সত্য ঘটনা অবলম্বনে (১৪) : দেশপ্রেমিক ও বিশ্বাসঘাতক

লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ১৯ নভেম্বর, ২০১৩, ০৬:৩৮:০৪ সন্ধ্যা

১৭৯৯ সাল। চতুর্থ মহিসুরের যুদ্ধের প্রাকলগ্ন। একদিকে বেনিয়া ইংরেজ ও তাদের তাবেদার দেশীয় শক্তি: মারাঠা ও নিজাম।

অন্যদিকে টিপু সুলতান।

**

আমি দেখছি দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র আর বিশ্বাসঘাতকতা কোন মাত্রায় যেতে পারে! আমার শত প্রচেষ্টা সত্বে ও কোন পক্ষকে আমার পাশে পেলাম না। 'মহিশুর বাঘ' খ্যত আমার পিতা শহীদ হয়েছেন। রেখে গিয়েছেন দেশ মাতৃকার জন্য জীবন দানের মূল্যবোধ। আমার তাই আজন্ম কামনা বেনিয়া ইংরেজদের দেশ ছাড়া করার। মেথিউ কে বন্দি করার পর আর মাঙ্গালোর দখল করার পর শক্তের ভক্ত নরমের যম ইংরেজদের নম্র আচরণ দেখেছি। আমি সেটা বুঝতে পেরেছিলাম। কিন্তু কখন ই কোন দেশীয় সহযোগি পাই নাই বেনিয়াদের বিষদাত যথাসময়ে উপড়ে দেয়ার সুযোগের সদ্বাবহারের। হায় - এত বেইমান আর দালাল চারিদিকে তা আমার কল্পনায় ছিল না!

কিছু সময় যেতে না যেতে ই বেনিয়া ইংরেজরা চুক্তি ভংগ করে মহিশুর আক্রমন করে। আমি এক বছর পর্যন্ত তাদের বাধা দিয়ে রাখি। কিন্তু এরপর পরাজয়ের চুক্তি স্বাক্ষর করি। আর কোন উপায় ছিল না। অর্ধেক রাজ্য, প্রচুর অর্থ আর দুই পুত্রকে জামিন রেখে শর্ত মানতে হয়। তবুও আমি বসে থাকিনি। দিনরাত আল্লাহর রহমতে প্রচেষ্টা চালিয়েছি। সৈন্য জোগার করেছি। পিতা হায়দারের মত মারাঠা আর নিজামদের আকুল আবেদন জানিয়েছিলাম কিন্তু লাভ হয়নি! আজ এরা সবাই আমার বিরুদ্ধে দাড়িয়েছে। দেশের বিরুদ্ধে দাড়িয়েছে। এই বেইমানের বুঝল না যে ইংরেজ বেনিয়ারা একে একে সবাইকে ই দাস বানিয়ে নিবে!

***********

২০১৩ সালের কাশিমপুর জেল। স্বৈরাচারের কারাগারে বন্দী নেতা চিন্তা করছেন, বেনিয়া ভারতের সাথে সরকার আজ দেশের মানুষের তথা স্বার্থের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধরত। এ যেন স্বাধীনতা পরবর্তী ৪২ বছরের শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি! দেশের স্বার্থ বিকয়ে দিচ্ছে নির্দিধায়। সেই ফারাক্কা বাধ, বেরুবাড়ি দিয়ে যাদের সূচনা, তাদের উত্তরসুরীরা একের পর এক জিনিস ভারতের হাতে তুলে দিচ্ছে। সেই লিস্ট অনেক বড়। দেশের মানুষ অসহায় দর্শক ভিন্ন আর কিছু নয়।

সরকার, প্রসাশন ছাড়া ও বিরোধী দলে ও ঘাপটি মেরে তাবেদাররা সম্মিলিত হয়ে যেন দেশ্প্রেলিক জাতীয়তাবাদী ও ইসলামিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবতীর্ণ। এ যেন দেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ঢাক ঢোল পিটিয়ে সরাসরি অবস্থান ।

সেই সাথে আছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউ সহ লোভাতুর শৃগাল।

মিডিয়া, সুশীল, মানবাধিকারের নাম তাবেদার, পুলিশ, প্রসাশন, বিচারক প্রভৃতি অত্যাচারী হিসেবে আবির্ভুত -- পরাশক্তির কাছে দেশের স্বাধীনতা যেন নিলামে তুলেছে।

এ লড়াইয়ে আমরা মরব না হয় জিতব। সমর্পণ নয়। মুক্ত আকাশের স্বপ্নে, স্বাধীনতার আকাঙ্খায় আর সর্বপরি শাহাদাতের তামান্নায় আজ দেশপ্রেমিক মানুষ ইনশাল্লাহ ঝাপিয়ে পরবে। এ যে বিবেকের দায়িত্ব!

****************

যুদ্ধ শুরু হল।

আমার বিরুদ্ধে তিনটি শক্তি।

আল্লাহ আমাদের সাথে রয়েছেন - এই অমোঘ বিশ্বাসে বলিয়ান আমার জানবাজ সৈন্যরা।

যুদ্ধ ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। ত্রিমুখী আক্রমনে আমার সৈন্যরা কি সব মারা পরছে?

আমি সেনাপতির আদেশ অগ্রাহ্য করলাম। আমি শিরস্ত্রাণ পরলাম। আমার রক্তে যে হায়দার আলীর রক্ত। আমি কি আমার সৈন্যদের শত্রুমখে ঠেলে দিয়ে নিরাপদে বসে থাকতে পারি?

আমি তীব্রবেগে এগিয়ে যাচ্ছি। আল্লাহ ছাড়া কাউকে পরোয়া নেই। মুসলমানেরা হয় জিতে না হয় চোখ বন্ধ করে ফেলে।

আমি বেনিয়া আর বিশ্বাসঘাতকদের মাঝে চলে এসেছি।

আমার এক হাত কি অচল হয়ে গিয়েছে। শত্রুর অস্ত্রের আঘাতে ঝুলে গিয়েছে?

আরেক হাতে ই যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।

দেশের মাটির গন্ধ কি আমি শেষ বারের মত পাচ্ছি?

আহারে -- তোমায় স্বাধীন রাখতে আর শত্রুদের তাড়াতে কি ব্যর্থ হলাম?

বেনিয়ারা কি চিত্কার করে আমার অস্ত্র ফেলে দিতে বলছে?

আমি কি একাকী হয়ে পড়েছি?

কিন্তু আমি তো বন্দী হব না। জীবন্ত বন্দী হতে আমার চিরকালের ঘৃনা।

আমৃত্যু লড়ব। এই আমার পন।

আমি কি নিস্তেজ হয়ে পরেছি?

হে আল্লাহ আমায় ক্ষমা কর।

**

ইংরেজ বেনিয়ারা টিপু সুলতানের শাহাদাতের পর বুঝতে পারল যে তাদের পিটিয়ে তাড়াবার মত আর কোন বীর ভারতের মাটিতে অবশিস্ট রইল না। এ যুদ্ধের পর তাই প্রধান বিচারপতি শ্রী জন এনস্ত্রুথার ১৭৯৯ সালের ১৯ ই মে ইংরেজ সেনাপতিকে পাঠানো চিঠিতে সে ইঙ্গিত ই দিয়েছিলেন।

**

"বাধার অরন্যে স্থবিরতায় কেটে যায়

তবু দুচোখে স্বপ্নিল স্বপ্ন;

পরাধীনতা ভেঙ্গে স্নিগ্ধ সকাল আনব

মানুষে মানুষে সাম্য গড়ব।

এই অঙ্গীকারে লড়াই করি

হয় জিতব

না হয় স্রষ্টার তরে চোখ মুদিব।"

বিষয়: বিবিধ

১৩৯৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File