পরাজয়ে ডড়ে না বীর (১)
লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ১৬ জুলাই, ২০১৩, ০৬:৫০:৫৫ সন্ধ্যা
[ বর্তমানে বাংলাদেশ সহ ইসলাম কে প্রতিষ্ঠায় সংগ্রামরত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তরের আল্লাহর সৈন্যদের উদ্দেশে নিবেদিত]
আমরা সবাই ওহুদের যুদ্ধকে 'পরাজয়' হিসেবেই জানি। আশ্চর্য ব্যপার হল আনাস বিন মালিক (রা) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে, রাসুল (স) বলেন (যখন তিনি ওহুদ কে দেখেন), 'এই পাহাড় এমন ই এক পাহাড় যে আমাদের ভালবাসে, এবং আমরাও একে ভালবাসি'।
এর বিভিন্নতর বিশ্লেষন রয়েছে - যেদিকে আমি যাব না।
ইমাম ইবনুল কাইয়ুম (রহ) (১২৯২-১৩৫০ ইং) ওহুদ যুদ্ধ সম্পর্কে ভিন্ন মতামত দেন।তিনি একে মনে করেন 'শিক্ষার গোল্ড মাইন বা রত্ন-ভান্ডার'।
মুসলমানদের জন্য অনেক শিক্ষার ব্যপার লুকানো এ যুদ্ধের ঘটনাবলির মাঝে।
(শিক্ষা ১)
সুরা ইমরানে আল্লাহ বলেছেন সেই অংশে যা ওহুদ পরবর্তী নাজিলকৃত: "তিনি ((মহানবী স)) সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমত স্বরূপ". যেখানে অন্যান্য নবী-রাসুল গন নির্দিস্ট জাতির জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন।দয়ালু আল্লাহ নবীজি (স) সেই দু"খের সময়ে এভাবেই সন্মানিত করেছেন যা আর কাউকেই করেননি।
(শিক্ষা ২)
ওহুদের পরবর্তী সময়ে আল্লাহ মুসলমানদের সম্বোধন করেন:
﴿كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ ۗ
এখন তোমরাই দুনিয়ায় সর্বোত্তম দল৷ তোমাদের কর্মক্ষেত্রে আনা হয়েছে মানুষের হিদায়াত ও সংস্কার সাধনের জন্য ৷ তোমরা নেকীর হুকুম দিয়ে থাকো, দুষ্কৃতি থেকে বিরত রাখো এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনো৷ (ইমরান: ১১০)
এরকম মুসলমানদের সন্মানিত করে বক্তব্য মহাজ্ঞানী আল্লাহতায়ালা বদরের পর জয়ী মুসলমানদের উদ্দেশ্যে তো বলেননি! কিংবা মক্কা বিজয়ের পর ও তো বলেননি! এরকম সন্মান-সন্মোধন সূচক আয়াত নাজিল হল একেবারে ভয়াবহ পরাজয়ের পর - তথা ওহুদ যদ্ধ শেষে।
লক্ষ্যনীয়, বদরের পর আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের বরং কোন ক্রেডিট ই দেননি। তিনি শিক্ষা -দিয়েছেন সব ই আল্লাহর দয়া ও ক্ষমতাবলে অর্জিত হয়েছে। ভত্সনাও করেছেন যুদ্ধ পরবর্তী তাদের পার্থিব চাওয়া পাওয়াকে কেন্দ্র করে:
تُرِيدُونَ عَرَضَ الدُّنْيَا وَاللَّهُ يُرِيدُ الْآخِرَةَ
" তোমরা চাও দুনিয়ার স্বার্থ৷ অথচ আল্লাহর সামনে রয়েছে আখেরাত৷ "
(আনফাল ৬৭)
﴿لَّوْلَا كِتَابٌ مِّنَ اللَّهِ سَبَقَ لَمَسَّكُمْ فِيمَا أَخَذْتُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ
"আল্লাহর লিখন যদি আগেই না লেখা হয়ে যেতো, তাহলে তোমরা যা কিছু করেছো সে জন্য তোমাদের কঠোর শাস্তি দেয়া হতো৷"
(আনফাল: ৬৮)
অথচ ওহুদ পরবর্তী নিজেদের ভুলের জন্য পরাজিত অসহায় মুসলমানদের উদ্দেশে সর্ব দয়ার আধার আল্লাহ সান্তনা দিচ্ছেন:
﴿وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
" মনমরা হয়ো না, দুঃখ করো না, তোমরাই বিজয়ী হবে, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো৷ " (ইমরান: ১৩৯)
অধিকাংশ আহত হওয়া সাহাবারা যখন ৭০ জন শহীদ দের নিয়ে দু:খিত, মহানবী (স) স্বয়ং গুরুতর আহত, নিজেদের ভুলের অনুশোচনায় ব্যস্ত - হয়তবা আহত কেউ কেউ গুরুতর মনোবেদনায় নিমজ্জিত কেন তারা মহানবী (স) কে (যাকে তারা নিজের প্রানের চেয়ে বেশি ভালবাসেন) পুরোপুরি নিরাপদ রাখতে ব্যর্থ হলেন। পরিবার কাদছে লাশের চারিদিকে - আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে - ঠিক তখন একমাত্র দয়ার সাগর আর পরম বন্ধু আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই দু"খিত, ব্যথিত মানুষদের কাছে টেনে নিলেন - শুধু ক্ষমাই করলেন না - পরম আদরে স্বান্তনা দলেন তার প্রিয় সৈন্যদের: "মনমরা হয়ো না, দুঃখ করো না"।
আহারে, এমন পরম সঙ্গী যাদের স্বান্তনা দিচ্ছেন, কস্মিককালেও দু:খ কি আর তাদের থাকতে পারে?
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১৭৯৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন