জাপার নেতৃত্বে হরতাল প্রতিরোধ বিল আসছে। হরতাল প্রতিরোধ বিধান? নাকি হরতালে করনীয় বিধি বিধান। কোনটি গ্রহন যোগ্য!
লিখেছেন লিখেছেন শাজিদ ০৮ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৬:১৩:০৫ সন্ধ্যা
দেশের বৃহত্তর জনগোষ্টি মূলত দুই ভাগে বিভক্ত। এক হচ্ছে ধর্ম নিরক্ষেতাবাদী (যেইটিকে একপক্ষ নাস্তিকতাবাদী মনে করেন) অপরটি হচ্ছে সম্প্রদায়ীক সম্পৃতি অটুট রেখে জাতীয়তাবাদী (যেইটিকে প্রত্যেক ধর্মাবলম্বীর ধর্মীয় স্বাধীনতাকে সমুন্নত রেখে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্টা করা মনে করেন)। উভয় মতবাদীরা একে অপরকে অভীযোগ করে থাকেন। তবে আজ পর্যন্ত কোনো পক্ষই আপামর জনগনকে তাদের মতবাদের পূর্নাঙ্গ ব্যাখ্যা দেন নাই। অথচ দেখা যায় একে অপরকে স্বাধীনতার পক্ষের এবং বিপক্ষের বলে রাজনীতি করেন আপামর জনগনকে বিভ্রান্ত করেন আর বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষ দেশ ও স্বাধীনতার পক্ষে।
১৯৭১ সালের রেশ টানিয়া আজকের রাজনীতি করা মানেই হচ্ছে উপস্থিত অবস্থানকে অবমূল্যায়ন করা। আজকে যাদের বয়স ৬৫/৭০ তারা আমাদের অগ্রজ সর্বশ্রদ্ধেয় এবং তাদের মধ্যে বেশীর ভাগই বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তযুদ্ধে সহায়তাকারী। রাজনীতি আমাদেরকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ দিয়েছে এটি যেমন সত্য একই সাথে আজকের রাজনীতি আমাদেরকে বিভ্রান্ত, বিভক্ত করতেছে সেটিও সত্য।
আজকে যাদের বয়স ১৮ থেকে ৫০/৫৫ তথা ৬৫ এর নিচে তাদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধ খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে তবে হয়ত কেউ কেউ আছেন যারা ১৬/১৮ বছর বয়সে যুদ্ধ করেছেন। বর্তমানে ১৮ থেকে ৫০/৫৫ তথা ৬৫ এর নিচে যারা আছেন মূলত তারাই অগ্রজদের ছত্র ছায়ায় বর্তমান রাজনীতির মাঠের শক্তি। যাদের বয়স ৪০ তারা তো স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশরই প্রজন্ম অর্থাত পাকিস্তানী শাসনের গন্ধ তাদের শরীরে নাই।
রাজনৈতিক নানা কর্মসূছি সহ হরতাল/অবরোধ হচ্ছে প্রতিবাদের শেষ হাতিয়ার এবং গনতান্ত্রিক অধীকার। যেখানে প্রতিবাদ করার অধীকার থাকেনা সেখানে গনতন্ত্র আছে বলা যায়না। শুধুমাত্র ভোট দিয়ে কোনো দল বা পক্ষকে ক্ষমতাশীন করার মধ্যেই গনতন্ত্রের মূলমন্ত্র বা সীমাবদ্ধ মনেকরা ভুল। আমাদের রাজনীতিকেরা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতাশীন হাওয়ার নামই একমাত্র গনতন্ত্র মনে করেন মূলত এটি হচ্ছে গনতন্ত্রের নামে ক্ষমতাতন্ত্র। কোনো গনতান্ত্রিক জনপদের শাসক হবে জনগন দ্ধারা নির্বাচিত আর সেই শাসক হবে জনগনের অধীকার প্রতিষ্টা করা জন্য। আমাদের ৪১ বছর বয়সী স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে যদি গনতন্ত্রই থাকে তাহলে নেতা মন্ত্রীরা অভীজাত এরাকায় বসবাস করেন, জাতীয় বিশেষ নিরাপত্তা বেষ্টনীতে থাকেন আর জনগনের বিশাল একাংশের ফুটপাতেও ঠাঁই পায়না কেন? আমাদের বিশেস শ্রেনী বিদেশে গিয়ে উন্নত চিকিতসা করতে পারেন আর জনগনের একাংশ দেশে সাধারণ হাসপাতালেও ঠাঁই পায়না কেন? সরকারী ভাবে বরাদ্ধকৃত প্লট বিশেষ শ্রেনীর মধ্যে বন্টন হয় আর নদী ভাঙ্গনে বাস্ত ভিটা হারা মানুষ গুলির ঠিকানা ফুটপাত বেড়ীবাঁধ, বস্তিতে হয়ে কেন? কোনো ব্যবসায়ীর প্রতিষ্টিত ব্যবসা থাকা সত্বেও তারা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় হাজারও নতুন ব্যবসা পেয়ে যায় আর যাদের ব্যবসা নাই তাদেরকে ব্যবসায়ী বানানের ব্যবস্থা নাই কেন? বিশেষ শ্রেনীর ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন দেশে গিয়ে পড়ার সুযোগ উম্মুক্ত আর সাধারন মানুষে ছেলেমেয়েরা দেশের ভেতরেও ঠাঁই পায়না কেন?
গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জনগন দ্ধারা সরকার তথা শাসক হয়েছে বটে কিন্তু সেই শাসক জনগনের জন্য হয়েছে কি? হইলে উল্লেখিত অবস্থার সৃষ্টি হইত কি? সূতরাং বর্তমান ব্যবস্থপনাকে গনতন্ত্র না বলে ক্ষমতাতন্ত্র বলাই বাঞ্চনীয়।
হরতাল/অবরোধের মত রাজনৈতিক কর্মসূঁচি আইন দ্ধারা প্রতিহত করা মানেই হচ্ছে ক্ষমতাতন্ত্রকে পাকাপোক্ত করা। অর্থাত কথাকথিত গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যারা ক্ষমতায় আসবে তারা যেমন ইচ্ছা করতে পারবেন এর কোনো প্রতিবাদ করা যাবেনা, করিলে অপরাধ হইবে এবং আইন দ্ধারা শাস্তি হইবে। বড়ই হাঁস্যকর হইল হরতাল/অবরোধের মত রাজনৈতিক কর্মসূঁচি বন্ধের বিলটি জনগনের অধীকার প্রতিষ্টা করার নামেই আনা হয়েছে। যিনি এই বিলটি এনেছেন দয়া করে উনাকে জিজ্ঞাসা করুন তিনি রাষ্ট্র থেকে যেইসব সুবিধা ভোগ করেন তার সমবয়সী, সমশিক্ষিত তারই পাড়া মহল্লার আরেকজন একই সুবিধা ভোগ করেন কিনা। যদি রাষ্ট্র থেকে তারমত একই সুবিধা এই লোক না পেয়ে থাকেন তাহলে লোকটি প্রতিবাদ করার এবং একই অধীকার আদায় করার অধীকার রাখেন কিনা। একই সাথে জিজ্ঞাসা করুন যদি আইন দ্ধারা ঐ লোককে প্রতিহত করা হয় তাহলে তিনি (বিল আনায়নকারী) নিজের অবস্থানকে সূরক্ষিত করেছেন কিনা।
গনতন্ত্রের নামে ক্ষমতাতান্ত্রিক শাসকের জনগন ও জাতীয় স্বার্থ পরিপন্থী কর্মকান্ড সহ যাবতীয় অপকর্মকে প্রতিবাদ করার প্রতিরোধ করার জন্য হরতাল/অবরোধ। এটি আপামর জনগনের অধীকার, রাজনৈতিক দলগুলির অধীকার এবং শাসকশ্রেনীকে সতর্ক ও সঠিক পথ অবলম্বনের জন্য দিক নির্দেশনা প্রদর্শন। এটিকে বন্ধ করা মনেই ক্ষমতাতান্ত্রিক শাসকের ক্ষমতাকে সূরক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে হেঁ, হরতালের নামে অরাজগতা নয়, জ্বালাও পোড়াও ভাঁঙ্গচুড় নয়, মানুষ হত্য করা নয় আবার একই সাথে হরতাল প্রতিরোধের নামে পুলিশ প্রশাসন দিয়ে দমন পিড়ন নিতি নয়, রাজপথে প্রতিবাদীকে পুকুরের মত পিটানো নয়, মামলা দিয়ে রিমান্ডে নিয়ে ধোলাই করা নয়, গনমানুষের অধীকেরের উপর হস্তক্ষেপ করা নয়।
কোনো পক্ষ হরতালের ডাক দিলে জনগন হরতাল পালন করার অধীকর যেমন রাখেন ঠিক তেমটি জনগনের একাংশ হরতাল পালন না করার অধীকারও রাখেন এই ক্ষেত্রে দুইপক্ষ মূখামুখী হয়ে কোনো প্রকার অরাজগতার সৃষ্টি যাতে না হয় এবং শাসক শ্রেনীর করনীয় কি হাওয়া উচিত মাথায় রেখে উভয় পক্ষের অধীকার যাতে প্রতিষ্টিত থাকে সেই বিষয়ে চিন্তা করা যাইতে পারে। মাননীয় সাংসদ হরতাল প্রতিরোধে যেই বিলটি এনেছেন এবং যেইসব বিধি বিধানের প্রস্তাত করেছেন তাতে মনে হয়েছে প্রকৃত গনতন্ত্র, গনমানুষের অধীকর প্রতিষ্টা ইত্যাদি সম্পর্কে উনাকে আরও একটু চিন্তা ভাবনা করতে হবে। অনুদান দিয়ে দলের করুনায় ভোট পেয়ে সাংসদ হাওয়া যায় কিন্তু প্রকৃত জনগনের প্রতিনিধি হাওয়া যায়না, মাননীয় সাংসদ বোধ হয় সেই বিষয়ে কোনো চিন্তা করেন নাই। আমরা ভোট দিয়ে দলকে ক্ষমতায়ন করি বটে কিন্ত দেশ ও জাতীকে শাসন করার যোগ্যতার মানদন্ড কি তাহা জানিনা তাহা আমাদেরকে জানতেও দেয়া হয়না।
কমিটি সিদ্দান্ত নিয়েছেন বিভিন্ন দলের সাথে, ব্যবসায়ী ও সূশিল সমাজের সাথে আলোচনা করেই চুড়ান্ত সিদ্দান্ত নিবেন। কমিটির কাছে বিনিত জিজ্ঞাসা, রাজনৈতিক নেতৃবিন্দ, ব্যবসায়ী, কথিত সূশিল সমাজীরা সংখ্যায় কতজন? এবং উনারাই আমাদের একমাত্র ধারক বাহক কিনা। উনারা যদি ১০ লক্ষ হয়ে থাকেন তার বিপরীতে আমরা আপামর জনগন ১৬ কোটি রয়েছি, তাহলে ১৬ কোটির জন্য সিদ্দান্ত এই ১০ লক্ষরাই নিবেন? একমাত্র তারাই কি আমাদের ধারক বাহক?
বিষয়: বিবিধ
১০৭৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন