আমিনবাজার হত্যাকান্ড "ছাত্র হলে সাত খুন মাপ"
লিখেছেন লিখেছেন শাজিদ ১৭ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৩:৫৮:০৮ দুপুর
অপরাধী ছাত্র হলে তাদের সাত খুন মাপ তবে ছাত্র শিবির হলে মাপ নাই এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশে। রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছাত্ররা পুলিশের সামনে কখনও কখনও পুলিশের সহায়তায় কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যেইসব তান্ডব চালাচ্ছে ঐসব তান্ডবের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে বিকল হয়ে পড়েছে। কুলঙ্গার ছাত্র দ্বারা কখনও একক কখনও দলবদ্ধ ভাবে সহছাত্রীর উপর পাশবিক নির্যাতন চালাচ্ছে, অপহরণ করে ধর্ষণ করতেছে, হত্যা করতেছে। এর বাহিরে ছাত্ররা চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, দখলবাজী সহ নানা অপরাধ তো করছেই অথচ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তথা সরকার এদের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার ব্যবস্থা নেয় না ফলে ছাত্ররা ধরে নিয়েছে তারা আইনের উর্ধ্বে, তারা যেই কোনো অপকর্ম করার লাইসেন্স পেয়েছে ছাত্র হিসাবে।
সরকারী ছত্র ছায়ায় পঙ্গু আইন শৃঙ্খলা বাহিনী শুধুমাত্র বিরোধী দল নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত থাকায়, সারাদেশের আপামর জনগণ নিরাপত্তাহীন হয়ে যাওয়ায় চুরি ডাকাতি, অপহরণ, ধর্ষণযন্ত্র নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে গেছে যার কারণে এলাকাবাসী নিজেরাই নিজেদের নিরাপত্তার জন্য দলবদ্ধ হয়ে স্ব স্ব এলাকার পাহারাদারী করতে বাধ্য হয়েছে। স্বাভাবীক ভাবে এলাকায় কোনো অপরিচিতকে একক বা দলবদ্ধ ভাবে অসময়ে দেখিলে এলাকাবাসী তাদেরকে ঐ ধরণের অপরাধীই মনে করে তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে, ঘটে যায় হত্যকান্ডের মত অপ্রত্যাশিত ঘটনা। আমিন বাজোরে হত্যাকান্ডটিও তেমন একটি ঘটনা মনে হচ্ছে, আমিন বাজারে যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে তাদের সাথে ঐ এলাকার কারও ব্যক্তিগত শত্রু তামী আছে বলে গনমাধ্যমে আসে নাই। এরা ছিল বিভিন্ন কলেজের ছাত্র একে অপরের পরিচিত, বন্ধু বান্ধব। গনমাধ্যমে শুধু তাদের ছাত্রত্বের পরিচয় এসেছে তাহাও পরবর্তীতে, ফলাও করে ছাপা হয়েছে একদল ছাত্রকে এলাকাবাসী নির্মম ভাবে হত্যা করেছে, সংবাদের ইঙ্গিত এমন ছিল যে, ছাত্ররা দলবদ্ধ ভাবে কোনো ধরণের অপরাধ করিলেও এরা ছাত্র বিধায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রতিরোধ করা যাবেনা।
মিডিয়া ধারাবাহিক ভাবে নিহতদের পরিবারের আহাজারী এবং ছাত্রত্বকে প্রাধান্য দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করে মূলত নিরাপত্তাহীন এলাকাবাসীর বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়েছে। গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা নিশ্চ্যই জগন্যতম অপরাধ কিন্তু এলাকাবাসী এই ধরণের অপরাধ করতে বাধ্য হইল কেন কিংবা পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে কিনা তাহা মিডিয়া নিরপেক্ষ ভাবে সংবাদ করে নাই। বিচার বিভাগীয় তদন্ত, হায়রে বাংলাদেশের বিচার বিভাগীয় তদন্ত। সরকার নিয়ন্ত্রিত তদন্তকারী কি ভূমিকা কিভাবে পালন করে তাহা মিডিয়ার সাথে যারা আছে তারা সাগর-রুনীর হত্যাকান্ড থেকে অনুমান করতে পারে। অথচ এই মিডিয়া আমিন বাজেরের ঘটনাকে উদ্দিশ্য মূলকভাবে প্রচার করে গোটা এলাকাবাসীকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করাইল।
বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা দলবদ্ধ ভাবে নানা অপরাধ করে না? এরাও ছাত্র ছিল তাতে কোনো সন্দেহ নাই, যখন ঘটনা ঘটেছে তখন শবেবরাতের রাত্রিতে এরা যেই মসজিদে নামাজ পড়েছে সেই মসজিদ থেকে তিন মাইল দূরের কথা বলা হয়েছে, এখন অদূরে বলছে এরা এই মসজিদের আশেপাশেরই ছেলে, তাহলে এরা দলবদ্ধ হয়ে নিজের এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় কেন গিয়েছিল? সেদিন ওখানে চিত্ত বিনোদনী কোনো অনুষ্ঠান হচ্ছিল কি? ঐ এলাকায় ওদের কোনো আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব আছে তাদের সাথে দেখা করতে গিয়েছে কি? স্বীয় এলাকা থেকে তিন মাইল দূরে গভীর রাতে দলবব্ধ হয়ে ওখানে কেন গিয়েছিল তাহা তদন্তে আসছে কি? এলাকাবাসীর সাথে ওদের কোনো শত্রু তামী ছিল কিনা তাহা তদন্তে এসেছে কি? এলাকাবাসী দলবদ্ধ হয়ে কেন পাহারাদারী করেন এবং ঐ এলাকায় জন নিরাপত্তার জন্য পুলিশের ভূমিকা কি রকম ছিল তাহা তদন্তে এসেছে কি? ঐ এলাকার নিরাপত্তাহীন জনগণ আগে কোনো দিন দলবদ্ধ অপরাধীর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কিনা তাহা বিচার বিভাগীয় তদন্তে এসেছে কি? এলাকাবাসী আগে থেকেই ভীত আতঙ্কিত হয়ে বসবাস করত কিনা তাহা বিচার বিভাগীয় তদন্তে এসেছে কি? এলাকাবসী আত্মরক্ষা করতে গিয়ে অপ্রত্যাশিত হত্যাকান্ড হয়ে গেছে কিনা তাহা বিচার বিভাগীয় তদন্তে এসেছে কি?
-----------------------------
সংবাদটি এখানে:-
আমিনবাজারে ছয় ছাত্র পিটিয়ে হত্যা
অভিযোগপত্র গ্রহণ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
রাজধানীর অদূরে আমিনবাজারের বরদেশী গ্রামে ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে ৩৬ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। গতকাল বুধবার ঢাকার অতিরিক্ত বিচারিক হাকিম কাজী শহীদুল ইসলাম এই আদেশ দেন।
এই মামলায় ৬০ জনকে আসামি করে ১৩ জানুয়ারি অভিযোগপত্র দাখিল করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। অভিযোগপত্রে ৩৬ জনকে পলাতক দেখিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি ও ক্রোকি পরোয়ানার আবেদন জানানো হয়। বাকিদের মধ্যে ১৩ জন জামিন পান। তাঁদের মধ্যে চারজন হাইকোর্ট থেকে জামিন পান। গতকাল এই চারজন বাদে আদালতে হাজির হওয়া ছয়জনের জামিন বাতিল করে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়। অপর তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। আগে থেকেই কারাগারে আছেন ১১ জন।
২০১১ সালের ১৭ জুলাই পবিত্র শবে বরাতের নামাজ শেষে মিরপুর মাজার রোড থেকে অদূরে আমিনবাজারে ঘুরতে যান সাত বন্ধু শামস রহিম ওরফে শাম্মাম, ইব্রাহিম খলিল, টিপু সুলতান, তৌহিদুর রহমান পলাশ, কামরুজ্জামান কান্ত, মনিব সেতাব ও আল আমিন। এঁদের প্রথম ছয়জনই ছিলেন ছাত্র। সেখানে একদল লোক তাঁদের ডাকাত আখ্যায়িত করে পিটিয়ে ছয়জনকে হত্যা করে। আল আমিন গুরুতর আহত হন। পরে বিচার বিভাগীয় তদন্তে আল আমিন ও নিহত ছাত্ররা নিরপরাধ প্রমাণিত হন। এই হত্যার ঘটনায় সাভার থানার পুলিশ একটি মামলা করে। হত্যার ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে হত্যা মামলার প্রধান আসামি আবদুল মালেক ওই সাতজনের বিরুদ্ধে একটি ডাকাতি মামলা করেন। পুলিশ এ মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। একই সঙ্গে মিথ্যা মামলা করার অভিযোগে আবদুল মালেকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধির ২১১ ধারায় ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
হত্যা মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা হলেন: আবদুল মালেক, সাইদ মেম্বার, আবদুর রশিদ, ইসমাইল হোসেন, জমশেদ আলী, মীর হোসেন, মুজিবুর রহমান, কবীর হোসেন, মনোয়ার হোসেন, রজব আলী, আলম, রানা, আবদুল হামিদ, আসলাম মিয়া, শাহীন আহম্মেদ, ফরিদ খান, রাজীব হোসেন, রহিম ওরফে হাতকাটা রহিম, ওয়াসিম, সেলিম, সানোয়ার হোসেন, সামছুল হক মেম্বার, রাশেদ, সহিদুল, সাত্তার, সেলিম, মনির হোসেন, ছাব্বির আহম্মেদ, আলমগীর, সানোয়ার হোসেন ওরফে আনু, মোবারক হোসেন, আমিন খন্দকার, কবির, রুবেল, নুর ইসলাম, আমিন, সালেহ আহম্মেদ, শাহাদত হোসেন ওরফে জুয়েল, টুটুল, আমিন, মাসুদ, নিজাম উদ্দিন, মোখলেছ, কালাম, আহাদ আলী, বাদশাহ মিয়া, টোটন, সাইদুল, রহিম, শাহজাহান, সুলতান, সোহাগ, লেমন, সাইমন, এনায়েত, হায়দার, খালেক, ইমান আলী, দুলাল ও আলম। তাঁদের মধ্যে ১৪ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
বিষয়: বিবিধ
১০১২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন