দুই রকম মানুষ
লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ২৫ জানুয়ারি, ২০১৩, ০২:৪৮:৫০ দুপুর
দুই রকম মানুষ! ইতিহাস সাক্ষী দেয় - সকল সময় ও অঞ্চলে মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত হয় - (১) ইসলাম প্রতিষ্টার জন্য প্রানান্ত চেস্টা কারী দল এবং (২) ইসলাম-বিরোধী দল।
প্রশ্ন হতে পারে - যারা ইসলামী আন্দোলন পছন্দ করেন না - তারা কোথায়? কোন দলে?
আল্লাহ বলেন -- "তিনি রাসুল পাঠিয়েছেন হেদায়েত আর সত্য ধর্ম সহকারে -- যাতে করে অন্য সকল ধর্ম ও মতের বিরুদ্ধে ইসলাম কে বিজয়ী করতে পারে -- মুশরিকদের কাছে তা যতই অসহনীয় হোক না কেন।" কোরান শরীফের তিন জায়গায় (তওবা, ফাতহ এবং সফ) একই উক্তি রয়েছে।
সুরা ইউসুফে আছে - "হুকুম দেয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ"
ইসলামী আন্দোলন হলো মূলত 'হুকুম একমাত্র আল্লাহর হওয়ার জন্যই' একদল লোকের প্রানান্ত প্রচেষ্টা - যেই চেষ্টা মুশরিকদের কাছে অসহনীয় হয় সকল সময়ে - সকল স্থানে।ইসলাম বিদ্বেসীরা অত্যাচারের স্টীম রোলার চালায় যে সকল মুসলমানদের উপর সকল সময়ে সকল স্থানে ।
এত পরিস্কার 'শাব্দিক' আদেশের পর আপনি নিজেই চিন্তা করুন --যারা ইসলামী আন্দোলন পছন্দ করেন না - তারা কোথায় - কোন দলে অবস্থিত? নিচে খেয়াল করুন -
আল্লাহ বলেন -" তোমরা কি একথা মনে করে রেখেছো যে তোমাদের এমনিই ছেড়ে দেয়া হবে? অথচ আল্লাহ এখনো দেখেননি তোমাদের মধ্য থেকে কারা (তার পথে )সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালালো এবং আল্লাহ ,রসূল ও মুমিনদের ছাড়া কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধু রূপে গ্রহণ করলো না?"
"তোমরা কি হাজীদের পানি পান করানো এবং মসজিদে হারামের রক্ষণাবেক্ষণ করাকে এমন ব্যক্তিদের কাজের সমান মনে করে নিয়েছ যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি এবং সংগ্রাম -সাধনা করেছে আল্লাহর পথে ?"
(সুরা তওবা: ১৬, ১৯)
এ আয়াতগুলো অনুযায়ী চিন্তা করুন যারা নামাজ রোজা করেন কিন্তু ইসলামী আন্দোলন পছন্দ করেন না - তারা কোথায় অবস্থিত?
সংগ্রাম-সাধনা রাসুল (দ) এবং সাহাবারা কিভাবে করেছেন? কোনো মসজিদে দিন-রাত পরে থেকেছেন? নাকি নিরবছিন্ন রোজা রেখেছেন? বরং রাসুল (দ) এর সিরাত পড়লে দেখবেন -- নিরবছিন্ন একটার পর একটা শত্রুর বিরুদ্ধে ইসলামকে রক্ষা এবং অগ্রসর করার মানসে 'জিহাদে' রত ছিলেন। আবুবকর (রা) একই সাথে তত্কালীন দুই পরাশক্তি 'রোমান' আর 'পারস্সের' বিরুদ্ধে জিহাদ করেছেন। এদের জন্যই কি অসংখ আয়াতের মধে নিচের আয়াত প্রযোজ্য নয়?
"হে নবী! বলে দাও, যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান ও তোমাদের ভাই তোমাদের স্ত্রী ,তোমাদের আত্মীয় -স্বজন , তোমাদের উপার্জিত সম্পদ , তোমাদের যে ব্যবসায়ে মন্দা দেখা দেয়ার ভয়ে তোমরা তটস্থ থাক এবং তোমাদের যে বাসস্থানকে তোমরা খুবই পছন্দ কর-এসব যদি আল্লাহ ও তার রসূল এবং তার পথে জিহাদ করার চাইতে তোমাদের কাছে বেশী প্রিয় হয়, তাহলে আল্লাহর ফায়সালা তোমাদের কাছে না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা কর আল্লাহ ফাসেকদেরকে কখনো সত্য পথের সন্ধান দেন না"৷ (সুরা তওবা: ২৪)
যারা নফসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম কে জিহাদ বলে থাকেন - উপরোক্ত আয়াত এক্ষেত্রে জিহাদ কে সংগায়িত করতে কিভাবে মানানসই হয় আমার বুঝে তা আসে না।
জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্টার ক্ষেত্রে ঠিক একই ভাবে প্রান্ত চেস্টা করে যাছে ৪৭ এর পর থেকে। মুসলিম নামধারী মুনাফিকদের কাছে তাই তারা অস্পৃস -- অপাংতেও। আইয়ুব শাহির সময় জামায়াতের উপর চলল অত্যাচারের স্টিম -রোলার -- সব নেতারা বন্দী হলেন - ইসলামী চিন্তাবিদ ও মনীষী সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদি কে ফাসির ঘোসনা দিল -- যদিও তা কার্যকর করতে পারে না মুসলিম বিশ্বের চাপে আর তীব্র আন্দোলনে।
স্বাধীনতা-পরবর্তী 'আদর্শ-বর্জিত', অত্যাচারী, চোষক-জোক সদৃশ আওয়ামী লিগ, বি,এন,পি আর এরশাদের হাতে ইসলামী শাসন-প্রতিস্টাতে প্রচেস্টারত জামায়াতে ইসলামীর উপর অত্যাচার চালিয়েছে এবং চালাচ্ছে।
এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই তাদের জন্য (১) যারা কোরআন আর হাদিসের উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখেন তারাই বিশ্বাস রাখেন ইসলামী আন্দোলনের উপর এই অত্যাচার মূলত ঈমানদারদের জন্য পরীক্ষা -- এভাবেই আল্লাহ সত্যকে তথা সত্যাশ্রয়ী দলকে মিথ্যা থেকে আলাদা করে নেন।
"লোকেরা কি মনে করে রেখেছে, “আমরা ঈমান এনেছি” কেবলমাত্র একথাটুকু বললেই তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে, আর পরীক্ষা করা হবে না? অথচ আমি তাদের পূর্ববর্তীদের সবাইকে পরীক্ষা করে নিয়েছি আল্লাহ অবশ্যই দেখবেন কে সত্যবাদী এবং কে মিথ্যুক৷ আর যারা খারাপ কাজ করছে তারা কি মনে করে বসেছে তারা আমার থেকে এগিয়ে চলে যাবে ? বড়ই ভুল সিদ্ধান্ত তারা করছে৷ .... যে ব্যক্তিই প্রচেষ্টা- সংগ্রাম করবে সে নিজের ভালোর জন্যই করবে৷ (সুরা আনকাবুত: প্রথম দিকের আয়াত-সমূহ )
দেখুন পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারীদের সাথে আল্লাহ কিভাবে জিহাদ কে সম্পর্কযুক্ত করেছেন -- নিরপেক্ষভাবে ভাবুন - জিহাদ ছাড়া অন্য কোনো কাজে কি আসলেই বাধা আসে? দিনের পর দিন নামাজ পড়ুন বা রোজা রাখুন - আপনার পরিবার কি বাধা দিবে? সরকার কি বাধা দিবে? আপনি কি আবু জাহেল, আবু লাহাব সদৃশ মানুষকে আপনার অগ্রপথে আপনার জীবন-নাশের পরিকল্পনাকারী আর প্রচেস্টাকারী হিসেবে দেখতে পাবেন আদৌ এই জীবনে? তাহলে এই আয়াত গুলো কিভাবে কিভাবে ইসলামী আন্দোলন-বর্জিত লোকদের সাথে সম্পর্কিত হবে?
অথচ আল্লাহ ইসলাম প্রতিষ্টার কঠিন কাজে অগ্রসর লোকদের 'ঈমানদার' বলে অভিহিত করেছেন!
(২) এবং যারা আখেরাতে নায়-বিচার পাওয়ার বিষয়টা পূর্ণ বিশ্বাস রাখেন।
পৃথিবীর ইতিহাস সাক্ষী দেয় যে -- ইসলামী আন্দোলনে আপ্রান চেস্টাকারীদের কোনো 'মানবাধিকার' থাকেন না - গণতন্ত্র তাদের জন্য কাজ করে না - নায়-বিচার তাদের জন্য অপ্রযোজ্য -
(অ) ইসলামে অবিস্সাসী শাসক এবং (আ) মুসলিম নামধারী মুনাফিক শাসক দুই দলই একি ভাবে ইসলাম প্রতিস্টাতে জিহাদরত মুসলমানদের একই ভাবে অত্যাচার করেছে চিরকাল --
* প্রপাগান্ডার মাধমে অত্যাচার - হজরত ইসা (আ) যিনি ছিলেন দরিদ্র -- তাকে শাসক গোষ্টির চরম প্রপাগান্ডাতে সারা দেশবাসী প্রমান ছাড়াই ইসা(আ) কে চরম পাপী লোক হিসেবে মনে করেছিল। তাই যখন এক ঈদের দিনে চতুর শাসক জনগনের কাছে জানতে চাইল -- তারা কার হত্যা চান? ইসা (আ) নাকি এক দস্সু 'বারাব্বা'র যে ছিল প্রমানিত ডাকাত আর হত্যাকারী। সমগ্র দেশবাসী বলল -- 'ইসা-র হত্যা চাই'! কোনো প্রমান ছাড়া দেশের সবচেয়ে নীতিবান এবং ভালো মানুষকে শাসক-চক্র দ্বারা প্রচার-প্রপাগান্ডার মাধ্যমে সবচেযে 'খারাপ' প্রমান করার ষড়যন্ত্র কার্যকর হয় তখন।
এটা ইতিহাস -- যা মুসলমানদের জন্য সকল কাল ও অঞ্চলে পুনরাবৃত হয়।
* নিরপরাধদের হত্যা - রাজা হিরোদের এক মাতাল পুত্রর নর্তকীকে খুশী করার জন্য বন্দী হজরত ইআহ্য়াহ (আ) এর কর্তিত মস্তক উপহার দেয়া মুনাফিক তথা কাফের জন্য এক সাধারন কাজ। ইসলামী আন্দোলনের লোকদের সাথে কাফেররা বা মুনাফিকরা যুগে যুগে এভাবেই আচরণ করে এসেছে।
রাসুল (সা) এর কাছে কিছু অত্যাচারিত সাহাবী যখন অভিযোগ করেছিল অত্যাচার সহ্য না করতে পেরে -- রাসুল (দ) উত্তরে বলেছিলন - অতীতে অনেক আল্লাহর পথের অভিযাত্রীদের করাত দিয়ে দুই ভাগে চিরে ফেলা হয়েছিল -- লোহার চিরুনি দিয়ে কারো কারো গোস্ত চিরে ফেলা হয়েছিল -- তবু তারা ঈমান-চ্যুত হননি।
আপনি চোখ মেলে দেখুন -- ইসলামের জন্য এভাবে প্রমান-বিহীন অপবাদের বোঝা কারা মাথায় নিয়েছেন আর নির্দয়ভাবে শাসক-সম্প্রদায় কাদের হত্যা করে আর দেশের মানুষ চোখ বুঝে থাকে অথবা বাহবা দেয়?
ইমাম আবু হানিফাকে মুসলিম নাম ধারী শাসক মনসুর বেত্রাঘাতে জর্জরিত করেছিল -- ইমাম মালিক (র) কে অত্যাচারে তার দুই হাত নষ্ট করেছিল মুনাফিক শাসক-সম্প্রদায় -- ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল কে অত্যাচারের জন্য সারা শরীর বেধে হাতির সামনে ফেলে দেয়া হয়েছিল -- ইমাম তাইমিয়াকে জেল খানে বন্দী রেখে অত্যাচার করা হয়েছিল - যিনি শেষ পর্যন্ত জেলখানায় ইন্তেকাল করেন -- কুচক্ত্রী শাসক জেলখানায় তাকে কাগজ-কলম সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল - না পাছে তিনি ইসলামী সাহিত্য লিখে যেতে থাকেন!
সময় যায় -- একই ঘটনা আবার ফিরে আসে --
বিংশ শতক! মিশরে সাইয়েদ কুতুব কে জেলখানায় অত্যাচার করা হয় হিংস্র কুকুর লেলিয়ে দিয়ে -- 'মাইলস্টোন' বই লেখার জন্য মুসলিম নামধারী স্বৈরাচার নাসের জামাল তাকে ফাসি দেন -- শাহাদাতের গৌরবান্নিত সুধা পান করেন তিনি -- তার অজস্ত্র অনুসারী। সেই মুসলিম ব্রাদারহুড রক্তের পথ পারি দিয়ে সক্ষম হয়েছে মিশরে ইসলামের পতাকা উত্তোলন করতে।
কালেমার পতাকা বুলন্দ করার নিয়তে প্রতিষ্টিত জামায়াতে ইসলামীকেই একই পথ পারি দিতে হচ্ছে -- অপবাদের মিথ্যা বোঝা মাথায় নিয়ে পরম ধৈর্যের প্রমান দেখাচ্ছেন দেশের সবচেয়ে আদর্শ আর নীতিবান মুসলিমরা -- যারা এই লোকদের সাথে মিসেছেন -- তাদের বক্তব্য শুনেছেন বা বই পড়েছেন -- সর্বপরি নিজের চোখে তাদের কার্যকলাপ দেখেছেন -- আর স্বাধীনতা-উত্তর ৪২ বছর ধরে ইসলাম-বর্জিত শাসকদের কার্যকলাপ দেখেছেন (নিজের চোখে দেখেছেন -- কারো মুখে শুনে না!) তারা এই দুই ধরনের মানুষদের তথা (১) ইসলাম প্রতিষ্টার জন্য প্রানান্ত চেস্টাকারী দল এবং (২) ইসলাম-বিরোধী দল কে পার্থক্য করতে পারবেন -- শুধু প্রয়োজন নিরপেক্ষ মনে ইতিহাস কে স্বরণ করে পর্যালোচনা করা ।
শুধু তাই নয় ইসলামের কথা বলার জন্য তাদের গ্রেফতার করে জেলখানা ভরে ফেলা হচ্ছে -- অত্যাচার করে অন্ধ করে দেয়া হচ্ছে -- পঙ্গু করা হচ্ছে -- মেয়েদের জেলখানায় বন্দী করা হচ্ছে -- পুলিশ বিষাক্ত গ্রেনেড ব্যবহার করছে জামায়াত তথা ইসলামী দলএর লোকদের হত্যা করতে -- রিমান্ডে নিয়ে তীব্র অত্যাচার করা হচ্ছে নেতা-কর্মীদের-- সব ই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ইসলামী অন্দোলনের জন্য নিবেদিত ঈমানদারদের উপর মুনাফিক আর কাফেরদের অত্যাচার -- মানবাধিকারহীন, গণতন্ত্র,নায়-বিচার অবরুদ্ধ শোষণ মাত্র!
সফলতার মানদন্ডে ইয়াহ্য়াহ (আ) শহীদ হওয়ার পর তার কোনো ক্ষতি হয় নাই! -- তার নির্যাতিত বাস্তুহারা সহকর্মীদের ক্ষতি হয় নাই -- বরং ইতিহাস নির্যাতিত মজলুমদের চিরকাল স্বরণ রাখ্বে আর পরকালের অনন্ত সাফল্য তো বাকিই রইলো -- কিন্তু স্বৈরাচার শাসক আর তাদের সমর্থনকারী নিরব দেশবাসীকে কি কেউ এই ইহ-জগতে মনে রেখেছে? আর পরকাল কি ওই মুনাফিক-জনগোষ্টির জন্য সুখকর হবে?
আপনি কোন দলে যেতে চান? যদি আল্লাহর বাণী কোরআন আর ইতিহাসের শিক্ষা বিশ্বাস করেন - যদি বিশ্বাস করেন 'ঈমানদারদের জন্য আল্লাহর পরীক্ষার ধরন -- তবে আপনার কোন দলে যাওয়া উচিত দুই জগতের প্রকৃত সাফল্যের জন্য?
বিষয়: রাজনীতি
১৭০৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন