সত্য ঘটনা অবলম্বনে (৭): অসাম্প্রদায়িকতা

লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ০১ নভেম্বর, ২০১৩, ০৬:৫০:০৫ সন্ধ্যা

কালী মন্দিরের পিছনের পুকুর ধারের ছোট্ট সমতলভূমিতে দশ জনের মত জোহরের নামাজ পড়ছি। মন্দিরের সামনে ছয়-সাতজন পাহারা দিচ্ছে। আওয়ামী তান্ডব শুরু হয়েছে। মাওলানা সাইদীর রায়ের পর সরকারিয় বাহিনী একদিকে শত-এর অধিক মানুষকে হত্যা করল। আরেকদিকে শুরু করল মন্দির-ভাঙ্গার মহোত্সব।

কক্সবাজারের এদিকে প্রায় সব গুলো মন্দির কিছু না কিছু ভেন্গেছে গতকাল থেকে ছাত্র আর যুব লিগ। কোন পত্রিকায় আসে নাই। আসার কথা ও না । কিন্তু সবাই জানে। চোখের সামনেই যে ঘটছে!

ভাংচুর দলের ই কেউ কেউ মোবাইলে ছবি তুলেছে - ভিডিও ও করেছে আবার মোবাইলের মাধ্যমে ছড়িয়ে ও দিয়েছে। নিজেদের মধ্যে ও কোন ভরসা নাই ওই প্রজাতির।

আরিফ ভাই নামাজ পড়াচ্ছেন। এখানকার শিবিরের থানার সভাপতি। তার সমস্যা হল: নামাজে তার কান্না সবাই শুনতে পায়। আর রাতের নামাজে তার তেলাওয়াত আগায় না। কান্নায় থেমে যান।

সালাম ফিরিয়ে ই চোখে পড়া সারা পুকুর জুড়ে ফোটা শাপলা যেন প্রাণ জুড়িয়ে দিল:

"সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আকাশ সমূহ ও পৃথিবীর প্রত্যেকটি জিনিসের মালিক এবং আখেরাতে প্রশংসা তাঁরি জন্য৷ তিনি বিজ্ঞ ও সর্বজ্ঞ৷"

শিবির মন্দির পাহাড়া দিচ্ছে।

আওয়ামী থাগেরা কয়েক জায়গায় আক্রমন করেছে পুলিশের তত্বাবধানে! প্রথমে পুলিশ রেইড করল। শিবির সরে গেলে লীগের গুন্ডারা এসে মন্দির ভাঙ্গল। মন্দির ভাঙ্গার সহজ উপায়। মন্দির তো এদের ভাঙ্গতেই হবে। রাজনৈতিক ফায়দা বলে কথা! কাল প্রথম আলো জনগনকে এভাবে আলোকিত করবে যে মন্দির ভাঙ্গার কাজ জামায়াত শিবিরের! সেলুকাস বাংলাদেশ!

আওয়ামী নেতাদের এখন একটাই কাজ যেকোন উপায়ে সংখ্যা লঘু নির্যাতনে জামায়াতকে ফাসানোর মাধ্যমে নিজেদের হত্যাজগ্গ কে জায়েজ করা।

কাল রাতে মন্দিরে র ভিতরে ঘুমালাম। পুরোহিত আমাদের তিনজনের জন্য খাবার নিয়ে এসেছিলেন। যদিও আমরা খাবার নিয়ে এসেছিলাম।

মনে হল - ভাইদের মাঝে বিরোধের ইসু তৈরী করে যদি সম্পর্ক ভাঙ্গার চেষ্টা করে তাহলে ওই চক্রান্ত্কারীকে কি করা উচিত? 'বাংলাদেশ' নামক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশে যুগ যুগ ধরে মুসলমান ও হিন্দুরা ভাইয়ের মতই সুখে শান্তিতেই বসবাস করেছে। একমাত্র সুবিধাবাদী সকল সরকার ই মিথ্যা অপপ্রচারের মাধ্যমে রাজনৈতিক সুবিধা লাভের স্বার্থে মন্দির ভাংচুর, সম্পত্তি দখল সহ সব অপকর্ম করেছে নির্দিধায়! এলাকার প্রায় প্রত্যেক আওয়ামী বা বিএনপির এমপি মন্ত্রীদের হিন্দু সম্পত্তি বেদখলের রেকর্ড আছে!

শিবির তাই পাহারা দিচ্ছে। স্রষ্টার নির্দেশনা থেকেই। ইনসাফের নির্দেশনা থেকেই। সকল মানুষের মাঝে ইনসাফ প্রতিষ্ঠাই যে ইসলামের লক্ষ্য।

প্রত্যেক মুসলিম দেশেই মূল চার খলিফার শাসনামল থেকে যেসব বিধর্মী ই বসবাস করেছে -- প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম সেখানেই থেকেছে। কারণ মুসলিম শাসক বা সংখাগরিসঠ জনগণ তাদের সাথে সহমর্মিতার সাথেই অবস্থান করেছে। একটা বাতিক্রম কেউ দেখাতে পারবেনা। অথচ মুসলিম সংখ্যালঘু অঞ্চলে মুসলিমদের উপর অত্যাচারের অন্ত নেই!

***

আজ হিন্দু মুসলমান এখানে একাকার হয়ে গেছে।

অথচ সরকারকে এরাই ভোট দেয়।

আজ সেই সরকারের অত্যাচার যখন প্রমাণিত - অনেক হিন্দুর মুখ ছোট হয়ে এসেছে।

প্রতারিত হওয়া দু:খিত মন হয়ত আমার মত শিবিরের কর্মীর কাছে এসে কিছু বলতে ও লজ্জা পাচ্ছে!

আমি কি মিশরের ইখয়ানের সেই ভাইটির মত যে একই ভাবে গির্জা পাহারা দিচ্ছে?

একই ঘটনা একই সময়ে কিভাবে দুই জায়গায় ঘটল?

*************************

'সব কয়টা শুয়োরের প্যন্ট ছাড়া সব খুইলা ফেল'।

'দূর! চা কড়া হয়নাই। ওই কি চা আনসস?'

কনস্টবল কিংকর্তব্যবিমুড় হয়ে গেল।

'শালা মানুষ হয় নাই। শিখল না এখন ও! '

কলেজের ছাত্র হবে হয়ত।

কাল রাতের ভয়ঙ্কর অত্যাচারে কয়েকজন দাড়াতে পারছে না।

'ওই লাঠিটা দে।'

যাত্রাবাড়ির ওসি সালাউদ্দিন শুরু করল হাসান নামের এক মা-মরা একাদশ শ্রেনীর ছেলেকে অবর্ণনীয় নির্যাতন। ছোট ছেলেটা কতক্ষণ ধকল সয্য করবে? জেল খানার ইট পাথর শুষে নিল ছেলেটার অমানুষিক চিত্কার।

কি দোষ ছেলেটার?

'আমায় এক নেশা পেয়ে বসল।' 'শালার তোরা যদি রাজাকারদের পা-চাটা থামাতি - তাইলে আর বাটে পড়তি না -- কুত্তার বাচ্চারা'!

অকল্পনীয় অত্যাচারে হাসান নামক ছেলেটা রক্তবমি শুরু করল।

আমি লাঠি দিয়ে রক্তাত্ত মুখে খোচা দিয়ে বললাম -' আর কখন ও শিবির করবি?'

অনেক ক্ষণ চুপ চাপ! হটাত ছেলেটা বলল, 'আপনার ছেলেটা ভাল আছে?'

আমি থমকে উঠলাম। আমার ছেলের খবর জানে কিভাবে?

কয়েকদিন ধরে এমনিতেই জ্বর। ছুটির দরখাস্ত রিজেক্ট করেছে গতকাল।

সিগারেট ধরলাম।

ভাল লাগছে না।

গুমোট লাগছে।

পরিশ্রান্ত।

থানা থেকে বের হলাম।

বাড়ি ফিরতে হবে।

**************************************************

আমি কোথায়?

আমি কি স্বপ্ন দেখছি?

আমি সব সাদা কাল দেখছি কেন?

মানুষ কি স্বপ্নে সাদা কাল দেখে?

সব কিছু?

আমি কি স্বপ্নে বিশ্বাস করি?

আমি কি অতি প্রাকৃত বিষয় বিশ্বাস করি?

আমি কি ইশ্বর বিশ্বাস করি?

আমি কি বানর থেকে মানুষ হওয়া বিশ্বাস করি?

আমার সাদা পোশাক কেন?

ওই লোকটি কে?

'আপনি আমায় চিনেছেন?'

এ কে? একে আমি চিনব কিভাবে?

'তোফায়েল সাহেব! রক্ষীবাহিনীর প্রধান তোফায়েল সাহেব! আপনি কেমন আছেন?'

লোকটি কে? কি আস্চর্জ? রক্ষিবাহিনী নিয়ে কথা বলছে কেন? অতীত নিয়ে কথা বলছে কেন?

'আমি কি আপনাকে চিনি?'

'আপনি আমাকে চিনেন কিভাবে?'

'বাহ! চিনব না? আমি তো সেই দিন ই পেপারে দেখলাম আপনি রক্ষীবাহিনীর প্রধান মনোনিত হয়েছেন।'

'এখন তো ২০১৩ সাল।'

ও আচ্ছা! তাই নাকি? তা আমি জানব কিভাবে? আপনি তো আমাকে থামিয়ে দিলেন সেদিন। নির্দেশ দিলেন যে আপনার দলের ছেলেদের আমাকে খুন করতে? আপনি পাশে দাড়িয়ে ছিলেন! কে যেন ইটের উপর আমার মাথা রেখে আরেক ইট দিয়ে ....'

'থামুন! কি বলছেন এসব !'

'আমি আপনাকে চিনি না'

'আমার নাম মালেক।'

'আমি মালেক নাম কাউকে চিনি না।'

'চিনার দরকার নাই।'

'আপনি কি চান? তাছাড়া এ জায়গা কোথায়?'

আমি নিজে ও নিশ্চিত নই - কি চাই বা স্থানের পরিচিতি নিয়ে। যেহেতু আমরা দুজন ই আছি - চলুন না কথা বলা যাক!'

কি বলবেন? আপনি তো বানিয়া বানিয়ে কি সব বলছেন! আমাকে দোষ দিচ্ছেন!'

'আপনার ছেলেরা কি আপনাদের মতই হয়েছে? হিংস্র? মানুষ হত্যাকারী?'

'কি বলছেন আজে বাজে কথা?'

'আমি ছাত্রলীগের নতুন প্রজন্মদের কথা বলছি'।

'কেন তারা আবার কি করল?'

বিশ্বজিত কে কারা খুন করেছে?'

কেন? শিবির, ছাত্রদল ও তো রগ কাটে?'

'অন্যদের কথা বাদ দিন। আপনি কি আমাকে হত্যা করেন নি?'

নাহ! আপনাকে তো আমি চিনি ই না!'

'ভাল করে তাকিয়ে দেখুন তো?'

আমি দেখলাম সারা মুখ রক্তাত্ত একজন আমার সামনে দাড়িয়ে। তার কি মাথা অর্ধেক হয়ে আছে? বিকৃত। পাশে ই কি মাথার মগজ আর মাংস পড়ে আছে? সে কিভাবে কথা বলছে?

আমি কি ভয়ঙ্কর বাজে স্বপ্ন দেখছি!

এর মানে কি?

সেদিন কি আমায় নেশা পেয়েছিল?

আমি কি একাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম?

সবাই মিলে কি সেই ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত সেদিন নেই নাই?

আমি একাই সেই দোষে দুষ্ট হব কেন?

যা হবার হয়ে গেছে।

পদ্মা মেঘনার অনেক পানি গড়িয়ে গেছে।

অনেক ফসল ঘরে তোলা হয়ে গেছে।

আমি তোফায়েল আহমেদ।

বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত দলের কান্ডারী। শক্ত হতে হবে। আমাকে অনেক আগাতে হবে। দলকে আগিয়ে নিতে হবে। তীব্র ঝড়ের মোকাবেলা করতে হবে।

***************************************************

'হাসান নামের ছেলেটা মারা যায় সেদিন রাত তিনটার দিকে'।

'আর আমার আট বছরের ছেলেটাও মারা যায় প্রায় একই সময়েই।'

- ওসি সালাউদ্দিন

বিষয়: বিবিধ

১৪২৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File