সৌদি সরকার সময় বাড়িয়েছে তবে ---? দূতাবাস থেকে বৈধ হাওয়ার ডকুমেন্ট পাওয়ার নাম বৈধ হাওয়া নয়।
লিখেছেন লিখেছেন শাজিদ ০৩ জুলাই, ২০১৩, ০৭:০২:৫২ সন্ধ্যা
বাংলাদেশের কোনো কোনো সংবাদপত্রের সংবাদ পড়ে পাঠকবৃন্দ বিভ্রান্ত হচ্ছেন তাই স্থনীয় ভাবে যাহা হচ্ছে তার বিবরন সম্বলিত আমার এই লেখা প্রকাশ করা জন্য বিনিত অনুরোধ জানাচ্ছি।
"সৌদি আরবে প্রবাসীরা কিভাবে অবৈধ হয়"।
১. সৌদি আরবে যেইসব বিদেশী আছেন তারা স্ব স্ব স্পন্সারের অধীনে কাজ করা বাধ্যতা মুলক। অন্য কারও অধীনে কাজ করা অপরাধ একই ভাবে অন্য কেউ কাজ দেয়াও অপরাধ। এমত অবস্থা কেউ ধরা পড়িলে উপভয়ের জন্য শাস্তি মুলক ব্যবস্থা রয়েছে তবে এই আইনটি কখনও এতো কড়াকড়ি ভাবে প্রয়োগ হয় নাই। বলা যাইতে পারে সৌদি সরকার প্রবাসীরদের প্রতি সহানুবাতশীল ছিল বিধায় আইন থাকিলেও তেমন কড়াকড়ি প্রয়োগ ছিলনা।
২. প্রবাসীরা সৌদি সরকারের এই নমনীয়তাকে একটু বেশী উপর্জনের তাকিদে ব্যবহার করেছে অপর দিকে অন্যন্য স্পন্সার গনও প্রবাসীদেরকে কাজ দিয়েছে।
৩. দির্ঘ্যদিন যাবত সৌদি আরবে ভীসার ব্যবসা চলে আসছিল। অর্থাত স্পন্সারের আসলে কোনো কাজ নাই অথচ তিনি প্রতিষ্টানের নামে ভীসা (এনওসি) বাহির করে প্রতিটি ভিসা ১২/১৮ হাজার রেয়ালে বিক্রয় করিতেন এবং দুই বছর অন্তার প্রবাসীর সাথে আলোচনা সাপেক্ষে ৫/৭ হাজার রেয়াল নিয়ে ভীসা নবায়নও করিতেন। আগত প্রবাসী কোথায় কি কাজ করেন সেই খবর স্পন্সার রাখিত না। এই ধরনের ভীসা গুলি ফ্রি ভিসা সামে পরিচিত। অর্থাত স্পন্সারের অধীনে কাজ করতে হবেনা।
৪. এমনও লক্ষ লক্ষ প্রবাসী আছেন তারা স্পন্সারের অধীনে কাজ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ থাকিলেও বাহিরে বেশী বেতনের কাজ পাওয়ায় স্বীয় স্পন্সার থেকে পালিয়ে অন্যত্র কাজ নিয়েছেন। এইক্ষেত্রে স্পন্সার তার কর্মচারী কাজ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে বিজ্ঞাপন দিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাসপোর্ট জমা দিয়েছে, এটিকে খুরুপ করে দেয়া বলা হয়। যেইসব প্রবাসী পালিয়ে অন্যত্র কাজ নিয়েছেন তিনি ভীসা নবায়ন করতে পারেন নাই ফলে অবৈধ হয়ে গেছেন।
৫. ফ্রি ভীসা ধারীর মধ্যে এসনও আছেন স্পন্সারের চাহিদা বেশী হাওয়ায় তারা ভীসা নবায়ন করা থেকে বিরত রয়েছেন, যতদিন পারেন কামাইবেন আর ধরা পড়িলে ফ্রি টিকেটে দেশে চলে যাবেন। সন্দেহ নাই যে, বৈধ বা অবৈধ ভাবে থাকিয়া সৌদি আরবে অর্থ উপর্জনের জ্ন্য কাজের অভাব নাই।
৬. এক সময় ওমরাহ ও হজ্বে আসিয়া লোকজন থাকিয়া যাইতে তখন দেখা যাইত ২২/২৪ বছরের যুবকেরও ওমরাহ ও হজ্বে এসেছে। ওমরাহ, হজ্ব ভীসা পাওয়া এবং বাধ্যতা মুলক ফিরে যাওয়া ইত্যাদি নিতি মালার কারণে এখন সাধারনতঃ ওমরাহ ও হজ্ব ভীসার লোক থাকেনা। ফলে এই ধরণের অবৈধ লোক খুবই নগন্য তবে একেবারে যে নাই তাহাও সঠিক নয়।
৭. সৌদি আরবে এমন হাজারও প্রতিষ্টান আছে যারা ভীসা দিয়ে লোক এনেছেন এক পর্যায়ে তাদের প্রতিষ্টান বন্ধ হয়ে গেছে বা আইনী জটিলতায় পড়েছে ফলে এইসব প্রবাসীদের ভীসা নবায়ন করা সম্ভব হয় নাই।
নোট: প্রবাসীরা যেই স্পন্সারের অধীনে এসেছে তার প্রতিষ্টানে বাধ্যতা মুলক কাজ করার ভীসাকে এগ্রিমেন্ট ভীসা এবং অন্যত্র কাজ করা সুযোগও থাকিবে এমন ভীসাকে ফ্রি ভীসা বলা হয়। মূল্যের ক্ষেত্রে ফ্রি ভীসার দাম অনেক বেশী। প্রবাসীরাও ফ্রি ভীসার ক্ষেত্রে বেশী আগ্রহী কারণ নিজে পছন্দ অনুসারে কাজ খুঁজে নেয়া যায় এবং সেখানে ট্রান্ফার হাওয়ার ব্যবস্থাও আছে, তাহাছাড়া মৌখিক আলোচনা সাপেক্ষে স্পন্সারের নামে ব্যবসাও করা যায়। যেমন বেশীর ভাগ খাদ্য পণ্যের দোকান (বাকালা) ও রেষ্টুরেন্ট স্পন্সারের নামে প্রবাসীরাই করতেছে, ডুকুমেন্টরী মালিক স্পন্সার আর বাস্তব বিনিয়োগগত মালিক হচ্ছে প্রবাসী, একই ভাবে বিশাল বিনিয়োগের অন্যন্য ব্যবসাও করতেছে প্রবাসীরা, তবে ঝুকিপূর্ণ।
"সৌদিকরণ"
১.বর্তমানে সৌদি আরবে বিশাল শিক্ষিত জনগোষ্টী বেকার বা অনেকে কাজ করতে ইচ্ছুক নয়। সৌদি সরকার তার স্বীয় জনগোষ্ঠীকে কর্মজীবী করার প্রাণপন চেষ্টা করতেছে। সরকারী আধাসরকারী সেক্টর সহ বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্টানের বিশেষ কিছু পদে সৌদি রাখা বাধ্যতা মুলক, সরকারের এই পদক্ষেপ অবশ্যই প্রশংসনীয় তবে এমন অনেক সেক্টর রয়েছে যেখানে সৌদিরা কাজ করবেই না, সম্পূর্ণ প্রবাসী নির্ভরশীল।
২. বানিজ্যিক সেক্টরে বিশাল অংশ প্রবাসীদের দখলে। অফিসিয়েয়ে রয়েছে মিশরীয়, ইয়ামনী, সিরিয়ান, লেবনানী, ইন্ডিয়ান, শৃলঙ্কান, পিলিপাইনী, সুদনী, পাকিস্তানী এবং খুবই নগন্য বাংলাদেশী। সন্দেহ নাই যে, এইসব দেশের লোকেরা কাজের ক্ষেত্রে দক্ষ এবং অভীজ্ঞ। সৌদি সরকার নিজেদের লোকবলকে দক্ষ/অভীজ্ঞ করে ড়গে তোলার জন্য নানা পদক্ষেও নিয়েছে দির্ঘ্যদিন থেকে যেমন কয়েক বছর (৬/৭) যাবত স্কুল কলেজর ছুটির সময় স্কুল কলেজ পড়ুয়াদেরকে বিভিন্ন বানিজ্যিক প্রতিষ্টানে নূন্যতম বেতনে তিন মাসের প্রশিক্ষনের জন্য বাধ্যতামুল করেছে, একই ভাবে সরকারী সেক্টর গুলিতেও প্রশিক্ষন দেয়া হচ্ছে। আসলে স্বীয় জনগোষ্টীকে দক্ষ, অভীজ্ঞ এবং কর্মজীবী করার জন্য এটি সরকারের অত্যান্ত প্রশংসনীয় পদ্রক্ষপ।
৩. বর্তমানে এই ধরণের প্রশিক্ষিত যথেষ্ট যুবক/যুবতী শ্রেনী রয়েছে, তাদের কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করার দায়ীত্বও সরকারের বিধায় এখন বিভিন্ন নিতি মালার মাধ্যমে বেসরকারী প্রতিষ্টান গুলিতে তাদের কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যেমন: কতজন প্রবাসীর বিপরীতে কতজন সৌদি রাখতে হবে, কোন কোন পদে পদায়ন করতে হবে, বেতন ভাতা সূবিধাদী কিভাবে দিতে হবে ইত্যাদি। বেসরাকরী প্রতিষ্টান গুলি নানা কারণে (বলছিনা)সরকারের এই পদক্ষেপে সন্তোষ্ট বলে মনে হচ্ছেনা ফলে সরকারের রেড, ইয়ালো, গ্রীন জুনের আওয়াত পড়ে বানিজ্যিক প্রতিষ্টান গুলিতে কর্মরত প্রবাসীদের ভীসা (একামা) নবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। ভীসা নবায়ন করতে না পারা মানেই হচ্ছে কর্মরত বৈধ প্রবাসীটি অবৈধ হয়ে যাওয়া। বর্তমানে এটিও বৈধ ভাবে আসা প্রবাসীরা অবৈধ হয়ে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ।
৪. আগে ভীসা নাবয়নের সময় নির্ধারিত ফিস ছিল তাহা দিয়ে দুই বছরের জন্য নবায়ন করা যাইত। বর্তমানে এক বছরের জন্য নবায়ন হচ্ছে একই সাথে নির্ধারিত ফিস সহ ইন্স্যুরেন্স বাধ্যতা মুলক এবং রেড, ইয়ালো, গ্রীন জুনের আলোকে ২,৪০০ রেয়াল প্রতি প্রবাসীর বিপরীতে দিতে হবে। ফলে বানিজ্যিক প্রতিষ্টান গুলিতে অতিরীক্ত ব্যয় চেপে বসেছে তাহাও আবার প্রতি বছর। সরকারের এই নিতিমালা বাস্তবায়নে ব্যর্থ প্রতিষ্টান গুলিতে কর্মরত প্রবাসীদের ভীসা নবায়ন করতে না পারায় হাজার হাজার বানিজ্যিক প্রতিষ্টানের কর্মরত বৈধ প্রবাসীরা অবৈধ হয়ে গেছে।
৫. প্রশ্ন আসে যে, যেইসব প্রবাসী বৈধ ভাবে আসিয়া স্ব স্ব স্পন্সারের অধীনে কাজ করতেছেন কিংবা স্পন্সারের নামে ব্যবসা করতেছেন তারা আজ অবৈধ হাওয়ার জন্য দায়ী কে। তারা তো অবৈধ ভাবে আসে নাই এবং অবৈধ ছিলেন নাই। সরকারের ঘোষনায় বলা হয়েছে সবাইকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে (এখন সময় বাড়িয়েছে) বৈধ হতে হবে যদি বৈধ না হয় এবং পরবর্তীতে ধরা পরে তখন ১ লক্ষ রেয়াল জরিমানা দিতে হবে এবং জেলও হবে, অবৈধ লোককে কেউ আশ্রয় পশ্রয় দিলে, বহন করিলে তাকেও একই শাস্তি ভোগ করতে হবে। অথচ এইসব প্রবাসী কোনো অপরাধ করে নাই এবং অবৈধ হাওয়ার জন্য দায়ীও নয়।
৬. বর্তমানে রেড জুনে থাকা প্রতিষ্টানের সংখ্যা অহরহ তারা প্রবাসীর ভীসা নাবায়ন করেত পারছেনা অথচ প্রতিষ্টানে কর্মরত আছেন। চুক্তি ও সৌদি শ্রম আইন অনুসারে প্রতিষ্টানের সাথে তাদের দেনা পাওনা রয়েছে আর ভীসা না থাকায় তারা সকলেই অবৈধ। এই অবস্থায় নিরাপরাধ প্রবাসীরা স্বাভাবীক চলাচলের সময় যদি ধরা পরে এবং ঘোষিত আইনের আওতায় আসে তখন প্রতিষ্টান এইসব প্রবাসীর দায় দায়ীত্ব নিবে কিনা তাহা স্পষ্ট নয় এবং প্রবাসীদের দেনা দিয়ে স্বদেশে ফেরত পাঠাবে কিনা কিংবা সরকারও কি পদক্ষেপ নিবে তাহাও স্পষ্ট নয়।
৭. গ্রীন জুনে থাকা প্রতিষ্টান গুলিও বৈধ করার ক্ষেত্রে নানা ঝামেলায় রয়েছে যেমন: কতজন প্রবাসীর বিপরীতে কতজন সৌদি রাখতে হবে শর্ত রয়েছে। প্রতিষ্টান গুলি কেন সৌদি নিয়োগ করে না তাহা তাদের নিজস্ব বিষয় তবে একটি ধারণা আছে যে, যথাযত কাজ আদায়ের জন্য প্রবাসীর বিকল্প নেই। ফলে গ্রীন জুনের প্রতিষ্টানে গিয়ে বৈধ হতে চাইলেও সহজে বৈধ হাওয়া যাচ্ছেনা। এমন লক্ষ লক্ষ প্রবাসী আছেন দির্ঘদিন ধরে যারা ভাল বেতনে ভাল পদে চাকুরী করে আসছেন কিন্তু রেডজুনে বিধায় অবৈধ হয়ে গেছেন এখন বৈধ হাওয়ার জন্য গ্রীনজুন প্রতিষ্টানে তার যোগ্যতা অভীজ্ঞতা অনুযায়ী চাকুরী পাচ্ছেন না।
৮. অনর্থক জেল জরিমানার মুখামূখি না হয়ে বিভিন্ন দেশের লক্ষ প্রবাসী স্বদেশে ফিরে যেতে আগ্রহী। এখানেও ঝামেলা আছে, প্রতিষ্টান তাদের হিসাব নিকাশ দিচ্ছেনা, রেডজুনে থাকা প্রতিষ্টানের প্রবাসীরা ফাইনাল এক্সিট পাচ্ছেনা অর্থাত স্বদেশে ফিরে যাইতে চালে আগে বৈধ হতে হবে তারপর ফাইনাল এক্সিট পাবে। বৈধ করা এবং ফাইনাল এক্সিট দেয়ার দায়ীত্ব প্রতিষ্টানের যাহা তারা করতেই পাচ্ছেনা।
৯. সৌদি সরকার সময় দিয়েছে মাত্র তিন মাস (এখন বাড়িয়েছে)। এর মধ্যে হয়ত বৈধ হতে হবে স্বদেশে নয়ত চলে যেতে হবে। দূতাবাস থেকে পাসপোর্ট নিয়ে এবং রেডজুন প্রতিষ্টানের চকুরী ছেড়ে দিয়ে বৈধ হাওয়ার চেষ্টায় যেমন আছেন একই ভাবে ট্রাবল ডকুমেন্ট নিয়ে স্বদেশে ফিরে যাওয়ার লোকও অভাব নেই। মজার বিষয় হইল যারা ফিরে যেতে চাচ্ছেন তারা যথা সময়ে ট্রাবল ডকুমেন্টে ফাইনাল এক্সিট পাচ্ছেন না এবং এই লক্ষ লক্ষ লোক স্বদেশে ফিরে যাওয়ার জন্য বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থাও নাই। ইতিমধ্যে এয়ার লাইন্স গুলি টিকেটের দামও বাড়িয়ে দিয়েছে। রিটার্ন টিকেটের মূল্য দিয়ে ওয়ানওয়ে টিকেট নিতে হচ্ছে।
১০. দুই দেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নেই সূতরাং খেয়ালী কিছু বলা ঠিক নয়। তবে যাহা দৃশ্যমান, কূটনৈতিক মিশন গুলি বলার/জানার অনেক কিছু আছে কিন্তু বলার কোনো পথ খোলা নাই। কারণ সৌদি সরকার কোনো দেশের লোকজন চলে যাওয়ার জন্য হকুম করেন নাই, সরকার বৈধ হাওয়ার হকুম করেছেন। আর বৈধ করার জন্য যেই চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে, সৌদি নাগরীকের কর্ম সংস্থানের কথা বলা হয়েছে তাহা সম্পূর্ণ সৌদি আরবের অভ্যান্তরীন বিষয় সূতরাং এখানে কূটনৈতিক মিশনগুলি মাথা ঘামানোর কোনো স্কোপ নাই। তবে হেঁ, মিশনগুলি স্ব স্ব দেশের নগরীককে তাদের সমস্ত পাওনা আদায় করে স্ব সম্মানে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করতে পারে, এটি মিশনের দায়ীত্ব।
বিষয়: আন্তর্জাতিক
২১৩৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন