সত্য ঘটনা অবলম্বনে (৮) : কমুনিস্ট ও স্বপ্ননদী
লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ০২ নভেম্বর, ২০১৩, ০৭:১৭:৪৭ সন্ধ্যা
'আপনি কিভাবে বাপ্পাদিত্য বসুর মত ছেলেকে এত বড় দায়িত্ব দিলেন? একেবারে মৈত্রীর সভাপতির দায়িত্ব? যে কিনা ২৮ শে অক্টোবর লাশের উপর নেচেছিল- ভিডিও প্রুফ পর্যন্ত রয়েছে!'
'আমার একার সিদ্ধান্ত নয় তা আপনি জানেন। তাছাড়া অন্যান্য যোগ্যতা অনুযায়ী ই সেই তো হওয়ার মত।'
দেখুন মেনন ভাই, আজন্ম কমুনিস্টদের একজন আমি। ছাত্রলীগের গুন্ডাদের মত আমি সমাজতন্ত্রের বাহক ছাত্রদের অধ:পতিত হতে দেখতে চাই না।'
'এটা দলীয় সিদ্ধান্ত।'
'থাক, এ কথা আর বৈলেন না। এভাবে মোড়ক না দিলেও চলবে। চিহ্নিত হত্যাকারী দিয়ে একটা দল ডুববেই। উঠবে না। তাছাড়া এই ক্রিমিনালরা আদর্শ কি - তা কি কখন ও বুঝবে? সে কিনা সারাদিন পরে থাকে শাহবাগে। টাকার নেশা ধরেছে আপনার সভাপতির। টাকার পাগল হয়ে গেছে।'
'সে যাই হোক। ছাত্রলীগের সাথে টেক্কা দিতে ঐখানে বাপ্পা ছাড়া আর কে পারবে? একজনের নাম বলেন দেখি? ভুলে যাবেন না আমাদের মূল উদ্দেশ্য! রাজাকার নিধনের এই মহা-সুযোগ নস্ট করা ঠিক হবে না। তাতে যত অন্যায় হোক না কেন!'
আমি বের হয়ে এলাম।
বাসার দিকে যাব।
গাড়িতে উঠলাম।
আর তখন ই আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামল।
সারাদিন ধকল গেছে।
বাইরে দেখছি।
দেয়ালের পাশাপাশি লিখন:' দুনিয়ার মজদুর এক হও' আর 'জামায়াত নেতাদের মুক্তি চাই'!
হটাত একটা অতীত স্মৃতি মনে পরে গেল:
১৯৭২ কি ৭৩ হবে। কোন গোপন আস্তানা হবে!
'মনি দা, তুমি লিফলেট এর বিষয় ঠিক করেছ?'
'বিস্তারিত দরকার নাই। পয়েন্ট আকারে লিখে ফেল। অত্যাচারের মূল বিষয়গুলো অল্প কথায় লেখ।'
'তাহলে আস। বস। শেষ করি। প্রেসের কাজ এখন অনেক কঠিন আর সময়বহুল।'
লেখ:
"রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস এর নমুনা"
১) ব্যাঙ্ক লুন্ঠন
২) হত্যা - লাশ ঝুলিয়ে রাখা, কর্তিত মাথা দিয়ে ফুটবল খেলা
৩) ধর্ষণ
৪) লুট তরাজ - সখালঘু নির্যাতন
৫) প্রায় ৪০ হাজার রাজবন্দী নিধন
হটাত ঘুম ভাঙ্গল। গাড়ি চলছে।
'ড্রাইভার, কয়টা বাজে?'
'সাড়ে পাচটা'।
ফেইসবুকের তিনটি বিষয় বাপ্পা দেখাল গতকাল। শিবিরের ছেলেদের কাজ। অতীত চারণ আর কি ।
(১) আমার সাথে নিজামীর কোলাকুলির ছবি।
(২) মুজিবের হত্যাকান্ডের পর ট্যাঙ্কার উপর দাড়িয়ে বর্তমান তথ্যমন্ত্রী ইনুর নাচের ঘটনার বিবরণ (পেপার কাটিং)
(৩) ২৮ সে অক্টোবর মুজাহিদ নামের শিবিরের এক ছেলের হত্যার পর লাশের উপর লাঠি হাতে বাপ্পার ছবি।
আমার রিস্ক কতটুকু এখানে?
অন্য দুইজন তো সরাসরি জড়িত। ওরা না হয় ধরা। কিন্তু আমার সাথে তো কোন হত্যা-প্রসংগ জড়িয়ে নেই!
বৃষ্টি চলছে বিরামহীন।
মানুষের শহর।
অগণিত বর্তমান কে ধারণ করে লাখ লাখ মানুষ সংগ্রাম করে যাচ্ছে এই শহরে। অতীত ও সেখানে চলে আসে।
অতীত কি এই বর্তমান কে প্রভাবিত করছে?
বর্তমানের এই ভয়াবহ সংগ্রাম কি অতীতের অবদান?
বর্তমানের শ্রেণী সংগ্রাম ও কি অতীতের রাজনীতিবিদদের কর্মসূচির ই প্রতিবিম্ব?
কে দায়ী?
কারা দায়ী?
কোন আদর্শ দায়ী?
ঈশ্বর বিহীন ভুবনের 'অনিশ্চয়তার' দোলাচলে এ রকম সিকোয়েন্স বা ছন্দ ই বা কিভাবে থাকে?
এই অতীত দ্বারা বর্তমান প্রভাবের ছন্দ কি আরেক অনিশ্চয়তার অবদান?
এই ছন্দ কি হটাত করে ই তৈরী?
অক্সফোর্ড এ ডিবেটে বিশপ উইলিয়াম রয়েনের এরকম কথার পর রিচার্ড ডকিংস তেমন কিছু কি বলতে পেরেছিল?
*********************
'বাবা, আমি গর্বিত মা। তুমি দু:খ করবে না।'
'মা, আমি কেন দু:খ করব? আমার তো সব দু:খ তোমার জন্য।'
যেদিন স্বৈরাচারকে হত্যা করলাম - এক জন ও তো কাদল না। সারা জাতি স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলল। মা, সেই দিন ই তো আমি পৃথিবীর বুকে সর্বোচ্চ অবদান রাখা শেষ করেছিলাম। সর্বোচ্চ সন্মাননা সেদিন ই পেয়ে গেলাম।
আর আজ আওয়ামী লীগের ভন্ড নেতারা কান্নাকাটির নামে ভন্ডামি করে!
কয়জন মুজিবের জানাজা পড়েছিল?
'মা, আমি বলে রাখছি, এই জাতি একদিন আমার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করবে। আমার রক্ত কথা বলবে। '
'মানুষ তো মরবেই। '
'কিন্তু সন্মানের মরণ কয়জনের ভাগ্যে হয়?'
'মা, তুমি দু"খ কর না।'
'বাবা, আল্লাহর কাছে দোয়া করি পরকালে যেন আমাদের এক সাথে সুখের দেখা হয়।'
'মা, সেই দোয়া ই কর।'
***
মা চলে যাওয়ার পর সিগারেট ধরালাম।
আমি কর্নেল ফারুক।
মৃত্যুকে তো জয় করেছি সেই কোন কালে।
আমার মাঝে কোন প্রতারণা নাই।
নাই কোন মুনাফেকি।
গোটা দেশ যেই আজাব থেকে মুক্তি চেয়েছিল -- আল্লাহ আমার মত নগন্য মানুষকে যেন ত্রান কর্তা হিসেবে পাঠিয়ে দেশকে আজাব্মুক্ত করলেন।
কাল আমার ফাসি কার্যকর হবে।
অন্য রকম অনুভুতি!
আল্লাহর কাছে পরকালের মুক্তি ই কামনা করি।
শৈশবের একটি স্মৃতি বড্ড মনে পড়ছে।
একটা নদীর পার। সেখানে আমি প্রায় ই বসে থাকতাম।
আজ মনে ছন্দ জাগছে। সুর তৈরী হচ্ছে।
লিখে রাখতে পারলে ভাল হত:
"স্বপ্ন নদী যদি সত্য হয় তাহলে বলতে হয় এই সেই নদী,
বিচিত্র রুপা, বিচিত্র রঙ্গা, বিচিত্র অবয়ব যেন গানের মতই বয়ে চলে।
স্বপ্ন তীর কোথায়? অনন্ত বহা স্বচ্ছ পানিতে মিশে যায় মাছেরা,
ছেলেরা খেলা করে তীর ঘেষে;
পাল তোলা নৌকা চলে যায় বুক ফুড়ে,
আনন্দে হেসে ছড়িয়ে দেয় রঙিন পাল।
হওয়ায় উড়ে চলে নৌকা
সাথে নিয়ে মাল্লার হাসি।
দেখছি আকাশ ঘেষে বয়ে চলা মেঘের দল,
সাথে করে পাখির ঝাক।
এক রেখায় কিংবা বিভিন্ন মাত্রায়, বিভিন্ন বাকে
নদীর বাকের মতই তাদের আচরণ।
কি সারল্যের ছোয়া দেখছি আজ চারিদিকে।
গাছগুলোর ঐকতানে ঢলে পড়া বাতাসের সাথে সাথে-
সুরের তালে যেন সমবেত নৃত্য।
নদীর পানির মতই তরঙ্গ।
প্রকৃতিতে তৈরী হচ্ছে বিচিত্র তরঙ্গ।
ঘোলা হয়ে আসে সব কিছু।
এটি সেই সময় যখন আমি চলে যাচ্ছি
এই ভালবাসার স্বপ্ন নদী ছেড়ে!"
বিষয়: বিবিধ
১৪৭৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন