সত্য ঘটনা অবলম্বনে (১৬) : লড়াই ১৯৭১ ও ২০১৩

লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ২৮ নভেম্বর, ২০১৩, ০৬:৩৩:৪৮ সন্ধ্যা

দরজা ভেঙ্গে সরকারিয় দুর্বৃত্তরা ঘরে ঢুকে পড়ল। র্যবের (RAB) পোশাক। র্যবের মানুষ। কিন্তু কিভাবে পারল? বাবাকে ঘুম থেকে তুলল। ধরে নিয়ে গেল। জীবিত কি ফিরে আসবে সে? আমায় মা আগলে রেখেছে। একটা ১৫ বছরের মেয়ে দেখেই যাচ্ছি। স্বাধীন দেশের মহিয়সী জাতির কন্যার রাজত্ব। রাজ্পাল দের অবাক কান্ড । সৈন্য, মন্ত্রী, হাতি, ঘোড়া, নৌকা নিয়ে নিরীহ দেশবাসীর মুখোমুখী জাতির কন্যা। আমি আরেক কন্যা। আমার মাঝে কি একই প্রতিশোধ জন্ম নিচ্ছে? যেমন প্রতিশোধের স্পৃহা জাতির কন্যার মাঝে জন্মেছিল। কিন্তু এমন প্রতিশোধের আগুনে কি জাতির কন্যা আসলেই জ্বলছে ৭৫ এর হত্যাকান্ডের পর থেকে? তবে আমার মাঝে ও একই আগুন কেন জ্বলবে না।

আমার ক্ষুদ্র মন ভাবে, জাতির কন্যা শেখ হাসিনা আগুনে জ্বলছে। সারা দেশকে আগুনে জ্বালিয়ে দেয়ার মত তীব্র বাসনা তার। আমারও একই আগুন জ্বলছে মনে। আমার সারা শরীরে যদি আত্মঘাতী বোমা লাগানো থাকত। অনায়াসে কি পারতাম না গণভবনে গিয়ে জাতির কন্যাকে জড়িয়ে ধরে সুইচ অন করতে।

আমর মত আগুনে আর ও কতজনে জ্বলছে?

সেই তরুণ কি আমার মত জ্বলছে যার ভাইকে পঙ্গু করে দিয়েছে জাতির কন্যার পালিত কুকুরেরা ?

যার বাবার কপালে পিস্তল চেপে অবলীলায় ট্রিগারে চাপ দিয়েছে পুলিশের ওসি?

যার সন্তানকে ভারতীয় নির্যাতনের সূত্র ধরে প্রয়োগকৃত ইলেকট্রিক শক দিয়ে ডিবির ডিসি নজরুল মোল্লার মাধ্যমে নৃশংস ভাবে চিরতরে পুরুষত্বহীন করে দেয়া হয়েছে?

আজ আমি আর জাতির কন্যা মুখোমুখি। দুই জনই আগুনে জ্বলছি। দুই জনের কাছেই দেশের মানুষের মূল্য কুকুরের বিষ্ঠার চেয়ে আর কিছু বেশি নয়। আমাদের দুই জনের মাঝে পুলিশ, বিজিবি, আদালত, প্রশাসনের ন্পংসকেরা দাড়িয়েছে কেন? তারা এত বোকা কেন? তারা তো আমার মত মৃত্যুকে হাসিমুখে বরণ করতে অক্ষম। তারা কি বোঝে না তাদের না পেলে ও আমি তাদের পরিবারকে তো নাগালে পাব। বাজারে পাব। স্কুলে পাব। হেলভেশিয়ায় গার্লফ্রেন্ডের সাথে কোলা খেতে দেখতে পাব। তাদের লোভাতুর স্ত্রীদের শপিংয়ে ক্ষুধা গ্রস্ত অবস্থায় পাব। সকল প্রকারের ক্ষুধায় এরা যে আজন্ম জড়িত। ৪২ বছর ধরে এরা ক্ষুধাতুর। এদের ক্ষুধাই যে এদের আজাব তা এরা বুঝে না। এই আজাব ই যে এদের সময়ের সাথে সাথে নিশ্চিহ্ন করে দিবে। তুমি কোথাও এদের অহংকারী চিত্কার আর শুনতে পারবে কি?

***************

শত্রু কে?

আমাদের বিএনপির মাঝে ই কি অনেক শত্রু না?

এরা তো ব্যবসায়ী। আওয়ামী অনেকের সাথে যোগসাজশের ব্যবসা। রাজা বদলাবে- এদের ভাগ্য একই থাকবে। টাকার ভাগ্য। এদের আন্দোলনের চৌকস ভাষণে আমার মত দেশকে ভালবেসে যারা এগিয়ে যায় - তাদের ও ভাগ্য চিরকাল একরকম থাকে - নির্যাতনের ভাগ্য।

মিছিল নিয়ে আমি এগুচ্ছি। বিএনপির জেলা আহবায়ক হিসেবে দায়িত্বের ত্রুটি রাখিনি। পুলিশ পাশ ধরে এগুচ্ছে। দুরত্ব রেখে অবস্থান। সন্দেহ হচ্ছে। শ্লোগানে মুখরিত রাজপথ:

'হায়না হাসিনা নিপাত যাক, দেশবাসী মুক্তি পাক'।

'পদ্মা মেঘনা যমুনা, আমার তোমার ঠিকানা'।

সন্দেহ বাস্তবে পরিনত হল। ওসি প্রদীপ কুমার দাস কি ফোনে ই কথা বলছিল? সুযোগ বুঝে ই কি নির্দেশ দিল? সরকারের কয়টা লাশ আজ দরকার? গোলাগুলি শুরু হয়ে গেল মুহুর্তে। নিরস্ত্র বিএনপির মিছিলে বৃষ্টির মত গুলি শুরু করল হায়নারা।

ষাটোর্ধ আমার হাতে কি কোন বুলেট গেথে গেল? সাদা শার্ট মুহুর্তে রক্তে ভরে গেল। মুহুর্তে মন চলে গেল অতীতের এক ঘটনায়:

গোসাইরহাটে যুদ্ধ চলছে। ১৯৭১ সালের অক্টোবরের কোন এক সময়। হানাদারেরা গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে। আমরা প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছি। ওরা চলে যাবে না। আমাদের ঘরবাড়ি আর বাকি নেই। ওদের চলে যেতে দেয়া হবে না। আমি লঞ্চঘাট পর্যন্ত চলে এসেছি। নির্দের্শ এসেছে সরে আসার। আমি আসিনি। মৃনালদার সাথে ওদের লঞ্চের কাছে ই চলে এসেছি। পদ্মার পারে ই এদের সলিল সমাধি করব এই প্রত্যয়। চলে যেতে দিবনা। এর পরে লঞ্চ জ্বালিয়ে দেয়ার মত রসদ ও আছে। কার্যকর ও হবে।

হটাত পিছন থেকে গুলি শুনলাম। আমরা কি ট্রাপে পড়েছি? মৃনালদা কাধে হাত ধরে হাসতে হাসতে বলল, 'বন্ধু, তুমি কি ভয় পাও?'

**

আমাদের লঞ্চ-ঘাট পাড়ের পরিত্যক্ত একটি স্কুল রুমে গাদাগাদি করে ঢুকানো হয়েছে। হিটলার গ্যস চেম্বারে মানুষ মারত। এরা কিভাবে মারবে?

বসার মত অবস্থা নাই। ভয়ঙ্কর দুর্গন্ধ চারিদিকে। অন্ধকার। ঘুটঘুটে চারিদিক। মানুষজন একই রুমে প্রাকৃতিক কাজ সারছে। বমি করছে। করছে আর্তনাদ। জখম হওয়া রক্ত ঝরছে। বেদনা আর অন্ধকার এক সাথে মাখামাখি হয়ে আছে।

**

কোন এক সময়ে -- রাতের বেলায় -- দরজা খুলে সবাইকে বাইরে নিয়ে আসল। লাইন ধরে বেরুচ্ছি। হানাদারেরা আমাদের লাইন করল। কত মানুষ হবে? কিছু বোঝার আগে ই ব্রাশ ফায়ার শুরু হল। আমি ত্বরিত শুয়ে পরলাম। আমার উপরে ও কয়েকজন পরেছে। রক্তের স্বাদ পেলাম। অন্যের রক্তে আমার শরীর ভিজে গিয়েছে। চোখ বুঝে আল্লাহ আল্লাহ করছি। ঘুম ও আস্ছে অনেক। একটু পরে ই হয়ত লাশ খুচিয়ে খুচিয়ে দেখবে কেউ জীবিত আছে কিনা? তারপর সবার মরণ নিশ্চিত করবে হানাদারেরা। ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম।

**

কতক্ষণ ঘুমালাম বুঝলাম না। ঘুম ভাঙ্গল কখন বুঝছিনা। লাশের বোঝা উপর নিয়ে পড়ে আছি। এজন্যই কি বেচে আছি? রাখে আল্লাহ মারে কে? পা কি ভেঙ্গে গেছে? এক হাত ও অবশ লাগছে। বুকে গড়িয়ে গড়িয়ে সাপের মত করে দরজার কাছে এগুলাম। বাইরে মুক্তি। বাইরে শান্তি। নব জীবনের ভোরবেলা অপেক্ষমান। আহ, কি শান্তি।

৪২ বছর পর কি একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল?

৭১ এর তরুণ মুক্তিযোদ্ধা আজ পড়ন্ত বেলায় স্বাধীন দেশে কাদের সাথে যুদ্ধ করছি? স্বাধীনতার চেতনার ইজারাদারদের সাথে? ভন্ড দানবদের সাথে? বেনিয়া দালালদের সাথে? হায়নাদের সাথে?

চিন্তার আগেই অসি প্রদীপ দলবল সহ এসে আমায় ঘিরে ফেলল। পুলিশ ভানে তুলে শুরু করল নির্যাতন। ছেলের বয়সী তিন চারজন পুলিশ আমার বুলেট বিদ্ধ শরীরে লাত্থি চালাচ্ছে। অবিরাম লাঠির বাড়ি চলছে এই পুরনো শরীরে। কি পরে নাই এই শরীরে? আইয়ুবের লাঠির বাড়ি; হানাদারদের লাঠির বাড়ি; এরশাদের লাঠির বাড়ি। এখন মুজিব্ তনয়ার লাঠির বাড়ি। শরীর নিস্তেজ অবশ হয়ে পড়ল। একটু কি চুপ হল। আর তখন ই কি ওসি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করল?

কেন? কি লাভ? অত্যাচার করে এক আজন্ম মুক্তিযোদ্ধাকে থামিয়ে দিতে চায়?

জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এই রক্ত কি দালালি করা শিখতে পারবে?

**

'শু .... বাচ্চা, তোরে এমন কেইসে ফাসামু .... তোর চৌদ্দ গুষ্ঠির ঘুম হারাম হয়ে যাইব।'

ডিবি অফিসে এই লোকটি আমায় গালি দিয়ে ই যাচ্ছে।

আমার সারা শরীর রক্তে ভেজা। চেয়ারে আমায় বসিয়ে বেধে রেখেছে।

কেন? আমি কি দাগী আসামি? আমি কি গণতান্ত্রিক মিছিল করতে অপারগ? সেই অপরাধে আমায় ৩০ এর বেশি মামলা নিয়ে ঘুরতে হবে

লোকটি আমার জামা ছিড়ে ফেলল।

হাটুর জয়েন্ট বরাবর ভয়ঙ্কর এক বাড়ি দিল। প্রচন্ড ব্যথায় তীব্র চিত্কার দিলাম। আর মনে নেই কিছু।

**

চোখের পলক আমার পরছে না এই সবুজের সমারোহ ছেড়ে! দিগন্ত বিস্তৃত ধান ক্ষেত। মৃনালদা আমার সাথে চলছে। মুখে কি হাসি।

আমি কি স্বপ্ন দেখছি?

'এই মেয়ে, বর্ডার কতদূর?'

'ওই খানে।'মেয়েটি হাত দিয়ে দেখাল। তাকিয়ে দেখি একই সবুজ মাঠ।

'তোমার নাম কি?'

'ফেলানি'।

তোমার বাড়ি কোথায়?'

'ঐখানে।' হাত দিয়ে আরেক সবুজের ক্ষেত দেখাল।

সরলা মেয়েটিকে হাসি উপহার দিলাম।

মেয়েটি বলল , 'পানি খাবেন?'

আমি আর মৃনাল্দা তার থেকে পানি খেলাম।

আমি বললাম , 'স্রষ্টা তোমার মঙ্গল করুক।' টাকা বের করতে ই মাথা ঝাকিয়ে না না বলে দিল এক দৌড়।'

আমরা তাকিয়ে রইলাম ফেলানির দিকে।

ফেলানির চুল আকাশে উড়ছে।

মৃনালদা, যুদ্ধ কবে শেষ হল?

'যুদ্ধ কি আদৌ শেষ হয়েছে?'

কেন একথা বলছ?

'আমি তবে এখন ও বেচে আছি কিভাবে?'

'বুঝলাম না।'

মৃনাল পরাধীন দেশে শান্তিতে বেচে থাকতে জানে না।'

আমি বিস্ময়ে প্রকৃতি দেখি। কি সুন্দর এই হেমন্তের দুপুর আমার দেশকে সাজিয়েছে নিজের মত করে! এর কি লাভ আমি হিসেবে মিলাতে পারিনা। আমি শুধু চেয়ে ই থাকি। আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।

এই নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখতে দেখতে ই মনে পড়ে ৭১ এর শেষ লগনের এক অপারেশনে আচমকা মৃনালদার আমার উপরে হেলিয়ে পড়া। দেশের জন্য হাসি মুখে জীবন দেয়ার দৃশ্য। মনে দুই বিপরীত দৃশ্য একই সময়ে কিভাবে উপস্থাপিত হয়? কেন? কেন?

**

২০১৩ এর ঢাকার ডিবি অফিসে চক্ষু বাধা আমার উপর কত প্রকার নির্যাতন হয়েছে তা কি লিস্ট করা শুরু করব?

আমার গোপনাঙ্গে সহ সারা শরীরে ইলেকট্রিক শক, উল্টো করে ঝুলিয়ে পায়ে পিটানো।

আমার দুই পা বেন্ডেজ করা কেন? পায়ে কোন অনুভুতি নেই কেন?

কেউ কি আমার পাশে দাড়ালো?

কে?

কিছু বলছে না কেন?

পরিচিত মানুষের গন্ধ পালাম যেন!

'মৃনাল্দা তুমি এখানে কেন'?

'তুমি কি মরে যাওনি'?

'তোমার কি যুদ্ধ শেষ হয়নি'?

'তুমি কথা বলছ না -- অথচ আমি তোমার সব কথা কিভাবে বুঝছি'?

'তুমি কি আমার সব যুদ্ধে সব সময়ে ই একান্ত সঙ্গী থাকবে'?

তুমি কোন কথা না বললেও আমি বুঝছি তুমি এখানে রয়েছ।

স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সকল যুদ্ধে আমরা নিরত ঝাপিয়ে পরব এক সাথে!

*************

সাতখিরার মনময়ুরী গ্রামে আমাদের বিরাট মিছিল চলছে।

'আবির ভাই। আপনার শরীর কেমন। ব্যন্ডেজ মাথা টুপি পরে ঢেকে রেখেছেন। কয়েকদিন রেস্ট নিতে পারতেন।'

'আমাদের রেস্টের সময় কই?

মুমিনের রেস্ট তো শুরু হয় চোখ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর।

এর আগে কাজ আর কাজ। ধর্মের জন্য। দেশের জন্য। দেশের দুখী মানুষের জন্য'।

'আচ্ছা আবির ভাই, এত মারামারি করে কি লাভ হবে? আমাদের পদ্ধতি কি পুরোপুরি সঠিক?'

আমি উত্তর দেই:

"আমার ভাইয়ের স্বপ্ন কেড়ে নেয় শাসক

তাবেদারের বুলেট মায়ের হাসি চিরদিনের জন্য বিলিন করে দেয়

এতিম করে দেয় শিশুদের।

আমি স্বার্থপরের মত নিজের জগতে ডুবে থাকি।

আর কিছু মানুষ রাজপথে প্রতিরোধ গড়ে তুলে।

কিছু মানুষ লেখনীতে।

বক্তৃতায়।

বিবৃতিতে।

কিছু না করলে ও সংগ্রামীদের ভুল খুজতে ব্যস্ত থাকি অর্বাচিনদের মত।

সংগ্রামীদের সামান্য আবেগে পাহাড়-তুল্য ভুল খুঁজে ফিরি।

অথচ আমি কি ই বা অবদান রাখি?

দেশের জন্য?

অথবা ধর্মের জন্য?

আমার বিবেক কি সেই যুক্তিতে আদৌ লজ্জায় আনত হয়?

আমি কি নির্বোধ?

আমি কি অর্বাচীন?

হে সংগ্রামী, অর্বাচিনেদের তুচ্ছ জীবনের হাম বড়াই কি তুমি আদৌ হিসেবে ধর?

তুমি কি এতই তুচ্ছ?

তুমি কি এতই সংকীর্ণ?

তোমার যে অসীম উদারতা আর সাহসিকতা -- তোমার যে দেশজয়ের তীব্র বাসনা।

তোমার যে সমাজের স্বার্থপর চক্র ভেঙ্গে -- লোভাতুর পরিচিত চক্ষুর লালসা উপেক্ষা করে

মহিয়ান জীবনের আদর্শ গড়ে তুলার অভিলাষ।

তোমায় থামায় কে আজ?

কোন দানব সরকার?

কোন স্বার্থপর প্রিয়জন?

কোন অহংকারী?

কোন প্রতাপশালী?"

**

মন্মযুরি গ্রামে শিবিরের মিছিল এগিয়ে যায়।

সামনে কি দানব পুলিশ বিজিবি মারনাস্ত্র নিয়ে অপেক্ষমান?

কিন্তু এই মিছিল কি তা আদৌ পরোয়া করে?

এ যে আলোর মিছিল।

সাহসের মিছিল।

অত্যাচারীর বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানো মিছিল।

বিষয়: বিবিধ

১৫৪২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File