ক্বিয়ামাত এক অনিবার্য সত্য
লিখেছেন লিখেছেন ফাতিমা মারিয়াম ০৬ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৭:৪৫:৫৭ সন্ধ্যা
ছোটবেলায় ভাবতাম ইন্তেকাল অর্থ মৃত্যু। কেউ মারা গেলে বলা হয় সে ইন্তেকাল করেছে। একটু বড় হতেই জানতে পারলাম ইন্তেকাল মানে মৃত্যু নয়।ইন্তেকাল হলো একটি অবস্থান থেকে আর এক অবস্থানে গমন। মানুষের জীবনের স্তর আসলে তিনটি। একটি সেই রুহের জগৎ, পৃথিবীতে আসার আগে।আরেকটি পৃথিবীতে তার অবস্থান কাল। এবং মৃত্যুর মাধ্যমে সে পদার্পন করে অনন্ত জীবনে,আখিরাতে। দুনিয়ার পরীক্ষা হলে আমরা উত্তরপত্রে যা কিছু লিখবো, সমস্ত আয়ু ব্যয় করে.....। আখিরাতে একটি দিন নির্দিষ্ট করা আছে.. সেই দিনটিতে তার ফল প্রকাশ করা হবে।আর দিনটি অবশ্যম্ভাবী..ক্বিয়ামাত।
ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণীত, তিনি বলেন ,রাসূলে করীম ﷺ বলেছেন , "যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে যে সে যেন দিব্য চোখে ক্বিয়ামাত অবলোকন করবে, তবে সে পাঠ করুক সূরা আত তাকভীর, সূরা আল ইনফিতার ও সূরা আল ইনশিক্বাক।"
(তিরমিযী, আহমাদ, তাবারানী)
সূরা তিনটির বাংলা অনুবাদ এখানে দিলাম,
সূরা আত্ তাকভীর
বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্ র নিকট আশ্রয় চাই।
পরম করুনাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
১.) যখন সূর্য গুটিয়ে নেয়া হবে।
২.) যখন তারকারা চারদিকে বিক্ষিপ্ত হয়ে যাবে।
৩.) যখন পাহাড়গুলোকে চলমান করা হবে।
৪.) যখন দশ মাসের গর্ভবতী উটনীগুলোকে তাদের অবস্থার ওপর ছেড়ে দেয়া হবে।
৫.) যখন বন্য পশুদের চারদিক থেকে এনে একত্র করা হবে।
৬.) যখন সমুদ্রগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হবে।
৭.) যখন প্রাণসমূহকে (দেহের সাথে) জুড়ে দেয়া হবে।
৮.) যখন জীবিত পুঁতে ফেলা মেয়েকে জিজ্ঞেস করা হবে,
৯.) কোন অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে?
১০.) যখন আমলনামাসমূহ খুলে ধরা হবে।
১১.) যখন আকাশের পরদা সরিয়ে ফেলা হবে।
১২.) যখন জাহান্নামের আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হবে
১৩.) এবং জান্নাতকে নিকটে আনা হবে।
১৪.) সে সময় প্রত্যেক ব্যক্তি জানতে পারবে সে কি নিয়ে এসেছে।
১৫.) কাজেই, না,আমি কসম খাচ্ছি
১৬.) পেছনে ফিরে আসা ও অদৃশ্য হয়ে যাওয়া তারকারাজির এবং রাত্রির,
১৭.) যখন তা বিদায় নিয়েছে
১৮.) এবং প্রভাতের, যখন তা শ্বাস ফেলেছে।
১৯.) এটি প্রকৃতপক্ষে একজন সম্মানিত বাণীবাহকের(আনিত) বাণী,
২০.) যিনি বড়ই শক্তিধর, আরশের মালিকের কাছে উন্নত মর্যাদার অধিকারী,
২১.) সেখানে তার হুকুম মেনে চলা হয়, তিনি আস্থাভাজন।
২২.) আর (হে মক্কাবাসীরা!) তোমাদের সাথী পাগল নয়।
২৩.) সেই বাণীবাহককে দেখেছে উজ্জ্বল দিগন্তে।
২৪.) আর সে গায়েবের (এই জ্ঞান লোকদের কাছে পৌঁছানেরা) ব্যাপারে কৃপণ নয়।
২৫.) এটা কোন অভিশপ্ত শয়তানের বাক্য নয়।
২৬.) কাজেই তোমরা কোথায় চলে যাচ্ছো?
২৭.) এটা তো সারা জাহানের অধিবাসীদের জন্য একটা উপদেশ।
২৮.) তোমাদের মধ্য থেকে এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য, যে সত্য সরল পথে চলতে চায়।
২৯.) আর তোমাদের চাইলেই কিছু হয় না, যতক্ষণ না আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তা চান।
সূরা আল ইনফিতার
পরম করুনাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
১.) যখন আকাশ ফেটে যাবে,
২.) যখন তারকারা চারদিকে বিক্ষিপ্ত হয়ে যাবে,
৩.) যখন সমুদ্র ফাটিয়ে ফেলা হবে
৪.) এবং যখন কবরগুলো খুলে ফেলা হবে,
৫.) তখন প্রত্যেক ব্যক্তি তার সামনের ও পেছনের সবকিছু জেনে যাবে।
৬.) হে মানুষ! কোন জিনিষ তোমাকে তোমার মহান রবের ব্যাপারে ধোঁকায় ফেলে রেখেছে,
৭.) যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, তোমাকে সুঠাম ও সুসামঞ্জস্য করে গড়েছেন
৮.) এবং যে আকৃতিতে চেয়েছেন তোমাকে গঠন করেছেন।
৯.) কখ্খনো না,বরং (আসল কথা হচ্ছে এই যে), তোমরা শাস্তি ও পুরস্কারকে মিথ্যা মনে করছো।
১০.) অথচ তোমাদের ওপর পরিদর্শক নিযুক্ত রয়েছে,
১১.) এমন সম্মানিত লেখকবৃন্দ,
১২.) যারা তোমাদের প্রত্যেকটি কাজ জানে।
১৩.) নিঃসন্দেহে নেক লোকেরা পরমানন্দে থাকবে
১৪.) আর পাপীরা অবশ্যি যাবে জাহান্নামে।
১৫.) কর্মফলের দিন তারা তার মধ্যে প্রবেশ করবে
১৬.) এবং সেখান থেকে কোনক্রমেই সরে পড়তে পারবে না।
১৭.) আর তোমরা কি জানো, ঐ কর্মফল দিনটি কি?
১৮.) হ্যাঁ, তোমরা কি জানো, ঐ কর্মফল দিনটি কি?
১৯.) এটি সেই দিন যখন কারোর জন্য কোন কিছু করার সাধ্য কারোর থাকবে না। ফায়সালা সেদিন একমাত্র আল্লাহর ইখতিয়ারে থাকবে।
সূরা আল ইনশিক্বাক
পরম করুনাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
১.) যখন আকাশ ফেটে যাবে
২.) এবং নিজের রবের হুকুম পালন করবে। আর (নিজের রবের হুকুম মেনে চলা), এটিই তার জন্য সত্য।
৩.) আর পৃথিবীকে যখন ছড়িয়ে দেয়া হবে।
৪.) যা কিছু তার মধ্যে আছে তা বাইরে নিক্ষেপ করে সে খালি হয়ে যাবে
৫.) এবং নিজের রবের হুকুম পালন করবে। আর (নিজের রবের হুকুম মেনে চলা), এটিই তার জন্য সত্য।
৬.) হে মানুষ! তুমি কঠোর পরিশ্রম করতে করতে তোমার রবের দিকে এগিয়ে যাচ্ছো, পরে তাঁর সাথে সাক্ষাত করবে।
৭.) তারপর যার আমলনামা তার ডান হাতে দেয়া হয়েছে,
৮.) তার কাছ থেকে হালকা হিসেব নেয়া হবে
৯.) এবং সে হাসিমুখে নিজের লোকজনের কাছে ফিরে যাবে।
১০.) আর যার আমলনামা তার পিছন দিক থেকে দেয়া হবে,
১১.) সে মৃত্যুকে ডাকবে
১২.) এবং জ্বলন্ত আগুনে গিয়ে পড়বে।
১৩.) সে নিজের পরিবারের লোকদের মধ্যে ডুবে ছিল।
১৪.) সে মনে করেছিল, তাকে কখনো ফিরতে হবে না।
১৫.) না ফিরে সে পারতো কেমন করে? তার রব তার কার্যকলাপ দেখছিলেন।
১৬.) কাজেই না আমি কসম খাচ্ছি,
১৭.) আকাশের লাল আভার ও রাতের
১৮.) এবং তাতে যা কিছুর সমাবেশ ঘটে তার, আর চাঁদের, যখন তা পূর্ণরূপ লাভ করে।
১৯.) তোমাদের অবশ্যি স্তরে স্তরে এক অবস্থা থেকে আর এক অবস্থার দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
২০.) তাহলে এদের কি হয়েছে, এরা ঈমান আনে না
২১.) এবং এদের সামনে কুরআন পড়া হলে এরা সিজদা করে না?
২২.) বরং এ অস্বীকারকারীরা উল্টো মিথ্যা আরোপ করে।
২৩.) অথচ এরা নিজেদের আমলনামায় যা কিছু জমা করছে আল্লাহ তা খুব ভালো করেই জানেন।
২৪.) কাজেই এদের যন্ত্রণাদায়ক আযাবের সুসংবাদ দাও।
২৫.) তবে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদের জন্য রয়েছে অফুরন্ত পুরস্কার।
সেই দিনটি আসবেই। এটাই আল্লাহর পাকাপোক্ত ওয়াদা। আমাদের সামনে দুটো পথ খোলা। একটার শেষ হয়েছে অপূর্ব বাগানের সম্মুখ দ্বারে আরেকটির প্রান্ত জলন্ত এক অগ্নিকুন্ডে, গভীর সেই গহ্বরে। আল্লাহ আমাদের স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি দিয়েছেন কোন পথটিতে আমরা আমাদের পা-কে চালিত করবো। চলুন না এগিয়ে যাই সেই পথে যে পথে রয়েছে আমাদের প্রভুর সন্তুষ্টি, যে পথের শেষ প্রান্তে আছে প্রতিশ্রুত জান্নাত।
বিষয়: বিবিধ
২৫১৯ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কদমফুল
কদমমিষ্টি
ইফতারিতে খেয়ে নিতে ভুললে কিন্তু চলবে না আপপপি
মন্তব্য করতে লগইন করুন