মাত্র ৯ জন আর অগনিত অপ্রতিবাদী নিরপেক্ষ জনগণ!

লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ২৪ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৬:১১:১৪ সকাল

সমাজে ভালো মানুষ যারা অন্যায়ে প্রতিবাদী হন তারা সংখ্যায় খুব ই কম থাকে -- একই ভাবে খুব খারাপ মানুষ যারা সকল খারাপ কাজের পরিকল্পনা আর বাস্তবায়নে নিয়োজিত থাকে তারাও কম থাকে। বাকি সকল লোক স্বার্থপর - নিজের সুখ-ভোগে নিয়োজিত - ঝুট-ঝামেলা এড়িয়ে শুধু নিজকে নিয়ে অমৃত্তু ব্যস্ত এই বিরাট সংখ্যক লোকজন। আল্লাহ যদি থেকে থাকেন আর তিনি যদি খারাপদের শাস্তি দেন - তবে নিরপেক্ষ (যারা অন্যায়ের কোনো প্রতিবাদ করে না - শাসকের অমানবিক আচরণের প্রতিবাদ করে না) দের সাথে আল্লাহ কি আচরণ করবেন ?

সালেহ (আ) যখন তার জাতিকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন খুব নগন্য সংখ্যক লোক আসেন -- এরপর ঘটনাক্রমে তার অলৌকিক উটনীকে হত্যা করতে (দেয়া ওয়াদা ভঙ্গ করে) তত্পর হয় মাত্র ৯ জন ইতর ক্ষমতাশীল লোক। চিন্তা করুন - এত বিশাল জনগোষ্টির মধ্যে মাত্র ৯ জন খারাপ নেত্রী-স্থানীয় লোক ছিল যারা সকল খারাপ কাজের পরিকল্পনা আর বাস্তবায়ন করত --

" সে শহরে ছিল ন’জন দল নায়ক যারা দেশের বিপর্যয় সৃষ্টি করতো এবং কোন গঠনমূলক কাজ করতো না৷ তারা পরস্পর বললো “আল্লাহর কসম খেয়ে শপথ করে নাও, আমরা সালেহ ও তার পরিবার পরিজনদের উপর নৈশ আক্রমণ চালাবো এবং তারপর তার অভিভাবককে বলে দেবো আমরা তার পরিবারের ধ্বংসের সময় উপস্থিত ছিলাম না, আমরা একদম সত্য কথা বলছি৷” (নামল:৪৮-) এদের মাঝে সবচেয়ে খারাপ লোকটা (সুরা কামার-২৩-) উটনীকে হত্যা করে সকল ওয়াদা ভঙ্গ করে।

কিন্তু আল্লাহর আজব এসেছিল পর এই ৯ জন সহ সমগ্র দেশবাসীর উপর যারা নিরপেক্ষ থেকেছিল - কোনো খারাপ কাজে বাধা দেয় নি তাদেরও উপর :

"এ চক্রান্ত তো তারা করলো এবং তারপর আমি একটি কৌশল অবলম্বন করলাম, যার কোন খবর তারা রাখতো না৷ অবশেষে তাদের চক্রান্তের পরিণাম কি হলো দেখে নাও৷ আমি তাদেরকে এবং তাদের সমগ্র জাতিকে ধ্বংস করে দিলাম৷ ঐ যে তাদের গৃহ তাদের জুলুমের কারণে শূন্য পড়ে আছে, তার মধ্যে রয়েছে একটি শিক্ষানীয় নিদর্শন যারা জ্ঞানবান তাদের জন্য। আর যারা ঈমান এনেছিল এবং নাফরমানী থেকে দূরে অবস্থান করতো তাদেরকে আমি উদ্ধার করেছি"৷ (নামল: ৫০-৫৩)

প্রশ্ন হলো - মাত্র ৯ জন খারাপ কাজ করত কিন্তু সারা দেশবাসীকে কেন ধংশ করা হয়ে ছিল? কারণ দেশবাসী তাদের অন্যায়-অত্যাচার আর ফাসাদ-এর বেপারে জানত কিন্তু কোনো প্রতিবাদ করত না। থামাত না। তারা ভাবত তারা খাবে দেবে আরাম - করবে কোনো খামেলাতে যাবে না - নিরাপদে জীবন কাটাবে - কোনো ঝক্কি খামেলাতে জড়াবে না -

কিন্তু আল্লাহ বলেন - লোকেরা হয় হিজ্বুল্লাহতে (আল্লাহর দলে) অথবা হিজ্বুস-শায়তানে (শয়্তানেল দল) -- এই দুই দলের যেকোনো -একদলে অবস্থিত - মাঝখানে কোনো 'গ্রে-এরিয়া' নাই! মাঝখানে আর কোনো অবস্থান নাই। তাই ঝক্কি-ঝামেলা থেকে দুরে অবস্থিত লোকদের প্রতি আল্লাহর একই রকম অভিশাপ এবং শাস্তি এসেছিল যেভাবে ওই ৯ অভিশপ্তের উপর আল্লাহর গজব এসেছিল।

সময় যায় -- একই ঘটনা আবার ফিরে আসে।

বাংলাদেশে ইসলামের জন্য নিবেদিত কিছু মানুষকে মিথ্যা অপবাদে জেলে পুরে শাস্তির প্রতিকল্পনা করছে স্বৈরাচারী শাসক। মেয়েদের জেলে-খানে বন্দী করছে - অত্যাচার চালাচ্ছে - লোকদের অত্যাচার করে পঙ্গু করা হচ্ছে - অন্ধ করে দেয়া হচ্ছে - মানুষ গুম হয়ে যাছে - মধ্যবিত্তের জীবন দুব্ভিক্ষ-সম হয়ে গিয়েছে- পাপাচারী শাসক টাকার পাহাড় জমাচ্ছে সাধারণ মানুষের রক্ত চোষণ করে।

মুল পরিকল্পনাতে কিন্তু বেশি মানুষ নেই। সামান্য কিছু 'ইতর পাপী' ক্ষমতাশীল সব খারাপ কাজের পরিকল্পনা করছে - আল্লাহর দলের লোকদের ধংসের জন্য অমানবিক, বিচার-বিহীন সকল কাজে দিবা-রাত্র তত্পর রয়েছে।

কিন্তু অধিকাংশ লোকজনই চুপ - নিরপেক্ষ - কোনো অন্যায় দেখে না - অফিস যায় - ফিরে আসে - পুরোপুরি নিজেকে আর নিজের পরিবারকে নিয়ে ব্যস্ত সার্থপর পশুর মত দিন কাটাচ্ছে। ঝুট-ঝামেলা পূর্ণমাত্রায় এড়িয়ে পৃথিবী নিয়ে পরে আছে - যেন এই পৃথিবীই তাদের সব কিছু! পরকালের পূর্ণ বিশ্বাস আর আল্লাহর বাণীতে নিভরতা থাকলে এরূপ আচরণ এসব মুসলমানদের শোভা পেত না।

চিন্তা করুন - যদি আল্লাহর আজাব স্বৈরাচারী জনপদে এসে যায় - এরা কি রক্ষা পাবে? সালেহ (আ) এর নিরপেক্ষ জনগোষ্টি কি রক্ষা পেয়েছিল?

বিষয়: রাজনীতি

১২৪৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File