দারুন খেলায় মত্ত ক্ষমতাসীনরা, অস্থির দেশ, অনিশ্চিত ভবিষ্যত

লিখেছেন লিখেছেন ফকির মজুমদার ০৭ মার্চ, ২০১৩, ০৪:৫৮:১৩ বিকাল

এক,

কোন সন্দেহ নেই দেশপ্রেমী তৌহিদী জনতা আজ খুবই শংকিত। সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতিগ্রস্থ, দেশ উন্নয়নে ব্যর্থ, কুটনৈতিকভাবে বন্ধুহীন, ইসলাম তথা কুরআন সুন্নাহবিরোধী ভূমিকার কারনে ক্রমেই অজনপ্রিয় হওয়া সরকার আজ বড়ই অসহায়। তাই তারা আজ দিক হারিয়ে পাগলের ন্যায় আচরন শুরু করেছে। তারা বুঝতে পেরেছে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তারা ক্ষমতাচ্যুত তো হবেই বরং তাদের অবস্থা হবে ২০০৮ সালের বি.এন.পি'র চেয়েও খারাপ। আর ক্ষমতাচ্যুত হলে পাহাড়সম দুর্নীতি ও অপকর্মের জন্য বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। তাই তারা আগামী নির্বাচনী বৈতরনী পার হওয়ার জন্য শাহবাগ নামক নাটক মন্চায়ন করেছে অত্যন্ত সুকৌশলে। তারা ভেবে নিয়েছে তরুনদের আবেগকে পুঁজি করে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা দিয়ে শাহবাগ নাটিকাটি জমজমাট রাখতে পারলে এবং তারই সাথে সাথে সমস্ত মিডিয়াগুলোকে শাহবাগকেন্দ্রিক ব্যস্ত রাখতে পারলে তারা ঢেকে দিতে সক্ষম হবে-

১. তাদের সর্বব্যাপী দূর্নীতি

২. শেয়ারবাজার কেলেংকারী

৩. সাগর-রুনি হত্যাকান্ড

৪. বিশ্বজিত হত্যাকান্ড

৫. কুইক রেন্টাল কেলেংকারী

৬. হলমার্ক, ডেস্টিনি কেলেংকারী

৭. ছাত্রলীগের অবাধ চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ধর্ষন, হত্যা, সন্ত্রাস, লুটপাট, গুম, খুন ইত্যাদি অপকর্ম।

দুই,

জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। এদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশ মুসলিম এবং এদেশের রাষ্টধর্ম ইসলাম। কিন্তু অত্যন্ত দূ্:খের বিষয় আজ লক্ষ্য করা যাচ্ছে মুসলিম নামধারী কিছু নাস্তিক অনলাইনে আল্লাহ, রাসূল (সা) ও পবিত্র ধর্ম ইসলামকে হেয় করে চরম অবমাননাকর পোষ্ট দিয়েই যাচ্ছে এবং ধর্মপ্রান মুসলমানদের অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা লক্ষ্য করেছি আসিফ মহিউদ্দিন (আশ্রম মামা/তামান্না ঝুমু), রাজিব হায়দার (থাবা বাবা), আরিফুর রহমান, বিপ্লব (শয়তান/আল্লামা শয়তান), ইব্রাহিম খলিল (সবাক/সবাক পাখি), আরিফ জেবতিক, কে এম মাহদী হাসান নামের কিছু কুলাঙ্গার নাস্তিক বিভিন্ন ব্লগে ও ফেইসবুকে ইসলামের অবমাননা করে যাচ্ছে।

দেশের প্রতিটি প্রান্তে যখন সর্বস্তরের তৌহিদী জনতা ফুঁসে উঠেছে ঠিক তখনি সরকার গানম্যান নিয়োগের মাধ্যমে এ সমস্ত নাস্তিকদের নিরাপত্তা দিয়ে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে চরমভাবে কুঠারাগাত করেছে। অপরদিকে আল্লাহ রাসূল (সা) প্রেমী তৌহিদী জনতাকে রাজপথে পুলিশ গুলি করে নির্বিচারে হত্যা ও আহত করেছে। তার উপর হামলা মামলাতো আছেই। অন্যদিকে বহুনারীগামী নাস্তিক ব্লগার রাজীব হায়দার শোভন ওরফে থাবা বাবা যখন খুন হল তখন তাকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ ঘোষনা করে জাতির সাথে আরেকদফা তামাশা করলো ক্ষমতাসীনরা। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে কী বিচিত্র তামাশাই না চলছে!

তিন,

চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে দেশের অর্থনীতির অবস্থা দ্রুত অবনতি হচ্ছে যা একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য মোটেই কাম্য নয়। শসক শ্রেণীর একগুঁয়েমী, বিরোধী মতাবলম্বীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা সর্বোপরী রাজনৈতিক সহিংসতার ফলে অর্থনীতি মারাত্তক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ও রপ্তানী খাত হুমকির মুখে পড়ছে। অপরদিকে সরকারের দফায় দফায় তেল, বিদ্যুৎ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের মুল্য বৃদ্ধির ফলে একদিকে জনজীবন হয়ে উঠছে অস্থির অপরদিকে দেশের অর্থনীতি হয়ে পড়ছে ভঙ্গুর।

চার,

এবার আসি যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রসঙ্গে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নেয়া হয়। এ লক্ষ্যে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বিচার শুরু হলে এক পর্যায়ে ১৯৫ জন চিন্হিত যুদ্ধাপরাধীকে শিমলা চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তানে হস্তান্তর করা হয়। তারপর দালাল আইনে রাজাকার ও পাকিস্তানীদের দোসর প্রায় ২৮,০০০ (আটাশ হাজার) ব্যক্তির বিচার করা হল। সেখানে আজকে যাদেরকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে, বিচার করা হচ্ছে তাদের কারও নাম ছিল না। এমনকি এসব ব্যক্তির নামে একটি জিডি পর্যন্ত ছিল না। বিচারের নামে অবিচারের মাধ্যমে রায় প্রদান করে জুডিসিয়াল কিলিং করা হচ্ছে নয় কী?

কসাই কাদেরের সাজা কেন কাদের মোল্লার উপর চাপানো হল? দেলু শিকদারের সাজা কেন আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর উপর চাপানো হল? কে দিবে এই প্রশ্নের জবাব? কিসের উদ্দেশ্যে এই সাজানো বিচার? কেন বিচারের নামে অবিচার?

পাঁচ,

শুরু থেকে আজ অবধি বাংলাদেশের অধিকাংশ মিডিয়া বামপন্থি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু বর্তমানে খুবই উদ্ব্যেগের বিষয় হল দূ'একটি মিডিয়া ছাড়া প্রায় সবগুলো মিডিয়া চরম মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়েছে। যে দূ'একটি মিডিয়া সত্য তুলে ধরার চেষ্টা করছে তাদের গলা চেপে ধরা হচ্ছে, নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। সামান্য দু'একটা উদাহরন দেই;

১. গত ২২শে ফেব্রুয়ারী জুমাবার দেশব্যাপী ইসলামী সমমনা ১২ দলের বিক্ষোভে উত্তেজিত জনতা কিছু জাগরনমন্চ (ইসলামবিদ্বেষী আওয়ামী বাম মন্চ) ভাংচুর করে। অথচ মিডিয়াগুলো ফলাও করে প্রচার করেছে জামাত শিবিরের হামলা এবং জাতীয় পতাকায় আগুন যদিও খবরটি মোটেও সত্য নয়। এই খবরের স্বপক্ষে তারা কোন ভিডিও বা আন্য কোন দৃশ্য প্রমান উপস্থাপন করতে পারে নাই।

২. ইতিহাসের জঘন্য ঘটনা গত ২২শে ফেব্রুয়ারী জুমাবারে ফ্যাসিবাদী সরকারের পেটুয়া পুলিশ বাহিনী কতৃক জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের অভ্যন্তরে অসংখ্য টিয়ারশেল ও গুলি বর্ষনের ঘটনা ঘটে। মুসল্লিরা টিয়ারশেলের ধোঁয়া ও ঝাঁঝ থেকে বাঁচার জন্য পুরাতন কার্পেট ও পত্রিকায় আগুন জ্বালিয়ে নিজেদেরকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন। অথচ মিডিয়াগুলো প্রচার করেছে আন্দোলনকারীরা জাতীয় মসজিদে আগুন দিয়েছে, মসজিদের পবিত্রতা ভঙ্গ করেছে।

৩. রাজধানীর কাঁটাবন মসজিদের সামনে থেকে পুলিশ ২ জন দাঁড়ি টুপিওয়ালা লন্ডন প্রবাসী ব্যক্তিকে আটক করে এবং বেধড়ক পিটুনি দেয়। অথচ মিডিয়াগুলো প্রচার করেছে জঙ্গি হিসেবে। একটা গনতান্ত্রিক সভ্য দেশের মিডিয়ার এহেন আচরন/ভূমিকা সত্যিই উদ্বেগজনক। অপরদিকে ফেইসবুকে শাহবাগী পেইজ প্রজন্ম চত্বর প্রচার করেছে এরা নাকি পাকিস্তান থেকে আগত জঙ্গী। কি সেলুকাস!

ছয়,

আরেকটি বিষয় খুবই লক্ষনীয় তা হল সরকার কতৃক বিরোধীদল, ইসলামী সমমনা দল এবং সাধারন মুসলমানদের আবেগের বিরুদ্ধ্যে রিতিমত যুদ্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। হামলা, মামলা, গ্রেফতার, গণগ্রেফতারের রেকর্ড সৃষ্টিকারী এই ফ্যাসীবাদী সরকার পুলিশের পাশাপাশি দলীয় ক্যাডারদের অস্ত্রে শস্ত্রে সজ্জিত করে বিরোধী দলের উপর হামলা চালাচ্ছে এবং দেশে অরাজক পরোস্থিতির সৃষ্টি করছে। গত এক সপ্তাহে বিরোধী মতাদর্শীদের উপর নি:র্বিচারে গুলি চালিয়ে যে গনহত্যা চালানো হয়েছে তা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলংকজনক অধ্যায় হিসেবে উল্লেখ থাকবে। গতকাল বিএনপি অফিসের সামনে সরকার ন্যাক্কারজনকভাবে যে হামলা করলো, বিএনপি'র কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপর যেভাবে গুলি বর্ষন করে তদেরকে আহত করা হল এর শেষ কোথায়? কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দেশকে, দেশের রাজনীতিকে?

সাত,

যারা ব্লগ ও ফেইসবুক ব্যবহার করেন তারা একটি বিষয় লক্ষ্য করবেন সরকারের ক্রীড়ানক শাহবাগীরা বিভিন্ন পেইজ খুলে সাধারন মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করছে এবং সংঘাত উস্কে দিচ্ছে। স্বঘোষিত নাস্তিক আসিফ মহিউদ্দীন, আরিফ জেবতিক, অমি রহমান পিয়াল গং এবং তাদের বিভিন্ন পেইজে যে সমস্ত লেখা পোষ্ট করা হচ্ছে তাতে একদিকে সাধারন মুসলমানদেরকে কনফিউজ করা হচ্ছে অপরদিকে তাদের অনুসারীদেরকে সংঘাতময় পরিস্থিতির জন্য উস্কে দিচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে গত কয়েকদিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ইসলামি ব্যাংক, ইবনে সিনা হসফিটাল, দিগন্ত টেলিভিশন, নয়াদিগন্ত, আমারদেশ পত্রিকায় হামলা হয়েছে। আরেকটি বিষয় বলা প্রয়োজন নাস্তিক ব্লগার কতৃক আল্লাহ ও রাসূল (সা) কে অপমান করার পর যখন সারাদেশের মুসলমানরা ফুঁসে উঠেছে ঠিক তারপরই "প্রজন্ম চত্তর-শাহবাগ" নামক ফেইজবুক পেইজগুলো তাদের স্ট্রাটেজি চেইন্জ করেছে।

শেষ কথা,

বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশপ্রেমী তৌহিদী প্রতিটি ব্যক্তিকে অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেছেন - ওরা ফুঁৎকার দিয়ে ইসলামের আলোকে নিভিয়ে দিতে চায় অথচ আমি (আল্লাহ) পূর্ণরূপে আমার দ্বীনকে বিকশিত (বিজয়ী) করবো যদিও কাফেররা এতে আসন্তুষ্ট হয়।

এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন - ঈমান আনয়ন করার পর সর্বোত্তম আমল হল জিহাদ।

অপর এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন - তোমরা যখন কোন অন্যায় দেখবে তখন তা হাত দ্বারা প্রতিহত করবে, তা না পারলে মুখ দিয়ে প্রতিবাদ করবে, যদি তাও না পার তবে অন্তরে ঘৃণা করবে। জেনে রেখো এটি হচ্ছে ঈমানের সর্বনিম্ন পর্যায়।

অন্য একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন - অত্যাচারী শাসকের সামনে হক/সত্য কথা বলাই হচ্ছে জিহাদ।

সেজন্য আমাদেরকে অত্যন্ত ধৈর্যশীল হয়ে সালাত ও সবরের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করতে হবে।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে তার দ্বীনের উপর অটল থাকার তৌফিক দিন এবং বাতিলের সমস্ত ষড়যন্ত্র মাকাবেলায় মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তৌফিক দিন। আমীন।।

ফকির মজুমদার শাহ

(ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিষ্ট)

বিষয়: বিবিধ

১৩৯৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File