দৃষ্টি সংযত রাখা এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত
লিখেছেন লিখেছেন ফাতিমা মারিয়াম ২০ এপ্রিল, ২০১৫, ০৫:৩৫:১৮ বিকাল
ঘটনা-১
এই বছরের জানুয়ারি মাসের ঘটনা। সেদিন ভোরবেলা প্রচণ্ড কুয়াশা পড়েছিল। অল্প কিছু দুরের মানুষও দেখা যায় না....এমন অবস্থা। প্রকৃতির এই বিরূপ পরিস্থিতিতেও প্রাতঃভ্রমণকারী/কারিণীগণ ঘর থেকে বের হতে বাধ্য হন। কারণ তাদের বিভিন্নজনের বিভিন্ন সমস্যা। তাদের চিকিৎসক তাদেরকে নিয়মিত হাঁটার পরামর্শ দিয়েছেন। অর্থাৎ এই নিয়মিত হাঁটাও তাদের চিকিৎসারই একটা অংশ।
রাজধানীর নামকরা একটি আবাসিক এলাকার ঘটনা। এখানের রাস্তাগুলো হাঁটার জন্য ভালো। যেখানে ঘন জনবসতি সেখানে রাস্তাগুলির চাইতে খালি প্লটের এলাকার রাস্তা তুলনামূলক ভাবে বেশী ভালো। যারা নিয়মিত হাঁটেন তাই তারা একটু দূরের খালি প্লটগুলোর পাশের রাস্তায় তাদের নিয়মিত হাঁটার এই চর্চা চালিয়ে যান। কারণ ওখানে জনবসতি পাতলা। বাসাগুলি বেশ দুরে দুরে। মোটামুটি নিরিবিলি এলাকা। রাস্তাগুলোও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। তাই সবাই সেখানে হেঁটে স্বস্তি পায়। এই স্বস্তির মাঝেও যে ভয়ঙ্কর কিছু পশু রূপী মানুষ তাদের ভয়ঙ্কর থাবা বসাতে ওঁত পেতে থাকতে পারে এই ঘটনাগুলি না জানলে আমি হয়ত বিশ্বাসই করতাম না!
পশুতো পশুই! সে স্থান-কাল-পাত্র কিছুই মানে না..... বয়স মানে না। একজন নারীকে সে শুধুই মাত্র ভোগের সামগ্রী মনে করে! সে মনে করে একজন নারী সে যেই হোক না কেন তাকে যে কোন ভাবে অপমান অপদস্থ করতে পারলেই আমার পুরুষ জীবন (না কি পশুজীবন) ধন্য! আর রাস্তায় যদি কারও সাথে একটু অশ্লীল আচরণ করিই তাহলে আমাকে কে চিনে রাখবে??? কে আমাকে কিছু বলবে?
যতটুকু শুনেছি ভদ্র মহিলার বয়স ৫০ এর কাছাকাছি হবে। নিয়মিত ভোরবেলা হাঁটেন। তিনি ভাবতেও পারেন নি এই কুয়াশার ভোর তাকে এক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেবে! যেহেতু কিছু দূরের মানুষও দেখা যাচ্ছেনা তাই ওঁত পেতে থাকা বদমাশটিকে তিনি দেখতে পান নি। কিছুদূর যাওয়ার পর হঠাৎ করে কেউ একজন এসে তাকে জাপটে ধরল। তিনি সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে উঠলেন। তার চিৎকার অনেকেই শুনলেও কুয়াশার কারণে তার অবস্থান অনুমান করতে পারছিলেন না। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বদমাশটি উনাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে পাশের একটি খালি প্লটে নিয়ে গেল। তিনি বাঁচার আর কোন উপায় না দেখে উচ্চকণ্ঠে বিরামহীন ভাবে চিৎকার করতে থাকেন।
উনার চিৎকারে শব্দের উৎস ধরে আশপাশের পুরুষ মহিলা সবাই ছুটে এলো। পুরুষগণ উচ্চস্বরে হাঁক দিতে লাগলেন। যখন ঐ বদমাশটি দেখল যে সবাই এইদিকে তেড়ে আসছে তখন সে ছুটে পালিয়ে গেল। কয়েকজন তার পিছু পিছু গিয়েও তাকে ধরতে পারেনি ঘন কুয়াশার কারণে।
আল্লাহর অশেষ রহমতে আশপাশের মানুষ সময়মত ছুটে আসায় ভদ্রমহিলা বিরাট এক বিপদ থেকে বেচে গিয়েছেন। যদিও তিনি হাত ও পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। কিন্তু এই ভদ্রমহিলা কি তার জীবনে এই ভয়ঙ্কর ঘটনার কথা ভুলতে পারবেন? এই ঘটনাটি আমি একজন প্রত্যক্ষদর্শীর কাছে শুনেছি।
ঘটনা-২
প্রায় মাস খানেক আগের ঘটনা। এই ঘটনা যাকে নিয়ে তিনিও নিয়মিত ভোরবেলা উনার বাসার কাছাকাছি রাস্তায় হেঁটে থাকেন। বয়স ৫৫ এর উপরেই হবে। একদিন সকালবেলা হাঁটার সময় আচমকা এক বদমাশ উনার পথরোধ করে সামনে দাঁড়াল। সে প্রথমেই কিছু অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করল। তারপর ভদ্রমহিলার হাত ধরে তার সামনে টেনে আনল। তার বিশেষ অঙ্গ ভদ্রমহিলার গায়ের এখানে ওখানে লাগাতে লাগল।
ঘটনার আকস্মিকতায় মহিলা হতচকিত হলেও সাহস হারান নি। চিৎকার দিয়ে উঠলেন। এতে লোকটি উনাকে আরও হেনস্থা করার জন্য উনাকে নিয়ে টানাটানি শুরু করল। ভদ্রমহিলা জোরে জোরে বলতে লাগলেন,বাবারে আমি বুড়া মানুষ, আমাকে ছেড়ে দাও। লোকটি হয়ত উনাকে আরও কিছুক্ষণ তার এ হেন কুকর্ম চালিয়ে যেত। কিন্তু ভদ্রমহিলার চিৎকার শুনে লোকজন আসতে শুরু করায় সে মহিলাকে ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
এই ঘটনাটা আমি ঠিক প্রত্যক্ষদর্শীর কাছে শুনিনি। আমি যার কাছে শুনেছি তিনি তার এক বান্ধবীর কাছে শুনে আমাকে বলেছেন।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে দুজন ভদ্রমহিলাই বোরখা পরিহিতা ছিলেন। যারা শুধুমাত্র নারীদের পোশাককেই যৌন হয়রানির জন্য দায়ী করেন তাদের কাছে আমার বলার শুধু এইটুকুই আছে যে শালীন পোশাকেও আজ নারীরা নিরাপদ নয়। কারণ কি জানেন? আমাদের বর্তমান সমাজ এবং পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। নষ্ট গেছে মন মানসিকতার। পরিবর্তন এসেছে আমাদের সংস্কৃতিতে। যা আগে কেউ দেখেনি, শোনে নি সে সব আজ আমার সংস্কৃতির অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে সমাজ কোথায় পৌঁছেছে তা তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি।এ বছরের বর্ষবরণের সেই জঘন্য ঘটনাগুলোর পর ভিডিওর মাধ্যমে যে প্রতিবাদ গুলি আসছে তার তিন চারটি দেখেছি। এগুলো দেখে স্তম্ভিত হয়ে যাই যে এ কেমন প্রতিবাদের ভাষা? একটি ছবি দেখে বারবার মনে প্রশ্ন আসছে এটা কি প্রতিবাদের ভাষা হতে পারে? এরা কি স্বাভাবিক চক্ষুলজ্জা বোধটুকুও কি বিসর্জন দিয়েছে? কেন আমরা পুরুষ বা নারীরা যার যার সঠিক ভূমিকা পালন করছিনা?
পর্দা শুধুমাত্র তো নারীর একার জন্য নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই পর্দার বিধান দিয়েছেন। পুরুষদেরকে বলেছেন,''হে নবী! মু’মিন পুরুষদের বলে দাও তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি সংযত করে রাখে এবং নিজেদের লজ্জা স্থানসমূহের হেফাজত করে। এটি তাদের জন্য বেশী পবিত্র পদ্ধতি। যা কিছু তারা করে আল্লাহ্ তা জানেন।'[আন নূর;আয়াত নং- ৩০]
আর নারীদেরকে বলেছেন, 'আর হে নবী! মু’মিন মহিলাদের বলে দাও তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে রাখে এবং তাদের লজ্জা স্থানগুলোর হেফাজত করে আর তাদের সাজসজ্জা না দেখায়, যা নিজে নিজে প্রকাশ হয়ে যায় তা ছাড়া।আর তারা যেন তাদের ওড়নার আঁচল দিয়ে তাদের বুক ঢেকে রাখে। তারা যেন তাদের সাজসজ্জা প্রকাশ না করে...............।' [আন নূর;আয়াত নং- ৩১ ]
দুই পক্ষই যদি আল্লাহ প্রদত্ত বিধান মেনে চলত তবে আজ কোন একাকী নারী একস্থান থেকে আরেক স্থানে নিরাপদে যাতায়াত করতে পারত শুধুমাত্র আল্লাহর ভয় ছাড়া আর কোন ভয় তাকে কাবু করতে পারত না।
আল্লাহ প্রদত্ত এই নির্দেশ যারা অমান্য করবে তাদের জন্য দুনিয়া বা আখিরাত উভয় স্থানেই রয়েছে লাঞ্ছনা। যার প্রতিশ্রুতি স্বয়ং আল্লাহ পাকই দিয়েছেন,'আর যারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তাদের জন্য তো জাহান্নামের প্রজ্জ্বলিত আগুনই যথেষ্ট। যারা আমার আয়াতগুলো মেনে নিতে অস্বীকার করেছে তাদেরকে আমি নিশ্চিতভাবেই আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করবো। আর যখন তাদের চামড়া পুড়ে গলে যাবে তখন তার জায়গায় আমি অন্য চামড়া তৈরি করে দেবো, যাতে তারা খুব ভালোভাবে আযাবের স্বাদ গ্রহণ করতে পারে। আল্লাহ্ বিপুল ক্ষমতার অধিকারী এবং তিনি নিজের ফায়সালাগুলো বাস্তবায়নের কৌশল খুব ভালোভাবেই জানেন।' (সুরা আন নিসাঃ ৫৬)
বিষয়: বিবিধ
১৩৩২ বার পঠিত, ৩৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কথাটি ১০০% সত্য, কিন্তু এই কথাগুলো পড়তে গেলেই মৌলবাদী বলা হয়। আর আমল করতে গেলে তো সরাসরি জঙ্গী উপাদি জুটে। এর জন্য শিক্ষা একমাত্র ব্যবস্থা দায়ী। এদেশ সম্পূর্ণ অসভ্য ভারতে দিকে পা বাড়াচ্ছে। তাতে সহযোগীতা করছে সরকার ও তার লম্পট কর্মকর্তারা, সাথে আছে নারী আন্দোলনের বদমাইশরা। তাই জাতিকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে হলে শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে। ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতা মূলক করতে হবে। লিখাটির জন্য ধন্যবাদ।
আসুন আবর নতুন করে আল্লাহকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করি৷ ধন্যবাদ৷
আমরা নিজেদের করনীয় কী তা না ভেবে শুধু পরস্পর পরস্পরকে দায়ী করতেই ব্যস্ত। আল্লাহ্ পাক আমাদের সকলকেই পরিপূর্ণ পর্দার আলোকে চলার তৌফিক দান করুণ আমীন।
আসলে মূল কথা এটাই। সবাই যদি তার নিজ নিজ করণিয় পালন করত তবে আজ সমাজে এত বিশৃঙ্খলা দেখা দিত না।
Click this link
আপু কিছু বলতেও ইচ্ছা হচ্ছেনা। ভাল থেকো।
অবশেষে ফাতিমা আপুর রাইটার্স ব্লক কেটেছে আলহামদুলিল্লাহ!!!!
আল্লাহ পর্দার বিধানে প্রথমে কিন্তু পুরুষদের সম্বোধন করেছেন! পর্দার বিধান উভয়কেই মেনে চলতে হবে পাশাপাশি নৈতিকতার মান উন্নীত করন এবং অন্যায়ের যথাযথ শাস্তির বিধান নিশ্চিত করন করতে হবে!
সচেতনতা মূলক পোস্টের জন্য শুকরিয়া!
লেখাটি পড়ব।
তুমি বাসায় আসার কথা বলেও ত আসলে না!?
ইনশাআল্লাহ যাব।
ছোট বেলায় বাবা মা বলতো নিথ্যা কথা বলবই না। কিন্তু প্রয়োজনের সময় সন্তানদের সামনেই তারা মিথ্যা কথা বলে বা সন্তানদের মিথ্যা কথা বলায়।
যে স্কুল হতে আমরা শিখেছি দুর্নীতিকারী জাতীর দুর্শমন। কিন্তু পরে দেখি যারা এ কথা বলে তারাই দুর্নীতিকারী।
কোন অনুষ্টানে ফ্যামিলির মেয়ে সন্তান যদি অশ্লীল কাপড় পড়ে তবে বাবা নিষেধ করলেও মা সার্পোট দেয়। আবার মা নিষেধ করলেও বাবা সার্পোট দেয়।
আবার আমাদের সমাজের একটা ধারনা আছে, এস,এস,সি পাশের পর ছেলে সন্তানকে শাসন করতে হয় না। সে নাকি এখন অনেক বড় হয়ে গেছে।
আসলে ছোটকাল হতে যারা আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন তারাই ভেজাল। তাঁদের মতে যখন ইসলাম মানতে মন চাবে তখন মানবা আর যখন চাবে না তখন বাদ রাখ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন