আল্লাহর পথে জিহাদের অপরিবর্তনীয় বিষয়সমূহ (অধ্যায়-১)
লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ২১ আগস্ট, ২০১৩, ০৭:৩১:৩৪ সন্ধ্যা
মূল: শহীদ ইউসুফ ইয়েরী
ভাবান্তর: মঞ্জুর আশরাফ
প্রত্যেক আদর্শের দু'রকম উপাদান থাকে: একটি চিরন্তন (constants) এবং অপরটি পরিবর্তনশীল (variables) উপাদান। চিরন্তন উপাদানগুলো সময়, স্থান ও পাত্রভেদে কখন ও পরিবর্তিত হয়না। পক্ষান্তরে পরিবর্তনশীল উপাদানগুলো পরিস্থিতিভেদে অভিযোজিত বা পরিবর্তনীয়। উদাহরণস্বরূপ: নামাজ (সালাত) কি সময়, স্থান ও পাত্রভেদে পরিবর্তনশীল? না। কার্যপ্রণালী ছাড়াও প্রকৃতিতে যেমন আমাদের শরীর মানব-সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে যেরকম রয়েছে - আমাদের প্রভুও যেমন আদি-অনন্ত - তেমনি বিশ্ব ব্রম্মান্ডে বিভিন্ন চিরন্তন উপাদান রয়েছে।
পরিবর্তনীয় উপাদানের উদাহরণ হিসেবে খেলাফত গঠন প্রক্রিয়াকে চিহ্নিত করা যায়।
বর্তমান সময়ের প্রয়োজনীয় একটি বিষয় হল: আল্লাহর পথে জিহাদের চিরন্তন বিষয় সমূহ তুলে ধরা। লোকদেরকে তা স্মরণ করিয়ে দেয়া। এটি গুরুত্বপূর্ন একারনে যে, বর্তমান সময়ের অনেক মানুষ দেখা যায় যারা জিহাদের চিরন্তন দিকগুলোকে পরিবর্তনীয় হিসেবে দেখানোর বা প্রমানের চেষ্টা করে থাকেন।তাদের উদ্দেশ্য থাকে জিহাদের চিরন্তন বিষয়গুলো অনুসরণ না করার জন্য খোড়াযুক্তি তৈরী করা। ফলত জিহাদের তাত্পর্য অনুধাবন ও অংশগ্রহণ থেকে মুসলমানদের দুরে সরে আসার পক্ষেই তাদের সর্বত প্রয়াস চলে থাকে।
অধ্যায় -১:
"প্রথম অপরিবর্তনীয় বিষয়: জিহাদ কেয়ামত (বা শেষ দিবসের আগ) পর্যন্ত চলবে"।
সমগ্র বিশ্ব ইসলামের একটি ইবাদতের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়াশীল। সবাই ওই ইবাদতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সেই ইবাদতটি হল: আল্লাহর পথে জিহাদ। অনেক দেশ/জাতি, প্রধানত পরাশক্তিসমূহ বিভিন্ন ফ্রন্ট সমূহকে (যেমন ধর্মভিত্তিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, মিডিয়া, প্রচার মাধ্যম, ইত্যাদি) উজ্জীবিত বা প্রভাবিত করছে ইসলামের একটি বিষয়ের বিরুদ্ধে। সেটি হল আল্লাহর পথে জিহাদ (জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ)।
ধর্মীয় শক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি যে, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইল একত্রিতভাবে ইসরাইল রাষ্ট্রের জন্য কাজ করছে ধর্মীয় উদ্দেশে: মসিহ এর উত্তরসুরী হিসেবে।
রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি, সারা বিশ্বে কুটনৈতিক কার্যক্রম সচল রয়েছে জিহাদের বিরুদ্ধে - যাকে তারা 'নামকরণ' করেছে 'ইসলামী সন্ত্রাসবাদ (terrorism)'।
বিশ্বের প্রতিটি সরকার - মুসলিম বা অমুসলিম - একত্রিতভাবে ইসলামী জীবনাদর্শ তথা জিহাদের বিরুদ্ধে উন্মুক্ত যুদ্ধ ঘোষণা করার মাধ্যমে মানবিকতা, অধিকার, ইত্যাদি চুর্ন বিচুর্নের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়াশীল রয়েছে নিরত। মিডিয়া বা তথ্য জগতর এসকল সরকার চমকপ্রদ ভুমিকা রেখে চলেছে জনগনকে ধোকা দেয়ার মাধ্যমে। অনবরত মিথ্যাচার চালাচ্ছে ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে। ইসলামকে বিকৃতভাবে তারা তুলে ধরছে।
১.১ জিহাদের বিরুদ্ধে 'তারবিয়াত' (প্রশিক্ষণ) কে দাড় করানো - এটা কি সঠিক যুক্তি?
আল্লাহ তায়ালা বলেন, "তোমাদের যুদ্ধ করার হুকুম দেয়া হয়েছে এবং তা তোমাদের কাছে অপ্রীতিকর ৷ হতে পারে কোন জিনিস তোমরা পছন্দ করো অথচ তা তোমাদের জন্য খারাপ ৷ আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না।" (বাকারা: ২১৬)
এই আয়াতটি মুসলমানদের জন্য জিহাদ করার জন্য আদেশ বা হুকুম স্বরূপ।
অনেক মুসলিম বা ইসলামী সংগঠন বলে থাকেন, জিহাদের ' তারবিয়াত' বা ট্রেনিং অবশ্যই করতে হবে।যে উপায়ে তারা তথ্য দেন তা হল: 'তারবিয়াত' হল জিহাদের অপরিহার্য পূর্বশর্ত। অনেকে বলে থাকেন, আমরা মাক্কীযুগের সম-পর্যায়ের অবস্থায় জীবনযাপন করছি। এজন্য জিহাদ/যুদ্ধ অসম্ভব। এটি কি যুক্তিযুক্ত?
বিষয়টিকে আমরা ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে পারি। একজন মানুষ যদি রমজান মাসে ইসলাম গ্রহণ করেন, আপনি কি তাকে আগে বলবেন যে আপনার তারবিয়াত/ধর্মীয় ট্রেনিং নিতে হবে রোজা রাখার পূর্বে?
আপনি কি তাকে বলবেন যে আমরা মাক্কি যুগে বসবাস করছি - এজন্য আপনার রোজা রাখা প্রযোজ্য নয়? আপনার আরও ১৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে রোজা রাখার পূর্বে? কারণ নবুওতের ১৫ বছরের মাথায় রোজা বাধ্যতামুলক করে আল্লাহর আদেশ নাজিল হয়েছিল। এজন্য ১৫ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর যথেস্ট তারবিয়াত বা ট্রেনিং হয়েছে বিধায় রোজা পালন সম্ভব এমন যুক্তি কি দিবেন? প্রকৃত পক্ষে এমন খোড়া যুক্তি কেউ ই দেয় না।
যদি তাই ই হয় তবে আল্লাহর পথে যুদ্ধে বা জিহাদের বিরুদ্ধে আমরা একই কথা কেন বলি?
লক্ষ্য করুন: আল্লাহর পথে জিহাদের নির্দেশ এবং রোজা পালনের নির্দেশের মাঝে কোন শাব্দিক বা মূলগত কোন পার্থক্য আছে কি?
বাকারা ১৮৩ আয়াতে এসেছে:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ
হে ঈমানদাগণ! তোমাদের ওপর রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছে ....
অন্যদিকে বাকারা ২১৬ আয়াতে এসেছে:
كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ وَهُوَ كُرْهٌ لَّكُمْ
"তোমাদের যুদ্ধ করার হুকুম দেয়া হয়েছে এবং তা তোমাদের কাছে অপ্রীতিকর ৷ ..."
দুটি নির্দেশ ই সুরা বাকারাতে এসেছে ।রোজা তোমাদের উপর বাধ্যতামুলক করা হল এবং যুদ্ধ ও তোমাদের উপর বাধ্যতামুলক করা হল। অতএব, কিভাবে আমরা এ দুটো নির্দেশের মাঝে বৈষম্য নিয়ে আসি?
প্রকৃতপক্ষে রোজা আল্লাহর পক্ষ থেকে ফরজ করা হয়েছিল জিহাদ ফরজ হওয়ার পরে। রোজার নির্দেশ এসেছিল নবুওতের ১৫ বছরের মাথায়। অন্যদিকে জিহাদের নির্দেশ এসেছিল ১৩ বছরের মাথায়। এই দুই বছরের ব্যবধান কিভাবে হল? অতএব, যুক্তির র আলোকে আমাদের ঐসব লোকদের বলা উচিত যে, রোজা রাখার পূর্বে তাদের অনেক তারবিয়াত করা প্রয়োজন যদি তারা জিহাদের আগে তারবিয়াত করতে বলেন!
আমরা কিভাবে জিহাদের পূর্বে পর্যাপ্ত তারবিয়াত করতে বলি যা রাসুলুল্লাহ (স) বলেন নি?
একজন মুসলমান হওয়ার পর তারা কি বলে থাকেন যে তার (ওই নও-মুসলিমের) কোন শায়খের অধীনে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত রোজা রাখার পূর্বে? ওই নও-মুসলিমের আরবি শেখা উচিত বা অধ্যয়ন করা উচিত সর্বাগ্রে? তবে কিভাবে জিহাদে অংশগ্রহনের পূর্বে আমরা ঐসব পূর্বশর্ত জুড়ে দেই অবলীলায়?
আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, আমর ইবনে আক্য়াম (রা) এর জাহলি যুগে একটি ঘোড়ার আস্তাবল ছিল। ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য ঘাটি হিসেবে লালন পালন করত। একারণে সে ইসলাম গ্রহণ করা পছন্দ করত না। ওহুদ যুদ্ধের দিন সে এসে জিজ্ঞাসা করল আমার চাচাত ভাইগণ কই ? লোকেরা বলল তারা ওহুদের যুদ্ধে গিয়েছে। তখন সে তার যুদ্ধাস্ত্র ও পোশাক পড়ে ঘোড়ায় চড়ে যুদ্ধের ময়দানে যাত্রা করল। মুসলমানরা তাকে যুদ্ধের ময়দানে দেখতে পেলে বললেন, 'হে আমর! তুমি কি আমাদের পক্ষে লড়বে নাকি বিপক্ষে লড়বে?' আমর বললেন, 'আমি সবেমাত্র ইমান এনেছি। তারপর সে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করল এবং আহত হল। তাকে আহত অবস্থায় পরিবারে কাছে নিয়ে যাওয়া হল। তখন সাদ ইবনে মুয়াজ (রা) উপস্থিত হয়ে তার ভাগ্নিকে বললেন, ' তুমি তোমার ভাইকে জিজ্ঞাসা কর সে কি গোত্রীয় টানে যুদ্ধ করেছে নাকি আল্লাহর গজবের ভয়ে লড়েছে? ' তখন আমর নিজেই বলে উঠলেন, 'বরং আল্লাহর গজবের ভয়েই জিহাদ করেছেন।' অতপর সে মারা গেল এবং জান্নাতে প্রবেশ করল এমন অবস্থায় যে আল্লাহর উদ্দেশে একবেলা নামাজ আদায় করতে হলনা। (আবু দাউদ: ২৫২৯)
উপরোক্ত হাদিস অনুযায়ী আমর ইবনে আক্য়াম (রা) যখন মুসলমান হয়েছিলেন, রাসুল (স) কি তাকে কুরআন ও হাদিস অধ্যয়ন করতে বলেছিলেন? তিনি এমন কিছুই বলেননি। বরং আল্লাহর পথে যুদ্ধ করেছিলেন এবং শহীদ হয়েছিলেন। তিনি সর্বোচ্চ স্থান যা একজন মুসলমানের পক্ষে অর্জন করা সম্ভব তাই পেয়েছিলেন।
একজন ইহুদির অপেক্ষা আর অধিক তারবিয়াত আর কার প্রয়োজন? লোকেরা বলে থাকে জিহাদের পূর্বে অনেক তারবিয়াত প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে একজন ইহুদির আরও তারবিয়াতের প্রয়োজন। বুখায়রিক ওহুদের যুদ্ধের ময়দানে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং শহীদ হয়েছিলেন। নবীজি (স) বলেন, বুখায়রিক ইহুদিদের মাঝে সর্বোত্তম। তিনি কোন নিবিড় আধাত্মিক প্রশিক্ষণ নেন নি। তবুও নবীজি (স) বললেন, বুখায়রিক ইহুদিদের মাঝে সর্বোত্তম। কেন? কারণ তিনি যুদ্ধের ময়দানে লড়েছিলেন এবং শহীদ হয়েছিলেন।
এ প্রেক্ষাপট গুলো আলোচিত হচ্ছে তারবিয়াত কে ছোট করে দেখানোর জন্য নয়। বরং এ উপলব্ধি জাগ্রত করা যে, তারবিয়াতকে জিহাদের পূর্বশর্ত হিসেবে তুলে ধরা অর্থহীন।
কি কারণে অনেক মুসলমান জিহাদের পূর্বশর্ত হিসেবে তারবিয়াতকে দাবি করে থাকেন?
কারণ আল্লাহ বলেন,
“"তোমাদের যুদ্ধ করার হুকুম দেয়া হয়েছে এবং তা তোমাদের কাছে অপ্রীতিকর ৷” (বাকারা: ২১৬)
এটাই মূল কারণ। অর্থাত মানুষ আল্লাহর পথে জিহাদকে অপছন্দ করে। পরন্তু অন্য মানুষকে জিহাদ থেকে দুরে সরিয়ে রাখতে কারণ ও খোরাযুক্তি বের করার চেষ্টা করে থাকে। এজন্যই তারা বলে থাকে আমাদের এ অবস্থায় তার্বিয়াতের বেশি প্রয়োজন অথবা শত্রু আমাদের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী। এ বিষয়গুলো মূলত আমাদের মানবীয় দুর্বলতারই পরিচায়ক যা মূলত ফিতরাতের বৈশিস্ট। আল্লাহ ও একই কথা বলেছেন ওই আয়াতাংশে।
যুদ্ধের বাস্তবতা এমন ই এক বিষয় যা অধিকাংশ মানুষই পছন্দ করেনা। সাহাবীদের সময়ে এটি একটি কঠিন সিদ্ধান্ত এবং কাজ ছিল যা এখন ও কঠিন সিদ্ধান্ত ও কাজ হিসেবেই পরিগণিত। যার পুরস্কারও সর্বোচ্চ।
১.২ সালাহউদ্দিন আইউবী (রহ) (১১৩৮ - ১১৯৩ ইং) এর সময়কালীন কিছু আলেমদের ভুমিকা:
সালাহউদ্দিন আইউবী (রহ) এর সময়ে তিনি তার সেনাবাহিনীতে সৈন্য সামন্ত জোগার করছিলেন এবং বাস কিছু আলেম ও তাদের ছাত্ররাও যোগদান করেছিলেন। একটি খবর ছড়িয়ে পড়েছিল যে ক্রুসেডাররা সমগ্র ইউরোপ জুড়ে সৈন্য সামন্ত জোগার করতে সফল হয়েছিল। তিনটি প্রধান বাহিনীর পরিচালনায় ছিল সে সময়ের তিন পরাশক্তি: রিচার্ড দা লায়ন হার্ট, ফ্রান্সের রাজা ফিলিপ এবং জার্মানির রাজা ফ্রেডরিক। শুধুমাত্র ফ্রেডরিকের বাহিনীতেই ছিল ৩০০,০০০ সৈন্য। যখন ওই সকল আলেমরা এ তথ্য (শত্রু সংখ্যার কল্পনাতীত আধিক্য) জানতে পারেন, তারা সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর সেনাবাহিনী ছেড়ে চলে যান। এই আলেম সমাজ জানতেন যে তাদের যুদ্ধ করা উচিত। তারা জানতেন জিহাদের বিস্তারিত হুকুম -আহকাম তথা নির্দেশনা, শর্তাবলী। তবু শুধুমাত্র জানার সাথে সাথে মানার বিষয় (জিহাদ/যুদ্ধে অংশগ্রহণ) তথা হেদায়েতের বিষয় জড়িত নয়।
আল্লাহতায়ালা সুরা আরাফে বলেন,
"১৭৫) আর হে মুহাম্মাদ! এদের সামনে সেই ব্যক্তির অবস্থা বর্ণনা করো যাকে আমি দান করেছিলাম আমার আয়াতের জ্ঞান৷ কিন্তু সে তা যথাযথভাবে মেনে চলা থেকে দূরে সরে যায়৷ অবশেষে শয়তান তার পিছনে লাগে৷ শেষ পর্যন্ত সে বিপথগামীদের অন্তরভুক্ত হয়েই যায়৷
১৭৬) আমি চাইলে ঐ আয়াতগুলোর সাহায্যে তাকে উচ্চ মর্যাদ দান করতাম কিন্তু সে তো দুনিয়ার প্রতিই ঝুঁকে রইল এবং নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করলো৷ কাজেই তা অবস্থা হয়ে গেল কুকুরের মত , তার ওপর আক্রমণ করলেও সে জিভ ঝুলিয়ে রাখে আর আক্রমণ না করলেও জিভ ঝুলিয়ে রাখে৷ যারা আমার আয়াতকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে তাদের দৃষ্টান্ত এটাই৷ তুমি এ কাহিনী তাদেরকে শুনাতে থাকো, হয়তো তারা কিছু চিন্তা -ভাবনা করবে৷"
উপরোক্ত কোরানের গল্পটি একজন বিদ্বান বা জ্ঞানী ব্যক্তির যিনি আল্লাহর হুকুম আহকাম জানতেন কিন্তু অনুসরণ করতেন না। কেন? কারণ আল্লাহ বলেন,
"সে তো দুনিয়ার প্রতিই ঝুঁকে রইল এবং নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করলো৷ "
আল্লাহ এই জালেমদের উপমা দিয়েছেন 'কুকুরের' মাধ্যমে। এজন্য শুধুমাত্র জ্ঞান অর্জন ই পর্যাপ্ত নয়। পরন্তু তা কাউকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাচাবে না। আমাদের কাজের মাধ্যমে তার (জ্ঞানের) বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে।
অনেকে বলে থাকেন, কোন কাজ করার জন্য কোন ফতোয়া প্রয়োজন নাই। ফলশ্রুতিতে তারা সেই কাজ করেন না। এরূপ কাজের মাধ্যমে বিচার দিবসে পরিত্রান পাওয়া যাবেনা। আমরা যদি জানি একটি বিষয় চিরন্তন সত্য, তখন তা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। বিদ্বান ব্যক্তিরা তা অনুসরণ করুক বা নাই করুক।
১ .৩ আহলে কিতাবধারীদের সাথে একজন মুসলিমের সম্পর্ক:
কেউ কেউ মনে করে থাকেন যে, আহলে কিতাবধারীদের সাথে আমাদের (মুসলমানদের) সম্পর্ক হতে হবে শান্তিময় এবং আলোচনাভিত্তিক। কিন্তু আল্লাহ বলেন,
"আহলি কিতাবদের মধ্য থেকে যারা আল্লাহ ও পরকালের ঈমান আনে না যা কিছু আল্লাহ ও তার রসূল গণ্য করেছেন তাকে হারাম করো না এবং সত্য দীনকে নিজেদের দীনে পরিণত করে না, তাদের সাথে যুদ্ধ করো যে পর্যন্ত না তারা নিজের হাতে জিযিয়া দেয় ও পদানত হয়ে থাকে৷" (তওবা: ২৯)
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন:
"অতএব, হারাম মাসগুলো অতিবাহিত হয়ে গেলে মুশরিকদের যেখানে পাও হত্যা করো এবং তাদের ধরো, ঘেরাও করো এবং প্রত্যেক ঘাঁটতি তাদের জন্য ওঁৎ পেতে বসে থাকো৷ তারপর যদি তারা তাওবা করে, নামায কায়েম করে ও যাকাত দেয়, তাহলে তাদের ছেড়ে দাও৷ আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়৷" (তওবা: ৫)
উপরোক্ত নির্দেশ তথা ইবাদত যার বিরুদ্ধে কাফেররা যুধ ঘোষণা করে তাকে 'সন্ত্রাসবাদ' বলে সংগায়িত করে এবং এর অনুসারীদেরকে 'সন্ত্রাসী', 'মৌলবাদ', প্রতিক্রিয়াশীল, extremist আখ্যা দেয়। অন্যদিকে মুনাফিকরা কাফেরদেরকে নিম্নোক্ত উপায়ে সাহায্য করে থাকে:
(১) তারা বলে থাকে জিহাদ রক্ষনাত্মক - আক্রমনাত্মক নয়!
(২) জিহাদ শুধুমাত্র এক মুসলিম দেশকে মুক্ত করার জন্যই বৈধ।
(৩) জিহাদ শুধুমাত্র একজন ইমামের অনুমতি ও নির্দেশ অনুযায়ী সম্পন্ন করা বৈধ।
(৪) বর্তমান সময়ে ভৌগলিক শান্তিময় পরিবেশে (!) জিহাদ যৌক্তিক নয়।
দুর্ভাগ্গজনকভাবে আমাদের অনেক স্কলার জিহাদ বিষয়ক উপরোক্ত ভুল তথ্যগুলো প্রচার ও প্রসার করে থাকে। কিন্তু আমরা 'জিহাদ' এর সংগা সাহাবীদের জীবনী থেকেই মূল্যায়ন করতে একমাত্র আন্তরিক যারা ছিলেন মহানবী (স) এর অবর্ণনীয় প্রচেষ্টার ই ফলশ্রুতি। পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুসরণ থেকে জিহাদের সংগা নির্ণয়ে আমরা মোটেও আন্তরিক নই। আমাদের সংস্কৃতি তথা ইসলামিক ঐতিহ্য জিহাদের সংগা নিরুপনের জন্য যথেস্ট। কোন অমুসলিম বা মুসলিম নামধারী পরাশক্তি বা কাফেরদের আগ্বাবহ পুতুলদের থেকে জিহাদের তাত্পর্য, তত্ব ও প্রয়োজনীয়তা নিরুপনের বিন্দুমাত্র প্রয়োজন নেই।
১.৪ শেষ দিবস পূর্ব পর্যন্ত জিহাদের যৌক্তিকতা বিষয়ক মৌলিক তথ্য:
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
হে ঈমানদারগণ ! তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি দীন থেকে ফিরে যায়, (তাহলে ফিরে যাক ), আল্লাহ এমনিতর আরো বহু লোক সৃষ্টি করে দেবেন, (i) যাদেরকে আল্লাহ ভালবাসেন এবং (ii) তারা আল্লাহকে ভালবাসবে, (iii) যারা মুমিনদের ব্যাপারে কোমল ও (iv) কাফেরদের ব্যাপারে কঠোর হবে, (v) যারা আল্লাহর পথে প্রচেষ্টা ও সাধনা করে যাবে এবং (vi) কোন নিন্দুকের নিন্দার ভয় করবেনা ৷ এটি আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে চান তাকে দান করেন৷ আল্লাহ ব্যাপক উপায় উপকরণের অধিকারী এবং তিনি সবকিছু জানেন৷
(মায়েদা: ৫৪)
এই আয়াতটি শেষ দিবসের পূর্ব পর্যন্ত জিহাদের যৌক্তিকতা বিষয়ক মৌলিক তত্ব। এখানে একটি বিষয় নির্দেশিত হয়েছে যা হল 'সুন্নাহ রাব্বানিয়াহ' অর্থাৎ আল্লাহর সুন্নাত এবং এটি অপরিবর্তনশীল। যারা উপরোল্লিখিত ৬টি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করবে না তাদের পরিবর্তে আল্লাহ এমন এক দলকে নিয়ে আসবেন যারা ওই দায়িত্বগুলো পালন করবেন। লক্ষনীয় যে এই নির্দেশনা সাহাবীদের ব্যপারে এসেছিল। এটি বুঝায় যে, আল্লাহ তায়ালা কারো সাথে কোনো বিশেষ সম্পর্ক তথা স্বজনপ্রীতি রাখেন না। ইহুদিরা মনে করত যে তারা হল আল্লাহর বেছে নেয়া জাতি - কিন্তু তারাও আল্লাহ কর্তৃক অভিশাপগ্রস্ত হয়েছে উল্লিখিত দায়িত্বগুলো সম্পন্ন না করার জন্য।
অনেক ইসলামী জামায়াত তথা সংগঠন দাবি করেন যে তাদের জামায়াত গত ২০-৩০ বছর ধরে টিকে আছে - অতএব তারা সঠিক পথে আছে। এটি কিন্তু অযৌক্তিক এ আয়াতের প্রেক্ষিতে। যে মুহুর্তে আমরা উল্লিখিত দায়িত্বগুলো পরিত্যগ করব আল্লাহ আমাদের পরিবর্তে অপর একটি দল বা গোষ্ঠিকে নিয়ে আসবেন তথা দায়িত্ব দিবেন যারা ওই কাজগুলো সম্পন্ন করবেন এবং তারাই সঠিক পথ প্রাপ্ত। জীবনে শেষ যে কাজ করি তাই গুরুত্বপূর্ন। আমরা যে অবস্থায় (যে কাজের উপর) মারা যাই - ভাল বা মন্দ হোক - তাই শেষ দিবসে আমাদের অবস্থান নির্ধারন করবে। গুনাহের উপর মৃত্যু বরণ করা ইসলামের দৃষ্টিতে এক ঘৃণ্য কাজ।
অনেকে একটি প্রশ্ন করে থাকেন - আমাদের চারপাশে অনেক মুসলিম জামায়াত বা দল আছে যোগদানের জন্য। কোন দলে আমরা যোগদান করব? আমরা যদি সঠিক জায়গাতে লক্ষ্য করি তবে সন্দিহান হবনা। উত্তর অবশ্যই পাব। রাসুল (দ) আমাদের 'আত্তাইফাহ আল মনসুরা' (বিজয়ী দল) এর কথা বলেছেন। তিনি শুধু সেই দলের পরিচয় 'বিজয়ী' হিসেবেই দেননি বরং ওই দলের গুনাগুনও সবিস্তারে বলেছেন। যে কেউই নিরপেক্ষ মনে এই গুনগুলো পর্যবেক্ষন করবেন সেইই এবিষয়ে পুন: প্রশ্ন করার প্রয়োজন বোধ করবেন না। আমরা কোরআন থেকেই এ গুনগুলো দেখার চেষ্ঠা করি। এই (আয়াতে মায়েদা: ৫৪) আল্লাহ বলেছেন আমাদের পরিবর্তে (যদি নিন্মোক্ত কাজ সম্পাদন না করি) এমন একটি দল নিয়ে আসবেন
(১) যাদের আল্লাহ ভালবাসেন,
(২) তারা আল্লাহকে ভালবাসবে,
এখানে (১) ও (২) নং গুন্ দুটির উপস্থিতি আমরা কখন ই কোন দল বা মানুষের মাঝে ভালভাবে দেখতে বা বুঝতে পারব না। কারন এ দুটি গুন দৃশ্যমান নয়। কিন্তু তারা যদি এ দুটি গুন অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করেন, তবে তারাই প্রকৃত আল্লাহর প্রেমিক এবং আল্লাহও তাদের ভালবাসবেন।
(৩) যারা মুমিনদের ব্যাপারে কোমল: অর্থাৎ তারা ঈমানদার তথা বিশ্বাসীদের প্রতি বিনয়ী এবং কোমল। ঈমানদারদের প্রতি এরা সহমর্মী। মুসলিমদের (সারা বিশ্বের) প্রতি কুফরী শক্তি কি আচরণ করছে তা তারা প্রতিনিয়ত খেয়াল করছেন ও ব্যথিত হচ্ছেন। বিশ্বজুড়ে ঈমানদারদের সাথে জালিম শক্তি কি ব্যবহার করছে তার খবরাখবর ও তারা প্রতিনিয়ত রাখছেন। বিশ্বের যেকোনো প্রান্তরের যেকোন মুসলিম তার ভাই অথবা বোন্। যদি প্রাচ্যর কোন দেশের কোন মুসলিম ভাই মজলুম হন অথবা শহীদ হন, পাশ্চাত্যের ওই ভাই দায়িত্ববোধ অনুভব করেন তার প্রতিরোধের বা প্রতিকারের জন্য। এই ভাইয়েরা যখন মুসলিম ভাই-বোনদের সাথে রুড় আচরনের ব্যপারে কোন খারাপ ঘটনা শুনে থাকেন তখন অতি দ্রুত এর উত্তর দিতে এবং প্রকৃতপক্ষে সেখানে যাওয়ার জন্য উদ্যত হন। তারা একান্ত আন্তরিকভাবে ওই সকল মুসলিম ভাই-বোনদের রক্ষার্থে প্রাণ উত্সর্গ করতেও দ্বিধান্বিত হন না। তারা আন্তরিকভাবে অর্থ সম্পদ ওই সকল ভাইবোনদের জন্য উজার করে খরচ করতে সচেস্ট থাকেন। বিপরীতপক্ষে আমরা অনেক মুসলমানদের দেখতে পাই যারা অন্যান্য মুসলমানদের ব্যপারে প্রতিক্রিয়াশীল এবং কুটিল আচরণে পারঙ্গম। তারা রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে 'ফতোয়া' প্রদানে সিদ্ধহস্ত নিষ্ঠাবান মসলমানদের গ্রেফতার ও নির্যাতনের জন্য। আমরা দেখি যে তারা কুফরের সাথে সহাবস্থানের মাধ্যমে আল্লাহর পথে প্রচেষ্টারত ঈমানদারদের ব্যপারে গোয়েন্দাগিরিতে, প্রতিরোধে এবং যুদ্ধ করতে অগ্রসরমান।
(৪) কাফেরদের ব্যাপারে কঠোর হবে:
প্রকৃতপক্ষে তারা কুফরী-শক্তি তথা কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠিন ও কঠোর আচরণের অধিকারী। তারা কাফেরদের শোষন নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তরিকভাবে দৃঢ়চেতা এবং প্রতিবাদী। এরা কুফরী শক্তি, মুনাফেক অথবা অবিশ্বাসীদের ভিত-সন্ত্রস্ত করতে অগ্রসরমান। আল্লাহ বলেন
"আর তোমরা নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী সর্বাধিক পরিমাণ শক্তি ও সদাপ্রস্তুত ঘোড়া তাদের মোকাবিলার জন্য যোগাড় করে রাখো৷ এর মাধ্যমে তোমরা ভীতসন্ত্রস্ত করবে আল্লাহর শত্রুকে , নিজের শত্রুকে এবং অন্য এমন সব শত্রুকে যাদেরকে তোমরা চিন না৷ কিন্তু আল্লাহ চেনেন৷ আল্লাহর পথে তোমরা যা কিছু খরচ করবে তার পূর্ণ প্রতিদান তোমাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হবে, এবং তোমাদের প্রতি কখনো জুলুম করা হবে না"৷ (আনফাল: ৬০)
বিপরিতপক্ষে কিছু মুসলমান দেখা যায় যারা অন্যান্য মুসলমানদের ব্যপারে কুটিল আচরণের অধিকারী অথচ কাফেরদের ব্যপারে কোমল ও নরম মানসিকতা সম্পন্ন। এ ব্যপারে তারা 'ইসলামী দাওয়াত' এর প্রগ্গা / হেকমতকে ওজর হিসেবে পেশ করে থাকেন। তারা কাফেরদের মুসলমান হিসেবে পরিবর্তনের নিয়্যতে প্রচেষ্টারত এই অজুহাত দাড় করিয়ে থাকেন। বাস্তবিকপক্ষে এটি সঠিক নয়। তারা কাফেরদের ইসলামের প্রকৃত স্বরূপ কি - তা পেশ করেন না। বরঞ্চ ইসলামের একটি ভুল ধারনাই তারা কাফেরের সামনে উপস্থাপন করে থাকেন।
(৫) যারা আল্লাহর পথে প্রচেষ্টা ও সাধনা করে যাবে: এ বিষয়টা কি খুঁজে বের কর কঠিন? কারা বা কোন দল একাজটি করে থাকেন?
(৬) কোন নিন্দুকের নিন্দার ভয় করবেনা: অথবা কোনো অপবাদের ভয় করেন না। মুনাফিকরা সবসময়েই তাদের দোষ বর্ণনা করে বেড়ায়। আবার আবশ্যকভাবে কুফরী শক্তি তাদের বিরুদ্ধে বিকৃতভাবে পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশন, রেডিও, আলোচনা, ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতিনিয়ত অপ্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু ওই ঈমানদার ভাই গন কি এসব নিন্দার আদৌ পরোয়া করে থাকেন? তারা কোন পরোয়াই করেন না সবচেয়ে জনপ্রিয়্পত্রিকা বা টিভি চ্যানেল তাদের বিরুদ্ধে কি বলে থাকে সে বিষয়ে। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা যা করছেন আল্লাহর প্রদত্ত পথ অনুযায়ী করছেন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করছেন - এর বাইরে আর কোন অপবাদ ই (সরকার বা পরাশক্তির নিন্দা) তাদের বিচলিত করতে পারে না।
জাহেলিয়াতের যুগে সাদ বিন মুয়াজ (রা) বনু করায়্জার সহযোগী ছিলেন। তিনি যখন মুসলমান হলেন তখন তিনি ওই গোত্রের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন - কারন ইসলাম কোন মুসলমান ব্যক্তির কাছে কেবলমাত্র আল্লাহ, তার নবী (দ) এবং মুমিনদের সাথে বিশ্বস্ত থাকাই প্রত্যাশা করে। পরবর্তিতে যখন .বনু করায়্জা আত্মসমর্পণ করে মুসলমানদের কাছে (উল্লেখ্য ওই গোত্রের চুক্তিভঙ্গ পুরো মুসলমানদের বিপর্যয়ের কারন হয়েছিল।), তখন সাদ বিন মুয়াজ (রা) এর কাছে বিচার চেয়েছিল (অর্থাৎ তাকেই বিচারক হিসেবে মেনে নেই ওই গোত্র) পূর্ব বন্ধুত্বের সুযোগে। আল-আওস গোত্র সাদের কাছে বিচারের ক্ষেত্রে দয়া-প্রবন হতে অনুরোধ করেছিল। সাদ (রা) বলেন "এ মুহুর্তে আমি নিন্দুকের নিন্দার কোন পরোয়া করবনা আল্লাহর সন্তুষ্টির স্বার্থে।" একথা শোনার সাথে সাথেই তারা জেনে গিয়েছিল যে তাদের পুরনো বন্ধুত্ব শেষ। সাদ ইহুদিদের বলেছিলেন তারা কি তার বন্ধুর (সাদ) ফয়সালা মেনে নিতে প্রস্তুত? তারা বল 'হা - তারা রাজি'।
ফয়সালা মানতে সাদ (রা) মুসলমানদের থেকেও সম্মতিসূচক জবাব পান। এরপর সাদ (রা) বলেন "আমার বিচার হল বনু করায়্জার সকল পুরুষকে হত্যা করা হব এবং তাদের মহিলাগণ, শিশু, সম্পত্তি মুসলমানদের আয়ত্বে আসবে।" মহানবী(দ) বলেন, "সাদ, তোমার বিচার হল সাত আসমানের উপরে আসীন আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বিচার"।( অর্থাৎ সাদ (র) এর বিচারে আল্লাহ তায়ালারসন্তুষ্টি ছিল।) ওই দিন ৯০০ ইহুদি হত্যা করা হয়েছিল। কেন এটা করা হয়েছিল? কারন তারা চুক্তিভঙ্গ করেছিল।
এখন লক্ষ্য করুন, 'আত তায়েফা আল মনসুরা' তথা বিজয়ী দলের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কিত হাদিস থেকে ঈমানদারদের দলের বিশেষত্বসমুহ নিন্মরূপ:
(১) তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে থাকেন,
(২) তারা একত্রিতভাবে একটি জামায়াত তথা সংগঠনে কাজ করে থাকেন,
(৩) কেউ বা কোন দল যদি তাদের সাথে ঐক্যমত পোষণ না করে অথবা তাদের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করে - অথবা মুসলিম বা অমুসলিমগণ তাদের সাথে যেই অপবাদই প্রচার করুক না কেন কোন কিছুই তাদের (ওই দলের) কোন ক্ষতি করতে পারে না তথা তাদের বিচলিত করতে পারে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের স্বয়ং যাদের সংরক্ষণের তথা দেখ-ভালের দায়িত্ব নিয়েছেন এবং ওয়াদা করেছেন - কুফরী শক্তি (বা পরাশক্তি) যতই ওই দলের ঈমানদারদের গ্রেফতার করুক না কেন তাদের অবিরাম প্রচেষ্টা তথা জিহাদ চলবেই।
আমরা ফিরে যাই পুনরায় মায়েদার ৫৪ নং আয়াতে। আল্লাহ এ আয়াতে 'ইউজাহিদুন' শব্দ ব্যবহার করেছেন। এর অর্থ তারা 'যুদ্ধ করছেন' (বর্তমান কাল). অন্যভাবে বলা যায় যে, যে মুহুর্তে আমরা এই আয়াতটি পড়ি সেই মুহুর্তেই পৃথিবীর কোথাও না কোথাও কেউ না কেউ আল্লাহর পথে জিহাদে নিয়োজিত আছেন। এটা বুঝায় যে, জিহাদ চলতেই থাকবে শেষ দিবসের আগ পর্যন্ত।
আল্লাহ বলেন "তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাকো যতক্ষণ না ফিতনা নির্মূল হয়ে যায় এবং দীন একমাত্র আল্লাহর জন্য নিদিষ্ট হয়ে যায় ৷ তারপর যদি তারা বিরত হয় তাহলে জেনে রাখো যালেমদের ছাড়া আর করোর ওপর হস্তক্ষেপ করা বৈধ নয় ৷" (বাকারা ১৪৩)
এই আয়াতে 'ফিতনা' অর্থ 'কুফর'।
সুতরাং এই আয়াত বোঝায় ততক্ষণ যুদ্ধে করতে হবে যতক্ষণ না কুফরী বিলুপ্ত হয়। আমরা জানি আল্লাহর রাসুলের (সা) হাদিস থেকে যে কুফরী শেষ দিবসের আগ পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে। অতএব সাধারন যুক্তির আলোকে জিহাদ ও শেষ দিবসের পূর্ব পর্যন্ত চলবে - যেহেতু আল্লাহ ঈমানদারদের বিশ্ব থেকে কুফরী শক্তি মুলোত্পাটনের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ তথ্য অনুযায়ী উল্লেখ করা যায় যে জিহাদ শেষ হবে যখন হজরত ঈসা (আ) সমগ্র বিশ্ব শাসন করবেন। কেন? কারণ ঈসা (আ) কুফরীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন এবং বিশ্বের কথাও কোন অবিশ্বাসী থাকবে না। ঈসা (আ) এর ইন্তেকালের পর আর কোন জিহাদ থাকবে না কারণ এর পর সময়াবর্তে আল্লাহ বিশ্বাসীদের প্রাণ সংহার করবেন এবং শুধুমাত্র অবিশ্বাসীদের পৃথিবীতে অবশিস্ট রাখবেন কেয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত। অধিকন্তু ইয়াজুজ এবং মাজুজের বিরুদ্ধেও কোন জিহাদ থাকবে না কারন শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালার অলৌকিক ক্ষমতা দ্বারাই তারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।
বিষয়: বিবিধ
৩৩৬৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন