সত্য ঘটনা অবলম্বনে (১৩) : বিপ্লব

লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ১৭ নভেম্বর, ২০১৩, ১২:৪৫:৩০ দুপুর

পদ্মার পাড়ে একটু থামলাম। দাওয়াতি মাস হিসেবে আজ তিনটা বাসায় গিয়ে কথা বললাম। ইসলামের অমিয় বাণী কার না ভাল লাগে? আপুরা মুগ্ধ, ছোট বোনেরা ও মুগ্ধ, খালারা ও অভিভূত। ছাত্রী সংস্থার দায়িত্বে থেকে সারা সপ্তাহের এত কাজের পর ও ভাল রেসাল্ট করলে সবার ই ভাল লাগে। সুধীরা ও ছাত্রী সংস্থার ব্যপারে বেশ আগ্রহী হয়। বাংলাদেশের বুকে মেয়েদের জন্য ছাত্রী সংস্থা একটি আদর্শবান ও শিক্ষিত আদর্শ মহিলা তৈরির উত্স স্বরূপ। ভবিষ্যত প্রজন্ম বিনির্মানের সহায়ক এন্ট্রি পয়েন্ট।

সাথে দুই বান্ধবী। অসম্ভব সুন্দর হওয়া বইছে নদী পাড়ে। শেষ দুপুরে আলোর ঝিকিমিকি আমার আনমনা করে দেয়। পাল তোলা নৌকা বয়ে চলে। মনে ও স্বপ্ন যেন দুলে চলে। কারাগারে বাবার একটাই কথা ছিল। উপদেশ বৈকি:

'মা, ফার্স্ট ইয়ারের মত সেকেন্ড ইয়ারে ও প্রথম শ্রেণী বজায় রাখতে হবে। সেই সাথে ইসলামের দাওয়াত মানুষের কাছে পৌছানোতে ও পেছানো যাবে না। এখন সময় দুই জগতের উত্কর্ষতার জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টার।'

মনে ফ্ল্যাশ ব্যক জাগে। এক বছরের বেশি সময় বাবা জেলে। হীরক রাজ্যে ভাল মানুষ জেলে থাকবে সেটা ই তো স্বাভাবিক।

এক বছরের পরিবারের ভয়াবহ অবস্থা আমায় এক সাহসী অবস্থানে নিয়ে এসেছে। সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ। যিনি তার পছন্দের মানুষদের পরীক্ষায় ফেলেন। তার মাধ্যমে অবশ্যই তাদের প্রস্তুত ও করেন আর ও বড় ধরনের অবদান রাখার জন্যই - সমাজ বা ইসলামের স্বার্থে !

মনে পড়ে বাবা র এক লেকচারের অংশ বিশেষ:

' ওহুদের পরবর্তী সময়ে আল্লাহ মুসলমানদের সম্বোধন করেন:

এখন তোমরাই দুনিয়ায় সর্বোত্তম দল৷ তোমাদের কর্মক্ষেত্রে আনা হয়েছে মানুষের হিদায়াত ও সংস্কার সাধনের জন্য ৷ তোমরা নেকীর হুকুম দিয়ে থাকো, দুষ্কৃতি থেকে বিরত রাখো এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনো৷ (ইমরান: ১১০)

এরকম মুসলমানদের সন্মানিত করে বক্তব্য মহাজ্ঞানী আল্লাহতায়ালা বদরের পর জয়ী মুসলমানদের উদ্দেশ্যে তো বলেননি! কিংবা মক্কা বিজয়ের পর ও তো বলেননি! এরকম সন্মান-সন্মোধন সূচক আয়াত নাজিল হল একেবারে ভয়াবহ পরাজয়ের পর - তথা ওহুদ যদ্ধ শেষে।

অধিকাংশ আহত হওয়া সাহাবারা যখন ৭০ জন শহীদ দের নিয়ে দু:খিত, মহানবী (স) স্বয়ং গুরুতর আহত, নিজেদের ভুলের অনুশোচনায় ব্যস্ত - হয়তবা আহত কেউ কেউ গুরুতর মনোবেদনায় নিমজ্জিত কেন তারা মহানবী (স) কে (যাকে তারা নিজের প্রানের চেয়ে বেশি ভালবাসেন) পুরোপুরি নিরাপদ রাখতে ব্যর্থ হলেন। পরিবার কাদছে লাশের চারিদিকে - আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে - ঠিক তখন একমাত্র দয়ার সাগর আর পরম বন্ধু আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই দু"খিত, ব্যথিত মানুষদের কাছে টেনে নিলেন - শুধু ক্ষমাই করলেন না - পরম আদরে স্বান্তনা দলেন তার প্রিয় সৈন্যদের: "মনমরা হয়ো না, দুঃখ করো না"।'

পদ্মার ঢেউ মনে ও ঢেউ তোলে। বাবা র সেই অসাধারণ লেকচারের বাস্তব চিত্র যেন আজ দেখি বাংলাদেশে। দেখি রাজপথে সংগ্রামী মানুষের মুষ্ঠিবদ্ধ হাতে। দেখি কিশোরের প্রতিবাদী কন্ঠে। সরকারের পেটোয়া বাহিনী আর পুলিশের গুলির মুখে আহত, গুলিবিদ্ধ তরুনের রাজপথ-স্নাত রক্তে সেই চিত্র দেখি। পাষন্ড পুলিশের হাতে শহীদ সন্তানের জন্য মায়ের আহাজারিতে সেই আয়াতের বাস্তবতা খুঁজে পাই। মনে হয় এক জীবন্ত কোরআন আমাদের ডাকছে। আয়াতের ব্যখ্যা দিচ্ছে। মনে পড়ে তাফহিমুল কোরআনের সেই প্রিয় উক্তি:

"এটি একটি দাওয়াত ও আন্দোলনের কিতাব। সে এসেই এই নীরব প্রকৃতির সৎ ও সত্যনিষ্ট ব্যক্তিকে নির্জন ও নিঃসঙ্গ জীবনক্ষেত্র থেকে বের করে এনে আল্লাহ বিরোধী দুনিয়ার মোকাবিলায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। তার কন্ঠে যুগিয়েছে বাতিলের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদের ধ্বনি। যুগের কুফরী, ফাসেকী ও ভ্রষ্টতার পতাকাবাহীদের বিরুদ্ধে তাকে প্রচন্ড সংঘাতে লিপ্ত করেছে। সচ্চরিত্র সম্পন্ন সত্যনিষ্ঠ লোকদেরকে প্রতিটি গৃহাভ্যন্তর থেকে খুঁজে বের করে এনে সত্যের আহবায়কের পতাকাতলে সমবেত করেছে। দেশের প্রতিটি এলাকার ফিতনাবাজ ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদেরকে বিক্ষুদ্ধ ও উত্তেজিত করে সত্যানুসারীদের সাথে তাদের যুদ্ধ বাধিয়ে দিয়েছে। এক ব্যক্তির আহবানের মাধ্যমে নিজের কাজ শুরু করে খিলাফতে ইলাহীয়ার প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত পূর্ণ তেইশ বছর ধরে এই কিতাবটি এই বিরাট ও মহান ইসলামী আন্দোলনের নেতৃত্ব দান করেছে। হক ও বাতিলের এই সুদীর্ঘ ও প্রাণান্তকর সংঘর্ষকালে প্রতিটি মঞ্জিল ও প্রতিটি পর্যায়েই সে একদিকে ভাঙ্গার পদ্ধতি শিখিয়েছে এবং অন্যদিকে পেশ করেছে গড়ার নকশা। এখন বলুন, যদি আপনি ইসলাম ও জাহেলিয়াত এবং দ্বীন ও কুফরীর সংগ্রামে অংশগ্রহণই না করেন, যদি এই দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের মঞ্জিল অতিক্রম করার সুযোগই আপনার ভাগ্যে না ঘটে, তাহলে নিছক কুরআনের শব্দগুলো পাঠ করলে তার সমুদয় তত্ত্ব আপনার কেমন করে উদঘাটিত হয়ে যাবে ? কুরআনকে পুরোপুরি অনুধাবন করা তখনই সন্ভব হবে যখন আপনি নিজেই কুরআনের দাওয়াত নিয়ে উঠবেন, মানুষকে আল্লাহর দিকে আহবান করার কাজ শুরু করবেন এবং এই কিতাব যেভাবে পথ দেখায় সেভাবেই পদক্ষেপ নিতে থাকবেন। একমাত্র তখনই কুরআন নাযিলের সময়কালীন অভিজ্ঞতাগুলো আপনি লাভ করতে সক্ষম হবেন। মক্কা, হাব্‌শা (বর্তমান ইথিয়োপিয়া) ও তায়েফের মঞ্জিলও আপনি দেখবেন। বদর ও ওহোদ থেকে শুরু করে হুনাইন ও তাবুকের মঞ্জিলও আপনার সামনে এসে যাবে। আপনি আবু জেহেল ও আবু লাহাবের মুখোমুখি হবেন। মুনাফিক ও ইহুদিদের সাক্ষাতও পাবেন। ইসলামের প্রথম যুগের উৎসর্গীত প্রাণ মু’মিন থেকে নিয়ে দুর্বল হৃদয়ের মু’মিন পর্যন্ত সবার সাথেই আপনার দেখা হবে। এটা এক ধরনের ‘সাধনা’। " (সূত্র: তাফহিমুল কোরআনের ভুমিকা থেকে নেয়া)

**

উঠতে হবে। এখন এক বাসায় বিকেলের সাধারণ সভা হবে। আমার ছোট আলোচনা রাখতে হবে সেখানে ।

----------

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলের একটি ডকুমেন্টারি দেখেছিলাম মাস খানিক আগে।

ক্যামেরা ম্যান কায়রো-অনতিদূর একটি বস্তি দিয়ে ঢুকে পড়লেন। প্রথম পর্বের ইলেকশনের ব্রাদারহুডের সফলতার উত্স্ মূল খুঁজে বের করা এই ডকুমেন্টারী তৈরির উদ্দেশ্য। নিচু হয়ে গিয়েছে রাস্তাটি। ক্যামেরা এগিয়ে গেল। দেখা গেল একটি ব্যনার 'ডিপার্টমেন্ট অফ আই' (চক্ষু বিভাগ) - পাশে কার্ডিওলজি ডিপার্টমেন্ট, নিউরোলজি ডিপার্টমেন্ট, ইত্যাদি। ডাক্তার, নার্স ছুটোছুটি করছে। ইমার্জেন্সি ডিপার্টমেন্ট সচল। সবচেয়ে দু:স্থ অসহায় লোকদের যেন আবাস। পুরো হাসপাতালটি ফ্রি চলছে। কিন্তু কিভাবে?

প্রফেসর, সার্জন, ইত্যাদি সবাই সপ্তাহের কয়েক ঘন্টা পালা বদল করে এখানে 'ফ্রি-সার্ভিস দেন। প্রত্যেকে ই নামী দামী ডাক্তার, বিশেষগ্গ -- নৈতিকতার দায়্বদ্ধ্তাতেই সপ্তাহর কয়েক ঘন্টা এখানে ফ্রি সার্ভিস দেন। ফকির, মিসকিন, দু:স্থ এতিম, নিম্ন-মধ্যবিত্ত সবাই সার্ভিস পান।

ভাষ্যকার একজন রোগীকে জিজ্ঞাসা করল: ' আপনি কাদের ভোট দেন?'

সে বলল: 'ব্রাদার হুড ছাড়া আর কাকে দেব?'

ভাষ্যকার: তারা কি কখন ও আপনার কাছে ভোট চেয়েছে ফ্রি মেডিকেল সার্ভিস প্রদানের পরে?

সে বলল: না, কখন ই চায়নি। পরিচয় ও দেয়নি। দীর্ঘ ৩০ বছরের অধিক সময় ধরে তিলে তিলে গড়ে উঠা এরকম অসংখ্য সেবা প্রতিষ্ঠান কখন ও সেরকম পরিচয় ও দেয়নি। কিন্তু মানুষ জানে এরা কারা? আর মানুষ জানে দানব মোবারকের রক্ত-চোষার ইতিবৃত্ত।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এর ভাষ্যকার কি ক্লু খুঁজে পান নি? বিশ্বের পরাশক্তির প্ররোচনায় দানব স্বৈরাচার কর্তৃক সত্তর বছরের অধিক সময় ধরে নিস্পেষিত, অত্যাচারিত, অমানবিক নির্যাতনের পর ও মিশরের অধিকাংশ মানুষের মনের মনিকোঠায় ব্রাদার হুড তথা ইখোয়ানের জনপ্রিয়তার সূত্র তিনি খুঁজে পেলে ও তা তিনি কিভাবে খুলে বলবেন? আর কি তার বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন আছে ওই ডকুমেন্টারীতে ?

ইসলামী বিপ্লব সাধনের জন্য করনীয় কি?

নিগৃহিত জনপদের হৃদয় জয় করার পদ্ধতি কি?

তত্ব কথা?

নিজেদের আবদ্ধ আচরণ?

ইলেকশন কাছাকাছি সময়ের সংযোগ?

নাকি নিরেট মানব-সেবা?

আপন মেধাকে দেশের অভাগা মানুষের জন্য উজার করে দেয়া - বা কমপক্ষে কিছুটা ব্যবহার করা?

দুর্যোগে মানুষের জন্য নি:স্বার্থ ঝাপিয়ে পড়া কিংবা কার ও দু"খের সাথী হওয়া কিংবা ধর্ম-গোত্র-জেলা নির্বিশেষে সবার প্রতি বেসিক সমস্যা সমাধানে যথাসাধ্য সাংগঠনিক উদ্যোগ ই পরম শত্রুকে ও বন্ধুতে পরিনত করতে বাধ্য।

মন ময়ুরী গ্রামে হাঁয়না পুলিশের আক্রমন পরবর্তী গাছতলায় গুলিবিদ্ধ আমি (আবির) এ চিন্তাই করছিলাম। মন্টুর বাসায় যেতে হবে। প্রকৃতপক্ষে মন্টু ই উদাহরণ। খাটি আওয়ামী মনা হলে ও দিনের পর দিনের প্রচেস্টা তেই এখন নামাজি হয়েছে। সকল প্রশংসা আল্লাহর। সমাজে ইসলামের অবস্থান কোথায় হওয়া উচিত সে সম্পর্কে ধারণা পরিস্কার হয়েছে। আমাদের করনীয় কি তা ও সে বুঝেছে। একদল মানুষের ইসলামকে রাষ্ট্রের প্রতিষ্টার গুরুত্ব পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পেরেছে। তার বাবা কড়া আওয়ামী লিগার। অথচ আমাকে দেখলে ই যেন খুশি হয়ে উঠে। আমাকে কি এক আদর্শ ছেলে হসেবে ই জানে? যদি চোখ মেলে দেখত তবে জানত যে, শত শত আমার চেয়ে ও উত্তম ছাত্রদের কাফেলা শিবিরকে সে না বুঝে ই দিনের পর দিন ঘৃনা করে এসেছে!

--------------------

আমার বক্তব্যের সময় বেধে দেয়া হয়েছে ৪০ মিনিট। বিষয় পরকাল এবং আমাদের কর্মপদ্ধতি। মা আয়েশা (রা) এর একটি উক্তি দিয়ে আমি আমার আলোচনা শুরু করছি।

মা আয়েশা (রা) বলেন: "কোরআনে নাজিলকৃত প্রথমদিকের আয়াতে যদি বলা হত: মদ পান বন্ধ কর, তাহলে মানুষ মদ পান বন্ধ করত না। একইভাবে কুরআন নাজিলের প্রথম দিকেই যদি বলা হত ব্যভিচার করো না তবে মানুষ ব্যভিচার বন্ধ করত না। তা না করে কোরআনের প্রথম দিকের নাজিলকৃত আয়াত-সমূহ হল জান্নাত জাহান্নামের বিস্তৃত বিবরণ। উদ্দেশ্য অন্তরে আল্লাহ তায়ালার সাথে সংযোগ বৃদ্ধি করা। স্রষ্টার সাথে সংযোগ যখন সাহাবাদের নিখাদ শক্ত হয়ে যায় তখন ই হালাল এবং হারাম সম্বলিত নিয়মকানুনের বিবরণ নাজিল হয়েছিল।"

এজন্যই আখেরাত সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জন করা সবচেয়ে প্রথমে ই প্রয়োজন।

আমি ভাবছি -- ইসলাম সম্পর্কে আমাদের পড়াশুনায় আখেরাতের চিত্রের একটি ধারণা আকার জন্য সংস্লিস্ট সুরার তাফসির বেশি বেশি পরা খুব ই প্রয়োজন। মানুষকে ক্রমাগত আখেরাতের আলোচনার মাধ্যমে ই নরম করে ফেলা সম্ভব। এরপর ই আত্মগঠন, সংগঠন, কর্ম পদ্ধতি, ইত্যাদির গভীরে যাওয়া প্রয়োজন।

বলে যাচ্ছি অসম্ভব সুন্দর বর্ণনা সুরা নাবা থেকে :

"অবশ্যি মুত্তাকীদের জন্য সাফল্যের একটি স্থান রয়েছে। বাগ - বাগিচা , আঙুর। নবযৌবনা সমবয়সী তরুণীবৃন্দ। এবং উচ্ছসিত পানপাত্র৷ সেখানে তারা শুনবে না কোন বাজে ও মিথ্যা কথা। প্রতিদান ও যথেষ্ট পুরস্কার তোমাদের রবের পক্ষ থেকে।"

'কোন চক্ষু যা দেখেনি, কোন কান যা শোনে নি, কোন অন্তর যা অনুভব করেনি কখন ও সেরকম নিরিত বৃদ্ধিশীল অনন্ত কালের সুখভোগের স্থান জান্নাত হবে মুত্তাকীদের আসল আবাসস্থল।'

শ্রোতা মন্ত্রমুগ্ধের মত ই শুনছে। না শুনে উপায় কি? এ যে মহান স্রষ্টার অসীম কৃপা ভিন্ন আর কিছু নয়। তার দয়া ভিন্ন এ কি অর্জন করা সম্ভব এ গুনাহ্গারের পক্ষে?

-------------------------------------

অনেক মহিলাই কাদছেন।

কাদুক।

এ অস্রুধারা যে জাহান্নামের আগুন নিভিয়ে দেয়ার মত অপার ক্ষমতা রাখে!

**

আলোচনা শেষ করলাম|

হটাত মনে পড়ল একটি ঘটনা। মুসা (আ) এর জীবন থেকে নেয়া এক শিক্ষনীয় ঘটনা। সুরা কাসাসে বিবৃত:

আয়াত- ২৩: আর যখন সে (মুসা (আ)) মাদয়ানের কুয়ার কাছে পৌঁছুল, সে দেখলো, অনেক লোক তাদের পশুদের পানি পান করাচ্ছে এবং তাদের থেকে আলাদা হয়ে একদিকে দু'টি মেয়ে নিজেদের পশুগুলো আগলে রাখছে৷ মূসা মেয়ে দু'টিকে জিজ্ঞেস করলো, "তোমাদের সমস্যা কি?" তারা বললো, "আমরা আমাদের জানোয়ারগুলোকে পানি পান করাতে পারি না যতক্ষণ না এ রাখালেরা তাদের জানোয়ারগুলো সরিয়ে নিয়ে যায়, আর আমাদের পিতা একজন অতি বৃদ্ধ ব্যক্তি৷"

আয়াত - ২৪: একথা শুনে মূসা তাদের জানোয়ারগুলোকে পানি পান করিয়ে দিল৷ তারপর সে একটি ছায়ায় গিয়ে বসলো।

এই উত্তম ভাল কাজ তথা সাহায্য করার পর পর ই মুসা (আ) এক বুদ্ধিপ্রদিপ্ত কাজ করলেন। আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন। নিজের অভাব খুলে বললেন। তার মনে প্রবল আশা ছিল তার কৃত উত্তম কাজের বিনিময়ে আল্লাহ তার দোয়া কবুল করবেন। পরবর্তী আয়াতাংশেই এসেছে:

"এবং বললো, "হে আমার প্রতিপালক! যে কল্যাণই তুমি আমার প্রতি নাযিল করবে আমি তার মুখাপেক্ষী৷"

ভুলক্রমে একজনকে হত্যা করার পর পালিয়ে বেড়ানো মুসা (আ) সেই মেয়েদের বাবার অধীনে ই চাকুরি পান। এক মেয়েকে ই বিয়ে করেন। দঁশ বছরের মত চাকুরী করেন। নিরাপদ জীবন যাপন করেন। এর চেয়ে উত্তম রিজক আর কি হতে পারে? মুসা (আ) এর উপরোক্ত দোয়াটি কি সুন্দরভাবে ই না পূর্ণ হল!

আমি ও সারাদিন দাওয়াতি কাজের মাধ্যমে ভাল কাজ করলাম এই প্রত্যয়ে আলোচনা-শেষে হাত তুললাম। সবাই দোয়ায় শরিক হল।

" হে আল্লাহ! মজলুম ইসলামপন্থী মানুষদের হেফাজত কর।

বাংলাদেশকে স্বৈরাচারের কালো হাত থেকে মুক্ত কর।

স্বৈরাচারকে নাজেহাল কর। হেদায়েত দাও। হেদায়েতের অনুপযুক্ত হলে ধ্বংস করে দাও।

হে আল্লাহ! ভারত সহ পরাশক্তির ষড়যন্ত্র থেকে আমাদের দেশকে রক্ষা কর।

আমাদের দুই জগতের বিজয়ী করে দাও।

(মনে মনে বললাম) হে আল্লাহ বাবা কে জালেমের কারাগার থেকে মুক্ত করে দাও। মুসা (আ) এর দোয়ার মত ই আমার দোয়াগুলো গ্রহণ করে নাও।"

---------

সীতাকুন্ডে শিবিরের মিছিল আসছিল। 'নারায়ে তাকবির - আল্লাহু আকবার। আল কোরানের আলো ঘরে ঘরে জ্বালো।"

হটাত কিছু নর-খাদক পরকল্পনা মাফিক মিছিলের মানুষ গুলোকে ট্রাপ এ ফেলল। তথাকথিত 'স্বাধীন' দেশের 'গণতান্ত্রিক' সরকারের একদল লোক ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত নিল।

দুই দিক থেকে হটাত শুরু হল গুলি। হেলমেট পরা ছাত্রলীগের গুন্ডারা 'র্যাব' ট্যাগ লাগিয়ে হাটু গেরে বসে গুলি করছে। মানুষ শিকার করছে। মিছিলটি সামনে এগিয়ে গেল। বিজিবি আর পুলিশ শুরু করল গুলি।

আর্ত -চিত্কার, দৌড়াদৌড়ি, মানুষ পড়ে যাচ্ছে।

অনেকগুলো গুলি আমার ঘাড়ে, বুকে, হাতে লাগল।

ডিভাইডার ক্রস করতেই একজন আমায় শক্ত করে ধরল। জীবনে ও এই ব্যক্তিকে দেখিনি। চেহারা ও পরিস্কার দেখা যাচ্ছে না।

মন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে!

কি মনে করে বললাম 'ভাই, আপনি ভাল আছেন?'

আমি তার দিকে তাকাতে না তাকাতে ই এলিয়ে পরলাম। আর কিছু মনে নেই।

**

চোখ মেলে দেখি আমি একটি ঘরে।

পাশে দুই ভাই বসে আছেন।

ফ্লোরে ও কয়েক ভাই শুয়ে আছেন।

সবাই আহত। স্যালাইন চলছে আমার সহ অনেকের।

জানলাম ২০ জন প্রায় শহীদ হয়েছেন। পুলিশ লাশ ফেরত দিয়েছে মাত্র ৩জনের।

লাশ গুম ও করতে পারে।

এদের কোন বিশ্বাস নেই।

**

সকালে ১৫ বছরের এক শহীদের গর্বিত পিতা এলেন ক্লিনিকে। নিজ সন্তানকে কবর দিয়ে এলেন মাত্র।

তাকে দেখে আমার একটি ঘটনা মনে পড়ল:

এই উম্মাহর সবচেয়ে ভয়াবহতম দু:খের দিন যেদিন মহানবী (স) আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান। অর্থাত তার ওফাতের দিন। মহানবী (দ) সাহাবাদের আগে বলেছিলেন যখন কেউ গভীর বিপদে পরবে বা দুর্যোগে পরবে তখন আমার মৃত্যুকে স্মরণ কর। কারণ আমার মৃত্যু এই উম্মাহের জন্য সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দুর্যোগ।

মহানবী (দ) কে কবরে শায়িত করে আসার পর প্রিয় কন্যা ফাতিমা (রা) আনাস বিন মালিক (রা) কে বলেছিলেন, 'আপনি কিভাবে তার পবিত্র মুখে মাটি দিতে পারলেন?'

আনাস (রা) কেদে বললেন, " আমার শরীর একাজ করলেও সে সময় আমার অন্ত:করণ বা হৃদয় সেখানে উপস্থিত ছিল না। "

আনাস (রা) কাদ্তেই থাকলেন।

বিষয়: বিবিধ

২৩৯২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File