"জামায়াত-শিবির হত্যা কর ... একটি যুক্তি - একটি পাল্টা প্রশ্ন ও তার উত্তর"
লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৫:০০:৩৮ বিকাল
হে জামায়াতবিরোধী মানুষেরা যারা 'হত্যা' 'হত্যা' বলে যুদ্ধ শুরু করেছেন -
জামায়াতের নেতারা যদি আসলেই 'পাপী' হয়ে থাকে তবে তাতে কিন্তু পরকালে আপনারা কিছুই লাভ করতে পারবেন না - এদের দ্বারা যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল তারাই উত্তম বদলা পাবে।
কিন্তু .. কিন্তু যদি তারা নিরপরাধ হয়ে থাকেন - তবে আপনাদের কি হবে ভেবে দেখেছেন? আপনাদের সব না-বুঝে প্রচারিত অপবাদ, দিবা-রাত্র পরিশ্রম আর যুদ্ধ কি আপনাদের সব ভাল কাজ ধ্বংস করে দিবে না? অনন্ত কষ্টের কারণ হবে না সেসময়?
এই সাধারণ হিসাব আপনারা করে দেখেছেন কি? এটা বুঝার জন্য তো খুব শিক্ষিত হওয়ার প্রয়োজন নাই। তবে পরকালের ভয়াবহতা যে মন অনুভব করতে পারে - সেই মনের এক্ষেত্রে সতর্ক না হয়ে উপায় নেই।
----
পাদটিকা:
একজন প্রশ্ন করেছেন
<<<যদি জামাতের নেতারা পাপী সাব্যস্ত হয় আল্লাহর দরবারে, তখন এই যে দিনরাত এইসব জালেমদের পক্ষ নিয়া আপনারা প্রচারণা চালাইয়া যাচ্ছেন আপনাদের কি আল্লাহ ছেড়ে দিবে?
>>
আমার জবাব:
মূলনীতি দুই ধরনের হয় - একট আদর্শিক (শরয়ী বা আকিদা-ভিত্তিক) ,আরেকটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক।
তাই 'ভুল'ও দুই ধরনের হয় - আদর্শিক (শরয়ী বা আকিদা-ভিত্তিক) ,আরেকটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক
জামায়াতের তথা যেকোনো ইসলামী আন্দোলনের আদর্শিক মূলনীতি হলো:
"তিনি রাসুল পাঠিয়েছেন হেদায়েত আর সত্য ধর্ম সহকারে -- যাতে করে অন্য সকল ধর্ম ও মতের বিরুদ্ধে ইসলাম কে বিজয়ী করতে পারে -- মুশরিকদের কাছে তা যতই অসহনীয় হোক না কেন।" কোরান শরীফের তিন জায়গায় (তওবা, ফাতহ এবং সফ) একই উক্তি রয়েছে।
সুরা ইউসুফে আছে - "হুকুম দেয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ" (আর কারো নয়)
ইসলামী আন্দোলন হলো মূলত 'হুকুম একমাত্র আল্লাহর হওয়ার জন্যই' একদল লোকের প্রানান্ত প্রচেষ্টা - যেই চেষ্টা মুশরিকদের কাছে অসহনীয় হয় সকল সময়ে - সকল স্থানে।জামায়াতে ইসলামী সেই আন্দোলনের দাবিদার।
আমি জামায়াত করি আদর্শিক (শরয়ী বা আকিদা-ভিত্তিক) মূল্যবোধে - উল্লিখিত আয়াতগুলোর আলোকে এই কাজটি 'ফরজে আইন' ভেবেই। কোনো লোকের দিকে তাকিয়ে নয় - আল্লাহর আদেশ কে গ্রহণ করেই করি।
ব্যক্তিকেন্দ্রিক ভুলের মাশুল(যদি করে থাকে; একজন মদ্যপ হতে পারে, মিথাবাদী হতে পারে, খুনি হতে পারে ইত্যাদি - তবে প্রমান ছাড়া গুজবে তাকে convict করা যায় না ) -- ওই নির্দিস্ট ব্যক্তি' দিবে আল্লাহর কাছে।সুধু সেইই দায়ী!
তবে যদি ওই ব্যক্তি পাপী সু-প্রমানিত হয় কোনো পাপে - তা জেনেও যদি তার মুক্তিকে তথা তার পাপকে সমর্থন করি - তবে আমি আল্লাহর কাছে দোষী হব। তখন আর excuse থাকবে না।
তবে যদি আমি "নিশ্চিত না জানি এবং পাপীদের সমর্থন দেই" (সুরা হুজরাতের তাফসির এ বিষয়ে বিশদ বিশ্লেষণ দেয়)) শুধুমাত্র "আদর্শিক তথা শরয়ী মূল্যবোধ থেকে" তবে সেক্ষেত্রে আমি নির্দোষ আল্লাহর কাছে -- তবে যদি 'আদর্শ-ভিত্তিক' ভ্রান্তি থাকে সে জন্য কোনো ছাড় নাই।
আর তাই 'মারওয়ানের' মত ভ্রান্তিময় শাসকের অধীনে অনেক সাহাবী 'আদর্শিক' কারণে খেলাফতের বিরুদ্ধে উদ্ধত হন নি (রেফ- the devils deception - ibnul jawzi, ১২৯২ -১৩৪৯)
সুরা নুরের কিছু আয়াত দিয়ে শেষ করি - হাজর আসকালানী সহ অধিকাংশ স্কলারের মতে এ বক্তব্য শধু মা আয়েশা (রা) এর ব্যপারেই নয় - সকল যুগে সকল কালে প্রযোজ্য -- মুসলমানদের মাঝে অনুমানের বিরুদ্ধে আল্লাহর নির্দেশ:
১১) যারা এ মিথ্যা অপবাদ তৈরী করে এনেছে তারা তোমাদেরই ভিতরের একটি অংশ ৷ এ ঘটনাকে নিজেদের পক্ষে খারাপ মনে করো না বরং এও তোমাদের জন্য ভালই৷ যে এর মধ্যে যতটা অংশ নিয়েছে সে ততটাই গোনাহ কামাই করেছে আর যে ব্যক্তি এর দায়দায়িত্বের বড় অংশ নিজের মাথায় নিয়েছে তার জন্য তো রয়েছে মহাশাস্তি ৷
১২) যখন তোমরা এটা শুনেছিলে তখনই কেন মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারীরা নিজেদের সম্পর্কে সুধারণা করেনি এবং কেন বলে দাওনি এটা সুস্পষ্ট মিথ্যা দোষারোপ?
১৩) তারা (নিজেদের অপবাদের প্রমাণ স্বরূপ) চারজন সাক্ষী আনেনি কেন? এখন যখন তারা সাক্ষী আনেনি তখন আল্লাহর কাছে তারাই মিথ্যুক৷
১৪) যদি তোমাদের প্রতি দুনিয়ায় ও আখেরাতে আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণা না হতো তাহলে যেসব কথায় তোমরা লিপ্ত হয়ে গিয়েছিলে সেগুলোর কারণে তোমাদের ওপরে মহাশাস্তি নেমে আসতো৷
১৫) (একটু ভেবে দেখো তো¸ সে সময় তোমরা কেমন মারাত্মক ভুল করেছিলে) যখন তোমরা এক মুখ থেকে আর এক মুখে এ মিথ্যা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছিলে এবং তোমরা নিজেদের মুখে এমন সব কথা বলে যাচ্ছিলে যা সম্পর্কে তোমাদের কিছুই জানা ছিল না ৷ তোমরা একে একটা মামুলি কথা মনে করেছিলে অথচ আল্লাহর কাছে এটা ছিল্ গুরুতর বিষয়৷
১৬) একথা শোনার সাথে সাথেই তোমরা বলে দিলে না কেন, ‘‘এমন কথা মুখ দিয়ে বের করা আমাদের শোভা পায় না , সুব্হানাল্লাহ! এ তো একটি জঘন্য অপবাদ৷’’
১৭) আল্লাহ তোমাদের উপদেশ দেন, যদি তোমরা মু’মিন হয়ে থাকো,
১৮) তাহলে ভবিষ্যতে কখনো এ ধরনের কাজ করো না ৷ আল্লাহ তোমাদের পরিষ্কার নির্দেশ দেন এবং তিনি সবজ্ঞ ও বিজ্ঞানময়
-----------------------
Corollary:
"খন্দকার মাহবুব হোসেনের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য :আমি ১৯৭৩ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর ছিলাম। ওই সময় দালাল আইনে বিচারের জন্য পাকিস্তান আর্মির এদেশীয় ২৮ হাজার সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। বর্তমানে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে যাদের আটক করা হয়েছে, ওই ২৮ হাজার বন্দীর মধ্যে এরা কেউ ছিলেন না। এরা যদি এতই ভয়ঙ্কর অপরাধী হতেন, তাহলে এদের একজনকেও ওই সময় গ্রেফতার তো দূরের কথা, এদের কারও বিরুদ্ধে দেশের কোনো একটি থানায় একটি জিডিও করা হলো না কেন? তিনি বলেন, যে কাদের মোল্লাকে এখন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে, তিনিই স্বাধীনতার পর ১৯৭২-৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন, আবার বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ভেতরে উদয়ন স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি যদি ‘কসাই কাদের কিংবা জল্লাদ কাদের’ হন, তাহলে আজ যারা তার ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন করছেন তারা কেন তাকে ওই সময় আটক করে পুলিশে দিলেন না? এ ধরনের অনেক প্রশ্ন আজ সাধারণ জনগণের মাঝে।"
বিষয়: বিবিধ
১২০৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন