যারা বিজয়ের পূর্বে ব্যয় করেছে ও জিহাদ করেছে

লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ২৬ মে, ২০১৩, ০৪:৫৬:১৪ রাত

আল্লাহ তায়ালা সুরা হাদীদে বলেন,

" তোমাদের মধ্যে যারা বিজয়ের পরে অর্থ ব্যয় করবে ও জিহাদ করবে তারা কখনো সেসব বিজয়ের সমকক্ষ হতে পারে না যারা বিজয়ের পূর্বে ব্যয় করেছে ও জিহাদ করেছে৷ বিজয়ের পরে ব্যয়কারী ও জিহাদকারীদের তুলনায় তাদের মর্যাদা অনেক বেশী৷ যদিও আল্লাহ উভয়কে ভাল প্রতিদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷" (আয়াত: ১০)

এর বিশ্লেষণে সাইয়েদ আবুল আলা (রহ) তার তাফসীরে বলেন, " উভয়ের পুরস্কার লাভের যোগ্য৷ কিন্তু এক গোষ্ঠীর মর্যাদা অপর গোষ্ঠীর চেয়ে নিশ্চিতভাবেই অনেক উচ্চতর৷ কারণ, অত্যন্ত কঠিন পরিস্তিতিতে তারা আল্লাহ তা'আলার জন্য এমন সব বিপদাপদের সম্মুখীন হয়েছিলো যার সম্মুখীন অন্য গোষ্ঠিকে হতে হয়নি৷ তারা এমন পরিস্থিততে অর্থ খরচ করেছে যখন কোথাও এ সম্ভাবনা পরিদৃষ্ট হচ্ছিলো না যে, বিজয়ের মাধ্যমে এ ব্যয়ের ক্ষতিপূরণ হবে৷ তাছাড়া তারা এমন নাজুক সময়ে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে যখন প্রতি মুহূর্তে এ আশংকা ছিল যে, শত্রু বিজয় লাভ করে ইসলামের অনুসারীদের পিষে মারবে৷"

আমি দুটো ঘটনা উল্লেখ করছি। দুটো ঘটনা একত্রে আয়াতটির তাত্পর্য হয়ত এক ভিন্ন মাত্রায় বিশ্লেষন করবে। জানাবে বর্তমান কঠিন ইসলামী আন্দোলনের সময়ে আমাদের কর্মপদ্ধতি ইনশাল্লাহ!

(ঘটনা ১)

তাবুক অভিযান-পর্ব চলছে। ৭৮০ মাইল দুরের গন্তব্য। প্রচন্ড গরম। পর্যাপ্ত উট নেই বাহন হিসেবে। নেই রসদ পত্র। চলছে এক নিরব দুর্ভিক্খ মদিনায়। এমন অবস্থায় মহানবী(দ) সাহাবাদের তাবুক অভিযানের আকুল আবেদন জানালেন। সাহায্য নিবেদন পেশ করলেন। যাত্রাপথে সাহাবারা এতই তৃষ্ণার্ত হয়ে পরেন যে কয়েকটি বাহন উট জবাই করে তার আভ্যন্তরীণ পানি দিয়ে পিপাসা নিবারণ করতে হয়।

ওমর (রা) বলেন, " আমরা এতই পিপাসার্ত ছিলাম যে মনে হচ্ছিল গলা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।" এমনকি পবিত্র কোরআনে এই অভিযানকে 'দুর্দশার অভিযাত্রা' আখ্যায়িত করা হয়েছে।

এ ছিল মূলত এক মহা-পরীক্ষা -- কে আল্লাহর পথে সত্যবাদী - সর্বাবস্থায় আল্লাহর পথে জান ও মাল কুরবানি করতে প্রস্তুত - তা প্রমানেরই এক বাস্তব-পরীক্ষা!

এমন কঠিনতর পরিস্থিতিতে মহানবী (দ) এর আকুল আর্থিক সাহায্য-আবেদনের প্রেক্ষিতে ওসমান (রা) প্রথমে ১০০ রসদ-পূর্ণ উট দান করলেন। বুখারী (৫১৯১) থেকে হাদিসটি বর্ণিত। এরপর রাসুল (সা) আরও সাহায্য চাইতে থাকেন। ওসমান (রা) বলেন, "আমি ২০০ রসদ-পূর্ণ উট আল্লাহর রাস্তায় দান করলাম।" তারপর ও রাসুল (সা) আরও সাহায্য-আবেদন সবার কাছে পেশ করলে ওসমান (রা) ৩০০ রসদ্পুর্ন উট দানের ঘোষণা দিলেন।

মিম্বার থেকে এমতাবস্থায় মহানবী (দ) নেমে আসেন এবং বলেন, "এর পর (এ ঘটনার পর) ওসমান (রা) আর যাই-ই করুক না কেন তা তার বিরুদ্ধে যাবে না"!

তিরমিযি থেকে বর্ননায় এসেছে ওই সাহায্য নিবেদনের প্রেক্ষিতে ওসমান (রা) ১০০০ দিনার রাসুল (সা) এর সামনে পেশ করেন। মহানবী (স) এই মুদ্রা হাতে নিয়ে উল্টাতে থাকেন (toss) এবং খুশিমনে বলেন, "এর পর (এ ঘটনার পর) ওসমান (রা) আর যাই-ই করুক না কেন তা তার বিরুদ্ধে যাবে না"।

চিন্তা করুন, সফলতা কাকে বলে !!

কোন পরিস্থিতির দানের মাধ্যমে এই সফলতা এসেছে। চিন্তা করুন! বিস্তৃত আলোচনা নিস্প্রয়োজন।

(ঘটনা ২)

মক্কা বিজয়ের পর আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) এর নিকট একজন নও-মুসলিম আসলেন সুদুর তায়েফ থেকে।

'আপনি কি আমাকে চিনেছেন'?

'না' - আব্দুল্লাহ (রা) বললেন।

'আমি সেই মানুষ যিনি আজ থেকে বহু বছর পূর্বে একবার মক্কায় এসেছিলাম এবং আপনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম "কাবার সামনে ঐ যে একজন মানুষ এক বিচিত্র পন্থায় ইবাদত করছেন-- তার পেছনে একজন মহিলা এবং একজন বালক ঐ ব্যক্তিকে অনুসরণ করছেন - তারা কারা? তারা কি-ই বা করছেন?"

আপনি বলেছিলেন, "ঐ লোকটি হলেন মুহাম্মদ - আমার ভাতিজা - সে এক নতুন ধর্মের প্রচারক হিসেবে নিজকে দাবি করছেন। আর তার পেছনের দুইজন হলেন তার পত্নী খাদিজা এবং তার চাচাত ভাই আলী। তারা ওই নতুন ধর্মের ইবাদত করছেন"।

আজ আমি ভাবি, 'তখন -- ঠিক তখন যদি আমি ইসলাম গ্রহণ করতাম তবে আমি হতাম বিশ্বের বুকে চতুর্থ সৌভাগ্যবান মানুষ।'

সেই একটি সুযোগ হাতছাড়া আজ আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছে!! আহারে, যদি তখন চিন্তা করতাম আর সেই সুযোগ হাতছাড়া না করতাম!!

*************

আজ বাংলাদেশে ইসলাম-দ্রোহী শক্তির সাথে ইসলামী শক্তি এক কঠিন সংঘাতের মুখোমুখি - রিমান্ডের অত্যাচার, রাজপথের আন্দোলন, তথ্য, বুদ্ধিবৃত্তিক ও ডিপ্লোমেটিক প্রচেষ্টা, অগণিত অসহায় দু:স্থ ও অত্যাচারিত পরিবারকে সহায়তা দানের প্রয়োজনীয়তা সবই আল্লাহর তরফ থেকে আমাদের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ। এসব আবার 'সুযোগও' বটে! সুযোগের সদ্ব্যবহার করার মাধ্যমে কে পরীক্ষায় কৃতকার্য হচ্ছি - নিজকে অনেক আগিয়ে নিচ্ছি - এমন অর্জন আসলেই এক বিরাট অর্জন!

এই কঠিন অবস্থা একদিন অবশ্যই শেষ হবে! আল্লাহ তার দ্বীনকে অবস্যই এক কঠিন অভিযাত্রা র মাধ্যমে বিজয়ী করবেন। এটি আল্লাহর ওয়াদা! কিন্তু দেখার বিষয় - এই অভিযাত্রায় কে কেমন অবদান রাখতে পারে তা নিয়ে!

কে এই মহা-সুযোগগুলো গ্রহনে প্রস্তুত? সে মহেন্দ্রক্ষণ যে উপস্থিত!!

বিষয়: বিবিধ

১৭৬৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File