সত্য ঘটনা অবলম্বনে (১০ - পিলখানা ম্যাসাকার)
লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ০৮ নভেম্বর, ২০১৩, ০২:৫৯:১৭ দুপুর
পরাধীনতার গ্লানিতে উপমহাদেশকে ডুবিয়ে দিতে ইংরেজ সেনাপতি ক্লাইভ ১৩ ই জুন, ১৭৫৭ ইং যাত্রা শুরু করে। সৈন্য মাত্র ৩২০০। ২২ শে জুন মাঝ রাতে নদিয়া সীমান্ত সংলগ্ন পলাশীর আম বাগানে তারা পৌছে। ভয়্শুন্য ক্লাইভ। তার চেয়ে নবাবের বহুগুন সৈন্য থাকলে ও সে জানে এক পুতুল পুতুল খেলা হবে পলাশীর আম বাগানে। পরিকল্পনা সব তৈরী। আমির চাদ, রায় দুর্লভ, জগত শেঠ তার মুষ্ঠি তে।
মীর জাফরকে বোঝাতে বেগ পেতে হয়েছিল। তার কথা মত, 'সিরাজ আমার আত্মীয়। তো কিভাবে সম্ভব?'
উমিচাদ ফনা দিয়ে বলল, 'আমরা তো সিরাজকে মারছি না। তাকে রাজ্য চ্যুত করে আপনাকে বসাব। আপনাকে শুধুমাত্র আমি নই, ইংরেজরা এবং মুসলমানদের অনেকেই আর এক কথায় অমুসলমানদের প্রায় প্রত্যেকেই শ্রদ্ধার চোখে দেখে।' মীর জাফর আমির্চাদের (উমি চাদ) মরন্কামড় তখন ই খেল।
আমার সৈন্য পঞ্চাশ হাজার। অনেক ছাড় বেনিয়াদের দিয়েছি। আমাকে সিংহাসনে আরোহনের পর থেকে ই কোনদিন ইংরেজ বেনিয়ারা শান্তিতে থাকতে দেয় নাই। কলিকাতার ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ তৈরী করতে থাকল অবলীলায়।আমার তড়িত আদেশ ও অগ্রাহ্য করে। সৈন্য পাঠিয়ে তাদের তাড়িয়ে দেই। কিন্তু পরে কলিকাতা পুন:দখল ও করে। বাধ্য হয়ে ১৭৫৬ সালে লজ্জার আলিনগরের চুক্তি করতে হয়।
অনেক সময় এর পর চলে গিয়েছে।
যমুনার অনেক পানি গড়িয়ে গেছে।
বাংলার স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অনেক দূর আগিয়েছে।
বাংলার অন্যতম ধনী জগতশেঠ, কলকাতার বড় ব্যবসায়ী উমিচাদ ও রাজ বল্লভ ইংরেজ দূত ওয়াটস এর সাথে নিয়মিত ষড়যন্ত্রে মিলিত হত।
কিছু কুলাঙ্গার সামান্য অর্থ্সিদ্ধির জন্য বাংলার অভাগা জাতিকে ভয়ঙ্কর দুর্দশায় আচ্ছন্ন করতে মরিয়া হয়ে গেল।
বিশ্বাস ঘাতকদের ইতিহাস ঘুরে ঘুরে এভাবেই আসে।
**
যুদ্ধ শুরু হল।
এ আমি কি দেখছি?
আমার বিশ্বস্তদের এ কি চেহারা দেখছি?
মীর জাফর, রায় দুর্লভ ও অন্যান্য সেনাপতি চুপ কেন?
তারা তামাশা দেখছে কেন?
আমার সৈন্যরা যে বেনিয়াদের গোলার আঘাতে মরছে অনবরত!
.....
মীর মর্দান কি পাগলের মত দেশের জন্য যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছে?
সাথে মোহনলাল আর ফরাসী সেনাপতি সিন্ফ্রে ও কি প্রান্প্রন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে?
আমরা কি এগিয়ে যাচ্ছি?
.....
হায়, মীর মর্দান কি শহীদ হয়েছে?
এখন কি হবে?
মীরজাফর বলল, 'নবাব, যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে।'
রায়দুর্লভ ও চাপ দিতে থাকল।
আমি কি করব এখন?
এরাই যে আমার আশা ভরসার আশ্রয়স্থল।
'নবাব, আপনাকে রাজ্মহলের দিকে পালাতে হবে।'
এ আমি কি করছি?
আশাহত আমি কি ই বা করতে পারতাম?
আমি কি স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারে আরেক চেষ্ঠা চালাব না?
আমি কি কোন ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে পরে গিয়েছি?
আর কি পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা নেই?
আমি কি যুদ্ধ করেছি?
নাকি এক যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা দেখেছি মাত্র!
আমার প্রতিদ্বন্দী কারা?
ইংরাজরা?
নাকি উমিচাদ, রায়দুর্লভ, সেনাপতি মীরজাফর, রাম্চাদ, নবকৃশ্ন, জগত্সেঠ গংরা?
প্রকাশ্য শত্রু দিয়ে বেশি ক্ষতি হয় নাকি বন্ধু বেশি শত্রু দিয়ে?
*******************
২৫ সে ফেব্রুয়ারী ২০০৯।
'মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সৈন্যদের অনুমতি দিন।
এ তো মিলিটারী আর্জেন্ট সিচুয়েশন। সেনাবাহিনী ই এ অবস্থা টাকেল করতে পারবে। অন্য কোন ভাবে সময়ক্ষেপন করলে ক্যাজুয়াল টি ই বাড়বে। এমনিতে ই আমরা জানি না কি হচ্ছে ভিতরে।'
গোলাগুলির শব্দ আসছে সময়ান্তে!
'না! আমি নানক, মির্জা আজমদের দায়িত্ব দিয়েছি। তারা হ্যান্ডেল করবে।'
..........
ভয়ঙ্কর হত্যাকান্ড ঘটার পর
২৬ সে ফেব্রুয়ারী প্রধানমন্ত্রীর আদেশ আসল - 'সেনাবাহিনীকে পিলখানার ৩ কিমি দূরত্বে সরিয়ে নিতে হবে।
আর জওয়ান দের পালাতে দিতে হবে'।
এ আদেশ কি ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের তথা নাটকের শেষ-অংশ?
না কি প্রধানমন্ত্রীর করার কিছু ছিল না তথা সরকারের অযোগ্যতার এক ভয়াবহ নমুনা?
ঘরের শত্রু কে কি ধরা যায়?
তাদের স্বার্থলাভের জন্য ভয়ঙ্কর চক্রান্ত কি কেউ থামাতে পারে সহজে?
পরাশক্তির ইন্ধন, প্রলোভন আর চক্রান্ত কি নবাব-সম এনটিটি (entity) বুঝতে পারে নাই?
এই এনটিটি কি সরকার?
না কি এই এনটিটি দেশপ্রেমিক সেনাদল যারা শহীদ হল?
*******************
'মোহাম্মদী বেগ, তুমি আমায় কতল করতে এসেছ?'
'আমাকে কি সামান্য অসহায় গরিবের মতও বাচতে দিবে না?'
মোহাম্মদী বেগ: 'না! তারা তা দেবে না।'
আমি যেহেতু বছর দেড়েক আগে ভুলক্রমে হুসেন কুলি খা কে প্রান দন্ডে দন্ডিত করেছিলাম তাই বললাম - আমি ও বাচতে চাই না। হুসেন কুলি খার হত্যার প্রতিশোধ হোক।'
'আমাকে একটি বার সুযোগ দাও! আল্লাহর সান্নিধ্যে শেষ দুই রাকায়াত নামাজ পরে নেই!'
মোহাম্মদী বেগ চুপ!
আমি নামাজ শুরু করলাম।
নামাজ চলছে।
দুরে বাশির সংকেত ভেসে আসল। আমার পিঠের উপর কি আঘাত করল?
'হে আল্লাহ! তুমি আমায় ক্ষমা কর। আল্লাহ আল্লাহ ....'
(শেষাঙশের হুবহু সূত্র: অক্ষয় কুমার মৈত্র, সিরাজুদ্দৌলা ও পুরনো কলকাতার কথাচিত্র, পৃ: ৩৯৩)
*********
হে আল্লাহ বাংলার শেষ নবাব সহ পলাশীর আম বাগানের সকল শহীদ দের আপনি ক্ষমা করে দিন।
হে আল্লাহ সেনাবাহিনীর ৫৭ জন অফিসার সহ ষড়যন্ত্রের স্বীকার শহীদ দেশপ্রেমিকদের ক্ষমা করে দিন।
------
পুনশ্চ:
মীর জাফর মারা যায় কুষ্ঠ ব্যধিতে। মিরন বজ্র্ঘাতে। লক্ষপতি উমিচাদ কপর্দকহীন, উম্মাদ ও ক্ষুধার যন্ত্রনায়, মহারাহ নন্দকুমার মিথ্যা অভিযোগে ফাসিতে ঝুলে, মহারাজ স্বরুপ্চাদ পানিতে ডুবে, মুহম্মদী বেগ পাগল হয়ে কূপে পরে, রায় দুর্লভ জেলখানায় অনশন অর্ধাসন করে, ক্লাইভ আত্ম হত্যার মাধ্যমে মারা যায়।
'বিশ্ব নিয়ন্তার নির্দেশে এভাবে প্রত্যেকের অবস্থানুযায়ী এক আশ্চর্জ পার্থিব বিচার ব্যবস্থা পরিলক্ষিত হয়' ( গণতান্ত্রিক ভারত সরকার কতৃক বাজেয়াপ্ত গোলাম আহমদ মোর্তজা রচিত 'চেপে রাখা ইতিহাস' : পৃ: ১৭৩) ।
বিশ্বাস ঘাতকদের দল ইতিহাসে যেমন কলঙ্কিত থাকে, তমনি পরকালে ও হয়ত জাহান্নামী ই হবে। পরকাল বাদ দিলে ও পৃথিবীতে ও তাদের লাঞ্চনা কম হয় না।
বিষয়: বিবিধ
১৮৯৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন