উপলব্ধি [ ছোট গল্প ]

লিখেছেন লিখেছেন ফাতিমা মারিয়াম ০৯ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৮:৫১:২৬ রাত



আজ লিলির ক্লাসে যেতে ইচ্ছে করছেনা । এক লজ্জাবোধ তাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। এখন মাটির সাথে মিশে যেতে মন চাইছে । বসে বসে ভাবছে কি করবে ও এখন ? অপরাধবোধ, লজ্জা, ঘৃণা সব কিছু মিলিয়ে সে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। 'এ আমি কি করলাম'!! যদি আব্বু, আম্মু অথবা আত্মীয়-স্বজনরা বিষয়টি জানে তবে সে কিভাবে সবাইকে মুখ দেখাবে ?

-'কি রে তুই এখনো রেডি হস নাই ? ' আম্মুর কথায় সে সম্বিত ফিরে পায় ।

-'এইতো রেডি হচ্ছি ।'

-'নাস্তা খেতে আ.....য় ।'

-'আসছি....।'

দু:শ্চিন্তায় ওর গলা দিয়ে কিছু নামছেনা । কোন মতে সামান্য কিছু খেয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেল ।

বাসা থেকে বের হয়ে লিলি ভাবছে এখন ও করবে ? ক্লাসে যাবে ? নাকি অন্য কোথাও ? হঠাৎ করে মনে হলো অনেক দিন সাদিয়ার সাথে দেখা হয়না । ওর বাসায় গিয়ে ওকে একটু চমকে দিই। আর ওকেতো আমি সব কিছু খুলে বলতেই পারি । সাদিয়া ওর কলেজ জীবনের খুব ঘনিষ্ঠ বান্ধবী । এক সময়তো এমন ছিলো যে একজন অন্যজনের সাথে সব কথা শেয়ার করতে না পারলে পেটের ভাতই হজম হতোনা । সাদিয়া এখন ভার্সিটিতেই অন্য ডিপার্টমেন্ট এ পড়ে। ওর পরীক্ষা হয়ে গেছে ক্লাস নেই ।

কলিং বেলের স্যুইচ টিপে লিলি অপেক্ষা করছে । দরজা খুললো সাদিয়ার আম্মা। 'আসসালামু আলাইকুম । খালাম্মা ভালো আছেন ?'

-' ওয়ালাইকুম আসসালাম । আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুমি কেমন আছো মা ? '

-' জ্বী ভালো '

-'সাদিয়া রুমেই আছে তুমি যাও'

লিলি রুমে ঢুকে দেখলো সাদিয়া ও তার ছোট বোন জাকিয়া এক সাথেই রয়েছে। ওরা দুই বোন ই ভীষন খুশী হলো লিলিকে দেখে । কূশল বিনীময়ের পর জাকিয়া বললো ,'আপু তোমরা গল্প করো আমি চা বানিয়ে নিয়ে আসি।' এই বলে জাকিয়া রুম থেকে বের হয়ে গেল।'

-'তোদের কত মজা তাই না দুবোন একসাথে কত গল্প করিস। আর আমাকে দেখ আমি একেবারেই একা।আমার একটা মাত্র ভাই তাও আবার আমার চাইতে কত ছোট। বাসায় কথা বলার কেউ নেই।'

-'আসলেই তাই ভাইয়া, আমি আর জাকিয়া একসাথে খুব গল্প করি ।'

লিলি জানতে চাইলো 'তোরা কি নিয়ে কথা বলছিলি ? '

-'আম্মা সপ্তাহে দুই দিন মাগরীবের নামাজের পর আমাদের ভাইবোনদের নিয়ে কোনদিন কুরআন, কোনদিন হাদিস বা মাসলা মাসায়েল বা কোনদিন নবী- রাসুল বা মনীষীদের জীবনী নিয়ে আলোচনা করেন ।'

-'তাই নাকি ?'

- 'আম্মার আলোচনার পর আমাদের আমাদের যে কোন একজনকে নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর একটা আলোচনা করতে হয়। আজ জাকিয়ার পালা তাই ওকে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলি বুঝিয়ে দিচ্ছিলাম ।'

-'হুমম' লিলি একটি দীর্ঘশ্বাস ফেললো । 'তো আজ জাকিয়া কি নিয়ে আলোচনা করবে ?'

-'পর্দা নিয়ে । মজার বিষয় কি জানিস আমাদের সমাজে পর্দা বলতে শুধু মাত্র মেয়েদের পর্দাকেই বোঝায়। অথচ এ বিষয়টি ছেলে মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।'

-'বুঝলাম না'

"মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন,"হে নবী! মু’মিন পুরুষদের বলে দাও তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি সংযত করে রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানসমূহের হেফাজত করে।এটি তাদের জন্য বেশী পবিত্র পদ্ধতি। যা কিছু তারা করে আল্লাহ‌ তা জানেন।

আর হে নবী! মু’মিন মহিলাদের বলে দাও তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানগুলোর হেফাজত করে আর তাদের সাজসজ্জা না দেখায়, যা নিজে নিজে প্রকাশ হয়ে যায় তা ছাড়া।"

এ ছাড়া ও এ বিষয়ে অনেক হাদিস আছে । নিজের স্ত্রী বা মুহাররাম নারীদের ছাড়া কাউকে নজর ভরে দেখা মানুষের জন্য জায়েয নয়। একবার হঠাৎ নজর পড়ে গেলে ক্ষমাযোগ্য। কিন্তু প্রথম দৃষ্টিতে আকর্ষণীয় মনে হলে সেখানে আবার দৃষ্টিপাত করা ক্ষমারযোগ্য নয়। নবী এ ধরনের দেখাকে চোখের যিনা বলেছেন। তিনি বলেছেন,' মানুষ তার সমগ্র ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে যিনা করে। দেখা হচ্ছে চোখের যিনা, ফুসলানো কণ্ঠের যিনা, তৃপ্তির সাথে কথা শোনা কানের যিনা, হাত লাগানো ও অবৈধ উদ্দেশ্য নিয়ে চলা হাত ও পায়ের যিনা। ব্যভিচারের এ যাবতীয় ভূমিকা যখন পুরোপুরি পালিত হয় তখন লজ্জাস্থানগুলো তাকে পূর্ণতা দান করে অথবা পূর্ণতা দান থেকে বিরত থাকে।'

লিলি খুব অবাক হয়ে সাদিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো । এসব বিষয়ে তার জ্ঞান যে কত সীমিত তা সে বুঝতে পারলো । জাকিয়া এমন সময় চা-নাস্তা নিয়ে এলো । তিনজনে একসাথে নাস্তা খেল এবং আরো অনেক গল্প করলো। কিছুক্ষন পর লিলি বললো , 'এবার উঠি '

-'সেকি কেন ? আজ তুই সারাদিন থাকবি। '

-'নারে আজ আর থাকবনা । আরেক দিন আসব। '

প্রবল আপত্ত্বির মুখেও সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে লিলি বের হয়ে আসলো। রিকশায় বসে ওর মনের ভিতরে ঝড় শুরু হলো । যদি ওর আম্মু অথবা আব্বু পারিবারিক ভাবে এধরনের শিক্ষা দিত তবে তার জীবনে এত বড় দুর্ঘটনা হয়তো ঘটতোনা । নিজের কাছে নিজেকে এতটা নীচ মনে হতোনা। না........ ও বলতে পারেনি। সাদিয়াকে অনেক কথাই বলতে চেয়েছিল কিন্তু একটা কথাও না বলে চলে এসেছে । এখন ওর কাছে মনে হচ্ছে আসলে ও যদি সাদিয়া বা জাকীয়ার মত জীবন যাপন করত তবে হয়তো তাকে এই দুর্ঘটনায় পড়া লাগতোনা। এখন ও কি করবে ? নাহ ও আর ভাবতে পারছেনা । ও ঝাপসা চোখে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে আর রিকশা ধীরে ধীরে এগিয়ে চলছে...................।

[ লিলির সমস্যাটা গল্পে উল্লেখ করা হয়নি । এটা পাঠকের ভাবনার উপর ছেড়ে দেয়া হলো । ছোট গল্প লিখার এই দু:সাহসিক প্রচেষ্টাকে সবাই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে উপেক্ষা করবেন । ]

[ আন্ নূর------------৩০ ও ৩১ নং আয়াত ]

বিষয়: সাহিত্য

২৭৭৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File