সত্য ঘটনা অবলম্বনে (১২) : দানব
লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ১৫ নভেম্বর, ২০১৩, ০৭:৫১:৪৫ সন্ধ্যা
ওসি প্রদীপ কুমার দাস অর্ডার দিল মসজিদে ঢুকতে হবে।
আমরা নামাজে দাড়িয়েছি।
একদল পুলিশ স্বগর্বে মসজিদে ঢুকে দশ-পনের জনকে ধরে নিয়ে বের হল।
আমি তাদের একজন।
ঘাড় ধরে বেরুচ্ছে।
একজন পুলিশ আমার কপালে পিস্তল ঠেকিয়ে আছে।
চোখ বন্ধ করে আছি। কালেমা পরে নিলাম।
কি মনে করে আমার বাম পায়ে গুলি করল। উরু ভেদ করে গুলি বেরিয়ে গেল। গল গল রক্ত। অনুভুতির আগেই আরেকটি গুলি করল এক বিঘত দূর থেকে আমার আরেক পায়ে।
ঠিক একই ঘটনা।
আমি দাড়িয়ে রইলাম।
আমি কি অনুভূতিহীন?
কিন্তু কিভাবে?
প্রদীপ কুমার উল্কার বেগে গালি দিতে দিতে আমার দিকে ছুটে আসছে।
স্বপ্নের মত মনে হচ্ছে সব কিছু।
ধাক্কা দিয়ে আমাকে ছুরে ফেলল সতীর্থদের সামনে।
শুরু হল সম্মিলিত লাত্থি, লাঠির বিরতিহীন বাড়ি। সারা শরীর লাল হয়ে গেল। এক গাল রক্ত গিলে ফেললাম।
শুয়ে দেখলাম পাশে ই ১৫ বছরের এক ছেলের পা এর হাড়!
গুলি-পরবর্তী পাষান পুলিশের একই জায়গায় বর্বরোচিত লাঠির ক্রমাগত বাড়িতে মাংস খসে গেছে।
যেন এক নলের উপর ছেলেটি দাড়িয়ে আছে।
তীব্র আর্ত চিত্কার!
আরেকটি ১৮-১৯ বয়সী ছেলের মাথায় গুলি করেছে পুলিশ।
শুয়ে কাত রাচ্ছে।
একটি পুলিশ তখন এক ভয়ঙ্কর কল্পনাতীত কাজ করল।
হাত দিয়ে ছেলেটির এক চোখ গেলে দিল।
আমি যেন বোবা হয়ে গেলাম।
ভয়ঙ্কর দৃশ্যের স্বাক্ষী হয়ে গেলাম।
চোখ বন্ধ হয়ে গেল।
এর পর আর কিছু মনে নেই।
----------------
'আপনারা জামায়াত শিবির দেখলে ই গুলি করবেন।'
'কোন ছাড় নয়।'
'নো ফ্রি লাঞ্চ রুল। অতএব পুরস্কার আছে সেখানে।
আপনাদের ক্ষতি হলে সিঙ্গাপুরে ট্রিটমেন্ট এ পাঠানো হবে। আজীবন আপনাদের পরিবারের দেখভালের ব্যবস্থা থাকবে।'
মৃদু গুঞ্জরণ কি শুরু হল?
'কমিশনার সাহেব, ঠিক আছে না?'
স্যার, গুলির হুকুম পালন না করলে কি হবে -সেটা ও বলেন।'
'সব কি আমাকে বলতে হবে? এগুলো তো আপনারাই জানেন কে কেমন? ইন্দিভিজুয়াল্লি ডিল করতে হবে। বদলি বা দরকার হলে অন্য রুড ব্যবস্থা নিতে হবে। ইটস ইউর বিসনেস।'
আমি কি অন্য কোন কারণে বিষন্ন?
আমার বিষন্নতা কি পুলিশের লোকেরা খেয়াল করেছে?
আমি কি অন্যমনা হয়ে যাচ্ছি হটাত হটাত?
স্টুপিড মিডিয়া আমাকে নিয়ে ইদানিং তিলকে তাল করছে। আমি ব্যবস্থা নিতে পারছি না কেন?
ইন্ডিয়া ইস প্লেয়িং এভরি ওয়ার। এম আই মিসিং দা কারেক্ট লিংক?
সাভার ইনসিডেন্ট দিয়ে বাসটার্ড গুলো মজা শুরু করছিল। দেন এভরিথিং এলস ওয়ার ফরগটেন। এনাদার নিউ ইনসিডেন্ট সুড টেক প্লেস!
আমি বের হলাম।
মেঘলা আকাশ।
একপ্রান্ত লাল হওয়া।
দেশ ও কি লাল হওয়া?
এই লাল কি পতাকার বৃত্ত ছাপিয়েছে?
বিরোধী দল ক্ষমতায় এলে কি দেশকে আর ও লাল করবে না?
কোন কিছুর কোন গ্যরান্টি নাই এই দেশে!
যেখানে দেশ এক অদৃশ্য সুতায় চলছে!
'স্যার, রাতে দুটি প্রোগ্রাম।'
৭১ টিভি তে আর পরে তৃতীয় মাত্রায়। রি-কনফার্ম করব?
'করে দাও। পয়েন্ট রেডি করেছ তো? গাড়িতে ব্রিফ কর।'
'আগে একটু বাসায় যাব। মাথা ব্যথা করছে।'
----------------
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ইজি ছায়ারে হেলিয়ে বসলেন।
'কে কে?'
'বাবা আমি।'
বাবা তুমি কিভাবে? তোমার মুখ রক্তাত্ত কেন? আমার কি হেনুসিনেশন হচ্ছে?
'আমি এ কি দেখছি?'
'রোড এক্সিডেন্ট এ ক বছর আগে মারা যাওয়া আমার সন্তান এখানে কেন?'
আমি নিশ্চিত স্বপ্ন দেখছি।
'বাবা তুমি ভয় পাচ্ছে কেন?'
'তুমি রক্তাত্ত কেন?'
'কেন বাবা, তুমি কি রক্ত দেখতে অভ্যস্ত নও? মানুষকে রক্তাত্ত করতে অভ্যস্ত নও? '
তোমার অধীনস্ত রা কি প্রতিদিন মানুষ খুন করছে না?
জেলখানায় হাতুড়ি দিয়ে হাত পা গুড়িয়ে দিচ্ছে না?
পাজর ভেঙ্গে দিচ্ছে না?
'সন্ত্রাসী দের থেকে দেশের মানুষের যান মাল বাচানোর দায়িত্ব তো পুলিশের। এটাই সত্য।'
'কিন্তু বাবা, তুমি তো আসল সত্য জানো। জানো না?'
দরজা কে সজোরে ধাক্কাচ্ছে।
পিএ টা মানুষের জাত না।
কতবার বলেছি দরজা এভাবে না ধাক্কাতে!
------------------------------------
চেচনিয়ার কোন পার্বত্য অঞ্চল।
'লায়ন অব পেনিনসুলা' খ্যত সেনাপতির কাছে গোপন পথে বিবিসির একজন সাংবাদিক কে যোদ্ধারা নিয়ে এসেছেন সাক্ষাত্কারের জন্য।
'আপনি কি সন্ত্রাসী?' সাংবাদিকের প্রশ্ন।
'দেশের স্বাধিনতার জন্য যুদ্ধ করলে, হত্যার বিরুদ্ধে রুখে দাড়ালে যদি সন্ত্রাসী হই, তবে আমি সন্ত্রাসী।' সেনাপতির হাস্জ্জল উত্তর।
'ইসলাম ধর্ম আপনাদের কি শেখায়?'
'ইসলাম একটি অতি সহজ ধর্ম। একটি সরল পথ। কোরআন আর সুন্নাহ নির্দেশিত পথে পূর্ণ বিশ্বাসের সাথে চললেই সফলতা।
জিহাদের মাধ্যমে ই পূর্ণ সফলতা সম্ভব।
অসত্যের বিরুদ্ধে আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জন্য ইসলামে যা নির্দেশিত হয়েছে ই তা ই পালন করছি।
কোন বক্রতার আশ্রয় নিচ্ছি না।
আলহামদুলিল্লাহ।'
শ্বেত শুভ্র পাহাড়।
সূর্য মাত্র ডুবে গিয়েছে।
অন্ধকার নেমে আসছে।
পশমি পোশাক পরিহিত, কালেমাখচিত ব্যান্ড কপালে জড়ানো এক দল চেচেন যোদ্ধা জামায়াতে মাগরিবের নামাজে দাড়াবে।
অপেক্ষা করছে নেতার জন্য।
একটু পরে ই সন্তর্পনে এরা চলে যাবে।
রাতে ড্রন আকাশে চক্কর দেয়। ইন্ফ্রা-রেডের আলোয় রক্ত মাংস খুঁজে ফিরে।
পেলে ই আলোর ঝলকানিতে বোমা ছুটে যায়।
বাছ বিচার ছাড়া ই কেড়ে নেয় জীবন্ত রক্ত মাংস।
সাংবাদিক টি ছোট নোট বুকে সাংকেতিক ভাষায় লিখছে "কফিটি অমৃতের মত লাগছে।
কি সুন্দর আতিথেয়তা ই না পেলাম আজ।
দারুন অভিগ্গতা!
১২-১৩ বছরের যোদ্ধা ও আছে মুজাহিদদের।
কোন কিছুর পরোয়া নেই।
কোন পিছু টান নেই।
এদের বিশ্বাসের শক্তি চমকে দেয়ার মতই।
তাই কি সামান্য রসদ নিয়েই না পরাশক্তি রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়ছে!'
------------------------------------
নরওয়ে।
হাই ওয়ে তে গাড়ি চালাচ্ছিলাম।
মোবাইলে দেশ থেকে ফোন এসেছে।
ব্লু টুথের মাধ্যমে জিপিএস এ কল রিসিভ করলাম।
রুমা কাদছে আর বলছে -- ভাইয়া, ছোটভাইয়া তো হাস পাতালে। ইমার্জেন্সিতে। অনেকগুলি গুলি করেছে পুলিশ। এখন ই অপারেশন করবে।
মাথা যেন ঘুরে উঠল।
সাইড রোডে পার্ক করে রাস্তার ধারে থামলাম। হিলি এরিয়া। পাশে গভীর খাদ।
বাবা জামায়াতের থানা আমির হওয়াতে এক মাস আগে থেকে ই জেলে।
৭০ বয়সী একজন আলেম মানুষকে তারা ছাড় দেয়নি।
গভীর রাতে একদল পুলিশ বাসায় এসে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেল।
সবার সাথে দারুন বাজে ব্যবহার করল।
বাসার জিনিস পত্র তছনছ করল।
মা দুই বোন কে আগলে রাখল।
ভাই টা খবর পেয়ে আগেই দেয়াল টপকে পালিয়ে গেল।
আজ সে ভাই টাকে পুলিশ এভাবে নির্মমভাবে গুলি করল।
দুরে সমুদ্র।
আকাশে অরোরা জেগে উঠেছে।
আকাশ দ্রুত রং বদলাচ্ছে।
সমুদ্র ও সমতালে নির্দেশিত হচ্ছে।
প্রকৃতি বিচিত্ররূপ ধারণ করছে প্রতি মুহূর্ত!
চোখের পানিতে সেই রং যেন বদলাচ্ছে বিচিত্রভাবে।
আমি চিত্কার করে কাদছি।
হাউ মাউ করে কাদছি।
কেউ দেখার নেই।
কেউ ভাবার নেই।
হায় মা'য়ের পাশে যদি এখন থাকতে পারতাম!
বিষয়: বিবিধ
১৯৮৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন