব কিছু চান্স-নির্ভর। এক থার্ড ক্লাস পলিটিসিয়ানকে প্রচারণার মাধ্যমে স্বর্গে তুলে ধরে তার প্রজন্ম বেনিফিসিয়ারী হচ্ছে যুগ যুগ ধরে।

আমি ভাবছি পুকুর পারে।

একটি মাছ মুখ তুলল মাঝ পুকুরে। থেমে রইল। সে কি মুক্তি চাইছে? মুক্তি চাইবে কেন? বাইরে ই তো সে মারা যাবে। পানিতে ই তো সে বেচে থাকবে। অথচ আমার মনে হচ্ছে তাকে পানি থেকে মুক্ত করা হোক।

আচ্ছা আমি কি শেখ হাসিনা?

মাছেরা কি বাংলাদেশের মানুষ?

আমি কি হাসিনার মত বাংলাদেশের মানুষের জন্য এমন উপযুক্ত ব্যবস্থা বেধে দিচ্ছি যা তাদের বাচাবে? অথচ প্রকৃত সত্য সে ব্যবস্থা তাদের মরণের মঞ্চ তৈরী করবে?

**

মহসিনের শেখ হাসিনার সাথে নিজের মিল খোজার খামখেয়ালীর সময় ই টেলিফোনে চলছিল দুই প্রধানমন্ত্রীর আলাপচারিতা।

মনমোহন: আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি ইউকে কে বুঝতে। তারা এইড বন্ধের সুপারিশ ফাইনাল নাও ও করতে পারে।

শেখ হাসিনা: আপনার দয়া।

মনমোহন: 'র' এর সুপারিশ ভেবে দেখেছেন? ইলেকশন পরবর্তী কন্ট্রোল্ড সিন প্রিপেয়ারের জন্য তাদের পুরস্কৃত করবেন না?

শেখ হাসিনা:জ্বি। যথাসাধ্য চেষ্টা করব। তবে তিস্তার ব্যপারে একটু সময় চাই। পরিস্থিতি একটু ভিন্ন হোক। আরেকটা ব্যপার, শুনলাম 'র' আমার হত্যার পরিকল্পনা করছে। অপপ্রচার ছড়িয়ে পড়েছে। আমি আপনার কাছে অনুনয় করছি। আমি আশ্বস্ত হতে চাই।

মনমোহন: ব্লাফ নিউস। তারা আপনার রক্ষক। পৃথিবীর কোন শক্তির সে ক্ষমতা নেই।

ভয়-আচ্ছন্ন শেখ হাসিনার কল্পিত অসহায় মুখ খানি মনমোহনকে খানিক হাসাল। কথোপকথন যে আরেকজন শুনছেন 'র' এর জনৈক এক্স-ব্রিগেডিয়ার রেড ওয়াইন মুখে দিলেন আর মুচকি হাসলেন। বললেন, 'কাওয়ার্ড লিডার। মৃত্যুভয়ে আচ্ছন্ন জননেত্রী! যেমন পিতা তেমন কন্যা। বাইরে সাহসের খোলস। আরে ভেতরে স্বার্থপরতার শতভাগ দালালি আর ভয়।'

*** *** *** ***

গভীর রাতে ছাদে বসে ঘুট ঘুটে দেখি চারদিক। গ্রামের দ্বি-তল দালানের ছাদ। যতদুর দেখা যায় নারিকেল গাছের মাথাই দেখা যায়। সবার উপর থেকে ই সব দেখছি। আমার প্রিয় দৃশ্য।

আমি কি অসম সাহসী? এত গভীর রাতে এক প্রকৃতি-প্রেমিক মেয়েকে কেউ এভাবে দেখলে তো আসলে ই ভয় পাবে। ভয় পেলে পাক। আমার কি?

আমি দেখছি সৌন্দর্যের মূর্তমান সময়! নক্ষত্রের রাতে আকাশ পথ বানায় ঠিকই। আধো আলোর পথ। মনের পথও তখন তৈরী হয়। এমন পথে ই বাবা চলে আসেন। আমি বুঝি। সেই মহেন্দ্রক্ষণ উপস্থিত! শাসকের গুলিতে শহীদ হওয়া আমার বাবা চলে আসেন। কেউ দেখেনা। কেউ বুঝে না। কিন্তু আমি বুঝি।

তিনি আমার পাশে ই থাকেন। ফিসফিস করে বলেন, 'মা পাখি, উড়বে আমার সাথে? দেখবে আমার ঘর? তোমাদের দেখাবো সাজান বাগান - সেই ক্ষণের পানে নিরত চেয়ে থাকি'।

বিষয়: বিবিধ

১২২১ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

161666
১২ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০১:১২
মোঃজুলফিকার আলী লিখেছেন : ভাল লেগেছে। ধন্যবাদ।
161672
১২ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০১:২৬
বুড়া মিয়া লিখেছেন : ভালো লাগলো
161712
১২ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০২:৫৯
সালাহ লিখেছেন : অতীত নিয়ে কিছু বলতে চাইনা । তবে , নব্য মীর জাফরের চিত্র তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File