ছন্দে ছন্দে আল হাদিস-১৬
লিখেছেন লিখেছেন ফাতিমা মারিয়াম ১৮ অক্টোবর, ২০১৪, ০১:২৮:৫৬ দুপুর
প্রকৃত তওবা
ইমরান ইবনে হুসাইন করেছেন বর্ণনা,
রাসুল ﷺ এর যুগের এক শিক্ষণীয় ঘটনা।
জুহাইনা গোত্রের এক নারী একদা এলো রাসুল ﷺ এর কাছে,
এসেই সে রাসুল ﷺ কে বলে আমার শাস্তি পাওনা আছে।
.
ব্যভিচার করে কঠিন পাপ করেছি এই আমি,
গর্ভবতী হয়েছি (তাই প্রভুর কাছে কাঁদছি দিবা-যামী।)
এই অপরাধের শাস্তি দিন এখন আপনি আমায়
(যেন মোর সব পাপ এই দুনিয়াতেই মিটে যায়।)
.
রাসুলﷺ তখন ডেকে পাঠালেন অভিভাবক যে আছে তার,
তাকে বললেন তিনি,' এর সাথে করবে সদ্ব্যবহার।
সন্তান যখন তার ভূমিষ্ঠ হয়ে এই দুনিয়ায় আসবে,
এই নারীকে বিচারের জন্য আমার কাছে আনবে।
.
দিন মাস যায় ক্রমান্বয়ে এসে গেল সেই ক্ষণ,
সন্তান প্রসব করে সেই নারী মুক্ত সে এখন।
রাসুল ﷺএর কাছে নিয়ে আসা হল তাকে,
কি শাস্তি দেন রাসুলﷺ দেখতে এলো অনেকে।
.
তার শরীরে কাপড় বেধে দেয়া হল শক্ত করে,
এরপর... হত্যা করা হল তাকে পাথর মেরে।
রাসুল ﷺ নিজে তার জানাযার নামাজ পড়লেন,
উমার (রা) এই ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করলেন।
.
'হে রাসুল! এই নারী তো করেছিল জিনা,
তবুও জানাজা আপনি পড়লেন?(করলেন না ঘৃণা?')
জবাবে রাসুল ﷺ উমারকে বলেন, 'তবে শোন,
এমন তওবা করেছে এ নারী আর তুলনা নেই কোন।'
.
চল্লিশ জন মদিনা বাসীর মাঝে ভাগ করা হয় যদি তা
তাদের নাজাতের জন্য যথেষ্ট হবে-জেনে রাখ এ কথা।
নিজের জীবনকে আল্লাহর জন্য বিলিয়ে দেয় যেই জনা,
তার তওবার চেয়ে ভালো কোন কাজ আছে কি তোমার জানা?
.
এই হাদিস ইমাম মুসলিম করেছেন সংগ্রহ,
তওবা করে আমরা যেন পাই জান্নাতের গৃহ।
মূল হাদিসঃ
হযরত ‘ইমরান ইবনে হুসাইন আল খুযা’ঈ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, জুহাইনা গোত্রের জনৈক মহিলা ব্যভিচারের মাধ্যমে গর্ভবতী হয়ে রাসুলে আকরাম ﷺ এর কাছে এসে নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি ব্যভিচারের (জিনার) অপরাধ করেছি; আমাকে শাস্তি দিন।’
রাসুলে আকরাম ﷺ তার অভিভাবককে ডেকে বললেন, ‘এর সঙ্গে সদাচরণ করবে। এ সন্তান প্রসব করার পর আমার নিকট নিয়ে আসবে।’ লোকটি তা-ই করল।
এরপর রাসুলে আকরাম ﷺতাকে ব্যভিচারের শাস্তি প্রদানের নির্দেশ দিলেন। তার শরীরের কাপড়-চোপড় ভাল করে বেঁধে দেওয়া হল এবং নির্দেশ মোতাবেক তাকে পাথর মেরে হত্যা করা হল।
রাসুলে আকরাম ﷺ তার জানাযার নামায পড়লেন। হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁকে বললেন,' হে আল্লাহর রাসুল! এ মেয়েটি তো ব্যভিচার (জিনা) করেছে। তবু আপনি এর জানাযার নামায পড়ছেন?'
রাসুলে আকরাম ﷺ বললেন,' এ মেয়েটি এমন তওবা করেছে যে, তা চল্লিশ জন মদিনা বাসীর মধ্যে বণ্টন করে দিলেও সবার জন্য পর্যাপ্ত হয়ে যেত। যে মেয়েটি নিজের জীবনকে মহান আল্লাহর জন্য স্বেচ্ছায় বিলিয়ে দিতে পারে, তার এহেন তওবার চেয়ে ভাল কোন কাজ তোমার জানা আছে কি?'
(মুসলিম)
ছন্দে ছন্দে আল হাদিস-১৫
বিষয়: বিবিধ
১৬২৭ বার পঠিত, ৭৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জানা ঘটনা এতো সুন্দর হয়েছে যে, এক কথায় দারুণ :D/
হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসূলে আকরামকে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহর কসম! আমি একদিনে সত্তর বারের চেয়েও বেশি তওবা করি এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।
(বুখারী)
হযরত আগার ইবনে ইয়াসার মুযান্নী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা কর এবং (গুনাহর জন্যে) তাঁর কাছে ক্ষমা চাও। আমি প্রত্যহ একশো বার তওবা করি।
(মুসলিম)
“তবে যে ব্যক্তি জুলুম করার পর তাওবা করবে এবং নিজের সংশোধন করে নেবে, আল্লাহর অনুগ্রহের দৃষ্টি আবার তার দিকে ফিরে আসবে।আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু।”
[ আল মা-য়েদাহ; আয়াত নং- ৩৯]
হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়ের পূর্বে তওবা করবে, আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন।
(মুসলিম)
“যদি কোন ব্যক্তি খারাপ কাজ করে বসে অথবা নিজের ওপর জুলুম করে এবং এরপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তাহলে সে আল্লাহকে ক্ষমাকারী ও পরম দয়ালু হিসেবেই পাবে।”
[আন্ নিসা; আয়াত নং-১১০]
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহিমান্বিত আল্লাহ মৃত্যুর নিদর্শন প্রকাশের পূর্ব পর্যন্ত বান্দার তওবা কবুল করে থাকেন।
ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং একে হাসান হাদীস আখ্যা দিয়েছেন।
'তবে যে ব্যক্তি আজ তওবা করেছে, ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে সে-ই সাফল্য লাভের আশা করতে পারে।'
[আল কাসাস; আয়াত নং- ৬৭]
রাসূলে আকরাম ﷺ এর খাদেম হযরত আবু হামযা আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ আল্লাহ তাঁর বান্দার তওবায় সেই ব্যক্তির চেয়েও বেশি খুশী হন, যার উট গভীর মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়ার পর আবার সে তা ফিরে পায়।’
(বুখারী ও মুসলিম)
মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহ তাঁর বান্দার তওবায় সেই ব্যক্তির চেয়েও বেশি খুশী হন, যার খাবার ও পানীয় সামগ্রী নিয়ে সওয়ারী উটটি হঠাৎ গভীর মরুভূমিতে হারিয়ে গেল। অনেক খোঁজাখুঁজির পর হতাশ হয়ে লোকটি একটি গাছের ছায়ায় শুয়ে পড়ল।
এরূপ অবস্থায় হঠাৎ সে উটটিকে নিজের কাছে দাঁড়ানো দেখতে পেল। সে উটের লাগাম ধরে আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে বলতে লাগল,’ হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দাহ! আর আমি তোমার প্রভু! সে আনন্দের আতিশয্যেই এ ধরনের ভুল করে বসলো।’
' তিনিই সেই মহান সত্তা যিনি তাঁর বান্দাদের তওবা কবুল করেন এবং মন্দ কাজসমূহ ক্ষমা করেন। অথচ তোমাদের সব কাজকর্ম সম্পর্কে তাঁর জানা আছে।'
[আশ শূরা ; আয়াত নং-২৫]
খুব ভালো লাগল ছন্দে ছন্দে হাদিসটির উপস্থাপন।
অসাধারণ এবং এই স্টাইলটি আমার অনেক পছন্দ হয়েছে। ছন্দে ছন্দে বিষয়টি মনের ভিতরে বেশী রেখাপাত করে, মনে থাকে। এই লিখাটি দিয়ে সেটাই অনুভব করলাম।
আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা পোষ্টটির জন্য।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
হযরত আবু সাঈদ সাদ ইবনে মালিক ইবনে সিনান আল খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম ﷺ বলেছেনঃ
“তোমাদের পূর্ববর্তী যুগে এক ব্যক্তি নিরানব্বইজন মানুষকে হত্যা করে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম আলেমের সন্ধানে বের হলো। তাকে একজন সংসারত্যাগী খ্রীস্টান দরবেশের কথা জানিয়ে দেয়া হলো। সে ঐ দরবেশের কাছে গিয়ে বলল,”আমি নিরানব্বইজন লোককে হত্যা করেছি। এখন আমার জন্য তাওবার কোন সুযোগ আছে কি?”
দরবেশ বললেন, ‘নেই’।
তখন লোকটি দরবেশকেও হত্যা করে একশত সংখ্যা পূর্ণ করল। এরপর আবার সে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম আলেমের সন্ধান জানতে চাইলে তাকে একজন আলেমের সন্ধান জানিয়ে দেয়া হলো। লোকটি তার কাছে গিয়ে বলল যে সে একশো লোককে খুন করেছে। এখন তার জন্য তাওবার কোন সুযোগ আছে কি?
আলেম বললেন,”হ্যাঁ, তাওবার সুযোগ আছে। আর তাওবার অন্তরায় কে হতে পারে? তুমি অমুক স্থানে চলে যাও। সেখানে কিছু লোক আল্লাহর ইবাদত করছে। তুমিও তাদের সাথে আল্লাহর ইবাদত কর এবং তোমার নিজ দেশে কখনও ফিরে যেওনা। কেননা, সেটা খুব খারাপ জায়গা।”
লোকটি নির্দেশিত স্থানের দিকে চলতে লাগলো। অর্ধেক পথ চলার পর তার মৃত্যুর সময় এসে পড়লো। এবার তাকে নিয়ে রহমত ও আযাবের ফেরেশতাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিল। রহমতের ফেরেশতারা বললেন,” এ লোকটি তওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছে।”
কিন্তু আযাবের ফেরেশতারা বলতে লাগলেন,” লোকটি তো কখনো কোন ভালো কাজ করেনি।”
এমন সময় একজন ফেরেশতা মানুষের রূপ ধারণ করে তাদের সামনে উপস্থিত হলো। তখন সবাই তাকে সালিশ হিসেবে মেনে নিল। সালিশরূপী ফেরেশতা বললেন,” তোমরা উভয় দিকের জায়গার দূরত্ব মেপে নাও। যে দিকটি যার কাছাকাছি হবে, সে দিকটি তারই বলে গণ্য হবে।”
সুতরাং জায়গা পরিমাপের পর যেদিকের উদ্দেশ্যে সে আসছিলো, তাকে সে দিকটির কাছাকাছি পাওয়া গেল। এর ভিত্তিতে রহমতের ফেরেশতারা লোকটির প্রাণ নিলেন।
(বুখারী ও মুসলিম)
[ সহীহ বুখারীর অপর একটি বর্ণনায় বলা হয়েছে, ওই লোকটি সৎ লোকদের বসতির দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয়েছিল। এই কারণে তাকে ওই লোকদেরই অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
বুখারীর অপর একটি বর্ণনায় আছে, আল্লাহ তা’য়ালা একদিকের বসতিকে দুরে সরে যেতে এবং অপরদিকের বসতিকে কাছাকাছি হতে বলে উভয়ের মধ্যবর্তী জমি মাপতে ফেরেশতাদের আদেশ দিলেন।
ফলে তাকে সৎ লোকদের জমির দিকে আধ হাতপরিমান বেশি অগ্রবর্তী দেখতে পেল এবং তাকে ক্ষমা করে দেয়া হলো। অপর এক বর্ণনায় বলা হয়েছে, লোকটি নিজের বুকের ওপর ভর করে হামাগুড়ি দিয়ে অসৎ লোকদের জমি থেকে দূরে সরে গেল। ]
'তবে একথা জেনে রাখো, আল্লাহর কাছে তাওবা কবুল হবার অধিকার এক মাত্র তারাই লাভ করে যারা অজ্ঞতার কারণে কোন খারাপকাজ করে বসে এবং তারপর অতি দ্রুত তাওবা করে। এ ধরনের লোকদের প্রতি আল্লাহ আবার তাঁর অনুগ্রহের দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন এবং আল্লাহ সমস্ত বিষয়ের খবর রাখেন, তিনি জ্ঞানী ও সর্বজ্ঞ।'
[আন্ নিসা; আয়াত নং-১৭]
জানা ঘটনা তার পরও প্রতিটা শব্দ পড়তে ভীষন ভালো লাগলো।
>-
ধন্যবাদ
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু ও আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলে করীম ﷺ বলেন , ‘যদি কোন মানুষের এক উপত্যাকা ভর্তি সোনা থাকে তবে সে তার জন্য আরো দুটি উপত্যাকা ভর্তি সোনার আকাঙ্খা করবে। তার মূখ মাটি ছাড়া আর কিছুতেই ভরবেনা । আর যে ব্যক্তি তাওবাহ্ করে আল্লাহ্ তার তাওবাহ্ কবুল করেন।’
[বুখারী ও মুসলিম]
'তবে তাদের মধ্য থেকে যারা তাওবা করবে, নিজেদের কর্মনীতি সংশোধন করে নেবে, আল্লাহকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে এবং নিজেদের দ্বীনকে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করে নেবে, তারা মুমিনদের সাথে থাকবে। আর আল্লাহ নিশ্চিয়ই মুমিনদেরকে মহাপুরস্কার দান করবেন।'
[আন নিসা; আয়াত নং-১৪৬]
শিশুদের জন্য উপযোগি হাদিস এই ভাবে অনুবাদ করা হলে ভাল হবে মনে হয়।
আবু হুরাইরাহ্ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলে করীম ﷺ বলেন , ‘আল্লাহ্ এমন দুইজন লোকের জন্য হাসবেন যাদের একজন অপরজনকে হত্যা করবে এবং উভয়ই জান্নাতে যাবে। একজন আল্লাহ্র রাস্তায় লড়াই করে শহীদ হবে। তারপর আল্লাহ্ হত্যাকারীর তাওবাহ্ কবুল করবেন এবং সে ইসলাম গ্রহন করে( জিহাদে ) শহীদ হয়ে যাবে।’
[বুখারী ও মুসলিম]
'তবে যে ব্যক্তি জুলুম করার পর তাওবা করবে এবং নিজের সংশোধন করে নেবে, আল্লাহর অনুগ্রহের দৃষ্টি আবার তার দিকে ফিরে আসবে। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু।'
[আল মায়েদাহ; আয়াত নং-৩৯]
হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসূলে আকরামকে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহর কসম! আমি একদিনে সত্তর বারের চেয়েও বেশি তওবা করি এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।
(বুখারী)
হযরত আগার ইবনে ইয়াসার মুযান্নী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা কর এবং (গুনাহর জন্যে) তাঁর কাছে ক্ষমা চাও। আমি প্রত্যহ একশো বার তওবা করি।
(মুসলিম)
'আর যারা খারাপ কাজ করে তারপর তাওবা করে নেয় এবং ঈমান আনে, এক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবে এ তাওবা ও ঈমানের পর তোমার রব ক্ষমাশীল ও করুণাময়।'
[ আল আরাফ; আয়াত নং- ১৫৩]
এতো সুন্দর ছন্দের মিল, তাও হাদিস নিয়ে!! আপনার প্রচেষ্টা আল্লাহর দরবারে কতইনা উত্তম বলে পরিগণিত হবে! জাজাকাল্লাহু খাইর।
হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়ের পূর্বে তওবা করবে, আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন।
(মুসলিম)
'তারা কি জানে না, আল্লাহই তার বান্দাদের তাওবা কবুল করেন, তাদের দান-খয়রাত গ্রহণ করেন এবং আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়?'
[আত তাওবা; আয়াত নং- ১০৪]
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহিমান্বিত আল্লাহ মৃত্যুর নিদর্শন প্রকাশের পূর্ব পর্যন্ত বান্দার তওবা কবুল করে থাকেন।
ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং একে হাসান হাদীস আখ্যা দিয়েছেন।
'তবে যারা অজ্ঞতার কারণে খারাপ কাজ করেছে এবং তারপর তাওবা করে নিজেদের কাজের সংশোধন করে নিয়েছে, নিশ্চিতভাবেই তোমার রব তাওবা ও সংশোধনের পর তাদের জন্য ক্ষমাশীল ও করুণাময়।'
[আন নাহল; আয়াত নং-১১৯]
রাসূলে আকরাম ﷺ এর খাদেম হযরত আবু হামযা আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ আল্লাহ তাঁর বান্দার তওবায় সেই ব্যক্তির চেয়েও বেশি খুশী হন, যার উট গভীর মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়ার পর আবার সে তা ফিরে পায়।’
(বুখারী ও মুসলিম)
মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহ তাঁর বান্দার তওবায় সেই ব্যক্তির চেয়েও বেশি খুশী হন, যার খাবার ও পানীয় সামগ্রী নিয়ে সওয়ারী উটটি হঠাৎ গভীর মরুভূমিতে হারিয়ে গেল। অনেক খোঁজাখুঁজির পর হতাশ হয়ে লোকটি একটি গাছের ছায়ায় শুয়ে পড়ল।
এরূপ অবস্থায় হঠাৎ সে উটটিকে নিজের কাছে দাঁড়ানো দেখতে পেল। সে উটের লাগাম ধরে আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে বলতে লাগল,’ হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দাহ! আর আমি তোমার প্রভু! সে আনন্দের আতিশয্যেই এ ধরনের ভুল করে বসলো।’
'তবে যারা তাওবা করবে, ঈমান আনবে ও সৎকাজ করবে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের সামান্যতম অধিকারও ক্ষুণ্ন হবে না।'
[মারইয়াম; আয়াত নং- ৬০]
হযরত আবু সাঈদ সাদ ইবনে মালিক ইবনে সিনান আল খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম ﷺ বলেছেনঃ
“তোমাদের পূর্ববর্তী যুগে এক ব্যক্তি নিরানব্বইজন মানুষকে হত্যা করে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম আলেমের সন্ধানে বের হলো। তাকে একজন সংসারত্যাগী খ্রীস্টান দরবেশের কথা জানিয়ে দেয়া হলো। সে ঐ দরবেশের কাছে গিয়ে বলল,”আমি নিরানব্বইজন লোককে হত্যা করেছি। এখন আমার জন্য তাওবার কোন সুযোগ আছে কি?”
দরবেশ বললেন, ‘নেই’।
তখন লোকটি দরবেশকেও হত্যা করে একশত সংখ্যা পূর্ণ করল। এরপর আবার সে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম আলেমের সন্ধান জানতে চাইলে তাকে একজন আলেমের সন্ধান জানিয়ে দেয়া হলো। লোকটি তার কাছে গিয়ে বলল যে সে একশো লোককে খুন করেছে। এখন তার জন্য তাওবার কোন সুযোগ আছে কি?
আলেম বললেন,”হ্যাঁ, তাওবার সুযোগ আছে। আর তাওবার অন্তরায় কে হতে পারে? তুমি অমুক স্থানে চলে যাও। সেখানে কিছু লোক আল্লাহর ইবাদত করছে। তুমিও তাদের সাথে আল্লাহর ইবাদত কর এবং তোমার নিজ দেশে কখনও ফিরে যেওনা। কেননা, সেটা খুব খারাপ জায়গা।”
লোকটি নির্দেশিত স্থানের দিকে চলতে লাগলো। অর্ধেক পথ চলার পর তার মৃত্যুর সময় এসে পড়লো। এবার তাকে নিয়ে রহমত ও আযাবের ফেরেশতাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিল। রহমতের ফেরেশতারা বললেন,” এ লোকটি তওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছে।”
কিন্তু আযাবের ফেরেশতারা বলতে লাগলেন,” লোকটি তো কখনো কোন ভালো কাজ করেনি।”
এমন সময় একজন ফেরেশতা মানুষের রূপ ধারণ করে তাদের সামনে উপস্থিত হলো। তখন সবাই তাকে সালিশ হিসেবে মেনে নিল। সালিশরূপী ফেরেশতা বললেন,” তোমরা উভয় দিকের জায়গার দূরত্ব মেপে নাও। যে দিকটি যার কাছাকাছি হবে, সে দিকটি তারই বলে গণ্য হবে।”
সুতরাং জায়গা পরিমাপের পর যেদিকের উদ্দেশ্যে সে আসছিলো, তাকে সে দিকটির কাছাকাছি পাওয়া গেল। এর ভিত্তিতে রহমতের ফেরেশতারা লোকটির প্রাণ নিলেন।
(বুখারী ও মুসলিম)
[ সহীহ বুখারীর অপর একটি বর্ণনায় বলা হয়েছে, ওই লোকটি সৎ লোকদের বসতির দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয়েছিল। এই কারণে তাকে ওই লোকদেরই অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
বুখারীর অপর একটি বর্ণনায় আছে, আল্লাহ তা’য়ালা একদিকের বসতিকে দুরে সরে যেতে এবং অপরদিকের বসতিকে কাছাকাছি হতে বলে উভয়ের মধ্যবর্তী জমি মাপতে ফেরেশতাদের আদেশ দিলেন।
ফলে তাকে সৎ লোকদের জমির দিকে আধ হাতপরিমান বেশি অগ্রবর্তী দেখতে পেল এবং তাকে ক্ষমা করে দেয়া হলো। অপর এক বর্ণনায় বলা হয়েছে, লোকটি নিজের বুকের ওপর ভর করে হামাগুড়ি দিয়ে অসৎ লোকদের জমি থেকে দূরে সরে গেল। ]
'হে ঈমানদারগণ, আল্লাহর কাছে তাওবা করো, প্রকৃত তাওবা। অসম্ভব নয় যে, আল্লাহ তোমাদের দোষ-ত্রুটিসমুহ দূর করে দিবেন এবং এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশ দিয়ে ঝর্ণাসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে।'
[আত তাহরীম; আয়াত নং-৮]
হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসূলে আকরামকে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহর কসম! আমি একদিনে সত্তর বারের চেয়েও বেশি তওবা করি এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।
(বুখারী)
হযরত আগার ইবনে ইয়াসার মুযান্নী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা কর এবং (গুনাহর জন্যে) তাঁর কাছে ক্ষমা চাও। আমি প্রত্যহ একশো বার তওবা করি।
(মুসলিম)
“তবে যে ব্যক্তি জুলুম করার পর তাওবা করবে এবং নিজের সংশোধন করে নেবে, আল্লাহর অনুগ্রহের দৃষ্টি আবার তার দিকে ফিরে আসবে।আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু।”
[ আল মা-য়েদাহ; আয়াত নং- ৩৯]
হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়ের পূর্বে তওবা করবে, আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন।
(মুসলিম)
“যদি কোন ব্যক্তি খারাপ কাজ করে বসে অথবা নিজের ওপর জুলুম করে এবং এরপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তাহলে সে আল্লাহকে ক্ষমাকারী ও পরম দয়ালু হিসেবেই পাবে।”
[আন্ নিসা; আয়াত নং-১১০]
আপনাকে ধন্যবাদ।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহিমান্বিত আল্লাহ মৃত্যুর নিদর্শন প্রকাশের পূর্ব পর্যন্ত বান্দার তওবা কবুল করে থাকেন।
ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং একে হাসান হাদীস আখ্যা দিয়েছেন।
'তবে যে ব্যক্তি আজ তওবা করেছে, ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে সে-ই সাফল্য লাভের আশা করতে পারে।'
[আল কাসাস; আয়াত নং- ৬৭]
আপনার ছন্দে ছন্দে লেখাগুলো আমার বেশ ভালো লাগে। চালিয়ে যান। সময় পেলে আমার লেখা গুলে পড়ে কমেন্ট করেন।
রাসূলে আকরাম ﷺ এর খাদেম হযরত আবু হামযা আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ আল্লাহ তাঁর বান্দার তওবায় সেই ব্যক্তির চেয়েও বেশি খুশী হন, যার উট গভীর মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়ার পর আবার সে তা ফিরে পায়।’
(বুখারী ও মুসলিম)
মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহ তাঁর বান্দার তওবায় সেই ব্যক্তির চেয়েও বেশি খুশী হন, যার খাবার ও পানীয় সামগ্রী নিয়ে সওয়ারী উটটি হঠাৎ গভীর মরুভূমিতে হারিয়ে গেল। অনেক খোঁজাখুঁজির পর হতাশ হয়ে লোকটি একটি গাছের ছায়ায় শুয়ে পড়ল।
এরূপ অবস্থায় হঠাৎ সে উটটিকে নিজের কাছে দাঁড়ানো দেখতে পেল। সে উটের লাগাম ধরে আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে বলতে লাগল,’ হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দাহ! আর আমি তোমার প্রভু! সে আনন্দের আতিশয্যেই এ ধরনের ভুল করে বসলো।’
' তিনিই সেই মহান সত্তা যিনি তাঁর বান্দাদের তওবা কবুল করেন এবং মন্দ কাজসমূহ ক্ষমা করেন। অথচ তোমাদের সব কাজকর্ম সম্পর্কে তাঁর জানা আছে।'
[আশ শূরা ; আয়াত নং-২৫]
হযরত আবু সাঈদ সাদ ইবনে মালিক ইবনে সিনান আল খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম ﷺ বলেছেনঃ
“তোমাদের পূর্ববর্তী যুগে এক ব্যক্তি নিরানব্বইজন মানুষকে হত্যা করে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম আলেমের সন্ধানে বের হলো। তাকে একজন সংসারত্যাগী খ্রীস্টান দরবেশের কথা জানিয়ে দেয়া হলো। সে ঐ দরবেশের কাছে গিয়ে বলল,”আমি নিরানব্বইজন লোককে হত্যা করেছি। এখন আমার জন্য তাওবার কোন সুযোগ আছে কি?”
দরবেশ বললেন, ‘নেই’।
তখন লোকটি দরবেশকেও হত্যা করে একশত সংখ্যা পূর্ণ করল। এরপর আবার সে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম আলেমের সন্ধান জানতে চাইলে তাকে একজন আলেমের সন্ধান জানিয়ে দেয়া হলো। লোকটি তার কাছে গিয়ে বলল যে সে একশো লোককে খুন করেছে। এখন তার জন্য তাওবার কোন সুযোগ আছে কি?
আলেম বললেন,”হ্যাঁ, তাওবার সুযোগ আছে। আর তাওবার অন্তরায় কে হতে পারে? তুমি অমুক স্থানে চলে যাও। সেখানে কিছু লোক আল্লাহর ইবাদত করছে। তুমিও তাদের সাথে আল্লাহর ইবাদত কর এবং তোমার নিজ দেশে কখনও ফিরে যেওনা। কেননা, সেটা খুব খারাপ জায়গা।”
লোকটি নির্দেশিত স্থানের দিকে চলতে লাগলো। অর্ধেক পথ চলার পর তার মৃত্যুর সময় এসে পড়লো। এবার তাকে নিয়ে রহমত ও আযাবের ফেরেশতাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিল। রহমতের ফেরেশতারা বললেন,” এ লোকটি তওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছে।”
কিন্তু আযাবের ফেরেশতারা বলতে লাগলেন,” লোকটি তো কখনো কোন ভালো কাজ করেনি।”
এমন সময় একজন ফেরেশতা মানুষের রূপ ধারণ করে তাদের সামনে উপস্থিত হলো। তখন সবাই তাকে সালিশ হিসেবে মেনে নিল। সালিশরূপী ফেরেশতা বললেন,” তোমরা উভয় দিকের জায়গার দূরত্ব মেপে নাও। যে দিকটি যার কাছাকাছি হবে, সে দিকটি তারই বলে গণ্য হবে।”
সুতরাং জায়গা পরিমাপের পর যেদিকের উদ্দেশ্যে সে আসছিলো, তাকে সে দিকটির কাছাকাছি পাওয়া গেল। এর ভিত্তিতে রহমতের ফেরেশতারা লোকটির প্রাণ নিলেন।
(বুখারী ও মুসলিম)
[ সহীহ বুখারীর অপর একটি বর্ণনায় বলা হয়েছে, ওই লোকটি সৎ লোকদের বসতির দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয়েছিল। এই কারণে তাকে ওই লোকদেরই অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
বুখারীর অপর একটি বর্ণনায় আছে, আল্লাহ তা’য়ালা একদিকের বসতিকে দুরে সরে যেতে এবং অপরদিকের বসতিকে কাছাকাছি হতে বলে উভয়ের মধ্যবর্তী জমি মাপতে ফেরেশতাদের আদেশ দিলেন।
ফলে তাকে সৎ লোকদের জমির দিকে আধ হাতপরিমান বেশি অগ্রবর্তী দেখতে পেল এবং তাকে ক্ষমা করে দেয়া হলো। অপর এক বর্ণনায় বলা হয়েছে, লোকটি নিজের বুকের ওপর ভর করে হামাগুড়ি দিয়ে অসৎ লোকদের জমি থেকে দূরে সরে গেল। ]
'হে ঈমানদারগণ, আল্লাহর কাছে তাওবা করো, প্রকৃত তাওবা। অসম্ভব নয় যে, আল্লাহ তোমাদের দোষ-ত্রুটিসমুহ দূর করে দিবেন এবং এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশ দিয়ে ঝর্ণাসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে।'
[আত তাহরীম; আয়াত নং-৮]
হযরত আবু সাঈদ সাদ ইবনে মালিক ইবনে সিনান আল খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম ﷺ বলেছেনঃ
“তোমাদের পূর্ববর্তী যুগে এক ব্যক্তি নিরানব্বইজন মানুষকে হত্যা করে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম আলেমের সন্ধানে বের হলো। তাকে একজন সংসারত্যাগী খ্রীস্টান দরবেশের কথা জানিয়ে দেয়া হলো। সে ঐ দরবেশের কাছে গিয়ে বলল,”আমি নিরানব্বইজন লোককে হত্যা করেছি। এখন আমার জন্য তাওবার কোন সুযোগ আছে কি?”
দরবেশ বললেন, ‘নেই’।
তখন লোকটি দরবেশকেও হত্যা করে একশত সংখ্যা পূর্ণ করল। এরপর আবার সে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম আলেমের সন্ধান জানতে চাইলে তাকে একজন আলেমের সন্ধান জানিয়ে দেয়া হলো। লোকটি তার কাছে গিয়ে বলল যে সে একশো লোককে খুন করেছে। এখন তার জন্য তাওবার কোন সুযোগ আছে কি?
আলেম বললেন,”হ্যাঁ, তাওবার সুযোগ আছে। আর তাওবার অন্তরায় কে হতে পারে? তুমি অমুক স্থানে চলে যাও। সেখানে কিছু লোক আল্লাহর ইবাদত করছে। তুমিও তাদের সাথে আল্লাহর ইবাদত কর এবং তোমার নিজ দেশে কখনও ফিরে যেওনা। কেননা, সেটা খুব খারাপ জায়গা।”
লোকটি নির্দেশিত স্থানের দিকে চলতে লাগলো। অর্ধেক পথ চলার পর তার মৃত্যুর সময় এসে পড়লো। এবার তাকে নিয়ে রহমত ও আযাবের ফেরেশতাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিল। রহমতের ফেরেশতারা বললেন,” এ লোকটি তওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছে।”
কিন্তু আযাবের ফেরেশতারা বলতে লাগলেন,” লোকটি তো কখনো কোন ভালো কাজ করেনি।”
এমন সময় একজন ফেরেশতা মানুষের রূপ ধারণ করে তাদের সামনে উপস্থিত হলো। তখন সবাই তাকে সালিশ হিসেবে মেনে নিল। সালিশরূপী ফেরেশতা বললেন,” তোমরা উভয় দিকের জায়গার দূরত্ব মেপে নাও। যে দিকটি যার কাছাকাছি হবে, সে দিকটি তারই বলে গণ্য হবে।”
সুতরাং জায়গা পরিমাপের পর যেদিকের উদ্দেশ্যে সে আসছিলো, তাকে সে দিকটির কাছাকাছি পাওয়া গেল। এর ভিত্তিতে রহমতের ফেরেশতারা লোকটির প্রাণ নিলেন।
(বুখারী ও মুসলিম)
[ সহীহ বুখারীর অপর একটি বর্ণনায় বলা হয়েছে, ওই লোকটি সৎ লোকদের বসতির দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয়েছিল। এই কারণে তাকে ওই লোকদেরই অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
বুখারীর অপর একটি বর্ণনায় আছে, আল্লাহ তা’য়ালা একদিকের বসতিকে দুরে সরে যেতে এবং অপরদিকের বসতিকে কাছাকাছি হতে বলে উভয়ের মধ্যবর্তী জমি মাপতে ফেরেশতাদের আদেশ দিলেন।
ফলে তাকে সৎ লোকদের জমির দিকে আধ হাতপরিমান বেশি অগ্রবর্তী দেখতে পেল এবং তাকে ক্ষমা করে দেয়া হলো। অপর এক বর্ণনায় বলা হয়েছে, লোকটি নিজের বুকের ওপর ভর করে হামাগুড়ি দিয়ে অসৎ লোকদের জমি থেকে দূরে সরে গেল। ]
'হে ঈমানদারগণ, আল্লাহর কাছে তাওবা করো, প্রকৃত তাওবা। অসম্ভব নয় যে, আল্লাহ তোমাদের দোষ-ত্রুটিসমুহ দূর করে দিবেন এবং এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশ দিয়ে ঝর্ণাসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে।'
[আত তাহরীম; আয়াত নং-৮]
হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসূলে আকরামকে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহর কসম! আমি একদিনে সত্তর বারের চেয়েও বেশি তওবা করি এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।
(বুখারী)
হযরত আগার ইবনে ইয়াসার মুযান্নী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা কর এবং (গুনাহর জন্যে) তাঁর কাছে ক্ষমা চাও। আমি প্রত্যহ একশো বার তওবা করি।
(মুসলিম)
“তবে যে ব্যক্তি জুলুম করার পর তাওবা করবে এবং নিজের সংশোধন করে নেবে, আল্লাহর অনুগ্রহের দৃষ্টি আবার তার দিকে ফিরে আসবে।আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু।”
[ আল মা-য়েদাহ; আয়াত নং- ৩৯]
মন্তব্য করতে লগইন করুন