'ডায়েরীর পাতাগুলো.....'
লিখেছেন লিখেছেন ফাতিমা মারিয়াম ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৫:৫৯:৪৮ বিকাল
ডায়েরী লেখা বলতে যা বোঝায় তার অভ্যাস আমার কোন কালেই ছিল না। এখনও নেই। তবে এখন কেউ ডায়েরী লিখে কি না তা আমি জানিনা। কারণ এখন কারও জীবনে কোন মজার বা দুঃখের ঘটনা ঘটলে তা সরাসরি হাজার জনকে জানানোর জন্য সামাজিক মাধ্যম তো রয়েছেই। তারপরও হয়ত কেউ কেউ লিখে থাকেন.... ঠিক জানিনা।
ও হ্যাঁ, যা বলছিলাম- আমি কখনো ডায়েরিতে ব্যক্তিজীবনের হাসি কান্না লিখি নি। কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ার সময় আব্বা একটি ডায়েরি দিয়েছিলেন। এর আগেও পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে কয়েকটা ডায়েরী পেয়েছিলাম। কিন্তু পড়েই ছিল। এবার আব্বার দেয়া ডায়েরীটার কিছুটা সদ্ব্যবহার করা শুরু করলাম। গল্পের বই পড়ার সময় যে লাইনটা ভালো লাগত তা-ই ডায়েরীতে লিখে রাখা শুরু করলাম। লেখক যদি কোটেশন হিসেবে কোন কবিতার লাইন ব্যবহার করত তাও লিখে রাখতাম আমার সেই ডায়েরীতে।
দেখতে দেখতে ডায়েরীর পাতাগুলো সামনের দিকে এগিয়ে চলতে থাকে। এছাড়াও হাতে কোন কবিতার বই আসলেও ভালোলাগা কবিতার অংশবিশেষ অথবা পুরো কবিতাকেই ডায়েরীর পাতায় আটকে ফেলি। এরপর যুক্ত হয় গানের লাইন...পছন্দের গানের লিস্ট।
দিন যেতে থাকে....., দিন চলে যায়......চলে আসে কলেজের শেষ দিন। শেষ ক্লাস। সেদিন কি মনে করে যেন ডায়েরীটা ব্যাগে করে নিয়ে গিয়েছিলাম( অথবা আগেই কেউ বলে দিয়েছিল কি না এখন মনে পড়ছে না)। ঘনিষ্ঠ বান্ধবীদের মধ্যে কিছু অনুভূতির আদান প্রদান। সবাই যার যার মত করে একে অন্যের ডায়েরীতে কিছু কথা লিখে দিয়ে চিরদিনের জন্য ডায়েরীতে স্থান করে নিয়েছিলাম। জানিনা অন্যদের কাছে এখনও সেই সংগ্রহ আছে কি না? কিন্তু আমার সেই ডায়েরিটি আজো আমার কাছে রয়ে গেছে। ক্লাসে যে মেয়েটির সাথে কখনো ই কোন কথা হয়নি, শুধু মুচকি হাসির বিনিময় হত, দেখা গেল সে-ও এমন কিছু লিখে দিয়েছে যা এখনও পড়লে মনের মধ্যে কেমন জানি হাহাকার করে ওঠে।
মাঝে মাঝে আমি ঐ ডায়েরিটা খুলে পৃষ্ঠা উল্টিয়ে যাই। সেইসব কোটেশন, কবিতার লাইন, গানের লাইন অথবা হারিয়ে যাওয়া সেই সময়ের সাথীদের কিছু কথা পড়ে বেশ নস্টালজিক হয়ে যাই।
কিছু কিছু কবিতার লাইন বা কোটেশনের কথা মনে আছে যে এটা অমুক লেখকের বা অমুক কবির। কিন্তু অনেক গুলিই মনে করতে পারিনা। তখন বেশ আফসোস হয় লিখার সময় যদি এইটুকু বুদ্ধি থাকত যে কবি বা লেখকের নাম যদি লিখে রাখতাম!! কবি ও কবিতার নাম না জানা কয়েকটি লাইন-
'যাহা কিছু হেরি চোখে কিছু তুচ্ছ নয়
সকলই দুর্লভ বলে আজি মনে হয়।
দুর্লভ এ ধরণীর লেশতম স্থান
দুর্লভ এ জগতের ব্যর্থতম প্রাণ।
যা পাইনি তাও থাক যা পেয়েছি তাও
তুচ্ছ বলে যা চাইনি তাই মোরে দাও।'
বিষয়: বিবিধ
২৫৯৪ বার পঠিত, ৬২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
একদিন এই দেখা হয়ে যাবে শেষ,
পড়িবে নয়ন-’পরে অন্তিম নিমেষ।
পরদিনে এইমত পোহাইবে রাত,
জাগ্রত জগৎ-’পরে জাগিবে প্রভাত।
কলরবে চলিবেক সংসারের খেলা,
সুখে দু:খে ঘরে ঘরে বহি যাবে বেলা।
সে কথা স্মরণ করি নিখিলের পানে
আমি আজি চেয়ে আছি উৎসুক নয়ানে।
যাহা-কিছু হেরি চোখে কিছু তুচ্ছ নয়,
সকলই দুর্লভ ব’লে আজি মনে হয়।
দুর্লভ এ ধরণীর লেশতম স্থান,
দুর্লভ এ জগতের ব্যর্থতম প্রাণ।
যা পাই নি তাও থাক্, যা পেয়েছি তাও,
তুচ্ছ ব’লে যা চাই নি তাই মোরে দাও।
আপনার লেখাটি ভালো লাগলো।
পুরোনো যেকোনো বিষয় মনে রমাঝে অন্যরকম অনুভূতি রেখে যায়ম হোক না সেটা ডায়েরী, কোন খাতা, কোনো পৃষ্ঠা!
শুকরিয়া আপুজ্বি!
এমনই হয়! নিজের পরিচিত আঙ্গিনায় কারো সাথে কখনো কথা না হলেও, হঠাৎ কোনও সুদূরে বসে অনেকদিন পর যখন তার কথাই মনে পড়ে, তার প্রতি আলাদা কোনও আবেগ না থাকা সত্ত্বেও মনটা কেমন হাহাকার করে ওঠে।
লেখাটি দারুণ লাগল। প্রায় সবগুলো কথাতেই নিজের জীবনের মিল খুঁজে পেয়েছি!!! নাউ, ফিলিং নস্টালজিয়া এন্ড আই ক্যান নেভার ব্লেইম ইউ ফর দ্যাট। বেস্ট উইশস ফর ইউ।
ডায়েরী,
তুমি কথার ফুলঝুড়ি
বিগত দিনের সুতো বিহীন ঘুড়ি।
তুমি কারো স্মৃতির উল্টানো পাতা
কারো জীবনের দুঃখ-বেদনা গাঁথা।
শীতের রাত্রিতে সেলাই বিহীন ছেড়াকাঁথা!
ধন্যবাদ.....
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
অনেকেই হারিয়ে গেছে, চলে গেছে। তাই এখন আর আগের মত আসিনা।
আপনি কেমন আছেন?
মন্তব্য করতে লগইন করুন