কল্পলোকের গল্প নয়-১৮
লিখেছেন লিখেছেন ফাতিমা মারিয়াম ১২ অক্টোবর, ২০১৪, ০২:৫২:৪৬ দুপুর
ভুল করা কন্যার লাগি মন আনচান করে……
একটি ঘটনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করছি। ঘটনার নায়িকা(!) আমার পরিচিত...প্রতিবেশিনী...... এক সিনিয়র আপু। মানুষের জীবনে সর্বনাশা প্রেম এবং তার পরিণতি যে কতটা মারাত্মক প্রভাব আনতে পারে এই ঘটনা না দেখলে হয়ত বিশ্বাসই করতাম না।
আপুটার নাম সামিনা(ছদ্মনাম)। বাবা দেশের বাইরে থাকতেন। দুই বা তিন বছর পরপর দেশে আসতেন। ফলে ওর আম্মাই সংসারের সবকিছু দেখাশুনা করতেন। সামিনার আরও তিনটি ভাইবোন আছে। সবাই পিঠাপিঠি। ওরা সব ভাইবোনই বেশ সুন্দর। তবে সামিনা সবার চাইতে বেশিই সুন্দর......... বেশ রূপবতী।
সামিনা এবং তার ছোট ভাইবোনদেরকে পড়ানোর জন্য উনার আম্মা একজন শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করলেন। একসময় উনি উনার পছন্দমত একজনকে পেয়েও গেলেন।
ছেলেটির নাম সবুজ। জগন্নাথ কলেজে অনার্স পড়ে। ওর পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ততটা ভাল না। ফলে ঢাকায় থাকা, খাওয়া এবং পড়াশুনার খরচ তাকেই চালাতে হয়। তাই সে কয়েকটি টিউশনি করে।
সামিনা তখন ক্লাস নাইনে পড়ত। সামিনা এবং তার ভাইবোনদেরকে সবুজ পড়ানো শুরু করল। সবুজ বেশ ভাল পড়ায়। সামিনাদের সব ভাইবোনকে সে বেশ যত্ন করেই পড়াত। ফলে সবাই বেশ খুশি।
দিন যেতে থাকে...... সবুজ ও সামিনা উভয়ে উভয়ের প্রতি এক ধরণের আকর্ষণ অনুভব করে। আকর্ষণ থেকে দুর্বলতা, আর দুর্বলতা থেকে প্রেম। মা ও ভাইবোনদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে সামিনা সবুজের সাথে প্রায় দুই বছর প্রেম চালিয়ে যায়।
ইতিমধ্যে সামিনা এসএসসি পাশ করে কলেজে ভর্তি হয়েছে।
এক পর্যায়ে সামিনা ও সবুজ সামিনার মায়ের কাছে ধরা পড়ে যায়। সামিনার মা সবুজকে উনার বাসায় আসতে নিষেধ করে দেন।
সামিনার জন্য এখন আর বাসায় শিক্ষকের প্রয়োজন নেই। তাই ছোটদের জন্য নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেন। সবুজ সামিনাদের বাসায় আর আসেনা। কিন্তু ওদের যোগাযোগ বন্ধ হয় না। বান্ধবীদের মাধ্যমে সামিনা সবুজের সাথে যোগাযোগ চালিয়ে যায়।
ইতিমধ্যে সবুজ অনার্স কমপ্লিট করেছে। এবার সে তার পরিবারের হাল ধরার জন্য প্রবাসে পাড়ি জমায়।সামিনার সাথে তার যোগাযোগ অব্যাহত থাকে। সামিনার বান্ধবীদের মাধ্যমে এই যোগাযোগ চলতে থাকে। এটা যেই সময়ের কথা তখন বাংলাদেশে মোবাইল ফোন আসেনি। বাসার ল্যান্ডফোন সামিনার জন্য নিষিদ্ধ ছিল।
তাই সে চিঠির মাধ্যমেই সব সময় সবুজের সাথে যোগাযোগ রাখত। আর এই চিঠিগুলো আসত বান্ধবীদের ঠিকানায়। মায়ের চোখকে ফাঁকি দিয়ে সে তার প্রেম চালিয়ে যায়।
এর মধ্যে সামিনার এইচএসসি পরীক্ষা কাছাকাছি এসে যায়। সামিনার মা কোনভাবেই সবুজের কাছে মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি হননি। কারণ এই ছেলের পরিবারের অবস্থা ভালো না। সবুজকেই সব দেখতে হবে। কবে সে ভালভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে আর কবে তিনি মেয়েকে বিয়ে দেবেন! এইসব সাতপাঁচ ভেবে মেয়ের তীব্র অমত স্বত্বেও টেস্ট পরীক্ষার কিছুদিন আগে ওর মা ওকে এক ব্যবসায়ী পরিবারে বিয়ে দিয়ে দেন। পাত্রের পরিবার বেশ ধনি। উভয় পক্ষই মহা ধুমধাম করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
সামিনার স্বামীর নাম কামাল।
যথা সময়ে সবুজের কানে বিয়ের খবরটা যায়। সে এক ভয়ানক পরিকল্পনা করে। তার এখনো দেশে আসতে দুই/তিন বছর বাকি। সে সামিনাকে জানায়- তুমি আমার জন্য অপেক্ষা কর। আমি এসেই তোমাকে বিয়ে করব। ততদিন তুমি কামাল ও তার পরিবারের সাথে বসবাস করে যাও। কাউকে কিছু বুঝতে দিও না।
সামিনা মনে মনে স্বপ্ন দেখে একদিন সে আর সবুজ মিলে একটি ছোট সংসারে বাস করবে। এই ভাবনায় তার দিন কাটে.....।
এমন সময় সে অনুভব করে যে সে মা হতে চলেছে। শারীরিক অসুস্থতার ফলে সে আর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে নি। সুতরাং তার শিক্ষাজীবন ওখানেই শেষ হয়ে যায়।
দুই পরিবারের সবাই তার এই নতুন খবরে বেশ খুশি। কিন্তু সামিনা কোনভাবেই সবুজের কথা ভুলতে পারছেনা। সে শুধু সবুজের আসার অপেক্ষায় দিন গোনে।
যথা সময়ে তার একটি পুত্রসন্তান হয়। এমন কি ছেলের মুখের দিকে তাকিয়েও সে সবুজকে ভুলতে পারেনা।
ছেলে বড় হতে থাকে। সে মনে মনে ফন্দি করতে থাকে সবুজ দেশে এলে সে এই সংসার ছেড়ে সবুজের কাছে চলে যাবে। তবে তার মনে একান্ত ইচ্ছা সে তার ছেলেকে এদের পরিবারে রেখে যাবে না। তাকে সে সাথে করেই নিয়ে যাবে।
এদিকে সবুজের দেশে আসার দিনও প্রায় এসে গেল। এখন আর সবুজের সাথে তার যোগাযোগ করতে কোন অসুবিধা হয়না। সামিনা যখন তার মায়ের বাসায় বেড়াতে আসে তখন সে সুযোগ বুঝে সবুজকে ফোন করে। আর ওর মা বা অন্য কেউ ওকে এখন আর ফোন ব্যবহার করতে বাধা দেয়না। কারণ সবাই ভাবে বাচ্চা হয়ে গেছে, এখন কি আর ও কোন অঘটন ঘটাবে? কিন্তু ও যে নিয়মিত গোপনে সবুজের সাথে এই কয় বছর যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে তা কেউ বুঝতে পারেনি।
সবুজ দেশে আসে। এসেই সে সামিনার সাথে যোগাযোগ করে। সবুজ সামিনাকে তার সাথে দেখা করতে বলে। সুযোগ বুঝে একদিন সামিনা সবুজের সাথে দেখা করে। তারা দুজনে প্ল্যান করে তারা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করবে। সবুজের প্ল্যান অনুযায়ী সামিনা বাবার বাসায় বেড়াতে আসে।
এর কয়েকদিন পরের ঘটনা...... সে তার বাচ্চাকে মায়ের বাসায় রেখে সবুজের কাছে চলে যায়। কিভাবে যেন সামিনার শ্বশুরবাড়ির সবাই এই দুঃসংবাদ জেনে যায়। তারা এসে তাদের বাচ্চাটিকে সামিনার মায়ের কাছ থেকে নিয়ে চলে গেল।
সব কথাই সামিনা জানতে পারে। কিন্তু বাচ্চার জন্য তার আর কিছুই করার থাকে না।
কয়েকদিন কেটে গেছে। কিন্তু সামিনার কাছে সবুজের আচরণ কেমন জানি মনে হয়! সামিনা সবুজকে বলে-চল আমরা বিয়ে করে ফেলি। কিন্তু সবুজ টালবাহানা করে সময় কাটাতে থাকে।
কয়েকদিন পরে সবুজ সামিনাকে বলে যে -'আমি তোমাকে মোটেও বিশ্বাস করিনা। একবার তুমি আমার সাথে প্রতারণা করে কামালকে বিয়ে করেছ। আবার এখন কামালের সাথে প্রতারণা করে আমার কাছে চলে এসেছ। তোমার একটি সন্তান থাকা সত্ত্বেও তুমি সংসার ত্যাগ করেছ। আবার হয়ত তুমি নতুন কাউকে পেলে আমাকে ছেড়েও চলে যাবে। এ ছাড়া আমার মনে তোমার প্রতি বেশ অনেকটা ক্ষোভ ছিল। তুমি আমার ভালবাসাকে অপমান করে কামালকে বিয়ে করেছ শুনেই আমি মনে মনে পরিকল্পনা করেছিলাম যে আমি তোমাকে একটা উচিৎ শিক্ষা দেব। সেই জন্যই আমি তোমার সাথে এই আচরণ করেছি। আমি এখন বাড়ি যাব। ওখানে আমার পরিবারের পছন্দ করা পাত্রীকে বিয়ে করব। তুমি তোমার বাবা মায়ের কাছে চলে যাও। আমার সাথে আর কোনোদিন যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না। এখানেই তোমার সাথে আমার সব সম্পর্ক শেষ।'
সবুজের কাছে চরমভাবে অপমানিত হয়ে সামিনা বাবা-মায়ের কাছে ফিরে আসে। দিন যায়.....।
সামিনা এবং তার বাবা-মা মিটমাটের জন্য কামাল ও তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে। কামাল ও তার পরিবার জানিয়ে দেয় এই বউকে তারা কোনদিন তাদের বাড়িতে স্থান দেবে না। বাচ্চাটিকে নিজের কাছে ফিরিয়ে আনার জন্য সামিনা অনেক চেষ্টা করে। কিন্তু কামাল ও তার পরিবার তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকে। তারা বাচ্চাকেও ফেরত দেয় নি।
আরও কিছু দিন কেটে যায়।
এবার কিভাবে যেন সামিনার সাথে পুরনো ঢাকার এক ধনী ব্যবসায়ীর সাথে পরিচয় হয়। এই ভদ্রলোকের স্ত্রী আছে, ছেলেমেয়ে আছে। এক পর্যায়ে সামিনাকে সেই ভদ্রলোক বিয়ে করে। তবে তার নতুন স্বামী তাকে এই শর্তে বিয়ে করেছে যে,কোনদিনও সামিনা বা তার পরিবার এই বিয়ের কথা উনার পরিবারের নিকট প্রকাশ করতে পারবে না। যেদিন প্রকাশ করবে সেদিন থেকে তিনি আর সামিনার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবেন না।
সামিনা এই শর্ত মেনে নিয়ে জীবন যাপন করতে থাকে।
তার এই স্বামী তাকে তার মায়ের বাসার কাছে একটি ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছে। এই এলাকাতেই ওকে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছে। টাকা-পয়সা, শাড়ি-গয়না কোন কিছুরই অভাব নেই।
একে একে সামিনার দুইটি বাচ্চা হয়েছে। বাচ্চা দুইটাও এখন বেশ বড় হয়ে গেছে। বাচ্চাগুলো সামাজিকভাবে একটু কোণঠাসা হয়েই দিন কাটায়।
নিজের জীবনের কিছু বোকামির মাশুল আজ সামিনা এভাবেই দিয়ে যাচ্ছে...........।
বিষয়: বিবিধ
২৫৭৪ বার পঠিত, ৭৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অপরিণত বয়সের কাচা কিছু সিদ্ধান্ত জীবনকে এলোমেলো করে দেয়ার জন্যে যথেষ্ঠ।
সামিনা যা স্বীয় বাস্তবতায় এখন উপলব্ধি করছে।
'সামিনা'র জীবন থেকে অনেক কিছু ই শেখার আছে.......।
চমৎকার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ টিপুভাই।
ভালবাসা হওয়া উচিত অন্তর থেকে -- যাকে ভালবাসব তার সুখ দুঃখে মানে প্রতিটা সময় তাকে আগলে রাখা।
এরপর বিয়ের পরে সামিনার ভুল ছিল নিজের বাচ্চাকে ছেড়ে চলে যাওয়া।
একজন মানুষের সাথে প্রেম যতই গভীর থাকুক না কেন, একজন মা কিভাবে একজন প্রেমিকার কাছে হেরে যায়? এদিক থেকে সামিনাকে কখনো মাফ করা যায় না। কামাল এবং তার পরিবার ঠিক কাজটি করেছে।
আমার সামিনার জন্য কোনো দুঃখ হচ্ছে না। সে একজন মাকে অপমান করেছে, নিজের সন্তানের জন্য মা-হীন একটি জীবন উপহার দিয়ে গেছে।
আমি লিখাটি পড়ে কেন জানি খুব কষ্ট পাচ্ছি। অথচ এরকম হবার কথা নয়।
আপনার লিখার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আর যারা কোচিং সেন্টার বন্ধ করতে চান তারা কি পারবেন টিউশনী বন্ধ করতে...
এসব বাদ দিয়ে কোচিং সেন্টারগুলোকে একটি নিতিমালার মধ্যে আনা উচিত...যেন নতুন কোন(পরিমল ধর) কাহীনী শুনতে না হয়।
সবশেষে আদর্শবান, চরিত্রবান যোগ্য সিনিয়র ছাত্র/ছাত্রীদের শিক্ষকতায় আনা উচিত...
চমৎকার মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই।
বিশেষ অনুরোধ:--- ভিলেন এর নামটা চেঞ্জ করা যায়না! ।
সবুজ ভাই একদম চিন্তা করবেন না। আমাদের এখানকার সব ভাইবোনরা জানে আমাদের সবুজ ভাই কত্ত ভালো। অতএব নাম চেঞ্জ না করলেও চলবে।
কিন্তু কথায় আছে, ... মন পুলিশ পুলিশ
এসব কীট-পতঙ্গ সমাজ থেকে নিয়মিত নির্মূল করলেই মনে হয় সুন্দর একটা সমাজ পেতে পারি আমরা।
১) সামিনা ক্রিমিনাল, সে প্রেমের ওয়াদা রক্ষা না করে বিয়ে বসেছে এবং বিবাহিত জামাইকেও জানানোর প্রয়োজন বোধ করে-নি, করলে তাকে তার জামাই বিয়েই করতো না!
২) সামিনা বিয়ে করে গোপনে প্রেম করেছে, যেটা প্রকাশ্য খারাপী; এটা কারও পক্ষেই মেনে নেয়া উচিৎ না, শুধু তাই না – সে সবুজকে আশ্বাস দিয়ে গেছে সে তাকে চায়; সবুজ যখন দেখেছে ও মূলত ক্রিমিনাল, তাই ওকে শিক্ষা দেয়ার জন্য এগিয়ে আসা দরকার ছিলো তাই করেছে!
৩) সামিনার বাচ্চা হয়ে যাওয়ার পরেও স্বামীর ঘরে থেকে আরেকজনের সাথে প্রেম অমানবিক এবং পশুসুলভ, এর জন্য ওর আরও ভয়াবহ শাস্তির দরকার ছিলো। সবশেষে সন্তানকে ফেলে পালিয়ে যাওয়ার মতো মানসিকতা, মীরজাফরের কথাই মনে করিয়ে দেয় আমাদের তাই ইংলিশ-ষ্টাইলে সবুজ ওকে শায়েস্তা করে ঠিকই করেছে!
৪) সামিনা প্রথম স্বামীর সাথে প্রতারনা করে সেই ঘরের সন্তানকে বঞ্চিত করলো একটা সুন্দর পরিবেশে বড় হতে, একইসাথে আরেক ব্যবসায়ীর কাছে বিয়ে বসে সেখানেও সন্তান জম্ন দিলো, এতে করে তার দ্বিতীয় ঘরের সন্তানগুলোও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্নভাবে বড় হবে, মনোকষ্টে দিনাতিপাত করবে!
এই সামিনার জন্য, সবুজ, প্রথম স্বামী, দ্বীতিয় স্বামী, প্রথম স্বামীর সন্তান, দ্বীতিয় স্বামীর সন্তানের সামাজিক জীবন অতিষ্ট হয়ে গেলো; এমন সামিনারা না থাকলে – সবুজদের জন্ম হতো না, দ্বীতিয় স্বামীও সামিনাকে ব্যবহারের সুযোগ পেতো না; তাই সবুজদের নির্মূল না করে সামিনাদের নির্মূল করা উচিৎ, এছাড়াও সবুজ সমাজে কাজ-কর্ম করে সমাজের উন্নতি করে যাচ্ছে, একইভাবে সামিনার প্রথম ও দ্বিতীয় স্বামীও আর সামিনারা সমাজে বাজে পরিবেশ ছড়াচ্ছে!
এবার বলুন আপু, আপনি কি যুক্তিতে আমাকে সবুজকে দেখতে বললেন? আপনি কি চান-না সামিনার মতো এরকম ক্রিমিনালদের কেউ শায়েস্তা করুক?
কাউকে বিয়ে করার ওয়াদা দিয়ে শুধু ভোগ করে ছুঁড়ে ফেলাটা কেমন মানুষের কাজ হতে পারে?
একজন ভালো মানুষ কোন দিন অন্যের স্ত্রীর প্রতি নজর দিবে না যদিও সে মেয়েটি কোন কালে তার প্রেমিকা ছিলো।
কোন ভালো পরিবারের ছেলে কোন দিন একটি মাকে সন্তান ছেড়ে পালাতে বলার সাহস করবে না।
হয়তো এমন সবুজরা না থাকলে এমন সামিনাদের জন্ম হতো না।
যার মন যেমন, তার সাথে জুটেও তেমন টাইপের। সবুজকে নিয়ে বলতে চাইলে অনেক কিছুই বলা যাবে। এর মানে এই নয় আমি সামিনাকে নির্দোষ বলছি। কিন্তু আপনি শুধু একচোখাই মন্তব্য করে যাবেন নিশ্চিত।
শুরুতেই সামিনা-সবুজ এ্যাগ্রিমেন্টে এসেছে বিয়ে করবে বলে এবং এর জন্য প্রেম-পত্র চালাচালি হয়েছে বান্ধবীদের দিয়ে, মানে স্বাক্ষীসহ তাদের সম্পর্ক অনেকটা লিগালী আনথোরাইজড কন্ট্রাক্টের মতো হয়ে গিয়েছিলো।
এ কন্ট্রাক্ট ভঙ্গ করেছে কে প্রথমে? এখানে সামিনাই করেছে ...
কন্ট্রাক্ট ভঙ্গ করে, কেনো সে আবার আনডিউ-ইনফ্লুয়েন্স করলো সবুজকে? এটাও সামিনার দোষ। সামিনা কেনো নতুন লিগাল সম্পর্কে জড়িয়েও, ইল্যিগাল সম্পর্ক রাখলো? এটাও তার দোষ।
মোরাল এবং লিগাল দুই দিক থেকেই সামিনা দোষী হবে না আগে? সব দিক দিয়েই প্রথম সব দোষ সামিনার। একটা দোষ আরেকটা দোষ দিয়ে সমান সমান না করলে ব্যাপারগুলো ব্যালেন্সড হবে কিভাবে? সবকিছু কি আনব্যালেন্সড থেকে যাবে? এটা থাকে না বলেই এমন হয়।
-সামিনা যখন দেখল তার বিয়েটা হয়েই গেছে তখন সে সবুজের সাথে আর যোগাযোগ না করলেই পারত। এখানে তার সাহায্যকারীরাও কম দায়ী নয়। এরপর ছেলে হওয়ার পর তারতো ছেলের মুখের দিকে তাকিয়েই সব কিছু মেনে নেয়ার কথা!!! কিন্তু সে জঘন্য কাজটি করল।
- সবুজের উচিৎ ছিল সামিনাকে বুঝিয়ে তার স্বামী-সন্তান নিয়ে সংসার করার পরামর্শ দেয়া। তা না করে সে প্রতিশোধের আগুনে সামিনাকে পুড়িয়ে দিল। এই আগুনে মেয়েটা সারা জীবন জ্বলবে। তার প্রথম সন্তান মায়ের আদর ছাড়া আর পরের দুইজন পরিবারের পরিচয় ছাড়া বড় হচ্ছে। এর চাইতে জঘন্য প্রতিশোধ আর কি হতে পারে?
উপরোক্ত তিনজনই এই ঘটনায় অপরাধী। তাদের কাউকেই ক্ষমা করা যায় না।
যেহেতু সামিনা তার মাকে অমান্য করেই এগ্রিমেন্টে এসেছে সবুজের সাথে বিয়ের, তাই শুরুর দোষ সামিনার নিজের প্রতারনার জন্য। বিয়ের সময়ও যদি সবাইকে বলতো সামিনা ‘আমি সবুজকে ভালোবাসি’ – কেউ ওকে বিয়ে করতো না! এটা তো করেই নাই তার উপর আবার পরকীয়া চালিয়েছেঃ এর প্রতিফল কি ফুলের বাগান হবে সামিনার জন্য? তা হওয়ার কথা না, হয়ও নাই!
আপু আমি কিন্তু আপনার স্যানউইচ মিষ্টির রেসিপির অপেক্ষায় আছি
দুইটা সন্দেশ আর এক টুকরা আমসত্ত্ব নাও।
একটা সন্দেশের উপর আমসত্ত্বের টুকরাটি রেখে এবার বাকি সন্দেশটা দিয়ে তৈরী কর স্যান্ডউইচ সন্দেশ।
চাইলে আমস্বত্ত্বের উপর মরিচগুড়া বা কাঁচামরিচ কুঁচি দিয়ে দিতে পার।
ব্যাস....তৈরী হয়ে গেল টক মিষ্টি ঝাল সন্দেশ।
মজা না হলে আমি দায়ী না।
খাওয়ার আগে ডাঃ ভিশুর পরামর্শ গ্রহণ করা যেতে পারে
এক পর্যায়ে সামিনা ও সবুজ সামিনার মায়ের কাছে ধরা পড়ে যায়। সামিনার মা সবুজকে উনার বাসায় আসতে নিষেধ করে দেন। - শুধু ছেলেটিকে মানা করে দেয়াই যথেষ্ট ছিলোনা। তাঁর উচিত ছিলো মেয়েটিকে বসে পুরো ব্যাপারটি বুঝিয়ে বলা। তাহলে হয়ত সে ভবিষ্যতে এতবড় ভুল করতনা।
সামিনার মা কোনভাবেই সবুজের কাছে মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি হননি। কারণ এই ছেলের পরিবারের অবস্থা ভালো না। - এখানে দ্বিতীয় ভুল, ছেলেটি যদি যোগ্য হয় তাহলে মেয়ের অবস্থা বিবেচনা করে তাঁর এই বিয়েতে রাজী হওয়া ছিলো বেটার অপশন। এখন তিনি অর্থবিত্ত দেখতে গিয়ে কতগুলো জীবন নষ্ট করলেন!
সবুজের কাছে চরমভাবে অপমানিত হয়ে সামিনা বাবা-মায়ের কাছে ফিরে আসে। - আবেগসর্বস্ব মানুষগুলোর পরিণতি এমনই হয়। ক'দিন আগে এক ভদ্রমহিলা সব ছেলেমেয়ে বিয়ে দিয়ে দাদী নানী হয়ে যাবার পর আরেকজনের হাত ধরে সংসার ফেলে চলে গেলেন। মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে না পারলে অন্যত্র বিয়ে করার চেয়ে একা থাকাই ভাল।
তার নতুন স্বামী তাকে এই শর্তে বিয়ে করেছে যে,কোনদিনও সামিনা বা তার পরিবার এই বিয়ের কথা উনার পরিবারের নিকট প্রকাশ করতে পারবে না। যেদিন প্রকাশ করবে সেদিন থেকে তিনি আর সামিনার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবেন না। - এখানে এসেও সে নিজের বোকামীর কারণে আরেকজনের ঘরে আগুন লাগাল, ফলে এখানেও সে সুখী হতে পারবেনা। কারণ যারা অন্যের জন্য দুঃখের কারণ হয় তারা নিজেরা সুখের সন্ধান পায়না।
উপসংহারঃ আবেগের চেয়ে বিবেক বড়, তার
চেয়েও আল্লাহর প্রতি আনুগত্য গুরুত্বপূর্ণ মানুষকে সৎ পথে রাখতে।
পোস্টটির পোস্ট মর্টেমই করে ফেললাম মনে হয়। ধন্যবাদ আপা
যাক, ধন্যবাদ। খুব ভাল লাগল। হৃদয়ে যারা লাগাম দিতে পারেনা, তারা আজীবনই লাগামহীন থাকে। অবৈধ প্রেমের আগুনে দগ্ধ প্রতিটি প্রিয়-প্রিয়সীর হৃদয় যেন আগুনে জ্বলে পুড়ে নি:শেষ হয়ে যাওয়া এক জীবন্ত লাশ।
হৃদয়ের লাগাম দেয়াটা আসলেই কঠিন- বিশেষ করে উঠতি বয়সে। এজন্যই পরিবেশটা পজিটিভ দরকার।
চমৎকার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
পোস্টের জন্য ধন্যবাদ আপু।
যেখানেই টীনেজ পাওয়া যাবে সেখানেই গায়ে পড়ে কাউনসেলিংএর অভিযান চালাতে হবে-
ওদেরকে এ সর্বনাশা মিছিল থেকে ফেরাতেই হবে,
আলসেমী করলে সর্বনাশ হয়ে যাবে-
ইতিমধ্যে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকিল্লাহ
চমৎকার পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ। বাইরের কাউন্সিলিং এর সাথে পরিবারেরটাও লাগবে নতুবা এই উদ্যেগ কার্যকর হবেনা।
কপিপেষ্ট মন্তব্যের জন্য হ্যারীকে ধন্য-বাদ
শুকরিয়া আপু!
মন্তব্য করতে লগইন করুন