ইসলামী সংগঠনের কর্মীদের জন্য উপদেশ
লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ২৯ মে, ২০১৩, ০৬:৩৯:০৪ সকাল
ইসলামী সংগঠনের কর্মীদের জন্য উপদেশ
বক্তব্য: আনোয়ার আওলাকি
ভাবানুবাদ: মঞ্জুর আশরাফ
(কৃতজ্ঞতা –সাইদ মর্তূজা গালিব)
আমরা যখন কোন ইসলামী সংগঠন করি বা আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকি তখন অনেক সময় আশা করি যে সংগঠনের মাধ্যমে বিশেষভাবে উপকৃত হব – (১) সংগঠন আমার শিক্ষাগত (ধর্মীয়, কৌশল দক্ষতা, ইত্যাদি ) প্রয়োজনীয়তা পুরন করবে, (২) আধ্যাত্মিক প্রয়োজনীয়তা পুরন করে দেবে। বস্তুত আন্দোলন কিছুমাত্র অংশই পুরন করে । অন্যদিকে আন্দোলন আশা করে যে আমরাই সেক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখব। অনেক সময় ভাইয়েরা ইসলামী কার্যক্রমে অংশ নিয়ে থাকেন – বছরের পর বছর তারা তাতে সম্পৃক্ত থাকেন – তবুও তারা সংগঠনে খুব একটা অবদান রাখতে পারেন না । এর কারন তারা আশা করে থাকেন যে সংগঠন তাদের উপরক্ত ‘দুইটি’ বিষয় প্রদান করবে। প্রকৃতপক্ষে এটি একটি অবাস্তব প্রত্যাশা। আন্দোলনে অনেক বিষয় অন্তরভুক্ত থাকে – অনেক দিক কার্যশীল । এজন্য সংগঠনের প্রত্যেকের বাক্তিগত বিষয়াদি পুরন করা সম্ভবপর হয় না। অতএব এ বিষয়গুলো পুরন ও পরিচর্যার ক্ষেত্রে বাক্তিগত ভূমিকা পালন খুব বেশি প্রয়োজন। “আধ্যাত্মিক প্রয়োজনীয়তা”র দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের মুলত ব্যক্তিগতভাবেই প্রচেষ্টা বেশি প্রয়োজন। আলহামদুলিল্লাহ – অনেক সময় সাংগঠনিক কার্যক্রম বাক্তিগত মান উন্নয়নে পরিচালিত হয়ে থাকে, কিন্তু আপনারা শুধুমাত্র এর উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকবেন না।
(১) আপনারা ব্যক্তিগত পর্যায়ে ইবাদতের একটি ধারা বজায় রাখবেন যাতে আপনি পারিবারিকভাবে দৃঢ় চেতা সম্পন্ন থাকতে পারেন। অনেক সময় আপনারা একদল ভাই/পরিবারসহ আধ্যাত্মিক ইবাদতের কার্যক্রমও গ্রহন করতে পারেন। উদাহরন স্বরূপ জামায়াতে তারাবির নামাজ দ্বিতীয় খলিফা ওমর (রা) এর সময় থেকে গ্রহন করা হয় আধ্যাত্মিক উন্নয়নের একটি উৎকৃষ্ট কার্যক্রম হিসেবে । ভিন্ন প্রেক্ষাপটে বলা যায় সাধারণভাবে ফরজ কাজ সম্মিলিত ভাবে করা অনেক সওয়াবের পরিচায়ক – অন্যদিকে নফল কাজ (যেমন- নফল নামাজ) এককভাবে করাই উত্তম। তবুও আমরা সালাতুত তারাবি জামায়াতে পড়ে থাকি। কেন? কারন এটি একটি উৎসাহ মুলক কার্যক্রম। দ্বিতীয়ত, তারাবির নামাজ জামায়াতে না হলে অনেক লোক ই তা আদায় করতে সমর্থ হয় না। যেহেতু এটি জামায়াতে পরা হয় তাই অনেক লোক জমায়েত হয় এবং এটি তাদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দিপনা তৈরি করে। মুল বিষয় হল – অনেক সময় অনেক কাজ একক ভাবে কারো কারো পক্ষে সম্ভব হয় না – এক্ষেত্রে কয়েক ভাই মিলে একত্রিত হয়ে সম্পাদন করলেই তা উত্তম ও উৎসাহ মুলক হয়। অরেক উদাহরন অনুযায়ী, কিছু ভাই মিলে সোম ও বৃহস্পতি বার রোজা রাখতে পারেন এবং এক সাথে ইফতার করতে পারেন। আবার ধরুন যদি এককভাবে কিয়ামুল-লাইল না করতে পারেন – কিছু ভাই একত্র হয়ে কিয়ামুল লাইল পালন করতে পারেন কোন এক বাসায় – এক সাথে নামাজ পরতে পারেন – ২,৪,৬, রাকাত – যা পারা যায়। যদি এককভাবে কোরআন তেলাওয়াত করতে না পারেন – কিছু ভাই একত্র হয়ে কোরআন তেলাওয়াত করতে পারেন। যেকোনো একটি ইবাদতের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিন – দৃঢ় থাকুন। এবং তা নিয়মিতভাবে পালন করুন। একটি নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করুন – আবশ্যকীয় ভাবে সেই ইবাদত নিয়মিত সম্পাদনের জন্য।
হাদিসে বর্ণিত রাসুল (দ) এর পরিবারবর্গ যখন কোন একটি ভাল কাজ করা শুরু করতেন তা তারা সবসময়ের জন্য চালু রাখতেন। সে কাজ সম্পাদনে কোন ভাটা আসতো না। যেমন কখনও আপনি সিধান্ত নেন যে ইসলামের জন্য সবকিছু করবেন – কিছুই বাদ দিবেন না – অথচ ঠিক পরের দিনই সব বেমালুম ভুলে যান হয়ত – কিছুই আর করেন না। অথচ রাসুল (দ) এর পরিবারবরগের জন্য কোন গৃহীত নতুন ভাল কাজ সবসময়ের জন্য জারি থাকতো। কোন একটি বিষয়ে সিধান্ত নিলে তা সব সময়ের জন্য করতে সচেষ্ট থাকুন। সালাতের পর জিকির করলে তা সব সময়ের জন্য চালু রাখতে সচেষ্ট থাকুন।
(২) এখন বিদ্যার্জনের ব্যাপারে আসি। অনেক সময় বছরের পর বছর ভাইদের থেকে শুনে থাকি “আমি বিদেশে যেতে চাই ইসলামী শিক্ষার্জনে – কোথায় যেতে আমাকে উপদেশ দিবেন?” পরবর্তী বছর একই ভাই একই প্রশ্ন নিয়ে আসেন – “বিদ্যার্জনে বিদেশ যেতে চাই – সাজেশন দিন”।
বাস্তবিকপক্ষে ঐ ভাই এর মধ্যে কিছুই করেনি। আপনি যদি বিদেশ যেতে নাইই পারেন তবে যেখানে আছেন সেখান থেকেই অনেক কিছু ইসলামের জন্য অধ্যয়ন করতে পারবেন। আপনার জন্য বিদেশ যাত্রা বাধ্যতামূলক নয় – যেখানে বাস করছেন সেখানেই ইসলামী অধ্যয়নের অগনিত উপকরন ছড়িয়ে আছে। পক্ষান্তরে অনেকের জন্য কষ্ট করে বিদেশ যাত্রা এবং কঠোর জীবন যাপনের মাধ্যমে বিদ্যার্জনের চেষ্টা একটি অভিযাত্রা (এডভেঞ্চার) এর মতই চমকপ্রদ বাপার হয়ে থাকে! এর কারন হল আমরা একটি ‘ফ্যাশন ধর্মী সমাজে’ বসবাস করি। বর্তমান যেকোনো ফ্যাশনের প্রতি আমরা আসক্ত হই। ফ্যাশন সময়ের সাথে পরিবর্তনশীল । প্রতি সময়ে আপনি একটি নতুন ফ্যাশন দেখেন সমাজে। যারা ফ্যাশনের ঝাণ্ডা উরিয়ে থাকে তারা হল মুলত নাটক-সিনেমার লোকজন তথা ‘তারকারা’! এরা দিকনির্দেশনা বিহিন সমাজে চালু করে কিভাবে পোশাক পরতে হবে – চুলের কাটিং কেমন হবে – চালচলন কেমন হবে – কথা বার্তা কেমন হবে – এবং অধিকাংশ মানুষ এদের অনুসরন করে থাকে। এমনকি তারা যেসব আজে-বাজে কথা কখনও সাক্ষাৎকারে বলে থাকে তাও অনেকে রপ্ত করে নেয়। মজার ব্যাপার হল – মুসলিম সমাজেও এ ফ্যাশন অন্য আঙ্গিকে উপস্থিত। মুসলিম পুরুষদের পোশাক আশাক, মহিলাদের হিজাব ইত্যাদি ফ্যাশনের সাথে জড়িয়ে পড়েছে। এসব ফাশনে কোন কমিটমেনট থাকে না যা সদা-পরিবর্তনশীল। অতএব আমরা একটি ফাশন জড়ানো সমাজে বাস করছি।
কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হল আমাদের নিয়ত কি? – নিয়তের পরিছন্নতা আছে কিনা? – সকল কিছুই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করছি কিনা? - সেটাই মুল বিবেচ্য। আপনি একটি পোশাক পড়েছেন – মানুষের সুন্দর লাগার জন্য নাকি দ্বীনের ব্যাপারে জিম্মাদারির উদ্দেশে? আপনি একটি নির্দিষ্ট উপায়ে আচরন অথবা কাজ করছেন কারন এটি এ সময়ে সমাজে সবচেয়ে সুন্দর আচরন নাকি আপনি আল্লাহ তায়ালাকে খুশি করতে চান? দুর্ভাগ্যজনকভাবে অনেক ভাইয়েরা বিদ্যার্জন করেন ‘ফ্যাশনের’ বশবর্তী হয়ে। বিদেশ যাত্রা করে কোন শায়খের অধিনে কষ্টের মাধ্যমে বিদ্যার্জন অনেক ক্ষেত্রেই ফাশনে পরিনত হয়েছে । বস্তুত আপনি যেখানে আছেন সেখান থেকেই অনেক কিছু এবং মৌলিক ও অপরিহার্য সবকিছুই শিখতে পারেন। কোরআনের তাফসির সব জায়গাতেই বিদ্যমান এবং সহজলভ্য। বই-পুস্তক সব জায়গায়ই রয়েছে। এক সময় ছিল যখন তেমন বই পুস্তক ছিল না – যেমন আমাদের দাদার দাদা বা তারও পূর্বপুরুষ। অনেক ক্ষেত্রে তারা পড়তেও পারতেন না । অতএব তখন জ্ঞান সীমাবধ্য ছিল (সহজলভ্য ছিল না)। তখন তাদের বিদ্যার্জনের জন্য দুরদুরান্তে যেতে হত না কারন তারা সংখ্যায় ছিলেন নগণ্য। পক্ষান্তরে ঘরে ঘরে এখন অধিকাংশ বই-পুস্তক সহজলভ্য হয়ে গিয়েছে – প্রত্যেকেই লিখতে বা পড়তে পারে।
তদুপরি যা কিছু হাতের কাছে আছে আমরা তার সদবাবহার করছি না – বরং কঠিন চ্যাঁলেঞ্জ কে অপ্রয়োজনীয় ভাবে গ্রহন করছি (যেমন বিদ্যার্জনের জন্য দুরদুরান্তে যাওয়া – যা অনেকের মতেই অসম্ভব)।
যতক্ষণ আপনি তা করতে পারছেন না – সময় কেন নষ্ট করছেন কিছু না করে? কোরআনের একটি তাফসির নিন – অধ্যয়ন করুন । হাদিস অধ্যয়ন করুন। আপনার সিনিয়র এবং জ্ঞানী ভাইদের দিকে দৃষ্টিপাত করুন যারা জ্ঞানার্জনে এবং তা বাস্তবায়নে অগ্রসর এবং সিরিয়াস। আপনার মসজিদের ইমামের থেকে জ্ঞানার্জন করুন। আপনার মসজিদেই জ্ঞানী এবং যোগ্যতা সম্পন্ন ইমাম রয়েছেন। আপনার মসজিদেই অনেক ভাই আসেন যারা জ্ঞানার্জনে অনেক অগ্রসর – তাদের থেকে শিখুন। সুযোগের সৎ ব্যবহার করুন- বাস্তব অবস্থা থেকেই সবচেয়ে উত্তম বস্তু আহরন করুন। আপনার কাছাকাছিই অনেক ‘হালাকা’ (ধর্মীয় আলোচনা) হয় যেখান থেকে বিদ্যার্জনে তৎপর হন। আপনার কোন প্রসিদ্ধ ব্যাক্তি তথা প্রসিদ্ধ স্কলারের অধীনে বিদ্যার্জন করতেই হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। টেকনোলজির উৎকর্ষতার যুগে অজস্র গুরুত্বপুর্ণ বিদ্যা ছড়িয়ে রয়েছে আপনার হাতের কাছেই – তার সদ্ব্যবহার করুন।
(৩) এরপর যখন ইবাদতের প্রসঙ্গ আসে – দ্রুত ভাল একটা কিছু ‘কমিট’ করুন, বিশেষত যখন আপনি তরুন/যুবক। কারন সময়ের সাথে সাথে ঐ ইবাদত আপ্রান জীবনে পরিস্ফুটিত হবে।
আপনাদের ইসলাম ধর্মকে সিরিয়াসভাবে নিতে হবে। আল্লাহ প্রদত্ত জীবনবিধান কোন পার্টটাইম চাকুরী নয় – এটা এমন কোন বিষয় নয় যা আপনি তখন করবেন যখন আপনার ফ্রিটাইম বিদ্যমান। এটা একটি পুর্নাঙ্গ জবাবদীহিতা এবং কমিটম্যান্ট (ফুলটাইম চাকুরীর মত – ২৪/৭)।
আল্লাহ বলেন – ‘এই কিতাবকে শক্তি সহকারে ধারন কর’।
আল্লাহ তায়ালা বনীইসরাইলের লোকদের উদ্দেশ্যে বলেন – “আমরা তোমাদের সাথে চুক্তি করেছি – আমরা তোমাদের যা দিয়েছি তা শক্তি সহকারে গ্রহন কর”।
অতএব আল্লাহ প্রদত্ত জীবনবিধান একটা “সিরিয়াস বিষয়” এবং এই কাজের জন্য “সিরিয়াস টাইপ লোক দরকার”।
এটাই ছিল সাহাবাদের (রাঃ) চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ্য – তারা ছিলেন “সিরিয়াস মানুষ”।
এই ধর্ম কোন ভেজিটেবল স্যুপ নয় – বরং এটি একটি সিরিয়াস বিষয়। সাহাবা (রাঃ) কোন বিষয়ে কমিটম্যান্ট এ যেতেন এবং এরপর সে ব্যাপারে আমৃত্যু সিরিয়াস থাকতেন। তারা যুদ্ধক্ষেত্রে সাহসী ও শক্তিমত্তা বজায় রাখতেন – তারা ইবাদতেও শক্তিশালী ছিলেন – তারা কন্সিসট্যান্সি বজার রাখার ব্যপারেও শক্তিসম্পন্ন ছিলেন। তারা আল্লাহর শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতাপসম্পন্ন ছিলেন। “শক্তিমত্তা” ছিল তাদের চরিত্রের মূল দিক। রসুল (সাঃ) বলেন – আল্লাহতায়ালা শক্তিশালী মুমিনদের ভালবাসেন দুর্বল মুমিনদের থেকে। অতএব ইসলাম একটি সিরিয়াস ধর্ম। আমরা এমন দেখতে পাই যে – ভাইরা যখন বাসার কাজ করেন তখন শক্তিশালী থাকেন কিন্তু যখন ইবাদতের প্রসঙ্গ আসে তখন তারা ঘুমাচ্ছন্ন হয়ে যান – জড়তা তাদের পেয়ে বসে – অলসতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। সাহাবারা (রাঃ) পুরুষ অথবা মহিলা – যখন কোন কমিন্টম্যান্টে যান কোন কিছুই তাদের ফিরাতে পারে না। আব্দুল্লাহ বিনহুদাফা (রাঃ) যখন রোমানদের বন্দী হিসেবে রাজার কাছে উপস্থিত হলেন – রোমান রাজা জানতে চাইলেন বন্দীদের মাঝে কোন সাহাবী আছে কিনা? যদিও বন্দীরা অধিকাংশয়ই তাবেঈন ছিলেন –একমাত্র তিনিই দাড়িয়েছিলেন। তারা বলল একজন সাহাবী আছে (আব্দুল্লাহ বিন হুদাফা (রাঃ))।
রাজা তখন তাঁর সাথে সাক্ষাত করতে চাইলেন। উল্লেখ্য যে সাহাবারা তাদের কাছে বিশেষ ব্যাক্তি ছিল। এই রাজা সাহাবাদের বৈশিষ্ঠ্য সম্পর্কে জানতেন। সে বলল, ‘আমি আপনার সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দেব – অর্ধেক রাজত্ব দিব – যদি আপনি ইসলাম ত্যাগ করেন’।
আব্দুল্লাহ (রাঃ) বললেন আমি রাজত্ব চাই না – আপনার মেয়েও চাইনা। রাজা বলল “একজন মুসলিম বন্দীকে আন। ” তারা তাকে উত্তপ্ত তেলের মধ্যে ফেলে দিল। তেল এতই উত্তপ্ত ছিল যে, আব্দুল্লাহ বিন হুদাফা (রাঃ) বলেন – “আমি দেখলাম তেলের প্রচন্ড উত্তাপে তাঁর হাড় গোশতের মধ্য দিয়ে বের হয়ে আসছে”।
রাজা বলল – আমি আপনার সাথেও একই আচরন করব। আব্দুল্লাহ (রাঃ) বললেন “কোন সমস্যা নাই।” যখন আব্দুল্লাহ বিন হুদাফা (রাঃ) উত্তপ্ত তেলের উপর দন্ডায়মান হলেন তখন অঝোড়ে কান্না শুরু করলেন। রাজা বলল – এটাই আমি চেয়েছিলাম এটাই হল দুর্বলতার প্রকাশ। তাকে নিয়ে আস।“ রাজা তখন অনেক খুশী। যে আব্দুল্লাহ বিন হুদাফা (রাঃ) কে চাপে ফেলতে বাধ্য করতে পেরেছে। সে বলল – “আপনি কাঁদছেন কেন?” আব্দুল্লাহ বিন হুদাফা (রাঃ) ব্ললেন – “আমি সেজন্য কাদিনি যা আপনি ভাবছেন। যে কারণে আমি কাদছি তা হল, আমি এতই দুঃখিত যে আমার মাত্র একটি জীবন আল্লাহর পথে দান করার জন্য বিদ্যমান। আমি আশা করছিলাম যে আমার যদি ৯৯ টা জীবন হত যাতে একটার পর একটা জীবন এভাবে আল্লাহর পথে দান করতে পারতাম!” অন্য উপায় না পেয়ে রাজা বলল – “আমি শুধু চাই আপনি আমার কপালে একটা চুমু দিবেন – আমি সব বন্দীকে মুক্ত করে দিব।” আব্দুল্লাহ বিন হুদাফা (রাঃ) চিন্তা করলেন যেহেতু সব বন্দী মুক্ত হবে রাজার কপালে চুমু দিলে ক্ষতি কি? তিনি কাজটি করলেন এবং সব মুসলিম বন্দী মুক্তি পেল
আব্দুল্লাহ বিন হুদাফা (রাঃ) মদীনা ফিরে এলেন এবং ওমর (রাঃ) যখন ঘটনা শুনলেন তিনি মসজিদে এসে তাঁর কপালে চুমু দিলেন – এবং সকল মুসলিমকে বললেন তাঁর কপালে চুমু দেবার জন্যে। -অতএব সাহাবীরা ছিলেন সিরিয়াস মানুষ দ্বীনের জন্য।
(৪) ভাইরা আপনাদের প্রস্তুতি প্রয়োজন। কারন আল্লাহ আপনাদের পরীক্ষা করবেন। আপনি যখন স্কুলে যান – যেমন ধরুন আপনি ডাক্তারী পড়বেন – তখন আপনি আশা করবেন আপনার পরীক্ষা আসবে। প্রতি সেমিস্টারে আপনাদের পরীক্ষা দিতে হবে। ইসলামেও একই বিষয় ঘটবে। আল্লাহ বলেন – “লোকেরা কি ভেবেছে তারা ঈমান এনেছি বললেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে অথচ তাদের পরীক্ষা করা হবে না?”
যখন আপনি ডাক্তারী পড়াশুনা শেষ করে চাকুরীতে ইন্টারভিউ দিলেন তখন তারা আপনার সার্টিফিকেট দেখতে চাবে – পরীক্ষার ফলাফল দেখতে চাবে। ঠিক একই ব্যাপার যখন আপনি বলছেন যে আপনি বিশ্বাসী – আল্লাহতায়ালা এ দাবীর সত্যতা দেখতে চাবেন – এজন্য তিনি আপনার পরীক্ষা নিবেন। অতএব আপনার জীবনে পরীক্ষা আসবে এবং আপনি পরীক্ষা দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকবেন। যখন আপনি ইসলামী সংগঠনের একজন কর্মী হিসেবে কাজ করেন – তখন আরও বেশি প্রস্তুতি প্রয়োজন – কারন আপনি ঈমানের দাবীদার হিসেবে প্রথম কাতারে অবস্থান করছেন। কর্মী হিসেবে আপনার সমাজে নেতৃত্বের ভুমিকায় কাজ করতে হবে। আপনি তিনিই যিনি সংগঠক হিসেবে কাজ করছেন – প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন। অতএব আপনি আল্লাহতায়ালা কর্তৃক পরীক্ষার সম্মুখীন হবেন – এবং সে পরীক্ষাও সিরিয়াস পরীক্ষা। ক্ষুধার পরীক্ষা, ভয়ের পরীক্ষা, পারিবারিক সমস্যার পরীক্ষা, স্বাস্থ্যগত সমস্যা যেকোন পরীক্ষা সামনে আসবে। আপনার এর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আপনার সামনে যেই পরীক্ষাই আসুক ধৈর্যের সাথে তা মোকাবেলার জন্য আপনার সদাপ্রস্তুত থাকতে হবে।
শেষ কথা, ভাইরা যখন কোন ইসলামিক কাজে অংশ নেন – অর্গানাইজার হিসেবে – তখন আমাদের “জ্ঞান” ও “ইবাদতের” শক্ত ভিত্তি সর্বাগ্রে গড়ে তোলা আবশ্যক। আপনি যদি একজন ভালো অর্গানাইজার হন (প্রোগ্রাম/অনুষ্ঠান প্রস্তু করা, কনফারেন্স, স্টাডি সার্কেল, সেমিনার প্রস্তুত করা ইত্যাদি) তার কোন মূল্যই নাই যদি “ভিত্তি”ই না থাকে। শক্ত ভিত্তি দরকার জ্ঞান ও ইবাদত উভয়ের জন্যই । “অ্যাকটিভিস্ট” কাজ অনেক সওয়াব আনে আবার দ্রুত আপনাকে ধ্বংস করতে পারে যদি আপনার জ্ঞান ও ইবাদতের ভিত্তি না থাকে। সাহাবা (রাঃ) গন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছিল তাদের জ্ঞানের শক্ত ভিত্তি ছিল যা রাসুল (সাঃ) সরাসরি প্রশিক্ষণের ফলেই হয়েছিল। অতএব জ্ঞান ও ইবাদতের দুটোরই শক্ত ভিত্তি থাকতে হবে। এটা বলতে আমি কি বুঝাচ্ছি? এর মানে এ নয় যে খুটিনাটি জ্ঞান যা স্কলারদের থাকে – এর মানে হল মৌলিক বিষয়ে ইবাদতের তথা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের মৌলিক ভিত্তি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা থাকা এবং মন মানসিকতা ও বাস্তব জীবনে তা একচ্ছত্রভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকা। আপনি জানবেন নামাজ, রোজা, দোয়া ইত্যাদির সঠিক পদ্ধতি। পবিত্রতার পদ্ধতি। রাসুল (সাঃ) এর মৌলিক ইবাদতের পুরোপুরি চিত্র আপনি অবগত থাকবেন। আপনি যদি জ্ঞান ও ইবাদতের শক্ত ভিত্তি গড়ে না তুলেন অনেক সাংগঠনিক কাজ করলেও একদিন আপনি ধ্বংসপ্রাপ্ত ও বিলুপ্ত হবেনই।
আল্লাহতায়ালা আমদের হেদায়েত দান করুন এবং হেদায়েতের পথে দৃঢ় রাখুন। আমিন।
বিষয়: বিবিধ
২৭৮৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন