আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জন(ছন্দে ছন্দে আল হাদিস)
লিখেছেন লিখেছেন ফাতিমা মারিয়াম ১৬ জুন, ২০১৫, ১২:৫৩:১৪ দুপুর
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা) করেছেন বর্ণনা,
রাসুলে করীমﷺ বলেছেন এক অতীতের ঘটনা।
একদা তিনজন লোক গিয়েছিলো কোন সফরে,
আশ্রয় নিলো এক পর্বত গুহায় রাত কাটাবার তরে।
.
একটি পাথর গড়িয়ে পড়ে বন্ধ গুহার মুখ,
চিন্তিত হয়ে ভাবে তারা আজ নেমে এলো বুঝি দুখ।
একে অন্যকে বলে তাহারা, 'ভালো কাজ করেছি যত,
আল্লাহ্র কাছে উসিলা বানিয়ে দু'য়ায় থাকবো রত।'
.
প্রথমজন বলে উঠে, 'হে মহান প্রভু,
পিতামাতা মোর বৃদ্ধ অতি অবহেলা করিনি কভু।
নিজসন্তান ও পরিজনদের আগেই তাদের আমি
খাবার দিতাম। তা জানে আমার অন্তর্যামী।
.
একদিন আমি গিয়েছিলাম অনেক দূরের বনে,
রাতে ফিরে দেখি বাবা-মা আমার ঘুমায় আপন মনে।
জাগিয়ে তাদের দুধ খাওয়াবো? মন দিলনা সায়,
দুধের পেয়ালা হাতে নিয়ে আমি দাঁড়িয়ে রইলাম ঠায়।
.
পরিজন মোর ক্ষুধার্ত ছিল তবুও নিয়ম ভাঙ্গিনি,
পিতামাতার পূর্বে তাদের মুখে কিছুই দেইনি।
ভোরবেলা তাদের ঘুম ভেঙ্গে গেলে করলো দুধপান,
একাজে তুমি সন্তুষ্ট হলে দাও এখন পরিত্রাণ।
.
পাথর কিছুটা সরে গেলো বটে, বের হতে পারলনা কেউ,
দ্বিতীয়জন এবার বলে তার কথা, বুকে কান্নার ঢেউ।
'আল্লাহ্ তুমি জানো, আমার ছিলো এক জ্ঞাতি বোন,
ভালবাসতাম তাকে আমি দিয়ে প্রাণ- মন।
.
আমি যখন তার কাছে জানাই আমার কামনা,
আমার প্রস্তাবে সে রাজী হলোনা।
সুযোগ আমার তৈরি হলো এক দুর্ভিক্ষের বছরে,
আমার শর্ত মেনে নিয়ে সে চুপিসারে আসে আমার ঘরে।
.
যখন আমি হই নিকটবর্তী তার,
বলে সে আমায়, 'তুমি কাছে এসো না আমার।
ভয় কর তুমি আল্লাহ্কে, এখনও আমি কুমারী।'
ছেড়ে দিলাম আমি তাকে, যে আমার প্রিয় নারী।
.
যে টাকা আমি দিয়েছি তারে ছেড়ে দিলাম তা-ও,
আল্লাহ! তব সন্তোষ লাভে করেছি এ কাজ ,আজ রেহাই দাও।
এ কথার পরে পাথর আরও কিছুটা গেলো সরে ।
তবুও তারা বের হতে পারেনা, কি করবে ভেবে মরে।
.
কাতর কণ্ঠে তৃতীয়জন বলে, 'হে আল্লাহ্ শোন,
সকল শ্রমিকের মজুরী দিয়েছি তব সন্তোষে জেনো।
একজন শ্রমিক নিলোনা মজুরী চলে গেলো বহুদূরে,
তার টাকা দিয়ে ব্যবসা করেছি আলাদা করে।
.
ধীরে ধীরে ধনসম্পদ বেড়ে গেলো তার,
ফিরে এসে সে বললো, 'মজুরী দাও আমার।'
বললাম তাকে, 'এই উট, গরু, ছাগল, চাকর তোমার,
বলে সে আমায়, 'উপহাস করোনা; মজা করোনা আর।'
.
বললাম তাকে ,'উপহাস নয়! নিয়ে যাও সব তুমি,
তোমার টাকায় ব্যবসা করেছি জানেন অন্তর্যামী।'
তুমি জানো প্রভু! এ কাজ করেছি তব সন্তোষলাভ তরে।
নিষ্কৃতি দাও বিপদ থেকে অশেষ দয়া করে।
.
এ কথার পর পাথর সম্পূর্ণ সরে গেলো,
তারা তিনজন পায়ে হেঁটে বের হয়ে এলো।
বুখারী ও মুসলিম এই হাদিস করেছেন সংকলন,
মেনে নিয়ে এর সব কথা রাখতে হবে স্মরণ।
মূল হাদিসঃ
হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসূলে আকরামﷺকে বলতে শুনেছি,
“তোমাদের পুর্ব কালের তিনজন লোক কোথাও যাচ্ছিল। পথিমধ্যে তারা রাত কাটানোর জন্য একটি পর্বত গুহায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হলো। কিন্তু তারা গুহায় প্রবেশ করার সাথে সাথে একটি পাথর গড়িয়ে এসে গুহার মুখ বন্ধ করে দিল। তারা পরস্পর বলতে লাগলো, “তোমরা একমাত্র তোমাদের খাঁটি আমলকে অসীলা বানিয়ে আল্লাহ্র কাছে দুয়া করলে এই কঠিন বিপদ থেকে মুক্তি পাবে।”
তাদের একজন বললো, “হে আল্লাহ! আমার পিতা-মাতা ছিলেন অত্যন্ত বৃদ্ধ। আমি আমার পরিবার,সন্তান ও অধীনস্তদের আগেই তাদেরকে দুধ পান করাতাম। একদিন আমায় জ্বালানী কাঠের সন্ধানে অনেক দূরে যেতে হলো। আমি যখন রাতে বাড়ি ফিরে এলাম, তখন আমার পিতা-মাতা ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। আমি দুধ নিয়ে যথারীতি তাদের কাছে গিয়ে দেখি, তারা ঘুমিয়ে পড়েছেন। তাদেরকে জাগিয়ে তোলা আমি পছন্দ করলামনা। আবার তাদের খাওয়ার পূর্বেই পরিবারের লোকদের দুধ পান করানোও পছন্দ করলাম না।
আমি দুধের পেয়ালা হাতে নিয়ে রাতভর পিতা-মাতার কাছে দাঁড়িয়ে রইলাম। তাদেরকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলা আমি সঙ্গত মনে করলাম না। এদিকে বাচ্চারা আমার পায়ের কাছে বসে ক্ষুধায় কাঁদছিল। এই অবস্থায় সকাল হয়ে গেল এবং তারা ঘুম থেকে জেগে উঠলেন। আমি তাদরেকে দুধ পান করালাম।
হে আল্লাহ! আমি যদি এ কাজটি তোমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য করে থাকি, তাহলে এই পাথরের জন্য আমরা যে বিপদে পড়েছি তা দূর করে দাও।” এতে পাথর কিছুটা দূরে সরে গেল কিন্তু গুহা থেকে কেউ বেরিয়ে আসতে পারল না।
অপর ব্যক্তি বলল,”হে আল্লাহ! আমার এক চাচাতো বোন ছিল । আমি তাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতাম।” অন্য বর্ণনায় আছে, “পুরুষ নারীকে যতটা ভালবাসতে পারে, আমি তাকে ততটাই ভালবাসতাম। আমি তার সঙ্গে কামনা চরিতার্থ করার আকাঙ্খা ব্যক্ত করলাম। কিন্তু সে এতে রাজী হলো না। অবশেষে এক দুর্ভিক্ষের বছরে সে আমার নিকট এলো। আমি তাকে আমার সাথে নির্জনে মিলনের শর্তে একশো বিশটি স্বর্ণমুদ্রা (দিনার) দিলাম। আমার প্রস্তাবে সে রাজী হলো। “
অন্য বর্ণনা মতে, আমি যখন তার নিকটবর্তী হলাম, তখন সে বলল,‘আল্লাহ্কে ভয় কর এবং অবৈধভাবে আমার কৌমার্য নষ্ট করো না।”
“আমি তখনই তাকে ছেড়ে চলে গেলাম। অথচ মানুষের মধ্যে সে ছিল আমার নিকট সর্বাপেক্ষা প্রিয়। আমি তাকে যে স্বর্ণ মুদ্রা দিয়েছিলাম তাও ছেড়ে দিলাম। হে আল্লাহ! আমি যদি এ কাজটি তোমার সন্তুষ্টির জন্য করে থাকি, তাহলে তুমি আমাদেরকে এই বিপদ থেকে মুক্তি দান করো।” এর ফলে পাথর আরও কিছুটা সরে গেল। কিন্তু এতেও তারা বের হতে পারল না।
তৃতীয় ব্যক্তি বলল, “হে আল্লাহ! আমি কয়েকজন শ্রমিককে কাজে লাগিয়েছিলাম। আমি তাদেরকে যথারীতি পারিশ্রমিক দিলাম। কিন্তু একজন শ্রমিক তার পারিশ্রমিক রেখে চলে গেল। আমি তার পারিশ্রমিককে ব্যবসায়ে নিয়োগ করলাম। এতে তার ধন-দৌলত অনেক বেড়ে গেল।”
কিছুদিন পরে লোকটি ফিরে এলো। এসে আমায় বলল, “হে আল্লাহর বান্দা! আমাকে আমার পারিশ্রমিকটা দিয়ে দাও।”
আমি বললাম, ” এই উট, গরু, ছাগল, ভেড়া ও চাকর যা দেখছো, সবই তোমার ।”
সে বলল, “হে আল্লাহ্র বান্দা! তুমি আমার সাথে উপহাস করো না।”
আমি তাকে বললাম, “আমি তোমাকে মোটেই উপহাস করছি না।”
এরপর সে সব মালামাল নিয়ে চলে গেল এবং কিছুই রেখে গেল না। হে আল্লাহ! আমি যদি তোমার সন্তুষ্টির জন্য এ কাজ করে থাকি, তবে আমাদের থেকে এ বিপদ থেকে মুক্তি দাও।”
এরপর গুহার মুখ থেকে ঐ পাথর সম্পূ্র্ণ সরে গেল এবং তারা সকলেই হেঁটে বের হয়ে চলে গেল। “
[বুখারী ও মুসলিম]
[ রিয়াদুস সালেহীন থেকে সংগৃহিত। হাদিস নং ১২ ]
.
বিষয়: বিবিধ
১৪০৫ বার পঠিত, ৪৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
উৎসাহ দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ
[বুখারী ও মুসলিম]
রাসুলে করীম ﷺ বলেন , ‘যে ব্যক্তি শুধু আল্লাহ্..র কালেমা সমুন্নত করার জন্য লড়াই করে সে- ই আল্লাহ্..র পথে (লড়াই করে)।’
[বুখারী ও মুসলিম]
আমি নিবেদন করলাম,”হে আল্লাহর রাসূল! হত্যাকারীর জাহান্নামের হকদার হওয়াটাতো বুঝলাম; কিন্তু নিহত ব্যক্তির জাহান্নামী হওয়ার কারণটা কী?”
রাসূলে আকরাম ﷺবললেন, ” কারণটা হলো এই যে, সেও তো তার প্রতিপক্ষকে হত্যা করতে চেয়েছিল।
[বুখারী ও মুসলিম]
মসজিদে প্রবেশ করে যতক্ষণ পর্যন্ত সে নামাযের অপেক্ষায় বসে থাকে, ততক্ষণ সে নামাযের অনুরূপ সওয়াবই পেতে থাকে। আর যে ব্যক্তি নামায আদায়ের পর কাউকে কষ্ট না দিয়ে অযুসহ মসজিদে অবস্থান করে, ততক্ষণ ফেরেশতারা তার মার্জনার জন্য এই বলে দো’আ করতে থাকে,” হে আল্লাহ! একে তুমি ক্ষমা করে দাও; হে আল্লাহ এর তওবা কবুল কর; হে আল্লাহ! এর প্রতি তুমি দয়া প্রদর্শন করো।”
[বুখারী ও মুসলিম]
[বুখারী ও মুসলিম]
হাদীস টি কবিতার রুপে পড়ে অনেক ভালো লাগলো! জাযাকিল্লাহ!
[বুখারী ও মুসলিম]
রাসুলে করীম ﷺ বলেন , ‘যে ব্যক্তি শুধু আল্লাহ্..র কালেমা সমুন্নত করার জন্য লড়াই করে সে- ই আল্লাহ্..র পথে (লড়াই করে)।’
[বুখারী ও মুসলিম]
আমি নিবেদন করলাম,”হে আল্লাহর রাসূল! হত্যাকারীর জাহান্নামের হকদার হওয়াটাতো বুঝলাম; কিন্তু নিহত ব্যক্তির জাহান্নামী হওয়ার কারণটা কী?”
রাসূলে আকরাম ﷺবললেন, ” কারণটা হলো এই যে, সেও তো তার প্রতিপক্ষকে হত্যা করতে চেয়েছিল।
[বুখারী ও মুসলিম]
অনেক ধন্যবাদ গুরুজী ।
মসজিদে প্রবেশ করে যতক্ষণ পর্যন্ত সে নামাযের অপেক্ষায় বসে থাকে, ততক্ষণ সে নামাযের অনুরূপ সওয়াবই পেতে থাকে। আর যে ব্যক্তি নামায আদায়ের পর কাউকে কষ্ট না দিয়ে অযুসহ মসজিদে অবস্থান করে, ততক্ষণ ফেরেশতারা তার মার্জনার জন্য এই বলে দো’আ করতে থাকে,” হে আল্লাহ! একে তুমি ক্ষমা করে দাও; হে আল্লাহ এর তওবা কবুল কর; হে আল্লাহ! এর প্রতি তুমি দয়া প্রদর্শন করো।”
[বুখারী ও মুসলিম]
আপু আপনি দারুণ ছন্দ মিলাতে পারেন।
আলহামদুল্লিলাহ। ভাল লাগলো।
উৎসাহ দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
[বুখারী ও মুসলিম]
উৎসাহ দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
[বুখারী ও মুসলিম]
খুব ভালো লাগলো। আল্লাহ আপনাকে উত্তম পুরস্কার দান করুন।
রাসুলে করীম ﷺ বলেন , ‘যে ব্যক্তি শুধু আল্লাহ্..র কালেমা সমুন্নত করার জন্য লড়াই করে সে- ই আল্লাহ্..র পথে (লড়াই করে)।’
[বুখারী ও মুসলিম]
আমি নিবেদন করলাম,”হে আল্লাহর রাসূল! হত্যাকারীর জাহান্নামের হকদার হওয়াটাতো বুঝলাম; কিন্তু নিহত ব্যক্তির জাহান্নামী হওয়ার কারণটা কী?”
রাসূলে আকরাম ﷺবললেন, ” কারণটা হলো এই যে, সেও তো তার প্রতিপক্ষকে হত্যা করতে চেয়েছিল।
[বুখারী ও মুসলিম]
মন্তব্য করতে লগইন করুন