"ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের পরীক্ষা"; মুলঃ আনোয়ার আওলাকি

লিখেছেন লিখেছেন ড: মনজুর আশরাফ ২৩ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৬:২৩:৪১ সন্ধ্যা

আপনাদের ইসলাম ধর্মকে সিরিয়াসভাবে নিতে হবে। আল্লাহ প্রদত্ত জীবনবিধান কোন পার্টটাইম চাকুরী নয় – এটা এমন কোন বিষয় নয় যা আপনি তখন করবেন যখন আপনার ফ্রিটাইম বিদ্যমান। এটা একটি পুর্নাঙ্গ জবাবদীহিতা এবং কমিটম্যান্ট (ফুলটাইম চাকুরীর মত – ২৪/৭)। আল্লাহ বলেন – ‘এই কিতাবকে শক্তি সহকারে ধারন কর’। আল্লাহ তায়ালা বনীইসরাইলের লোকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা তোমাদের সাথে চুক্তি করেছি, আমরা তোমাদের যা দিয়েছি তা শক্তি সহকারে গ্রহন কর। অতএব আল্লাহ প্রদত্ত জীবনবিধান একটা “সিরিয়াস বিষয়” এবং এই কাজের জন্য “সিরিয়াস টাইপ লোক দরকার”। এটাই

সাহাবারা ছিলেন “সিরিয়াস মানুষ”। এই ধর্ম কোন সটারা কোন বিষয়ে কমিটম্যান্ট এ যেতেন এবং এরপর সে ব্যাপারে আমৃত্যু সিরিয়াস থাকতেন। তারা যুদ্ধক্ষেত্রে সাহসী ও শক্তিমত্তা বজায় রাখতেন – তারা ইবাদতেও শক্তিশালী ছিলেন – তারা কন্সিসট্যান্সি বজার রাখার ব্যপারেও শক্তিসম্পন্ন ছিলেন। তারা আল্লাহর শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতাপসম্পন্ন ছিলেন। “শক্তিমত্তা” ছিল তাদের চরিত্রের মূল দিক। রসুল (সাঃ) বলেন – আল্লাহতায়ালা শক্তিশালী মুমিনদের ভালবাসেন দুর্বল মুমিনদের থেকে। অতএব ইসলাম একটি সিরিয়াস ধর্ম। আমরা এমন দেখতে পাই যে – ভাইরা যখন বাসার কাজ করেন তখন শক্তিশালী থাকেন কিন্তু যখন ইবাদতের প্রসঙ্গ আসে তখন তারা ঘুমাচ্ছন্ন হয়ে যান – জড়তা তাদের পেয়ে বসে – অলসতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। সাহাবারা (রাঃ) পুরুষ অথবা মহিলা – যখন কোন কমিন্টম্যান্টে যান কোন কিছুই তাদের ফিরাতে পারে না। আব্দুল্লাহ বিনহুদাফা (রাঃ) যখন রোমানদের বন্দী হিসেবে রাজার কাছে উপস্থিত হলেন – রোমান রাজা জানতে চাইলেন বন্দীদের মাঝে কোন সাহাবী আছে কিনা? যদিও বন্দীরা অধিকাংশয়ই তাবেঈন ছিলেন –একমাত্র তিনিই দাড়িয়েছিলেন। তারা বলল একজন সাহাবী আছে (আব্দুল্লাহ বিন হুদাফা (রাঃ))। রাজা তখন তাঁর সাথে সাক্ষাত করতে চাইলেন। উল্লেখ্য যে সাহাবারা তাদের কাছে বিশেষ ব্যাক্তি ছিল। এই রাজা সাহাবাদের বৈশিষ্ঠ্য সম্পর্কে জানতেন। সে বলল, ‘আমি আপনার সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দেব – অর্ধেক রাজত্ব দিব – যদি আপনি ইসলাম ত্যাগ করেন’। আব্দুল্লাহ (রাঃ) বললেন আমি রাজত্ব চাই না – আপনার মেয়েও চাইনা। রাজা বলল “একজন মুসলিম বন্দীকে আন। ” তারা তাকে উত্তপ্ত তেলের মধ্যে ফেলে দিল। তেল এতই উত্তপ্ত ছিল যে, আব্দুল্লাহ বিন হুদাফা (রাঃ) বলেন – “আমি দেখলাম তেলের প্রচন্ড উত্তাপে তাঁর হাড় গোশতের মধ্য দিয়ে বের হয়ে আসছে”। রাজা বলল – আমি আপনার সাথেও একই আচরন করব। আব্দুল্লাহ (রাঃ) বললেন “কোন সমস্যা নাই।” যখন আব্দুল্লাহ বিন হুদাফা (রাঃ) উত্তপ্ত তেলের উপর দন্ডায়মান হলেন তখন অঝোড়ে কান্না শুরু করলেন। রাজা বলল – এটাই আমি চেয়েছিলাম এটাই হল দুর্বলতার প্রকাশ। তাকে নিয়ে আস।“ রাজা তখন অনেক খুশী। যে আব্দুল্লাহ বিন হুদাফা (রাঃ) কে চাপে ফেলতে বাধ্য করতে পেরেছে। সে বলল – “আপনি কাঁদছেন কেন?” আব্দুল্লাহ বিন হুদাফা (রাঃ) ব্ললেন – “আমি সেজন্য কাদিনি যা আপনি ভাবছেন। যে কারণে আমি কাদছি তা হল, আমি এতই দুঃখিত যে আমার মাত্র একটি জীবন আল্লাহর পথে দান করার জন্য বিদ্যমান। আমি আশা করছিলাম যে আমার যদি ৯৯ টা জীবন হত যাতে একটার পর একটা জীবন এভাবে আল্লাহর পথে দান করতে পারতাম!” অন্য উপায় না পেয়ে রাজা বলল – “আমি শুধু চাই আপনি আমার কপালে একটা চুমু দিবেন – আমি সব বন্দীকে মুক্ত করে দিব।” আব্দুল্লাহ বিন হুদাফা (রাঃ) চিন্তা করলেন যেহেতু সব বন্দী মুক্ত হবে রাজার কপালে চুমু দিলে ক্ষতি কি? তিনি কাজটি করলেন এবং সব মুসলিম বন্দী মুক্তি পেল

আব্দুল্লাহ বিন হুদাফা (রাঃ) মদীনা ফিরে এলেন এবং ওমর (রাঃ) যখন ঘটনা শুনলেন তিনি মসজিদে এসে তাঁর কপালে চুমু দিলেন – এবং সকল মুসলিমকে বললেন তাঁর কপালে চুমু দেবার জন্যে। -অতএব সাহাবীরা ছিলেন সিরিয়াস মানুষ দ্বীনের জন্য।

ভাইরা আপনাদের প্রস্তুতি প্রয়োজন। কারন আল্লাহ আপনাদের পরীক্ষা করবেন। আপনি যখন স্কুলে যান – যেমন ধরুন আপনি ডাক্তারী পড়বেন – তখন আপনি আশা করবেন আপনার পরীক্ষা আসবে। প্রতি সেমিস্টারে আপনাদের পরীক্ষা দিতে হবে। ইসলামেও একই বিষয় ঘটবে। আল্লাহ বলেন – “লোকেরা কি ভেবেছে তারা ঈমান এনেছি বললেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে অথচ তাদের পরীক্ষা করা হবে না?”

যখন আপনি ডাক্তারী পড়াশুনা শেষ করে চাকুরীতে ইন্টারভিউ দিলেন তখন তারা আপনার সার্টিফিকেট দেখতে চাবে – পরীক্ষার ফলাফল দেখতে চাবে। ঠিক একই ব্যাপার যখন আপনি বলছেন যে আপনি বিশ্বাসী – আল্লাহতায়ালা এ দাবীর সত্যতা দেখতে চাবেন – এজন্য তিনি আপনার পরীক্ষা নিবেন। অতএব আপনার জীবনে পরীক্ষা আসবে এবং আপনি পরীক্ষা দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকবেন। যখন আপনি ইসলামী সংগঠনের একজন কর্মী হিসেবে কাজ করেন – তখন আরও বেশি প্রস্তুতি প্রয়োজন – কারন আপনি ঈমানের দাবীদার হিসেবে প্রথম কাতারে অবস্থান করছেন। কর্মী হিসেবে আপনার সমাজে নেতৃত্বের ভুমিকায় কাজ করতে হবে। আপনি তিনিই যিনি সংগঠক হিসেবে কাজ করছেন – প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন। অতএব আপনি আল্লাহতায়ালা কর্তৃক পরীক্ষার সম্মুখীন হবেন – এবং সে পরীক্ষাও সিরিয়াস পরীক্ষা। ক্ষুদার পরীক্ষা, ভয়ের পরীক্ষা, পারিবারিক সমস্যার পরীক্ষা, স্বাস্থ্যগত সমস্যা যেকোন পরীক্ষা সামনে আসবে। আপনার এর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আপনার সামনে যেই পরীক্ষাই আসুক ধৈর্যের সাথে তা মোকাবেলার জন্য আপনার সদাপ্রস্তুত থাকতে হবে।

বিষয়: বিবিধ

১৩৭১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File