সাইদীর মামলায় প্রসিদ্ধ/অপ্রসিদ্ধ সাক্ষীদের এবং রাষ্ট্রপক্ষের প্রতারণার সহজ প্রমান
লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ২৯ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৭:৩৩:৪১ সকাল
[১] সাইদীর মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ২০১২ সালের ২০ মার্চ ৪৬ জন সাক্ষীর একটি তালিকা দিয়ে দরখাস্ত করে জানায়, এসব সাক্ষীদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা আদৌ সম্ভব নয়।
এই ৪৬ জন সাক্ষীর মধ্যে জুয়েল আইচ, হুমায়ূন আহমেদের ভাই লেখক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিন, সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট আলী হায়দার খান, হুমায়ূন আহমেদের বোন সুফিয়া হায়দারের নাম ছিল।
পিরোজপুরের তৎকালীন এসডিপিও ফয়জুর রহমান হত্যার সবচেয়ে বড় সাক্ষী এবং বিচারপ্রার্থী হতে পারতেন তার স্ত্রী, সন্তান, জামাতা। কিন্তু তারা কেউই আসেননি। কারণ এই হত্যাকান্ডের সাথে মাওলানা সাঈদীর ন্যূনতম কোনো সম্পর্ক আছে বলে তাদের জানা নেই। ফয়জুর রহমানের জামাতা এডভোকেট আলী হায়দার খান এই ট্রাইব্যুনালের ২শ' গজের মধ্যেই আছেন। অথচ তাকে হাজির করা সম্ভব নয় জানিয়ে পুলিশের লেখা বক্তব্য সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করার আবেদন করেন প্রসিকিউশন। ফয়জুর রহমানের স্ত্রী আয়েশা ফয়েজ তার স্বামী হত্যার জন্য সুনির্দিষ্টভাবে আসামীদের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছিলেন। সেই মামলার নথি আনা হয়নি। তিনি একটি বই লিখেছেন ‘জীবন যেমন' বইটি তারা বিবেচনায় আনেননি। এই বইয়েও সাঈদী সাহেবের নাম নেই। ঐ মামলায়ও আসামীর তালিকায় সাঈদী সাহেবের নাম নেই। ফয়জুর রহমানের ছেলে ড. জাফর ইকবাল, মেয়ে সুফিয়া হায়দারকেও সাক্ষী হিসেবে আনা হয়নি।
ড. জাফর ইকবাল, যাদুকর জুয়েল আইচ, শাহরিয়ার কবিরকে হাজির করা সম্ভব নয়, ব্যয়বহুল, এ কথা বলে তারা পুলিশের লিখিত বক্তব্যকে জবানবন্দি উল্লেখ করে তা ১৯ (২)তে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করার আবেদন জানান। জাফর ইকবাল বলেছেন, তিনি নিশ্চিত নন যে তার পিতার হত্যার সাথে সাঈদী সাহেব জড়িত। এজন্য আসেননি। তিনি পুলিশের কাছে বাস্তবে কোনো জবানবন্দিও দেননি। যাদুকর জুয়েল আইস ঢাকাতেই থাকেন। কেন তাকে হাজির করা যাবে না? আদালতকে তারা মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির দৈনিক জনতার সাক্ষাৎকার দিয়ে জানিয়েছেন যে, তিনি সাঈদীর মামলার সাক্ষী নন। তিনি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে কোনো জবানবন্দিও দেননি।
এ ধরনের মামলায় ভুক্তভোগীরা সাক্ষ্য দেয়ার জন্য কোর্টের সামনে লাইন দিয়ে দাড়িয়ে থাকে (হেগের বিচারের মামলায় প্রতিয়মান)। ৪০ বছর পর বিচার হচ্ছে। জাফর ইকবাল, সুফিয়া হায়দারদের তো দৌঁড়ে আসা উচিত ছিল এ মামলায় সাক্ষ্য দেয়ার জন্য। তাদের মা জীবিত আছেন। কিন্তু তারা কেউ আসলেন না?
এভাবেই তদন্ত কর্মকর্তারা ১৯(২)তে কোর্টকে অসত্য তথ্য দিয়ে ৪৬ জনের কথিত জবানবন্দি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করার আবেদন করেছিলেন। আদালত তাদের মধ্য থেকে প্রথমে ১৫ জন এবং পরে আরও ১ জনের বক্তব্য জবানবন্দি হিসেবে গ্রহণ করে।
এই আদেশটাও সঠিক ছিল না। তারা এই ১৬ জন সম্পর্কেই আদালতকে ফ্রড করেছে। এর পরে এই তদন্ত কর্মকর্তার কি গ্রহণযোগ্যতা থাকতে পারে?
[২]
ভাগিরথীকে হত্যার সাথে মাওলানা সাঈদীকে তারা জড়িয়েছে সম্পূর্ণ মিথ্যাভাবে। তার ছেলে গনেশ সাহাকে হাজির করা সম্ভব নয় বলে এই আদালতে তথ্য দিয়ে তার পক্ষে লিখিত একটি বক্তব্যকে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করিয়ে নেয়। অথচ গনেশ এখানে এসে পরিষ্কার বললেন, তার মাকে সেনাবাহিনীর লোকেরা জিপে করে টেনে-হেঁচড়ে হত্যা করেছিল। এর সাথে সাঈদী সাহেবের সম্পর্ক নেই। তিনি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে কোন জবানবন্দী দেননি। এটা এই ট্রাইব্যুনালে এসে বলেছেন।
[৩]
উষারানী মালাকার তদন্ত কর্মকর্তাকে কোন জবানবন্দী দেননি তা টিভি সাক্ষাৎকারে বলেছেন। আশিষ কুমার মন্ডল, সমর মিস্ত্রি, সুমতি রানী মন্ডল কারো কাছ থেকেই কোন জবানবন্দী নেননি আইও। এদেরকে সাক্ষী দেওয়ানোর জন্য সেইফ হোমে এনে দীর্ঘদিন রাখা হয়েছিল। ট্রেনিং দেয়া হয়।
[৪]
আব্দুল লতিফ হাওলাদারকে ৪ বার সেইফ হোমে আনা হয়। ট্রাইব্যুনালকে জানানো হয় যে তারা ভারতে পালিয়ে গেছে।
[৫]
১০-১২ জানুয়ারি ২০১২ শহিদুল ইসলাম খান সেলিমকে ঢাকায় এনে সেইফ হাউজে রাখা হয়। তাকে ট্রাইব্যুনালের এজলাসেও আনা হয়। অথচ দরখাস্ত দিয়ে বলা হয় যে, হাজির করা সম্ভব নয়।
আসল কথা:
(১)
এসব সাক্ষী সরকারের শিখিয়ে দেয়া কথা বলতে রাজি হননি বিধায় তাদেরকে হাজির করা হয়নি।
সেইফ হাউজের ডকুমেন্টে কোন সাক্ষী কত তারিখে এসেছে, কত তারিখে কোথায় কোথায় গিয়েছে, কোন ওয়াক্তে কি খেয়েছে তার বিশদ বিবরণ এতে রয়েছে। সেইফ হাউজের টেলিফোন বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এর ইনচার্জ ইন্সপেক্টর কালাচাঁদ অন্য একটি মামলায় হাজিরা দিতে কোর্টে যান কটায় এবং কটায় ফেরেন তাও সেইফ হাউজের ডায়েরীতে আছে। এসব সত্ত্বেও প্রসিকিউশন এই ডকুমেন্ট অস্বীকার করছে। আসলে তারা যে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ট্রাইব্যুনালকে বিভ্রান্ত করে ১৯(২)তে ১৬ জন সাক্ষীর কথিত জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করিয়েছেন সেটা জায়েজ করতেই সেইফ হাউজের অস্তিত্ব অস্বীকার করছে। এত বিশাল ডকুমেন্ট কারো পক্ষেই তৈরি করা সম্ভব নয়। একজন সাক্ষীকে তারা সেইফ হাউজে ৪৭ দিন পর্যন্ত রেখে ট্রেনিং দিয়েছে। তারপরেও মিথ্যা বলাতে পারেনি বিধায় তিনি চলে গেছেন।
(২)
এই বিচার চলছে রাজনৈতিক আবেগ দিয়ে। সেই আবেগ নানা অর্ডার এবং কার্যক্রমের মধ্যে প্রতিফলিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই ট্রাইব্যুনালের ন্যূনতম কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই।
(৩)
স্কাইপি কেলেঙ্কারী ফাঁস হয়ে যাওয়ায় সেটা প্রমাণ হয়েছে। সারাবিশ্বে এই বিচার প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সারাবিশ্বে যেমন এই বিচারের গ্রহণযোগ্যতা শূন্যের কোঠায় এসে গেছে তেমনি দেশের ভিতরেও বুদ্ধিজীবীরা এখন বলছেন যে, এই ট্রাইব্যুনালের কোন বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। এখানে যেসব সাক্ষী আনা হয়েছে তার অধিকাংশই শোনা সাক্ষী। প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী নেই।
(৪)
বিচারকরা ইমোশন হতে পারেন না। তারা ইমোশন হয়ে বিচার কাজ করতে পারেন না। দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মামলার রায়ের প্রমান রয়েছে।
(৫)
এই মামলায় আনীত ১৯টি অভিযোগের একটিও প্রমাণ করতে ন্যূনতম সাক্ষ্য-প্রমাণ জোগাড় করতে পারেননি প্রসিকিউশন। বরং তাদের নিজেদের সাক্ষীরাই স্ববিরোধী কথা বলেছেন। এতে তাদের মামলা তারাই শেষ করে দিয়েছে।
বিষয়: রাজনীতি
১৪৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন