সত্য ঘটনা অবলম্বনে (১৭) -- স্বপ্নপূরন

লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ০১ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৫:৪২:৫৩ বিকাল

চট্টগ্রামের নেভী রোড, মাদামবিবির হাট।

২০১৩ এর একদলীয় ইলেকশনের তফসিল ঘোষণার কয়েকদিন পর।

পুলিশের একটি গাড়ি থামল।

চোখবাধা শিবিরের একজনকে নামান হল।

'দৌড়া, দৌড়া।'

বন্দুক হাতে প্রস্তুত যুবলীগের সহ-সভাপতি বন্দী ছেলেটিকে বলল। তার পুলিশ বা র্যবের পোশাক ও দরকার নেই। তার পেছনে পুলিশের চারজন নির্লিপ্ত দাড়িয়ে। একটি হত্যার দৃশ্য দেখতে প্রস্তুত। এই হত্যার নাম 'ক্রস ফায়ার'।

শিবিরের ছেলেটি দৌড়াচ্ছে না। দাড়িয়েই রইল।

কি মনে করে যুবলীগের সহ-সভাপতি দুটি ফাকা গুলি করল।

কিছুক্ষণ শব্দের অনুরণন। তাও বন্দী ছেলেটির নড়াচড়া নেই।

পাশেই কয়েকজন নেভি পুলিশ বেরিয়ে আসল কি?

'দূর শালা! কই আইলাম! ওই তোরা (পুলিশদের উদ্দেশে) এইটারে (চোখ-বাধা শিবিরের ছেলেটিকে) গাড়িতে তোল।'

পুলিশের গাড়িটি দ্রুত চলে গেল।

*****************************

মানুষ নেমে এসেছে।

একক নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে স্বাধীনতার চেতনার ইজারাদার সরকার।

রাজশাহী। আন্দোলনের অগ্রভাগে শিবিরের বজ্রমুঠি। সাধারণ মানুষ যার যা আছে তাই নিয়ে নেমে এসেছে।

রাতের আধার। ল্যাম্প-পোস্ট-এর আলোয় মানুষের আন্দোলন। এরকম অন্ধকার ই হায়নাদের পছন্দ। রক্তের নেশা ধরিয়ে দেয় হায়নাদের। হায়নারা পুলিশ আর র্যবের (RAB) পোশাকে সশস্ত্র ঝাকে ঝাকে এগিয়ে আসছে।

মিছিল ও এগিয়ে আসছে। নেতারা মিছিলের অগ্রভাগে। অন্যান্য দলের মত লুকিয়ে নয়। কিংবা মিডিয়ার সামনে বসে নয়। কিংবা দিনের আলোয় ফটোজেনিক পাট চুলের নায়ক-সদৃশ নয়। দিন কি রাত - ঝলমলে দুপুর কিংবা বর্ষা - হেমন্তের মাতাল হাওয়া কিনবা শীতের কনকনে ঠান্ডা - জীবন জীবিকার পরোয়াহীন -- কান্ডারীরা আজ দেশের মানুষকে বাচাতে মিছিলকে নেতৃত্ব দিচ্ছে।

মিছিল এগিয়ে আসছে। এ যে সাহসের মিছিল। অত্যাচারীর বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর মিছিল। আলোকিত মানুষদের মিছিল।

ব্রীজের উপর মিছিল আসতে ই পুলিশ আর ছাত্রলীগ গুলি শুরু করল। পরিকল্পনা অনুযায়ী মিছিলের সবাই সরে পড়ল। পরবর্তী পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রস্তুত হয়ে পড়ল।

**************

আজ আমি ওর সাথে রিক্সায় ঘুরব। এক সপ্তাহ পার হয়নি আমাদের বিয়ের। কিন্তু আমার বহুদিনের শখকে আজ বাস্তব করব। প্ল্যন হল: (১) রিক্সায় ঘুরা, (২) নিরবে খাওয়া, (৩) নৌকায় নদীতে ভ্রমন করে কেরানিগন্জের দিকে গিয়ে নদীর পারের দোকানে বসে চা-পুড়ি খাওয়া।

হুট তোলা রিক্সায় দুইজন পাশাপাশি বসে আছি। ও কি লজ্জা পাচ্ছে? পেলে পাক। আমি ওর হাত ধরলাম। আর ও কি লজ্জা পেল? ছেলেটাকে লজ্জা পাইয়ে দেয়ার মজা আছে।

হেমন্তের দুপুর। ঝিরঝিরে বাতাস। এত সুন্দর সময়ে একজন সুপুরুষের সাথে বোরকা পড়া এক সুন্দরী বউ রিক্সায় ঘুরবে - এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু আমি জানি ওর ফোন বেজে উঠবে। শিবিরের এক দায়িত্বশীলের ফোন প্রতি ৩০ মিনিটে বাজবে এটা ই এখন স্বাভাবিক মনে হচ্ছে বিয়ের পর থেকে । তাছাড়া দেশ উত্তাল। সবাই মাঠে নেমে পড়েছে। দুই সপ্তাহ ছুটি নিয়েছে বিয়ে উপলক্ষে। ছুটি প্রায় শেষ। কিন্তু ওর মন পরে আছে আন্দোলনরত ভাইদের জন্য। দেশের জন্য। দেশের মানুষের জন্য।

******************

ও মজা করে খাচ্ছে। কয়েক রকম ভর্তা, ভাজি, রুই মাছ, ডালের চর্চরি।

বেশ ঝাল। কিন্তু দারুন মজা। কিন্তু খাওয়ার তেমন রুচি নেই। হাসিমুখে কষ্টকরে খাচ্ছি। ও ও খাচ্ছে।

ও বলল, 'তোমার খেতে কস্ট হচ্ছে?'

'নাহ।'

এ মুহুর্তে আমার একার কোন কস্ট নেই।

অথচ দেশ জ্বলছে। মানুষ হায়না সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। মৌলিক অধিকারের দাবি তো সুদুর পরাহত, অত্যাচারের বিরুদ্ধে পিঠ থেকে যাওয়া মানুষ আজ রাস্তায় নেমে এসেছে।

এই রাজ্যের নাম কি? কি কি নাম দেয়া যায়?

হিরক রাজ্য?

ফেরাউনের রাজ্য?

বেনিয়া পরাশক্তির দালালদের রাজ্য?

কান্ট্রি অফ দা এইপস (planet of the apes অনুযায়ী)?

কুকুরের রাজ্য?

হায়নাদের রাজ্য?

এই রাজ্যের বৈশিস্ট কি? কি কি বলা যায়?

(১) দেশের চুরির টাকার ধনীরা বেসে আছে (অ) শাসকের গদিতে (আ) প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে (ই) বিচারকের গদিতে। দেশ ধংসের এরকম অগ্রগতি কে থামাতে পারে?

ও কি বলতে পারবে? ওর দ্লকি থামাতে পারবে? নাকি মরতে ই থাকবে ওর সঙ্গীরা?

(২) ইসলাম-অজ্ঞ এক বিশাল সমাজ। ইসলাম বিদ্বেষী এক সমাজ (সোসাইটি) ও। এদের ঠিক করার দায়িত্ব কার? শুধু হেফাজত, শিবির, জামায়াত, ছাত্রী সংস্থা সহ ইসলাম-প্রেমিক দলগুলোর? আর অন্যান্য মুসলমানের নয়? অথচ মুসলমান মাত্রই তো ইসলাম কে জানা, মানা এবং প্রচার করা আসল দায়িত্ব। আল্লাহ যে মানুষকে খলিফা হসেবে পাঠিয়েছেন তার মৌলিক সংগা ও দায়িত্ব তো এটি ই।

(৩) যারা দেশকে ভালবেসে স্বার্থপরতা ভেঙ্গে এগিয়ে যায়, দল-মত, ধর্ম নির্বিশেষে সবার মৌলিক অধিকারের দাবিতে আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ায় তাদের কে আসল সঙ্গী করে নেয়া একদল মানুষ আজ আন্দোলনরত ।

সুরা কাহাফে ২৮ নং আয়াতে তাদের কথা ই স্রষ্টা বলেছেন:

"আর নিজের অন্তরকে তাদের সংগ লাভে নিশ্চিন্ত করো যারা নিজেদের রবের সন্তুষ্টির সন্ধানে সকাল-ঝাঁঝে তাঁকে ডাকে এবং কখনো তাদের দিক থেকে দৃষ্টি ফিরাবে না৷ তুমি কি পার্থিব সৌন্দর্য পছন্দ করো ? এমন কোনো লোকের আনুগত্য করো না যার অন্তরকে আমি আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি, যে নিজের প্রবৃত্তির কামনা বাসনার অনুসরণ করেছে এবং যার কর্মপদ্ধতি কখনো উগ্র, কখনো উদাসীন।"

**

খেতে খেতে ভাবলাম একা চিন্তা না করে আমার জামাইকে প্রশ্ন করি!

'আচ্ছা, একটা ইসলামী দলের সমস্যা কি?'

হাসতে হাসতে বলল, 'এ প্রশ্ন কেন? কি রকম সমস্যার কথা বলছ? '

'এই ধর, যখন রাজপথে থাকার কথা, তোমাদের অনেক লোক চুপ চাপ আছে। গা বাঁচিয়ে চলছে।'

'মূল সমস্যা তোমার কি মনে হয়?'

'আমি মনে করি, সমস্যা একটাই। পরকালের ভয় কে ভালমত অনুধাবন না করা। আর পৃথিবীর জীবনকে আখেরাতের উপর প্রাধান্য দেয়া।'

'ঠিক।'

'ঠিক বললে ই কি হবে? এই তত্ব বাস্তবায়নে তোমাদের পদক্ষেপ কেমন?'

'পদক্ষেপ আছে। তুমি কেমন পদক্ষেপ আশা কর?'

'আমি মনে করি সব আলোচনায় এ বিষয়টি রিপিটেডলি আনা উচিত। দ্বিতীয়ত ইসলামী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মন থেকে দুনিয়া-প্রীতি কমিয়ে ফেলা উচিত। আমাদের সমাজের সংগঠনের বাইরের লোকদের 'টাকার বড়াই' আর 'ক্ষমতার বড়াই ' কিভাবে সংগঠনের দায়িত্বশীলদের মাঝে অনেক সময় ঢুকে পরে তা আমার বোধগম্য নয়। এটাকে স্ট্রিক্টলি প্রতিহত করা উচিত।'

'কিন্তু ক্ষমতা আর অর্থ ও তো দরকার সাংগঠনিক কার্যক্রম ব্রড রেঞ্জে পরিচালনার জন্য।'

'অবশ্যই। কিন্তু তা যেন ব্যক্তিগত লালসায় পরিনত না হয়। মানুষকে মূল্য দেয়ার মানদন্ডে পরিনত না হয়। আর আরেকটা ব্যপার, জ্ঞানী, সিনসিয়ার আর কর্মঠ টিম টাকার কমতি সহজে পূর্ণ করে দিতে পারে।'

'তৃতীয় ব্যপার, আমরা ইনোভেটিভ জ্ঞানী,দক্ষ আর কর্মঠ নেতা কি পাচ্ছি গত ২০-৩০ বছর ধরে? অনেকে বলে থাকে ন্যচারাল বা বরণ (BORN) লিডার কি তৈরী হচ্ছে?'

'এটা একটা জটিল বিষয়। আমি মনে করি নবীজির ২৩ বছর আর চার খলিফার পুর্নাংগ জীবন এর উত্তর দিবে। আমরা এই সময়কালের অনেক খুটিনাটি বিষয় জানি না। কারন আমরা পড়ি না সেই বিষয়ে। সংগঠনের সিলেবাসে সে বিষয়গুলো অনেক কম পরিমানে ই হয়ত আছে। অথচ আমরা এর থেকে ও অনেকাংশে বেশি জানি উন- কিনবা বিংশ শতকের স্কলারদের জীবন চরিত।'

'কিন্তু বাস্তবতার খাতিরে বা সময়কে যথার্থ উপলব্ধির জন্য তো তা জানতে হবে।'

'ঠিক। মানি। কিন্তু জ্ঞানী সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) তাবেইদের প্রশিক্ষণের সময়ে একটি উপদেশ দিয়েছিলেন, 'তোমরা তোমাদের সময়কালের আলেম বা নেতাদের অনুসরণ করবে না। তোমরা রাসুল (স), তার সাহাবী আবুবকর ও ওমর (রা) এর জীবন চরিত অনুসরণ করবে।'

'বেশ সুন্দর কথা তো।'

'তবে একটা বিষয় হল: কর্মদক্ষতা আর জ্ঞান দুইটি আলাদা জিনিস। একটির দক্ষ লোকেরা আরেকটির দক্ষ লোকদের অবগ্গা বা হেলা করলে সংগঠনের ই ক্ষতি। এটা ও আমি মনে করি একটি হীনমন্যতা-জনিত সমস্যা।'

একটা জিনিস বুঝতে হবে: জ্ঞান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন। সেটা ঠিক না হলে শত কর্মদক্ষ হলে ও কি কোন লাভ হবে? যেমন কোন গ্রুপ যদি পলিটিকাল ইসলাম না বুঝে (অর্থাত ওই বিষয়ক জ্ঞান ই তাদের নাই) তারা যত ই সেমিনার সিম্পোজিয়াম করুক না কেন - যত ই মাঠে ঘাটে সংগ্রাম করুক না কেন - কোন ফায়দা কি হবে?' বলে ই আমি হাসলাম।

ও হেসে উঠল।

'মজার ব্যপার, তারা ভাবে যে তারা ই ঠিক রয়েছে।'

'কিন্তু এটা তো আমাদের ক্ষেত্রে ও প্রযোজ্য হতে পারে।'

'কিভাবে?'

'যেমন ধর, আমরা যদি কখন ও জানতে পারি লজিক দিয়ে যে আমার কর্মপদ্ধতি কিছুটা পরিবর্তন করা দরকার। তখন ই আমরা তা সহজে মেনে নিতে পারি না।'

'এক্ষেত্রে আমাদের সাথে অন্যান্য গো-ধরা গ্রুপের কোন তফাত রইল না।'

'আমি যদি বুঝি যে নবুয়াত আর খেলাফতের ত্রিশ বছর সময়কালের মাঝের কোন সিমিলার ঘটনা অনুযায়ী প্রজ্ঞার ভিত্তিতে আমাদের কোন টেকনিক গ্রহণ করা উচিত - যা হয়ত প্রেজেন্ট পদ্ধতির এক্স্টেনশন অথবা ভেরিয়ান্ট (ভিন্নতর অবস্থা) - তবে আমাদের উদার হয়ে সেদিকে আগানো উচিত।'

'ঠিক। আমি তোমাকে বিষয়টা আমার মাস্টার্স রিসার্চ দিয়ে বুঝাই।'

আমি হেসে বললাম, 'উফ, এখন আবার রিসার্চ!! ওকে সমস্যা নাই বল।'

ও হাসতে হাসতে বলল, 'তুমি যা ভাবছ সেরকম কঠিন নয় বিষয়টা। আমার রিসার্চ এর ডাইরেকশন শুরুর আগে আমার সুপারভাইসার একটা পেপার দিয়ে বলল আমরা এই ওয়ে (way) তে আগাবো বলে ভাবছি। তুমি পরে চিন্তা করে জানি ও যদি ইন্টারেস্ট ফিল কর।'

আমি দেখলাম পেপারটি ৯৪ সালের একটি কাজ। যা ৯০ সালের একটি কাজের এক্স টেনশন। কিন্তু আমি 'রুট' থেকে বিষয়টি বুঝতে চাই। তাই দেখলাম ওই পেপারটি রেফার করেছে ৮০ দশকের একটি কাজ কে। ওই পেপারটি ডাউনলোড করে পরে দেখলাম যা ৭৫ এবং অবশেষে সেটি ও ৬৯ এর একটি কাজের ফলশ্রুতি। অর্থাৎ কয়েক দিনের পড়াশুনার যুদ্ধ শেষে কন্ক্লিউসনে আসলাম যে, মূল কাজটি তথা আবিস্কারটি প্রথম হয়েছে ১৯৬৯ সালে। সেই ৬৯ এর পেপারটি পড়ে আমি সবকিছু বুঝতে পারলাম। এমনকি নতুন আইডিয়া ও পেলাম কাজের এক্স্টেনশনের ।

আমার এই ইতিহাস বলার অর্থ হল: ইসলামিক নলেজের ক্ষেত্রে তথা সঠিক জানার ক্ষেত্রে আমাদের রুট তথা কোরআন, হাদিস, চার খলিফার জীবনী -- খলিফাদের পলিটিকাল বিষয়গুলো যেটাকে সাধারনত ইগনোর করা হয় -- সব জানা উচিত সর্বাগ্রে । এরপর লেখকদের সাহিত্য ও সব পরা উচিত সিকয়েন্সিয়ালি। তাফসির প্রথম দিকের যেগুলো - সেগুলো থেকে শুরু করে যেমন ইবনে কাসীর উনবিংশ শতকের তাফসির যেমন তাফহিমুল কোরআন, মারেফুল কোরআন, সাইয়েদ কুতুবের তাফসির, তাদাব্বুরে কোরআন সব ই পরা উচিত - বিশেষ করে যারা নীতি নির্ধারক ও নেতা তাদের। তাহলে ই পার্থিব রিসার্চের মত ইসলামিক রিসার্চে ও সংগঠনের মানদন্ডে গুনগত উত্কর্ষতা আসবে।'

'তবে আরেকটি ব্যপার হল: খলিফা ওমরের কাছে কিছু লোক কয়েকটি প্রশ্ন নিয়ে এসেছিল মাসয়ালা জানার ব্যপারে।'

তিনি বলেছিলেন: 'এ ঘটনা কি ঘটেছে?' তারা বলল, 'না ঘটেনি।'

তিনি বললেন 'তোমরা ফিরে যাও। যা ঘটেনি তা নিয়ে চিন্তার সময় আমাদের নেই। আমরা দারুন ব্যস্ত মূল কাজ বাস্তবায়নে। যদি কখনো ঘটে তখন ফিরে এস। আমি বদর যুদ্ধের সাহাবীদের নিয়ে দল গঠন করে তাদের দিয়ে এর উত্তর বের করার চেষ্টা করব।'

অর্থাত যারা সংগ্রামী, ডেডিকেটেড ও জ্ঞানী তাদের ই প্রায়োরিটি এক্ষেত্রে। অন্য দৃষ্টিতে যারা সংগ্রামী ও কর্মঠ লিডার তাদের জ্ঞানের ক্ষেত্রে ও অনেক আগিয়ে আসা উচিত। দুইটির কম্বিনেশন দরকার।'

'এই উত্কর্ষতার কোন সহজ উপায় আছে?'

'পরাশুনা এক কঠিন উপায় যারা ব্যস্ত ও কর্মঠ তাদের জন্য। এক্ষেত্রে যারা জ্ঞানী তাদের সাথে ফ্রিকুয়েন্ট কনভার্সেশন, সাজেশন নেয়া তথা নিবির যোগাযোগ তাদের দ্রুত দক্ষ করে তুলবে। তবে যদি হিনমন্যতায় ভুগে বোকার মত ব্যবধান বজায় রাখে তাহলে তা নন্প্রফেসনাল ব্যবহার ভিন্ন আর কিছু নয়।'

*****************

এক ঘৃণ্য নেশা পেয়ে বসল পুলিশ, র্যব দের। সাথে সশস্ত্র আওয়ামী লীগের গুন্ডাবাহিনী। তাদের কোন ভয় নেই। কারণ মিডিয়ার ক্যমেরা হাতে অনেক সংবাদিক সবাই হয় তাদের চাকর অথবা সামান্য টাকা নিয়ে এদের কেনা যাবে। তাই হাতে একে-৪৭, সাইলেন্সড পিস্তল নিয়ে নির্লিপ্ত দাড়িয়ে ছাত্রলীগের বাহিনী। অনেকে দুই-তিন হাত দীর্ঘ চাপাতি নিয়ে এসেছে। এদের কোপ না দেয়া ছাড়া যেন মনটা ভরে না।

গালকাটা ছাত্রলীগের একটা ক্যডার এসে একটা কনস্টবলকে কষে থাপ্পর দিয়ে বলল, 'তোরে না বলছি ব্রিজের নিচে যাইতে। এখানে বা .. ফালাও।'

হতচকিত হয়ে বেচারা দৌড় দিল নিচে। পুলিশের ওসি না দেখার ভান করল। পুলিশের কার ও কথা বলার কোন সাহস নাই ওই গালকাটা ছাত্রলীগের ক্যডারের। না পাছে কি বেইজ্জতি করে বসে! আর ওই ক্যডারের যে কানেকশন আছে তাতে পুলিশের সহজ বদলি হওয়া মামুলি ব্যপার।

**

'ভয়ঙ্কর পরিকল্পনায় পুলিশ প্রস্তুত। লাশ দরকার বলে দিয়েছে পুলিশের উপ-কমিশনার।

লাশ প্রতি কত টাকা?

এই টাকা কি ভারতের টাকা নাকি বাংলাদেশের সরকারের টাকা?

পাকিস্তানিরা বাংলাদেশের টাকা পাকিস্তানে একটু বেশি পাঠাত। আর মুজিব-সেনারা দেশের টাকা কোথাও পাঠায় না, নিজের একাউন্ট এ পাঠায়।'

আমি নোমানী। বিরাট দায়িত্ব আমার মাথায়। মিছিলের দায়িত্ব। আমি জানি কি কি পরিকল্পনা হয়েছে পুলিশ গুন্ডাদের। আল্লাহর রহমতে প্রপার মেসেজ পেয়েছি। এখন আমরা আমাদের পরিকল্পনা করব।

ব্রিজের নিচে সারা রাস্তায় বিছানো হয়েছে তারকাটা। পুলিশের গাড়ি নামলেই টায়ার পাংচার হবে। সেই রাস্তা সংলগ্ন তিনটি ছোট রাস্তা আমাদের নেক্সট সেফটি জোন। সেখানে আর ও অধিক পরিমান তারকাটা বিছানো আছে। পুলিশের গাড়ি সেখানে ঢুকলে দশ জনের মত একসাথে গাড়ির উপর ঝাপিয়ে পড়ব।

হায়নাদের সাথে গেরিলা টাইপ আক্রমনের বিকল্প নেই।

**

আমি মিছিলকে আগেই তিন গ্রুপে বিভক্ত করেছি। তিন গ্রুপ তিন রাস্তায় চলে যাবে।

যদি পুলিশের গাড়ি ব্রীজের উপর থেমে যায় তবে দুরে চলে যেতে হবে। ভুলে ও ছোট তিন রাস্তার মোড়ে থামা যাবে না। কারণ গুন্ডারা তখন অবলীলায় উপর থেকে মানুষ শিকার করবে!

আরেকটা ট্রিক হল ব্রীজের উপর এন্ট্রি পয়েন্টে কয়েকটা দোকানে সাত-আটজন গুলতি ছুড়তে আর মারামারিতে দক্ষ ছেলে লুকিয়ে থাকবে। যদি পুলিশ ব্রিজের উপর থেকে ক্রমাগত মানুষ মারতে থাকে এরা সক্রিয় হয়ে পুলিশের উপর পিছন থেকে আক্রমন চালাবে।

*************

নদীর বুকে দুলে আমাদের নৌকা। সে গুরুগম্ভীর ভাবে বসে আছে। কি ভাবছে? দেশের কথা? মিছিলের বন্ধুদের কথা? হায়না শাহির কোথায় শেষ তা কি ভাবছে?

'কি কাছে এসে বস। দুরে কেন? তুমি তো ছুটিতে আছ। '

সে কিছু না বলে আমার পাশে এসে বসল।

আমি তার হাত ধরলাম। কি লজ্জা পেল নাকি?

'তুমি সাতার জান?'

হতচকিত হয়ে বলল, 'না'।

হাসতে হাসতে বললাম, 'সুইমিংপুলের সাতার ও যান না?'

'একটু একটু'।

'বাহ, তুমি কর দেশের জন্য আন্দোলন। আর নদীমাতৃক দেশে সাতার পার না। সমস্যা নাই, নৌকা ডুবলে আমি তোমাকে ছাড়ব না। আমি ডুবে গেলে ও ছাড়ব না। তুমি কি ছাড়বে? ছেড়ে দিতে পারবে?'

*****************

নৌকার মমতাময়ী মেয়েটি কি জানে যে তার একমাত্র প্রানপ্রিয় ভাইটি এখন ব্রিজের উপর অগ্রসর পুলিশের গাড়ি প্রতিহত করা যায় সে চিন্তায় প্রচেষ্টারত? মেয়েটির ভাই হল নোমানী।

**

সন্ধা নেমেছে একটু আগেই।

আমি আশা করছি পুলিশের গাড়ি নিচে নেমে আসবে।

কিন্তু আসল না।

গালকাটা ছাত্রলীগের গুন্ডাটা পুলিশদের উদ্দেশে চিত্কার দিল: 'তোরা থাম।' দৌড়ে এসে একে-৪৭ দিয়ে নিচের দিকে গুলি শুরু করল।

ত্বরিত চিত্কার দিয়ে সরে যেতে বললাম সবাইকে।

মাসুম সহ কয়েকজন কেন ঢিল ছুড়ছে এখন ও ?

বিপদে পরবে তো!

... মাসুম কি পরে গেল?

পাশের আরেক ভাই ও তো পরে গেল।

রক্তে রাস্তা ভিজে গিয়েছে।

ওরা কেন এই ভুলটা করল?

ব্রিজের প্রবেশের মুখের দোকানে লুকানো ছেলেগুলো বের হচ্ছে না কেন?

ও আল্লাহ সাহায্য কর।

এখন আমার কিছু করতে ই হবে।

প্রতিশোধের আগুনে আমি জ্বলছি।

আমি এগুচ্ছি সন্তর্পনে। আমার টার্গেট শুধু ই একজন। ছাত্রলীগের ওই পশুকে থামাতেই হবে। আমাকে কে থামাবে? বন্ধুরা চিত্কার করে আমায় ডাকছে। গালকাটা পশুটার একেবারে কাছাকাছি আমি। হাতে ছুরিটা শক্ত করে ধরলাম। চাদের আলোয় ছুরিটি দারুনভাবে জ্বলছে।

বিষয়: বিবিধ

১৫৭৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File