আসহাবে কাহাফের গল্প এবং মৌলিক শিক্ষা

লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ২৯ জুলাই, ২০১৩, ১০:৫৪:৩৩ রাত

সুরা কাহাফের (১৮ নং সুরা) প্রথম গল্পটি আসহাবে কাহাফ (গুহাবাসী) দের নিয়ে - যারা অত্যাচারী ইসলাম-বিদ্বেষী শাসকের থেকে ইসলাম রক্ষার স্বার্থে এবং জীবন বাচাতে পালিয়ে পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নিয়েছিল।

ইসলাম পন্থীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশে শাসকের অমানবিক অত্যাচারে আল্লাহর সৈন্যদের কি করনীয় তা মূলত এই গল্পে বিবৃত। সেই দৃষ্টিভঙ্গিতেই এই নিবন্ধ রচিত। এ শিক্ষা সকল কালে ও স্থানের 'আসহাবে কাহাফদের' মত ইসলাম পন্থীদের হৃদয়ের শান্তি ও দিক নির্দেশনা দিক সেই দোয়া ই করছি।পরম করুনাময় তাদের সাহায্য করুন।

আয়াত ৯ - ১২ (প্রথম ৪ আয়াতে) আল্লাহ তায়ালা ভুমিকা জানাচ্ছেন। এর মাধ্যমে মূলত ইহুদিদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্চ্ছেন এবং পরবর্তিতে বিস্তারিত জানাচ্ছেন যা ইহুদিরা পর্যন্ত জানতে চায়নি বা আদৌ জানে না।

১০) যখন কজন যুবক গূহায় আশ্রয় নিলো এবং তারা বললোঃ হে আমাদের রব ! তোমার বিশেষ রহমতের ধারায় আমাদের প্লাবিত করো এবং আমাদের ব্যাপার ঠিকঠাক করে দাও৷”

﴿فَضَرَبْنَا عَلَىٰ آذَانِهِمْ فِي الْكَهْفِ سِنِينَ عَدَدًا﴾

১১) তখন আমি তাদেরকে সেই গূহার মধ্যে থাপড়ে থাপড়ে বছরের পর বছর গভীর নিদ্রায় মগ্ন রেখেছি৷

﴿ثُمَّ بَعَثْنَاهُمْ لِنَعْلَمَ أَيُّ الْحِزْبَيْنِ أَحْصَىٰ لِمَا لَبِثُوا أَمَدًا﴾

১২) তারপর আমি তাদেরকে উঠিয়েছি একথা জানার জন্য যে, তাদের দু দলের মধ্য থেকে কোনটি তার অবস্থান কালের সঠিক হিসেব রাখতে পারে৷

শিক্ষা ১:

"যখন কজন যুবক গূহায় আশ্রয় নিলো এবং তারা বললোঃ হে আমাদের রব ! তোমার বিশেষ রহমতের ধারায় আমাদের প্লাবিত করো এবং আমাদের ব্যাপার ঠিকঠাক করে দাও৷

প্রথম কাজ তারা করলেন : "গূহায় আশ্রয় নিলেন " (যা তাদের কর্ম তত্পরতা বুঝাচ্ছে)

দ্বিতীয় কাজ করল: "আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন" (যা তাদের আধ্যাত্মিক তত্পরতা বুঝাচ্ছে)

তাদের আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল ছিল। কিন্তু তাওয়াক্কুলের ধরন কি ছিল? উপরোক্ত দুটি কাজেরই সমাবেশ ছিল তাওয়াক্কুলের মাঝে। তারা ঘরে বসে থাকেনি কেবল! কিংবা কোন কিছু না করে শুধু দোয়াই করেনি এই আশায় যে আল্লাহ বুঝি তাদের বাঁচিয়ে রাখবেন! বরং নিজেদের সাধ্যমত প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন জীবন বাচাতে (পার্থিব কর্মতত্পরতা) এবং আল্লাহর কাছে প্রগার ভালবাসা আর আশায় দুই হাত তুলেছিলেন।

'দোয়া ঈমানদারদের জন্য অস্ত্র স্বরূপ' (আল-হাদিস)!

শিক্ষা ২:

﴿فَضَرَبْنَ.....ا

[তখন] আমি তাদেরকে সেই গূহার মধ্যে থাপড়ে থাপড়ে বছরের পর বছর গভীর নিদ্রায় মগ্ন রেখেছি৷

অর্থাত নিজেদের সব রকমের কর্মতত্পরতার সাথে সাথে আল্লাহর কাছে দোয়া করা ও চাওয়ার ফলশ্রুতিতে আল্লাহতায়ালা তাদের অভাবনীয় সাহায্য করলেন যা এখানে বিবৃত হয়েছে।

আপনি যদি আলাহর দিকে হেটে আসেন আল্লাহ আপনার দিকে দৌরে আসবেন। (হাদিসে কুদসী) .. অতএব আমরা যত বেশি আলাহ মুখী হব আল্লাহ অবস্যই আরও বেশি আমাদের সহায়তায় কঠিন বিপদে এগিয়ে আসবেন।

ঠিক একই শিক্ষার পুনরাবৃত্ত নিচের দুইটি আয়াতাংশে যেখানে দেখানো হয়েছে কিভাবে ঈমানদারদের কর্মতত্পরতার সাথে সাথে আল্লাহর সাহায্য অবধারিত হয়ে যাছে (সুবহানাল্লাহ) :

[এক] "তারা কয়েকজন যুবক ছিলো, তাদের রবের ওপর ঈমান এনেছিলো (যা কর্ম তত্পরতা বোঝায় ) এবং আমি তাদের সঠিক পথে চলার ক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়েছিলাম৷ (আল্লাহর সাহায্য বোঝায় )"

[দুই] আমি সে সময় তাদের চিত্ত দৃঢ় করে দিলাম (আল্লাহর সাহায্য বোঝায় ) যখন তারা উঠলো এবং ঘোষণা করলোঃ (ইসলামের দাওয়াতের মাধ্যমে কর্ম তত্পরতা বোঝায় ) .....

শিক্ষা ৩:

" ঘোষণা করলোঃ “[আমাদের] রব তো কেবল তিনিই যিনি পৃথিবী ও আকাশের রব৷ [আমরা] তাঁকে ছাড়া অন্য কোনো মাবুদকে ডাকবো না৷ যদি [আমরা] তাই করি তাহলে তা হবে একেবারেই অনর্থক৷

সুক্ষ্ম ভাবে লক্ষ্য করুন: [আমাদের], [আমরা], সর্বনাম কিভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। কেন [তোমাদের], [তোমরা] ব্যবহৃত হয়নি?

শিরক (আল্লাহ ছাড়া অন্যান্যদের উপাস্য মানা) তো ওই জাতির লোকেরা করত! আসবে কাহাফদের তো ওই জাতির লোকদের [তোমাদের], [তোমরা] এভাবে সম্বোধন করাই উচিত ছিল?

আসল কথা হল এটি একটি দাওয়াতি কাজের প্রজ্ঞারই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

[তোমাদের], [তোমরা] সম্বোধন করে যদি বলা হত তবে দেশবাসী আরও রেগে যেত - সেটাই অতি স্বাভাবিক। তাই দা'য়ী নিজকে দিয়ে উদাহরণ তৈরী করে শেষ ফলাফল হিসেবে শিরকের জন্য নিজকেই দোষী সাব্যস্ত করে (উদাহরণ হিসেবে) আসল বক্তব্য (দাওয়াত) অতি ভদ্রাচিত ভাবে সবাইকে জানাচ্ছেন। আরেকজনকে সরাসরি দোষী সাব্যস্ত না করে আন্তরিকতার সাথে, ভদ্র সভ্য উপায়ে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার এটি মূলত একটি মৌলিক পদ্ধতি যা আল্লাহ তুলে ধরেছেন।কঠিন পরিস্থিতিতে মজলুম মানুষদের ভদ্র আচরণ এবং আন্তরিকতার সাথে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার এক অসাধারণ উদাহরণ এবং শিক্ষা।

শিক্ষা ৪:

"১৫) তারপর তারা পরস্পরকে বললোঃ) “এ আমাদের জাতি, এরা বিশ্বজাহানের রবকে বাদ দিয়ে অন্য ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে৷ এরা তাদের মাবুদ হবার সপক্ষে [কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ] আনছে না কেন ? যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হতে পারে ? "

লক্ষ্য করুন: প্রমানের পক্ষে যুক্তিপেশ করা হচ্ছে। মূলত এটাই ইসলামের শক্তি। ইসলাম একটি যুক্তিভিত্তিক, লজিক ভিত্তিক ধর্ম এবং জীবন ব্যবস্থা। প্রচলিত বাপ-দাদার অনুসৃত কিংবা অন্ধ অনুসরণের গতানগতিক ধর্ম বা মতবাদ নয়।

অন্য জীবন ব্যবস্থাকে বা ধর্মকে ইসলাম চেলেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে : 'এগুলো এ তথ্য কিভাবে পেলে?' 'একাধিক প্রভুর ধারণা কোথায় পেলে?'

একইভাবে ইসলামে 'আমি মনে করি ..' অথবা কোরআন, হাদিসের রেফারেন্স বা শরিয়া নির্ভর যুক্তিভিত্তিক ইসমা বা কিয়াসের তথ্য ছাড়া কোন বক্তব্য প্রদান অপরাধ। এটাই এই জীবন ব্যবস্থার স্বপক্ষে এক শক্ত যুক্তি যা অন্যন্য মতবাদ বা ধর্মে অনুপস্থিত।

১৬) এখন যখন তোমরা এদের থেকে এবং আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে এরা পূজা করে তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছো তখন চলো অমুক গুহায় গিয়ে আশ্রয় নিই৷ তোমাদের রব তোমাদের ওপর তাঁর রহমতের ছায়া বিস্তার করবেন এবং তোমাদের কাজের উপযোগী সাজ সরঞ্জামের ব্যবস্থা করবেন৷”

"তোমাদের রব তোমাদের ওপর তাঁর রহমতের ছায়া বিস্তার করবেন এবং তোমাদের কাজের উপযোগী সাজ সরঞ্জামের ব্যবস্থা করবেন৷"
- এই বক্তব্যের মাধ্যমে এখানে আল্লাহ মূলত ইলহামের মাধ্যমে তাদের নির্দেশিত করছেন গুহায় আশ্রয় নিতে। অথবা তাদের আল্লাহর রহমত-প্রত্যাশী অন্তরের চাওয়াও হতে পারে - যা ঈমানদারদের অন্যতম গুন হিসেবে গন্য।

বিষয়টিকে আমরা আধ্যাত্মিক নির্দেশনা তথা সাহায্য হিসেবে আখ্যা দিতে পারি - যা তাদের অন্তরে কঠিন সময়ে এক নির্ভরতা তৈরী করে । মুমিনদের হৃদয়ে শান্তি দেয় ।

সেই সাথে এক 'বাস্তব-ভিত্তিক সাহায্য (physical help) ও আল্লাহ দিলেন মুমিনদের ঠিক এভাবে:

১৭) তুমি যদি তাদেরকে গুহায় দেখতে, তাহলে দেখতে সূর্য উদয়ের সময় তাদের গুহা ছেড়ে ডান দিক থেকে ওঠে এবং অস্ত যাওয়ার সময় তাদেরকে এড়িয়ে বাম দিকে নেমে যায় আর তারা গুহার মধ্যে একটি বিস্তৃত জায়গায় পড়ে আছে৷

অর্থাত আল্লাহতায়ালা গুহার অবস্থান এমনি রেখেছিলেন যাতে সূর্য পূর্ব বা পশ্চিম দিকের উদয়-অস্তের আবর্তে এক মধ্যমপন্থী আরাম দায়ক অবস্থানে (কম বা বেশি উত্তাপ নয়) ওই গুহাবাসী মুমিনরা থাকতে পারে। এটি এক বাস্তব (physical) সাহায্য আল্লাহর তরফ থেকে।

এই দুই উপায়ে আল্লাহ তাদের সাহায্য করেন - তার সৈন্যদের অভিভাবক হিসেবেই করুনা বর্ষণ করেন যা পরেই বিবৃত হচ্ছে উপসংহার হিসেবে:

'এ হচ্ছে আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন৷ যাকে আল্লাহ সঠিক পথ দেখান সে-ই সঠিক পথ পায় এবং যাকে আল্লাহ বিভ্রান্ত করেন তার জন্য তুমি কোনো পৃষ্ঠপোষক ও পথপ্রদর্শক পেতে পারো না৷'

শিক্ষা ৫:

"১৮) তোমরা তাদেরকে দেখে মনে করতে তারা জেগে আছে, অথচ তারা ঘুমুচ্ছিল৷ আমি তাদের ডাইনে বাঁয়ে পার্শ্ব পরিবর্তন করাচ্ছিলাম৷এবং তাদের কুকুর গুহা মুখে সামনের দু পা ছড়িয়ে বসেছিল৷ যদি তুমি কখনো উঁকি দিয়ে তাদেরকে দেখতে তাহলে পিছন ফিরে পালাতে থাকতে এবং তাদের দৃশ্য তোমাকে আতংকিত করতো৷"

আল্লাহর সাহায্য এবং নিরাপত্তা কেমন ছিল এই আয়াতে তা অনুমেয়। অথচ গুহাবাসী ঈমানদাররা ভুলেও এমন সাহায্য পাবে তা অনুমান ও করেননি কস্মিক্কালেও। বরং তারা জীবন বাচাতেই পালয়ে বেড়াচ্ছিলেন।

অতএব, একমাত্র যে জিনিসটা ঈমানদারদের অকল্পনীয় 'নিরাপত্তা' দিতে পারবে তা হল: আল্লাহর প্রতি গভীর ঈমান এবং পূর্ণ কর্ম-তত্পরতা ভিত্তিক তাওয়াক্কুল!

এটা আল্লাহর ওয়াদা। এমন মুমিনদের আল্লাহ সকল অবস্থায় সাহায্য করে থাকেন।

শিক্ষা ৬:

"১৯) আর এমনি বিস্ময়করভাবে আমি তাদেরকে উঠিয়ে বসালাম যাতে তারা পরস্পর জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে৷ তাদের একজন জিজ্ঞেস করলোঃ “বলোতো, কতক্ষণ এ অবস্থায় থেকেছো ?” অন্যেরা বললো, “হয়তো একদিন বা এর থেকে কিছু কম সময় হবে৷” তারপর তারা বললো, “আল্লাহই ভালো জানেন আমাদের কতটা সময় এ অবস্থায় অতিবাহিত হয়েছে৷

চলো এবার আমাদের মধ্য থেকে কাউকে রূপার এ মুদ্রা দিয়ে শহরে পাঠাই এবং সে দেখুক সবচেয়ে ভালো খাবার কোথায় পাওয়া যায়৷ সেখান থেকে সে কিছু (খাটি) খাবার নিয়ে আসুক ;
"

أَزْكَىٰ طَعَامًا

বলতে হালাল খাটি খাবার বোঝানো হয়েছে। লক্ষ্য করুন: তাদের আল্লাহ নির্দেশিত হালাল খাবারের প্রতি আন্তরিক ইচ্ছার ব্যপারটি! এটি মূলত ঈমানদারদের বৈশিস্ট! সকল অবস্থায় আল্লাহর বিধান মেনে চলার আন্তরিক ও সুস্থির বাসনা। এটি তাকওয়ারই এক প্রতিবিম্ব। তাছাড়া হালাল রুজি দোয়া কবুলের ও পূর্ব শর্ত - যা তারা জানতেন। আর (কঠিন অবস্থায়) যে আল্লাহকে ভয় করে চলেন আল্লাহ তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেন (সুরা তালাক)।

শিক্ষা ৭:

" সেখান থেকে সে কিছু খাবার নিয়ে আসুক ; আর তাকে একটু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, আমাদের এখানে থাকার ব্যাপারটা সে যেন কাউকে জানিয়ে না দেয়৷

২০) যদি কোনোক্রমে তারা আমাদের নাগাল পায় তাহলে হয় প্রস্তরাঘাতে হত্যা করবে অথবা আমাদের জোর করে তাদের ধর্মে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে এবং এমন হলে আমরা কখনো সফলকাম হতে পারবো না৷”


মুমিনরা বোকার মত আচরণ করবে না। যখন জীবন বাচানো দায়, তখন শত্রুর কাছে বোকার মত ধরা দিবেনা। মুমিন সতর্কতা অবলম্বন করবেন। আমাদের ধর্ম আমাদের জীবনকে অনেক মূল্য দেয়। ধর্ম পালন কঠিন হলে, ইসলাম দ্রোহী শক্তির কাছে জীবন বাচানো দায় হয়ে পড়লে পালিয়ে থেকে সতর্কতা এবং সকল প্রকার কৌশলে চলার ব্যপারে এ আয়াতে পরোক্ষভাবে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।

শিক্ষা ৮:

"২১) এভাবে আমি নগরবাসীদেরকে তাদের অবস্থা জানালাম, যাতে লোকেরা জানতে পারে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য এবং কিয়ামতের দিন নিশ্চিতভাবেই আসবে৷ ... "

এখানে "আল্লাহর প্রতিশ্রুতি" কি? উত্তর হল: আল্লাহ তার সৈন্য তথা প্রিয় বান্দাদের অবশ্যই সাহায্য করেন।

দ্বিতীয়ত: "কিয়ামতের দিন নিশ্চিতভাবেই আসবে" এখানে এটিই বা কিভাবে সামন্জস্যপূর্ণ হল?

উত্তর হল: যদি আল্লাহ তায়ালা আসহাবে কাহাফদের ৩০০ বছরাধিক ঘুম পাড়িয়ে বাঁচিয়ে রেখে আবার পুনরুত্থিত করতে পারেন (যে ঘটনাটি তত্কালীন ইহুদিরাও স্বীকার করে - এবং এজন্য এ সম্পর্কে মহানবী (স) এর কাছে কোরায়েশদের মাধ্যমেই জানতে চেয়েছিল নবুয়াত পরীক্ষা করার জন্য) , তিনি (আল্লাহ) কি কেয়ামতের দিবসে সকল প্রাণকে একসাথে উঠাতে পারবেন না? কোন যুক্তিতে তারা তাহলে কেয়ামতের বিরুদ্ধে যুক্তি দিতে পারে?

এটি মূলত কেয়ামতের পুনরুত্থানের স্ব্পক্ষে এক জ্বলন্ত যুক্তি। অর্থাত যদি আসহাবে কাহাফদের ৩০০ বছরাধিক আশ্চর্জ ঘুমিয়ে থাকা এবং তারপর পুনরুত্থানকে তারা বিশ্বাস করে (ইহুদিদের কথায়) তবে একই লজিকে কেয়ামতের পুনরুত্থানকে কেন বিশ্বাস করা নয়?

পুনরুত্থান-দিবস অবিশ্বাসী কোরায়েশরা যার কোন উত্তরই দিতে আর পারে নাই!

-- পরিশিস্ট --

[১]

আয়াত: ২২) ... আমার রবই ভালো জানেন তারা কজন ছিল, অল্প লোকই তাদের সঠিক সংখ্যা জানে৷ কাজেই তুমি সাধারণ কথা ছাড়া তাদের সংখ্যা নিয়ে লোকদের সাথে বিতর্ক করো না এবং তাদের সম্পর্কে কাউকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদও করো না৷

ظَاهِرًا

শব্দটি দুই অর্থে প্রয়োগ হয়:

(প্রথম) "তাদের সাথে বিতর্ক কর না যতক্ষণ না তোমার পূর্ণ (solid) জ্ঞান না থাকে কোন বিষয়ে"।

আপনার জানতে হবে আপনি কি বিষয়ে কথা বলছেন। পুরো নিশ্চিত হতে হবে বিষয় সম্পর্কে কথা বলার পূর্বে তা না হলে চুপ থাকতে হবে।

অতএব জ্ঞান সহকারে (বা যতই আপনি নিশ্চিত উপাত্ত সহ বা রেফারেন্স সহ জানেন) কথা বলুন অথবা চুপ - থাকুন এটাই বিতর্কের ক্ষেত্রে ইসলামের শিক্ষা।

অনেকের মতে, এটি বুঝায় যে,, সবাই মুখের মাধ্যমে দাওআতে যোগ্য নয় যদি না জেনে থাকে বিষয়াবলী। কিন্তু কর্মের (action) মাধ্যমে ইসলামের দাওয়াত দিতে সবাই ই যোগ্য।

(দুই) ওই শব্দ আরেক অর্থে ব্যবহৃত তা হল সংখ্যা তাত্বিক বিতর্ক কে বা বিষয়টিকে 'ইমোশনালি' বা আবেগের সাথে সিরিয়াসলি নিবেন না। এটাই বুদ্ধিমানের পরিচায়ক। কারণ ওই বিতর্কে কোন লাভ বা ক্ষতি কোনটাই নাই।

এটি আরেক ইঙ্গিত ও দেয়। বিতর্কে বা বক্তব্যে প্রায়োরিটি স্থাপন করা উচিত। যে বিষয় (যেমন সংখ্যা বা সময়ের যথাযথ পরিমান, ইত্যাদী) যদি গুরুত্বপূর্ন না হয় তবে তাতে ফোকাস না করাই উচিত।

... এবং তাদের সম্পর্কে কাউকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদও করো না

এটি গুরুত্বপূর্ন: যেহেতু আহলে কিতাবধারীদের বা বিধর্মীদের নিশ্চিত জ্ঞান-উত্স বা নিশ্চিত জ্ঞান কেনটাই নাই, তাই এ বিষয়ে তাদের কিছু জিজ্ঞাসা করাও বোকামি। এবং এটা আল্লাহর নির্দেশ। জিজ্ঞাসা করতে হবে প্রকৃত জ্ঞানীকে - ওহীর জ্ঞানে দক্ষ স্কলারদের।

[২]

আয়াত: ২৫) আর তারা তাদের গুহার মধ্যে তিনশো বছর থাকে এবং (কিছু লোক মেয়াদ গণনা করতে গিয়ে) আরো নয় বছর বেড়ে গেছে (৩০৯ বছর) ৷

আল্লাহ তাদের অবস্থানের মেয়াদ সম্পর্কে বেশী জানেন৷ আহলে কিতাবধারীদের মাঝে সাধারণ বিষয়ে মতভেদকে আল্লাহতায়ালা তুলে ধরেছেন।

তবে এক্ষেত্রে মুজেজা লক্ষ্য করুন: ৩০০ বছর গ্রেগরিয়ান (সৌর) ক্যালেন্ডারের সমান হল ৩০৯ বছর লুনার (চান্দ্র) ক্যালেন্ডার। প্রকৃত ব্যপার আল্লাহই ভাল জানেন।

(২০ শে রমজান দিবাগত রাত , ২০১৩)

সূত্র

[১] তাফহিমুল কোরআন: সুরা কাহাফ

[২] শেখ ইয়াসির কাজী, লেকচার অন সরা কাহাফ, ২০১৩

বিষয়: বিবিধ

২১৭৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File