সত্য ঘটনা অবলম্বনে (৫): লড়াই
লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ২৪ অক্টোবর, ২০১৩, ০৭:১৪:৩৯ সন্ধ্যা
হাত বাধা লোকটার নাকের উপর যখন বুট দিয়ে প্রচন্ড বেগে লাথি মারলাম।
সংগে সংগে তার নাক দিয়ে তীব্র বেগে রক্ত বের হল!
ফ্লোর ভেসে গেল।
শালা এত রক্ত কেন?
একটু থামলাম।
একটা সিগেরেট ধরালাম।
'এগুলোকে মেরে ফেলতে হবে, তাছাড়া এরা আমাদেরকে বাঁচতে দেবে না।'
ডিসি বলল, তাহলে ত আর ও সমস্যা। এই ভুল করবেনা।
'এ রিস্ক আমার। আমি এডিসি মেহেদী। আমি টুকুর ডান হাত। '
'ওই -- এই কুত্তার মাথায় হেলমেট পরা'।
মাথায় এক নেশা পেয়ে বসল।
একটি ইট হাতে নিলাম।
ডিসি চিত্কার দিল 'নো, এই রিস্ক নিতে পারব না'।
'স্যার, তাহলে নূন্যতম একে পঙ্গু করে দেওয়ার অনুমতি দেন।'
ডিসি মাথা নাড়ল।
'ওই এই কুত্তার হেলমেট খুলে ফেলে তার হাত পা বেধে ফ্লোরে ফেল'।
একটা ডান্ডা নিলাম।
চরম নেশা আমায় পেয়ে বসেছে।
বিদ্যুতের বেগে পিটিয়ে যাচ্ছি।
হাটু,পা, রান, পায়ের তলা।
কিছুই বাদ যাচ্ছে না।
কতক্ষণ করলাম বুঝলাম না।
'মেহেদী থামুন। সে তো অনেক আগেই অজ্ঞান।'
থামলাম।
আমি প্রচন্ড টায়ার্ড।
**********************************************
অন্য রুটের ট্রেনে উঠেছি।।
কাজ শেষে বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা।
লন্ডনের এ সময়টা প্রচন্ড ভীর থাকে ট্রান্সপোর্ট এ।
নিজে ও টায়ার্ড।
কিন্তু এক মিশনে এক জায়গায় যাচ্ছি।
প্রতিশোধ নেয়া কর্তব্য।
তা না করে বিবেকের ন্যুনতম একটা দায়বদ্ধতা হিসেবে প্রতিবাদ করতে যাচ্ছি।
বন্ধুর চলে আসার কথা ছিল আগেই।
কিন্তু পরিকল্পনা পরিবর্তিত হওয়ায় সরাসরি মিটিং এই যাচ্ছি।
রাতে পরিকল্পনা ছিল কুত্তাটার হোটেলে গিয়েই মাইর দেয়ার।
কিন্তু ওই কুত্তা যে শেষ মুহুর্তে হোটেল বদলাবে তা কে জানত?
কুত্তা জাতির পিতা মারা যাবার পর ট্যাঙ্কার উপর দাড়িয়ে নাচছিল।
আর আজ সে মন্ত্রী!
ইসলামপন্থীদের মানুষ ই মনে করে না।
.. মিটিং এ গিয়ে ই মাইর দিতে হবে।
দেশবাসীকে দেখায়ে দিতে হবে -- বিবেকের কি দায়িত্ব!
কুত্তাগুলোর মনে ভয় ঢুকায়ে দিতে হবে।
বাংলা ছাড়া করতে হবে। অথবা পাগলা-কুকুর নিধন করতে হবে।
**************************************************
সাতক্ষিরার একটি গ্রাম।
মনমহুরি।
ছোট খালের পার ঘেষে জন্মানো বুন কাশবনে আমি সারাক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারি।
মায়াবী মাটির উপর অতি সাধারণ জীবন ধারণকারী এ অঞ্চলের মানুষেরা কার ও কাছে কিছু আশা করেনা।
কোন সরকার এদের কি দিল তা নিয়ে মোটেও চিন্তিত নয়।
তবে ইসলামকে এরা জীবনে গভীর ভাবে ই ধারণ করেছে।
এ যে যুগান্তরের ই শিক্ষা।
আমরা শুনছি রায়ের বিবৃতি।
স্কাইপে কেলেঙ্কারির পর ও বেহায়া বিচারকেরা একেবারে নির্দোষ, মুফাসসিরে কোরআন, আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাইদীর রায় পড়ছে।
হাওয়ার উপর ভিত্তি করে একজনকে ফাসির আদেশ দিচ্ছে -- যিনি লাখো লাখো কোরআন প্রিয় জনতার হৃদয়ে আসীন হয়ে আছেন।
আমরা সর্বত প্রস্তুতি এমনকি শহীদ হওয়ার মানসে অপেক্ষায় আছি।
রাজপথে নেমে পড়তে হবে।
মহিলারাও ঝাড়ু নিয়ে নামবে জেনেছি।
কে নামবে না?
জোহরের আজান ভেসে আসছে।
আহারে -- অনেকে ই ডুকরে ডুকরে কাদছেন।
কাদার কি আছে? বিচার-বিভাগীয় হত্যাকান্ডের রায় এই বেহায়ারা দিবে এটাই তো স্বাভাবিক !
'এখন কি কাদার সময়?' বৃদ্ধ দাদা বললেন।
'মুসলমানেরা কাদে না। শত্রুকে যুদ্ধের ময়দানে কাদায় কিংবা নিজে চোখ মুদে ফেলে।'
'মুসলমান কাদে রাতের নির্জনে। একমাত্র আল্লাহর সান্নিধ্যে।'
রক্ত মনে হয় জেগে উঠল।
কম্পন অনুভব করলাম।
নেমে পরেছি।
রাস্তায়।
অনেকে কি কাফনের কাপড় ও নিয়ে এসেছে?
শত শত মহিলারা নেমে পরেছে অনেকে শিশু সহ।
কার ও কি কোন পরোয়া নেই?
দায়িত্বশীলদের জানাতে হবে এখানকার অবস্থা।
স্কাইপে ফোন দিতে হবে মোবাইল থেকে। তাই স্মার্ট ফোন অনেক কস্ট আর লোন করে নিয়েছি সংগঠনের স্বার্থে।
হায়নারা প্রতি মুহূর্ত মোবাইল ট্র্যাকার এর মাধ্যমে আমাদের গ্রেফতার করে ফেলে।
কিন্তু এভাবে ডাটা নেটওয়ার্কিং এ ট্র্যাকিং সহজ নয়।
মুনাফিকদের সাথে করতে হবে সর্বত যুদ্ধ।
চালাকির মাধ্যমে যুদ্ধ।
প্রতিশোধের যুদ্ধ।
***********************************
জানোয়ারটার বক্তব্য শুনছি।
মেজাজটাই খারাপ।
কোন মাল আনা যায় নাই।
এখন তো দেখি জুতার উপরে দিয়া ই চালাইতে হবে।
মেজাজটাই খারাপ।
কয়েকদিন আগে এখানে ই মানিকরে ও হালকার উপর মাইর দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল।
লন্ডনেই চারটা বাড়ি করছে এই সরকারের সময়।
বিচারপতি মানিক।
এই শুয়োর নাকি অস্ট্রেলিয়াতে ও বাড়ি কিনছে।
আমাদের দেশের বিচার ব্যবস্থার আর কিছু বাদ রাখল না পাগলা-সরকার।
রক্তচোষা জানোয়ার বিচারক দিয়ে বিচার-ব্যবস্থা সাজিয়েছে এরা!
কি সেলুকাস!
*****************************
প্রতিমন্ত্রীর ফোন রিসিভ করলাম ।
'মেহেদী! ওই লোকটা কিন্তু জামাতের এক থানা সভাপতি। কোন নামের লিস্ট করতে পারছ?'
'না স্যার। অজ্ঞান ই হয়ে গেসে। জাক্তার আবার বলে প্রেসার নাকি ভাল না। আজ আর মারতে চাচ্ছি না।'
'দেখ মেহেদী। তোমাদের মত শিক্ষিত আবাল দিয়ে আমাদের কাজ সহজে হয় না। আমি হলাম টুকু। আমার লোক পাঠায় দিব। একেবারে নিজের লোক।
শুধু আমার লোকদের জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ দিবা।
সব তথ্য বের করতে পারবে।
যত নাম ঠিকানা বের হবে - তত ই তো তোমাগো ব্যবসা।
প্রতি জামিন ২০-৩০ লক্ষ ও তো তোমরা নিয়ে থাক শুনলাম।
যাই হোক -- ৫ ই মেয়ের পরিকল্পনার ব্যপারে আমার লোক তোমার সাথে সামনা সামনি কথা বলবে।
এখন রাখি।'
রাত একটা বেজে গিয়েছে।
রাতের ঢাকা।
এত পতিতা রাস্তায় কেন?
অভাব কি এতই বেশি?
আমার কি? এ সরকার না থাকলে এক সেকেন্ড ও তো আর এই নরকে নয়।
*****************************
মনমহুরিতে পুলিশ আর বিজিবি ঢুকে পড়েছে।
গুলি চালাচ্ছে।
আমাদের ইট ও ফুরিয়ে এসেছে।
নির্দেশ এসেছে সরে আসার।
আহারে শফিক আর নেই।
ওই মহিলার লাশ পরে আছে।
গুলি চলছে অসহায় সাধারণ মানুষদের উপর।
সাইদী সাহেবের জন্য ভালবাসায় সিক্ত হয়ে মানুষেরা রাজপথে আজ রক্ত-শোষক দৈত্যের মুখোমুখি।
আমি কম্পক্ষে ২০ টি লাশ দেখলাম।
আহারে এক মা তার নব জাতক শিশু সহ মারা গেছেন।
রাস্তার পাশের ছাপরায় মা ঘুমিয়ে ছিলেন শিশূ সহ ।
পুলিশের বৃষ্টির মত তাজা বুলেট আর তাদের চির ঘুমের দেশে নিয়ে গেল।
ভাবেনি যে শাসকের কাছে মানুষের রক্তের যে বিন্দুমাত্র দাম নেই।
আমার হাতে গুলি লেগেছে।
কে আগাবে?
সবাই তো আহত।
আমি আমাদের দিকে এত মানুষ দেখছি কেন?
সন্ত্রাসী পুলিশ আর বিজিবি তো অনেক।
আমরা তো অনেক কম সংখ্যক ছিলাম!
এখন এত ভাই চারপাশে কেন?
এত সাহসী!
অনেক কে ই তো চিনছি না।
অবশ্য ভাল মত খেয়াল ও করতে পারছি না।
হাতের ব্যথায় সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
সব ঝাপসা হয়ে যায়।
এক গাছের নিচে বসি।
বিশ্রাম নিতে হবে কিছুক্ষণ।
অনেক শক্তি সঞ্চয় প্রয়োজন।
এরপর পুর্নোদ্দমে হায়নার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
১২৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন