আমার গোপন প্রেমের কথারে...(স্বপ্নের ভূবনে একাকি বহুদূর হেঁটে যাওয়া অতপর....)
লিখেছেন লিখেছেন ফকির মজুমদার ০৬ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৯:০৮:২৯ রাত
স্বপ্ন। খুবই ছোট্ট একটি শব্দ। কিন্তু এই ছোট্ট শব্দটির মাঝে লুকিয়ে থাকে জীবনের অংকিত প্রতিচ্ছবি। জগতের সবাই স্বপ্ন দেখতে ভালবাসে। স্বপ্নই মানুষকে সাহায্য করে, সাহস যোগায় তার পার্থিব মন্জিলে মকসুদের দিকে এগিয়ে যেতে। কেউবা পৌছাতে পারে আবার কেউবা হোঁচট খায়। ছিটকে যায় স্বপ্নময় রঙ্গীন ভূবন থেকে। আজ আমার জীবনের একটি কাঙ্খিত অপূর্ণ রঙ্গীন স্বপ্নের কথা পাঠকদের সাথে শেয়ার করবো। সে লক্ষ্যে অগোচালো অবচেতন মনে ব্লগে এই বিষয়টি লেখা।
সৃষ্টির শুরু হতে অদ্যাবদি মানুষের মনে সঙ্গীর আকাঙ্খা প্রবল/প্রকৃতিক। জগত সংসারে সুখী হওয়ার জন্য ভাল জীবনসঙ্গী বাছাই করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা এমন একটি বিষয় যে সিদ্ধান্তের ফলে মানুষ জীবনে প্রত্যাশিত সুখের নাগাল পায় অন্যথায় সারা জীবন কেঁদে বেড়ায়।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের দীর্ঘ ছয় বছরে অনেক মেয়েকেই কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। বিশাল ক্যাম্পাসে কত কিছিমের মেয়ে যে দেখলাম। কিন্তু আজকাল সবাই কেমন যেন বদলে গেছে। ষোল আনা পছন্দের মেয়ে খুঁজে পাওয়া সত্যিই খুব দুরূহ ব্যাপার। এর মাঝেও আমার জীবনে একটি ভুল হয়ে যায়। অবশ্য স্বল্প সময়ের মধ্যেই সে ভুল থেকে নিজেকে শুধরে নিই। তারপর আর ভাবতেও ছাইনি এ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন পার করে চাকুরী করছি আজ প্রায় ২ বছর হল। জীবনের এ প্রান্তে এসে হঠাত স্বপ্নের মায়াজালে জড়িয়ে যাব ভাবিনি কখনো। না, স্বপ্নতো আমি দেখিনি! স্বপ্নই আমাকে নিয়ে গেছে তার কাছে। আজ থেকে প্রায়৭/৮ মাস পূর্বে আমার একমাত্র ছোট বোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কোচিং এ ভর্তির উদ্দেশ্যে ঢাকায় আসে। ঢাকায় চাচারা এবং উল্লেখযোগ্য সংখক আত্তীয় স্বজন থাকা সত্বেও সিদ্ধান্ত নেই ছোট বোনটাকে মেয়েদের কোন একটা মেসেই রাখবো। সে উদ্দ্যেশযে মেস/সাবলেট বাসা খোঁজা শুরু করি। দীর্ঘ ১ মাস সংগ্রামের পর একটি ভাল সিটের সন্ধান পাই পলাশী সরকারী কর্মচারী কোয়ার্টারে। সেখানে আরও ৭ জন মেয়ে থাকে। বড় একটি রুমে ৬ জন। আর ছোট একটি রুম আছে যেটিতে ২টি সিট রয়েছে। সেই রুমটিই পছন্দ করি বোনের জন্য এবং যথারীতি সেই রুমেই ছোটবোনকে উঠিয়ে দিই। তো ছোটবোনের রুমমেট যে কি না আগে থেকেই সেখানে আছে আমার সাথে পরিচয় হয় এক সন্ধ্যায়। প্রথম দেখায় সে আমার মন কেড়ে নেয়। তার চোখের নিষ্পাপ চাহনি, চেহারার মাধুর্যতা, নম্রতা, ভদ্রতা, সৌজন্যতা সব মিলিয়ে মনে হল অসাধারন। যেন আমার স্বপ্নের রাণী। আমি দেখলাম, মুদ্ধ হলাম, অবাক পানে চেয়ে থাকলাম আর হৃদয়ের আঙ্গিনায় স্বপ্নের জাল বুনে দিলাম। বুঝতে পারলাম চর দখল করার মতই সে আমার মনটা দখল করে নিয়েছে। প্রথম পরিচয়ে কিছু কথা হয়। তার ও তার ফ্যামিলি সম্পর্কে মোটামুটি জানতে পারি। সে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী। এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি তে এ প্লাস পেয়েছে, এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োকেমিষ্ট্রি ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত। গ্রামের বাড়ী আমাদের পাশেই ফেনীতে। যাহোক সে সন্ধ্যার পর থেকে কোনভাবেই ভুলতে পারিনি তাকে। মনের মধ্যে গেঁথে গেল ফেবিকলের আঠার মতো। যোগাযোগের জন্য তার মোবাইল নাম্বারটা চাইতেই আমাকে দিয়ে দেয় কোন দ্বিধা না করেই। আমিও আমার বিজনেস কার্ড দিয়ে আসি এবং বলি যে কোন প্রয়োজনে ফোন দিতে। তারপর প্রায় প্রতিদিনই কথা হয় বোনের পড়াশুনার ছুঁতোয়। আমার ফোন কখনো রিসিভ করতে না পারলে সে নিজেই ফোন করতো। আমিও সুযোগ খুঁজে বেশী বেশী ফোন দিতে থাকি। ধীরে ধীরে আরও বেশী দূর্বল হতে থাকি ওর প্রতি। আমি অবশ্য পরিকল্পনা নিয়েই এগুতে থাকি। ওকে বোঝার চেষ্টা করি। তার মানসিকতা কেমন, কেমন তার রুচিবোধ ইত্যাদি ইত্যাদি।
একটা বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন সেটি হল প্রায় দু'মাস ধরে তার সাথে কথা হয়েছিল কিন্তু এর মাঝে একটি দিনও আমি তাকে ফোনে ওয়েটিং (Waiting) পাইনি। এছাড়া সে ক্লাশ শেষ করে বাসায় থাকতো, খুব প্রয়োজন ব্যাতীত বাইরেও যায় না। যার কারনে আমি নিশ্চিত ছিলাম যে তার সাথে কারো সম্পর্ক থাকতে পারে না। হয়তোবা সেজন্যই তার প্রতি আরও বেশী দূর্বল হতে লাগলাম। যাহোক ফোনে কথা হতে হতে তার সম্পর্কে ৩টি বিষয় ধরে নিয়েছিলাম।
প্রথমত, সে আমাকে স্টাডি (বোঝার চেষ্টা) করছে।
দ্বিতীয়ত, সৌজন্যতা বশত কথা বলে যাচ্ছে।
তৃতীয়ত, আমার দূর্বলতা বোঝার পরও কিছু বলছে না। হয়তো আমি প্রকাশ করার পরই তার প্রতিক্রিয়া জানাবে (যদি পছন্দ না করে থাকে)।
শেষ পর্যন্ত তৃতীয় ধারনটাই সত্যি হল। সর্বশেষ তার সাথে কথা হয় ২৬শে আগষ্ট রাতে। প্রায় এক ঘন্টা কথা হয় আমাদের দু'জনের। আমি আমার ভাললাগার কথা ওকে জানাই। সে অত্যন্ত ভদ্রভাবেই আমাকে হতাশায় ডুবিয়ে দেয়।
আমাকে বিস্তারিত খুলে বলল। তার হৃদয়ের ছোট্ট জমীনখানা আরও ৪ (চার) বছর আগে থেকেই ফয়সাল নামের এক সৌভাগ্যবান ব্যক্তির দখলে চলে যায়। ক্লান্ত, অবিশ্রান্ত, হতাশ আমি নিশ্চুপ হয়ে ওর মুখে তাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা শুনে থাকলাম। ওদের সবকিছুই ঠিকঠাক। পড়াশুনা শেষ করেই বিয়ে করবে। যেখান আমার আর কিছুই কার নেই। হতাশাচ্ছন্ন ব্যাহত মনে শেষ কথা বলে ফোন রাখলাম আর নির্ঘুম রাত কাটালাম। কিছুতেই হিসাব মেলাতে পারছিলাম না যে ওর সাথে কারো সম্পর্ক থাকতে পারে কারন তার দৈনন্দিন চলাফেরা স্টাডি করে তা বোঝার কোন উপায় নেই। এ ঘটনায় আমি মানসিকভাবে বড় একটি ধাক্কা পাই অবশ্য তা কটিয়ে উঠার জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছি পাশাপাশি এই সিদ্ধন্তটি দৃঢ়ভাবে গ্রহন করেছি যে আর এভাবে কোন চিন্তা নয়, পারিবারিকভাবে যখন যেভাবে হবে সেভাবেই হবে। যাহোক ওকে আমি মন থেকে ভালবেসেছি। সত্যিকার অর্থে আমি ওর শারিরীক সৌন্দর্যতা নয় ওর মেধা ও চারিত্রিক মাধুর্যতা, বৈশিষ্ট দেখেই আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। সে পবিত্র ভালবাসার দায় থেকেই কামনা করি সুখী হও নিপু। ভাল থেকো সারাজীবন। আমি থাকবো আমার মত করে।
বিষয়: বিবিধ
২৬৫৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন