গবেষকেরাও গবেষণার উর্ধে নন।
লিখেছেন লিখেছেন শাজিদ ২৬ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৫:১৮:২০ বিকাল
আমার সামান্য ধানী জমি আছে, বিদেশে থাকি এবং বাচ্চারাও স্কুল কলেজগামী নিজে চাষাবাদ করা সম্ভব হয়না। সমুদয় জমি ৫ জন ভূমিহীনকে বর্গা দিয়ে রেখেছি কয়েক বছর যাবৎ। তারা আমাকে প্রতি ২ শতকে ১০ কেজি (আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় ১ আড়ি বলে) ধান দেন। আমন মৌসমে একবার উপস্থিত থেকে হিসাব করে দেখেছি প্রতি ২ শতক জমিতে ৪০ থেকে ৪৫ কেজি ধান উৎপদন হয়। এই মৌসমে ট্রেক্টর দিনমজুর ও সার ব্যতিত তেমন কোনো খরচ নাই। ইরি মৌসমে উল্লেখিত খরচ ছাড়াও শেচের পনি খরচ আছে দিনমজুর, সারের খরচ বেশী, সময় এবং পরিমানও বেশী লাগে তাই অনেকে চাষাবাদ করতে চান না, ফলে জমি খালি পড়ে থাকে আবার কেউ কেউ ঝুকি নিয়ে চাষ করেন তবে ধান দিবেন প্রতি ২ শতক জমির বিপরীতে ৫ কেজি। প্রতি ২ শতক জমিতে খরের আঁটি হয় ৭টি, এক আঁটি খরের দাম বর্তমান বাজারে ৪০ টাকা। জমি ওয়ালা শুধুমাত্র ১০ ও ৫ কেজি ধান পায় বাকী সব কিছু চাষার। তার পরেও অনেক কথা, যেমনঃ ধান কম হয়েছে, খরচ বেশী হয়েছে, সার বিষ পাওয়া যায় নাই ইত্যাদি বলে প্রতি ৪০ শতক জমির বিপরীতে ১৫/২০ কেজি ধান কম দিয়ে থাকে, সকলে পাড়া প্রতিবেশী তাই কিছু বলাও যায়না।
যাই হউক, জামির বিপরীতে প্রতি বছর বর্গা হিসাবে যেই পরিমান ধান আমি পাই তাহা দিয়ে আমার বছর চলে যায়। যারা চাষ করেন তারা নিতান্তই গবীর শ্রেনীর, বর্গা জমিতে চাষ ব্যতিত তাদের আর কোনো উপর্জন ব্যবস্থা নাই ফলে তারা আমার কাছ থেকে কর্জ নিয়েই চাষ করেন আবার ধান উঠিলে সেই ধান বিক্রয় করে আমার কর্জ শোধ করেন। হিসাব করে দেখেছি খরকূটা সহ প্রতি ২ শতকে ৩০/৩৫ কেজি ধান পাইলেও যাবতীয় খরচ এবং কর্জ শোধ করে বছরের শেষে তাদের কাছে তেমন কিছু থাকে না তবে একটি সুবিধা হচ্ছে তারা বছরের খাবার মওজুদ রাখে, অর্থাৎ বছরের খাবারের জন্য চিন্তা করতে হয়না।
সমস্যা হয়ে যায় তখনই যখন চাষীরা অপ্রত্যাশিত বিপদে পড়েন, বাচ্চাদের স্কুলের খরচ দিতে হয়, ঈদে চাঁদে কেনাকেটা আছে, সামাজিক আচার অনুষ্টান আছে, চিকিৎসার দরকার হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। এইসব ব্যয় বহন করার জন্য তাদের উপর্জন কোনো পথ নাই বিধায় খাবারের ধান বিক্রয় ব্যতিত আর কোনো উপায় থাকেনা ফলে বছরের শেষে তারা বড়ই বিপাকে পড়েন।
ওরাও তো মানুষ, সমাজে বসবাস করেন, আর দশ জনের মত ওরাও স্বপ্ন দেখেন, ছেলেমেয়ের ভবীষ্যৎ নিয়ে তারাও ভাবেন, তারা একটি সূন্দর, পরিচ্ছন্ন ঘরে থাকতে চান, মাছ মাংস তাদের জন্য হারাম নয়, দিবারত্রি হাঁড়ভাঁঙ্গা পরিশ্রম করেও বছরের শেষে মাথায় হাত দিয়ে নিরবে কাঁদতে হয়। এটি হাওয়া খানায় বসে আমার কাল্পনিক গবেষণা নয়, বরং এটি আমি জমির মালিক, অন্যকে দিয়ে চাষ করাই সরজমিনে থাকিয়া তাদের খবর রাখি এর চাইতে সঠিক ও বাস্তব তথ্য হাওয়া খানার কোনো গবেষক দিতে পারবেন না আমি চ্যালেঞ্জ করতেছি।
গবেষকেরা জনগনের কর থেকে লক্ষ কোটি টাকা বেতন বাতা নিয়ে উৎপাদিত ধান রপ্তানী করা যাইবে কিনা বা রপ্তানি করিলে কি পরিমান করিতে পারিবে ইত্যাদি তথ্য দিচ্ছেন। আমার বিনিত জিজ্ঞাসা, আমাদের গবেষকেরা কয়জন চাষীর দুয়ারে গিয়ে তাদের প্রকৃত অবস্থা, পরিশ্রম, চাষাবাদ ব্যয়, পারিবাকি, সামাজিক ব্যয় এবং বছরের শেষে তাদের অবস্থা সম্পর্কে জানেন বা তথ্য নিয়েছেন? উৎপাদিত ধানের মওজুদ গবেষনা করতে গেলে উৎপাদন কারী গবেষেণায় আসেনা? উৎপাদন কারী নিয়ে গবেষনার দরকার নাই? মাছ মাংস পুষ্টিকর খাবার খাইলে শরীরে কি কি পুষ্টি সাধন হইবে তাহা নিয়ে গবেষণা করেন কিন্তু এই পুষ্টিকর খাবার কেমনে তার পাকঘরে আসল, চুলায় চড়ল, সাঁজানো টেবিলে বসে খাইতে পারলেন সেই গবেষনা করেছেন কি?
আমাদের সরকার ধানের উৎপাদন বেশী হাওয়া খুশিতে আত্নহারা, সারাদেশের অলিতে গলিতে ঢোল পিটিয়ে নিজেদের কৃতিত্ব ঘোষনা করতেছে, লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় করে গবেষক দল দিয়ে গবেষণা করাচ্ছেন ধান রপ্তানী করা যাবে কিনা। যারা উৎপাদন করছেন তারা যদি বস্রহীন হন, ঘরহীন হন, স্ব্যাস্থ্য ধরে রাখার চিকিৎসা না পান, ছেলেমেয়েকে স্কুল কলেজে পাঠাইতে না পারেন, অন্যন্য পারিবাক ব্যয় ও সমাজিক ব্যয় করতে না পারেন তাহলে আমাদের গবেষক ও সরকারের রপ্তানী স্বপ্নের আদৌ কোনো মূল্য আছে কি? বাংলাদেশ একটি মাত্র শ্রেনী আছেন যারা ধর্মঘট করেন না আমাদের কৃষক মজদুর মেহনতী মানুষ। আমি বলব বাংলাদেশ সবচাইতে উচ্চতর, সবচাইতে মর্যাদাবান, শ্রেষ্ট শ্রেনীর মধ্যে একমাত্র আমাদের কৃষক মজদূর ভাইয়েরাই আছেন, দুনিয়াবী বিচারে বাকীরা সবাই এই কুষক ভাইদের মূখাপেক্ষী, অধীনস্ত।
বিষয়: বিবিধ
১১৮৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন