কাতারে বাংলাদেশী নারী শ্রমীকের (গৃহশ্রমীক) দুঁয়ার খোলেছে, এটি নাকি আনন্দের বিষয়। সূত্র: মানবজমিন
লিখেছেন লিখেছেন শাজিদ ২২ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৪:৫০:৪৩ বিকাল
ব্লগে আমি তথ্য দিয়েছি মাত্র, বিদেশে যারা আছেন তারা সকলেই কম/বেশী জানেন মধ্যপ্রাচ্যে নারী শ্রমীকের খবর। আমি গ্রামের ছেলে, দির্ঘ্য ২৯ বছর যাবত সৌদি আরবে আছি। অভীজ্ঞতা থেকে বলছি, ঘরের দারোয়ান, ড্রাইভার এবং গৃহকর্মী রাখা সৌদিদের ফ্যাশন, আরেক জনের আছে তাই তিনিও রাখবেন।
সৌদি আরবে প্রতিটি পরিবারে একাদিক গাড়ী রয়েছে, ১৮ বছর বয়সী এমন কোনো ছেলে নাই যার গাড়ী নাই এরা নিজেরাই ড্রাইভ করে তাহলে ড্রাইভারের দরকার কেন? যুক্তি আছে, বাচ্চাদেরকে স্কুলে আনা/নেয়া করতে হবে, মেডাম মার্কেটে যাবে, বেড়াইতে যাবে। এর অর্থ কি দাঁড়ায়? ঘরের পুরুষেরা পরিবারে সময় দেয় না। ঘরের যেইসব পুরুষেরা স্বীয় পরিবারে নিজে সময় দেয় না বাচ্চা এবং মহিলাদের জন্য ড্রাইভার রাখতে হয় তাদের মনমানষীকতা অবশ্যই বিবেচ্য বিষয়।
আমাদের দেশে রাত নয়টা দশটায় রাস্তা ঘাট প্রায় নির্জন হয়ে যায়, গ্রামগঞ্জের মানুষ গুলির তো আধা ঘুম হয়েই যায়। সৌদি আরবে কিন্ত ভিন্নচিত্র, রাত দশাটর পরে গাহওয়া (হুক্কার দোকান) গুলিতে তিল ধরার ঠাঁই থাকেনা, ফাষ্টফুডের ব্যবসা হয় মূলত রাত্রেই, যুবক শ্রেনী গাড়ী নিয়ে ঘুরছে নয়ত রাত অবধী খেলাধুলায় মত্ত। শিশুরা ঘুমাচ্ছে ভোর সকালে স্কুলে যাবে, মহিলরা নিঃসঙ্গ ঘরেই আছেন।
তবে একটি অতুলনীয় গুন রয়েছে সৌদিদের মধ্যে, এরা মারমারি হানাহানী করেনা, অন্যের সমালোচনা করেনা, কোনো প্রকার গ্যদারীং নাই, একজন সৌদি আরেক জন সৌদির কাছে অত্যান্ত সম্মানী, ধনী গবীব বিবেচনা করেনা প্রত্যেকেই সৌদি নাগরীক হিসাবে সমকক্ষ ভাবেন। একে অন্যের সমালোচনা করা, ঝগড়া বিবাদ করা আত্নমর্যাদা হানীর কান্ড মনেকরেন।
অপেক্ষকৃত উন্নত পরিবেশের সৌদিরা এবং তাদের ছেলেরাও বাহিরের পারিবেশে অত্যান্ত আদব ও উন্নত মানষীকতার পরিচয় দেয়। আমার সাথে ঘটেছে এমন ২টি ঘটনা বলছি। একবার রাত্রে ওমরাহ করতে গিয়েছিলাম, সারারাত হেরেমে ছিলাম, ৩টার পরের দিকে জিদ্দার উদ্দিশ্যে রাওয়না দিয়েছি, নিজের গাড়ী নিজেই ড্রাইভ করতেছি, প্রায় ১ ঘন্টার সফর। ফজরের নামজের পর কিছুক্ষন ঘুমিয়ে সকাল ৮-৩০ এ অফিসে যাব। সারারাত ঘুমাই নাই, ওমরাহ করেছি ক্লান্ত শরীর বিধায় চোখ ভেঁঙ্গে আসছে ঠিকমত ড্রাইভ করতে পারছিনা, ভয় হচ্ছে কোনো দূর্ঘটনা হয়ে যায় কিনা। তাই মক্কা চেকপোষ্ট পার হয়ে রাস্তার পাশে (ফুটপাতে) গাড়ী দাঁড় করিয়ে মোবাইলে এলার্ম দিয়ে গাড়ীতেই ঘুমিয়ে পড়েছি। ঘুম ভাঁঙ্গার পর দেখছি একটি হুঁইশ (গাড়ী টানার গাড়ী) সহ তিনটি পুলিশের গাড়ী আমাকে ঘিরে রেখেছে। ওরা কতক্ষন ধরে আছে আমি জানিনা তবে যতক্ষন পর্যন্ত আমি নিজে নিজে জাগি নাই ততক্ষন পর্যন্ত আমাকে জাগায় নাই। জিজ্ঞাসা করল আমার সমস্যা কি, বল্লাম ঘুমের কারণে গাড়ী চালাতে পচ্ছিলাম না তাই দূর্ঘটনা হাওয়ার ভয়ে কিছুক্ষন ঘুমিয়ে নিলাম, একজন একামা, লাইসেন্স এবং গাড়ীর ডুকুমেন্ট চাইলে তাহা দেখাইলাম, তিনি বল্লেন সামনে পেট্রোল পাম্প আছে ওখানেও তো যেতে পারতে, জানালাম অতটুকু যাইতেও আমার ভয় হচ্ছিল, তাদের মধ্যে একজন অফিসার বল্লেন এখন যাইতে পারবে তো? বল্লাহ হেঁ এখন পারব ইনশাআল্লাহ, তিনি একটি পানির বোতল আর এক কাপ চাঁ (ফ্লাক্স থেকে) এগিয়ে দিয়ে বল্লেন মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে চাঁ খেয়ে চলে যাও। ওদের সাথে আমার প্রায় ২০ মিনিট কথা হয়েছে, ওরা ছিল হাইওয়ে সিকিউরিটি পুলিশ। নিজেকে অপরাধী ভেবে এখনও চিন্তা করি যে, আমার মত একজন বিদেশী শ্রমীকের সাথে পুলিশের এত উন্নত আচরণ পৃথিবীর আর কোথাও আছে কিনা --- জেদ্দা খালেদিয়ায় (আমীর সোলতান ষ্ট্রীট) রাত ২টায় আমার গাড়ী চাকা পান্সার হয়েছিল, আমি চাকা বদলানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি ঠিক ঐ সময় আগে পিছে ২টি গাড়ী দাঁড়িয়ে কয়েকজন যুবক এসে সমস্যা কি জানতে চাইলে আমি চাকা দেখিয়ে দিলাম, ওরা নিজেরাই আমার গাড়ী থেকে চাকা বাহির করে নিজেরাই চাকা লাগিয়ে দিল, বিশ্বাস করুন আমাকে ধরতেই দেয় নাই। ১৮-২২ বছরের এই যুকদের কাছে নতুন মডেলের একটি জাগওয়ার আরেকটি মার্সিডিস গাড়ী ছিল, ভাবলাম এরা কত ধনী ঘরের ছেলে অথচ আমার গাড়ীর চাকা লগাইল। --- সৌদিরা শুধুই খারপ আচরণ করে সেইটি ঠিক নয় তবে নারীর ক্ষেত্রে আমার ১০০% দ্বিমত আছে, অনেক ঘটনা দেখেছি, হাজারও ঘটনা শুনেছি। বাস্তবতা হইল নারীরা স্বীয় ঘর সংসার ব্যতিত আর কোথাও নিরাপদ নয়। আমাদের দেশে ছোট্ট ছোট্ট কাজের মেয়ের সাথে কি ঘটছে অথচ নিজের দেশ, তাহা থকেও তো অনুমান করা যায় একজন উপযুক্ত মেয়ে ভিন্ন দেশে ভিন্ন দেশীর ঘরে কি হইতে পারে? সৌদিদের ঘরে আমাদের মত নিয়মিত রান্নাবান্নর কাজ নাই বলিলেও চলে। সৌদি আরবে যারা আছেন তাদের কে বলব একবার দেখে আসুন দুপুর ১টা থেকে প্রায় ৩টা এবং রাত ৯টা থেকে প্রায় ১২টা পর্যন্ত খাবারের হোটেল ও ফাষ্টফুডের দোকান গুলিতে কারা লাইন ধরে! এরা কেউ হোটেলে বসে খায়না বরং সবাই পরিবারের খাবার ঘরে নিয়ে যায় অথচ ঘরে পরিবার সহ কাজের মেয়ে আছে। তাহলে গৃহকর্মীর কাজ কি? কুয়েতে. ইমারাতে, লেবাননে বাংলাদেশী নারী শ্রমীকের ব্যপারে বহু ধরনের তথ্য আছে, বলতে লজ্জা হয় যে, ঐসব দেশে বাংলাদেশীরাই পতিতালয় খোলে বসেছ। এই সমস্ত সংবাদ বাংলাদেশর সংবাদপত্রেই আছে।
বিষয়: বিবিধ
১৩৭৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন