ইসলামিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে আব্দুল কাদের মোল্লার "শোনা কথার ভিত্তিতে" বিচার

লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৫:৫২:৩৭ সকাল

"মহানবী (দ) বলেছেন একজন মানুষ মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে যেটা শুনলো, সেটা বললো।" ( (আবু হুরায়রা (রা ) থেকে বর্ণিত; মুসলিম শরিফ) )

রাসূল (সা) এ কথার ভিত্তিতে বলা যায়, শোনা কথা মামলার এভিডেন্স হতে পারে না।

আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনীত কোন অভিযোগেরই প্রত্যক্ষদর্শী কোন সাক্ষী নেই। এই মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে ১২ জন সাক্ষী ট্রাইব্যুনালে এসে জবানবন্দি দিলেও সাক্ষীদের কেউই কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগেরও প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য তারা দিতে পারেননি। প্রায় সব সাক্ষীই বলেছেন, তারা অন্যের কাছে এসব অভিযোগের কথা শুনেছেন মাত্র।

তাছাড়া শোনা কথার ভিত্তিতে কাউকে বিচার করলে পৃথিবীর যেকোন মানুষকে অভিযুক্ত করা যায়। বিচার তখন খেলা হয়ে যায়।

যিনি যুদ্ধের সময় ২৩ বছরের যুবক, যিনি সবে মাত্র ঢাকা ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছেন, ঠিক তখন ই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল, সেই যুবক ১৯৭৫ সালে সামাজিক বিজ্ঞানের শিক্ষা প্রশাসনে অতিতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে প্রথম শ্রেনিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন, সেই যুবক নাকি মুক্তিযুদ্ধের সময় হাজার হাজার মানুষ কে হত্যা ( !!) করেছেন, ধর্ষন করেছে, জ্বালিয়ে দিয়েছে হাজার হাজার ঘর ? একা একজন যুবক হয়ে এত কাজ করল, যুবক হয়ে রাজাকার বাহিনীর অন্যতম নেতা (!!) , এমন কথা কি উম্মাদ ছাড়া আর কেউ বিশ্বাস করবে ?

পরন্তু এই যুবক এত খারাপ কাজ করল আর একজন মুক্তিযোদ্ধাও আসল না তার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে, যাদের ঘর বাড়ি জ্বালাল তাদের কেউ ও আসল না, এই ৪২ বছর কেউ বলল না এই যবক এত খারাফ যে তাদের সব ধ্বংস করেছে, আর আজ ৪২ বছার পর এই যুবক নাকি জাতির জন্য হুমকি স্বরূপ?


অতএব, আপনারাই চিন্তা করুন ইসলামিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক দিক দিয়ে আব্দুল কাদের মোল্লাহর শোনা কথার ভিত্তিতে বিচার কোন পর্যায়ে পড়ে?

----- বিস্তারিত উপাত্ত --------

::: ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপিত ডিফেন্স পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক::::

ট্রাইব্যুনালে এই মামলার যুক্তিতর্ক শুরু হওয়ার পরে ট্রাইব্যুনালে মামলাটির বিভিন্ন আইনগত ক্রটি (ল' পয়েন্টের বক্তব্য) তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন ডিফেন্স টিমের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপিত আর্গুমেন্টে প্রথম বিষয়টি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে আইনের উপর ভিত্তি করে এই মামলার বিচার কাজ চলছে সেই আইনটিই এখানে প্রযোজ্য নয়। কেননা ১৯৭৩ সালে এই আইনটি তৈরি করা হয়েছিল চিহ্নিত যুদ্ধবন্দি পাকিস্তানী ১৯৫ জন আর্মি অফিসারের বিচারের জন্য। এই আইনে কোন সিভিলিয়ানের (সাধারণ নাগরিকের) বিচার করার সুযোগ নেই বলেও তিনি যুক্তি তুলে ধরেন। দ্বিতীয়ত, স্বাধীনতা যুদ্ধের দীর্ঘ ৪০ বছর পরে কেন এই মামলাটি দায়ের করা হয়েছে তারও কোন আইনী ব্যাখ্যা প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি বলেও তিনি যুক্তি তুলে ধরেন। তৃতীয়ত আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে দায়ের করা এই মামলাটি যে নিছক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই ব্যবহৃত হচ্ছে তারও বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক।

:::: যুক্তির আলোকে তার অপরাধ? :::::

[১] আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনীত কোন অভিযোগেরই প্রত্যক্ষদর্শী কোন সাক্ষী নেই। এই মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে ১২ জন সাক্ষী ট্রাইব্যুনালে এসে জবানবন্দি দিলেও সাক্ষীদের কেউই কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগেরও প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য তারা দিতে পারেননি। প্রায় সব সাক্ষীই বলেছেন, তারা অন্যের কাছে এসব অভিযোগের কথা শুনেছেন মাত্র।

[২] ৭১ সালে কাদের মোল্লা ঢাকাতে ছিলেন না

মামলার শুনানীতে ডিফেন্স পক্ষের আইনজীবী আরো বলেছেন উভয় পক্ষের সাক্ষীদের দেয়া তথ্য থেকে প্রমাণ হয়েছে যুদ্ধকালে কাদের মোল্লা ঢাকাতে ছিলেন না


এদিকে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেয়াকালে জবানবন্দিতে কাদের মোল্লা বলেছেন, আমার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে ঢাকায় অনেক অপরাধের অভিযোগের ঘটনা বর্ণনা করা হলেও প্রকৃত সত্য হচ্ছে এই যে, আমি মুক্তিযুদ্ধকালের ঐ সময়টাতে ঢাকাতেই ছিলাম না। ঐ সময়ে আমি ছিলাম আমার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের আমিরাবাদে। জবানবন্দিতে কাদের আরো মোল্লা বলেন, ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের ১১ বা ১২ তারিখেই আমি গ্রামের বাড়িতে চলে যাই। ১৯৭১ সালের মার্চ মাস থেকে শুরু করে ১৯৭২ সালের প্রায় পুরো সময়টাই আমি আমার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে অবস্থান করি। এই সময়টাতে আমি গ্রামে ছোট একটি দোকান ও ব্যবসার কাজেই ব্যস্ত ছিলাম। তবে যুদ্ধের শুরুর দিকে আমি মুক্তিযোদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণও নিয়েছিলাম। গ্রামে অবস্থানকালে মৌলভী মো: ইসহাক ওরফে ধলা মিয়া পীর সাহেবের বাড়িতে যেতাম এবং উনার দুই মেয়েকে পড়াতাম ওই পীর সাহেবের এক জামাতা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিল বলে পরে জানতে পেরেছি এবং পীর সাহেবের ছেলেরা সবাই স্বাধীন বাংলার সমর্থক ছিলেন। পীর সাহেব মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাকে কিছু টাকা দেন তার বাজারের ঘরটি ব্যবসায়-বাণিজ্য করতে চালু করতে। পুরো ১৯৭১ সাল এবং ১৯৭২ সালের প্রায় পুরো সময় আমি প্রতি সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবারে বাজারে যেতাম, বাজারের পীর সাহেবের ঘরে বসতাম এবং ব্যবসায় করতাম। কাদের মোল্লা আরো বলেন, ১৯৭১ সালে তৎকালীন সদরপুর-ভাঙ্গা নির্বাচনী এলাকা থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন ও সদরপুর থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি শাহজাহান তালুকদারের সাথে আমার নিয়মিত আলাপ-আলোচনা হতো। তখন সদরপুর থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার লৎফুল করিমের সাথেও আমার পরিচয় হয় এবং তার পর থেকে তাদের সাথে আমার যোগাযোগ ছিল।

[৩] কাদের মোল্লার পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের ৪০ বছরের ইমাম হাফেজ এ আই এম লোকমান ও ৮২ বছরের বৃদ্ধ সুশীল চন্দ্র মণ্ডল সাক্ষ্য দিয়ে বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় কাদের মোল্লা গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। তিনি একজন ভালো মানুষ।

-----

অতএব কথিত ৬ অভিযোগ ই মিথ্যা কারণ তিনি ঢাকাতেই ছিলেন না!

আদালতে আব্দুল কাদের আরো বলেন, আওয়ামী লীগের সাথে যখন জোটবদ্ধ হয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি তখন আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ ছিল না। অথচ যখনই জামায়াতে ইসলামী বিএনপির সাথে জোট বন্ধ হয়ে ইলেকশন করলো তার পর থেকেই আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে জামায়াতকে শায়েস্তা করতেই এই মামলা করা হয়েছে।

বিষয়: বিবিধ

১৩৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File