সত্য ঘটনা অবলম্বনে (২): হেলুসিনেশন
লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ২১ অক্টোবর, ২০১৩, ০৪:০০:৩৩ রাত
--৩--
রাত একটা। চারিদিকে ঝি ঝি পোকার ঐকতান। পাহারারত ছাত্রলীগের কতগুলো ছেলের সিগেরেটের গন্ধ এখানেও আসছে। 'কুত্তাগুলা এখানেও গাজা টানছে।'
আমার বউ আর আমার ছেলে পাশে শুয়ে। আমরা মাটিতে শুয়ে। উপরে তারা-ভরা আকাশ।
শিক্ষক সমিতির বাধায় বাসায় ঢুকিনি। তাই বাইরেই অবস্থান।
মোবাইলে ইনুর পি,এস এর ফোন আসল। 'এই পি,এস এর মত নাদুস চেহারার এমন কুকুর দেখিনাই। কানাডায় তিনটা বাড়ি এর মধ্যেই কিনেছে।'
'আনোয়ার স্যার, ভাল আছেন?'
'ধুর! আপাকে ব্যপারটা বলেছ?'
'জি স্যার! আপা বলেছেন - যত সম্ভব কাজ করতে কিন্তু গন্ধ না ছড়াতে। আর তিনি তো মিটিংয়ে আগেই আশ্বাস দিয়েছিলেন।'
'রাখ তোমার আপার ফালতু আশ্বাস। এক নম্বরের হারামি। আমার লীগের ছেলেগুলা ই ভরসা। এই আনোয়ার যা বলে তা করে ছারে। কোন বাল ছালের ধার ধরে না। যাই হোক, তোমার স্যার (ইনু) তো বাইরে ঘুরে আসল বাল বাচ্চা সহ। শালা কমুনিস্টের গুষ্টি। খাইতে খাইতে আর কিছু বাকি রাখল না। আচ্ছা রাখি। এস,এস,এফ কে ওই বিষয়টা জানিও। এখন রাখি।'
'ওকে স্যার। স্লামালায়কুম।'
আকাশে চাদ উঠেছে। এক স্বপ্ন ময় অবয়ব। এই চাদে বলে সাইদীর চেহারা দেখা গিয়েছিল। শালা রাজাকারের গুষ্টি কিলাই। এই সাইদীকে গালি দিসিলাম। কোর্টে। রায়ের পর পর সাইদী যখন কথা শুরু করে! কি সাহস রাজাকারের ! যত্তসব! কি যে শান্তি লাগছিল তখন।
মাথা চীন চীন ব্যথা। চা ও লীগের হারামিগুলা আনতেছে না। কুত্তাগুলার রাত হইলেই মদ আর গাজার নেশা জাগে। এদিকে কিছুক্ষণ ধরে মেয়েমানুষের হাসি ও শোনা যাচ্ছে। কত্ত বড় মাপের হারামি!
আর পারছি না -- ঘুমে চোখ জুড়িয়ে আসছে। সব ঘোলা হয়ে আসছে।
'ওই কামাল! তুই কই? পানি নিয়ে আয়'
একজন এগিয়ে আসছে। অন্ধকারের এক অবয়ব -- মনে হয় কামাল ... ছায়াটা এগিয়ে আসছে।
আর ও কাছে ছায়াটি।
অল্প অল্প দেখা যাচ্ছে ... কে তিনি? সাদা এক পাজ্ঞাবী ... স্মস্রু মন্ডিত। হুজুর হুজুর দেখতে। ভদকার মাত্রা বেশি পড়ল কিনা বুঝছি না।
আর ও কাছে চলে আসল। সাইদীর মতই তো দেখতে!
আমার সারা শরীর অবসের মত লাগছে কেন?
আমি কি স্বপ্ন দেখছি?
তার হাতে পানির গ্লাস কেন?
চার পাশ দিয়ে আনেক ছায়া এগিয়ে আসছে।
অনেক গুলো একই ধরনের মানুষ ই তো দেখা যাচ্ছে।
সবাই তো সাইদীর মতই !
সবাই আমার দিকে এগিয়ে আসছে কেন?
এর মানি কি?
আমি নিশ্চিত স্বপ্ন দেখছি। .. কি বাজে দুঃস্বপ্ন!!
.......................
মোবাইল বেজে চলছে।
ঘুম ভাঙ্গল।আলো ভেঙ্গে পড়েছে। আকাশ জুড়ে মেঘ।
'স্যার। শুভ সকাল। আপনি সপরিবারে নাকি খোলা আকাশে রাত কাটিয়েছেন?'
'আমি আনোয়ার হোসেন। কোন কিছুর পরোয়া করি না। যাই হোক - তোমারা সবাই ভাল আছ? '
--৪--
আমি ঢাকার এক থানার ওসি।
ভাত খেতে বসেছি বাচ্চাদের নিয়ে।
মনে হচ্ছে ভাল আয়োজন। এমনিতেই কোলেস্টেরল অনেক বেশি। কিন্তু বৌয়ের এই মজার খাবারের লোভ সামলানো কঠিন।
ছোট ছেলেটার শরীর কয়েক দিন ধরে খারাপ। ৬ ই মে'র শাপলা চত্বরের অপারেশনের পরের দিন থেকেই খারাপ।
আমিও বাসায় ফিরি সেদিন দুপুরে। সারা রাতের কুত্সিত চিত্র গুলো ভুলতে চাচ্ছিলাম কয়েক দিন ধরেই! মানুষের গোঙানি, অগণিত লাশের বহর! গলাকাটা জন্তুর মত মানুষের ঝাপটা!!
ছেলের জ্বর ছিল আগের রাত থেকেই।
তার পর জ্বর কমলেও সারাক্ষণ কেমন যেন উদাস থাকে।
মাঝে মাঝে নিজে নিজে কথাও বলে।
স্কুলে যাছে না আজ প্রায় দুই সপ্তা।
সময় যাক। একটু ভাল হোক। সিঙ্গাপুর ট্রিপটা তখন ই দেব। অপারেশন ক্লিন-আপের পুরস্কার। সপরিবারে সিঙ্গাপুর যাত্রা!
খেতে বসেছি সবাই। আকাশ জুড়ে মেঘ! গুমোট অন্ধকার। বাতাস থেমে আছে। ঝড় কি আসবে? কেমন যেন নিথর চারিদিকে!
সব স্তব্ধতা ভেঙ্গে ছেলের চিত্কার -- "ডালে আঙ্গুল। মানুষের আঙ্গুল! রক্ত! রক্ত!"
রীতিমত চিত্কার -- চেয়ার ফেলে দিয়ে দাড়িয়ে পড়ে। শক্ত হয়ে আছে কেমন যেন।
মা ছেলেকে জড়িয়ে ধরে আছে।
'বাবা -- কিছু হয় নাই। খামাখা চিত্কার করছ।জ্বরে দৃষ্টিভ্রম হয়েছে তোমার।' 'ওকে রুমে নিয়ে যাও।' 'ডাক্তারকে এক্ষুনি ডাকতে হবে।' 'কনস্টেবলকে দিয়ে ডাক্তারকে বাসায় দ্রুত আনতে হবে।'
......................................
......................................
তরকারির দিকে তাকালাম। মনে হল। আঙ্গুলের মতই কি কিছু দেখা যাচ্ছে?
শিবিরের ওই ছেলেটার আঙ্গুল?
প্লাস দিয়ে যার আঙ্গুল তুলছিলাম।
একটার পর একটা সব আঙ্গুল।
চিত্কার করে আল্লা আল্লা করছিল।
আমি আরও জোরে আঙ্গুল টেনে তুলছিলাম!
এ কি সেই আঙ্গুলগুলো ?
এ কি হচ্ছে? হেলুসিনেশন!
আমার এমন মনে হচ্ছে কেন?
----
বাইরে কি বৃষ্টি শুরু হয়েছে? ছাদে যাব? বৃষ্টিতে কি ভিজব?
অসম্ভব বৃষ্টি শুরু হয়েছে মানুষের নগরী ঢাকায়!
সব ধুয়ে যাক।
সব জঞ্জাল।
সব কস্ট!
সব অতীত!
বিষয়: বিবিধ
১৭৯৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন